মনের ইতিবাচকতা|| হেরে যাবার আগেই হার মেনে নেওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা|| জেনারেল রাইটিং ||

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000226716.webp

সোর্স







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



জন্মানোর পর থেকেই আমরা বাঁচি। কিন্তু জীবন শুরু হয় আরও পরে। যখন আমরা বুঝতে শিখি৷ অনুভব করতে শিখি৷ সময়ে অসময়ে চিনে নিই আমাদের ঘাত প্রতিঘাত। কোথাও পেরিয়ে যাই আবার কোথাও মুখ থুবড়ে পড়ি৷ পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াতে হয়। জীবন তো একটা পথ, কারণ সময়ে একটি চলমান পথ। পৃথিবী যেহেতু ঘোরা থামায় না তাই সময় কখনো থেমে থাকে না। আর সে কারণেই জীবনের পথও মৃত্যুর আগে থেমে যায় না। মৃত্যু আমাদের শেষ ঠিকানা। সেখানে পৌঁছানোর জন্যই আমরা হাটি। আমরা বাঁচি।

এই বাঁচার অনেক তারতম্য আছে। তবে অন্যের চোখে যেমনই হোক আমার জীবনটা আমার চোখে কি সেটাই বড় কথা। আমি যেভাবে জীবন দেখব আমার জীবন সেভাবেই সুন্দর, সেভাবেই এগোবে। ভালো খারাপ এই আপেক্ষিকতার মাঝে নিজেকে না পিষে ফেললেই জীবন অনেক মসৃণ হয়ে যায়। আসলে ঠিক-ভুল সবটাই তো নিজ নিজ দর্শনবোধ, বুদ্ধি, বিচার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। তাও সঠিক উপলব্ধির অভাবে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে বারবারই মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। তাছাড়া বিপদ তো সবথেকে সস্তা আর পরিমাণে বেশি উপভোগ্য অঙ্গ জীবনের। অবশ্যই যারা চার দেওয়ালের মধ্যে নিজের বিশ্বাস ধ্যান-ধারণা সবকিছুই একটা ঘেরাটোপের মধ্যে রেখে বেঁচে নেয় তাদের কথা আলাদা। মুক্তমনাদের বিপদ এবং আঘাত দুটোই বেশি। যে কারণে মুক্তমনাদের অনেক বেশি করে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হয়।

একবার আমি বেশ কিছুদিন ধরে ভীষণ অসুস্থ ছিলাম। আমার দেখভাল করার মত কেউ ছিল না। ডাক্তারখানায় গেলাম। ডাক্তার আমাকে দেখে যখন বললেন আপনার তো কিছুই হয়নি আপনি কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসুন ঠিক হয়ে যাবে। অথচ আমি ভাবছিলাম আমার বিরাট কিছু হয়েছে কারণ আমি খেতে পারছি না অনবরত দুর্বল হয়ে পড়ছি। ডাক্তার যেভাবে বললেন আমায় আমার কেমন যেন মনে হলো সত্যিই তো আমার কিছু হয়নি। তারপর নিমিষের মধ্যেই আমি ঠিক হয়ে গেলাম। এ যেন ম্যাজিক। আমার মা প্রতি কথা কথা বলেন "সব ঠিক হয়ে যাবে অত ভাবিস না তো"। আমি তখন মাকে বলি "সব কি এমনি এমনি হয়, হওয়াতে লাগে "

কোন কিছুই এমনি এমনি হয় না। সবটা নিজেকে চিন্তাভাবনা করে চারপাশের পরিস্থিতি ভেবে পা ফেলে হওয়াতে হয়। কিন্তু বয়স যত বেড়েছে তত ভেবেছি হয়ে যাবে শব্দবন্ধটার একটা আলাদা জোর আছে। যদি ভেতর থেকে ভাবি আমার হবে তাহলে সেই কাজ পৃথিবীর কেউ আটকাতে পারবেনা হবেই হবে। আর যদি ভাবি হবে না, তাহলে আর সে হবে না। তাই বারবার মনে হয় ইতিবাচকতার আলাদাই ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে।

আসলে বিষয়টা কি হয়, আমি যদি মনে করি পারবো তাহলে আমার সেই পারার জন্য সমস্ত কঠিন পথ আমার কাছে সহজ হয়ে না ধরা দিলেও ওই পারবো ভাবনাটার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। কিন্তু আমি যদি পারবো না মনে করি তাহলে যেকোনো ধরনের পথেই আমার কাছে দুর্গম মনে হবে। অজান্তেই অদ্ভুত একটা কুঁড়েমি চেপে বসবে। তখন সহজ কাজটাও এত কঠিন হয়ে উঠবে গুরুত্বহীনতার কারণে সেটা হয়তো আমরা আর করেই উঠতে পারবো না।

এইসব চিন্তা ভাবনা করার পর আমি ভাবি যেকোন মানুষকে কখনো হবে না বা পারবেনা ইত্যাদি না বাচক কথা না বলে সব সময় তাকে উৎসাহ দেওয়ার মত করে বা মনের জোর বাড়ানোর মতো করে হ্যাঁ-বাচক কথা বলা ভালো। এতটাই হ্যাঁ-বাচক আলো দেওয়া দরকার, যার ফলে তার ভেতর যদি সামান্যতমও না-বাচক বিষয় থাকে তা আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে যাবে৷ আর নিজেকে সবসময় এইভাবে ভেবে রাখা ভালো ও তো পারছে আমি কেন পারব না, ওর মত না পারলেও খানিকটাও তো পারব সেটা নয় আমার মত হবে। কিন্তু পারবো তো বটেই। এই পারবো ভেবেই অনেক কঠিন কাজ অনেক না পারা কাজ হয়ে যায় হয়তো একটু কষ্ট হয় কিংবা একটু বেশি লড়াই হয় কিন্তু লক্ষ্যে ঠিক পৌঁছে যাওয়া যায়৷

এতক্ষণ যা কিছু বললাম এই সমস্ত কিছু আমি আমার জীবনে প্রয়োগ করি এবং আমার সন্তানকেও বলি, কেন পারবি না সব হয়ে যাবে। সত্যিই যখন দেখি দু-তিন দিনের মধ্যেই বীরপুরুষের মতো বড় কবিতা তৈরি করে ফেলে বা ওর বয়সের তুলনা একটু বেশি কিছু করছে শুধুমাত্র আমি বলেছি বলে, এ কথাটাই আমাকে বড্ড ভাবায়। আমি ভাবি হ্যাঁ-র কত জোর। ইতিবাচকতার অনেক শক্তি।

যেমন ধরুন নানান জায়গায় থাকার ফলে আমার সন্তানের অনেকগুলো স্কুল পরিবর্তন হলো। এ বছর নতুন স্কুলে নতুন জায়গায় নতুন ছেলে মেয়েদের মধ্যে ও কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিল না। বারবারই বলে গেছে ওর ভালো না লাগার কথা। আমি ওকে বলেছি, বুঝিয়েছি নতুনই তো আনন্দের, নতুনের মধ্যে তুমি অনেক কিছু জানবে, অনেক কিছু শিখবে যা আগে দেখনি, আগে পাওনি। ও আমাকে ভরসা করে শিখছে চেষ্টা করছে। এটা সত্যিই ওর সম্পূর্ণ বন্ধু ও পরিচিতি মহল বারবার পরিবর্তন হওয়ার কারণে অসুবিধে হয়। আবার ওকে বোঝাই এই যে নিত্য নতুন মানুষের সাথে মিশছে এর ফলে ও অনেক ধরনের মানুষ জানতে পারছে৷ যা ওই বয়সে আমরা পাইনি।

আসলে জীবনে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনারই ইতিবাচকতা আছে। কথায় বলে না যা হয় ভালোর জন্যই হয়। ঘটনাগুলো শুধু দেখবার চোখের ওপর এই ইতিবাচকতা বা নেতিবাচকতা নির্ভর করে। হোঁচট খেয়ে দুবার পড়েছি মানে রাস্তা খারাপ তা নয়, আমাকে আরো একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমি একটা কথা ভীষণভাবে মানি, কোন কিছু আমি যতক্ষণ না শিখব ততক্ষণ আমাকে আমার জীবন সুযোগ দেবে। আমি যদি শিখে যাই তখন আর হোঁচট খেয়ে পড়ার বা ঠকে যাওয়ার আর কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। তবে এই শিখে যাওয়ার পদ্ধতি সারা জীবন ধরে চলে। কারণ প্রতি পদেই আমরা নতুন কিছু শিখি। জীবন আমাদের নতুন নতুন অধ্যায় এনে দেয়।

তাই বলবো প্রতিটা অজানাকে সাদরে গ্রহণ করা ভালো জীবনে, তাতে মন থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী থাকা যায়, ভালো-মন্দ দুটোকেই গ্রহণ করার জন্য। জীবনে যা সত্য তা সুন্দর, আর সত্য মানে সমস্ত ধনাত্মক দিক। ধনাত্মক বা সত্যের মতো সুন্দর বিশ্ব জগতে আর দুটি নেই। জগতে যেমন রাত্রি আসে, তারপর মুহূর্তেই সকাল আসে । শুধু রাত্রিটুকু বেঁচে নিতে জানতে হয়। জেনে গেলেই পরবর্তী রাত্রিটা রাত্রি মনে হবে না বা মনে হবে না আমি অন্ধকারে তলিয়ে গেছি। কারণ সময় তো চলে যায় তাই রাত্রি ও ফুরিয়ে যায়। আবার সকালে আসে। আচ্ছা আজীবন কাল যদি সকালে থাকতো তাহলে ও কি ভালো থাকতো জীবনটা? জীবনের বৈচিত্রই তো ভালো-মন্দ মিশিয়ে। তাই প্রতি খারাপ মুহূর্তেই হেরে যাওয়ার আগেই হেরে যাবো ভাবার থেকে সর্বশক্তি দিয়ে সর্ব বুদ্ধি দিয়ে জেতার চেষ্টা করা ভালো। কারণ শক্তি আর মেধার যুগলবন্দীর কোন তুলনা নেই।

1000226746.jpg

বন্ধুরা, ভালো থাকুন। সমস্ত ইতিবাচকতাকে মনের মধ্যে জড়িয়ে মাথার মধ্যে নিয়ে আনন্দে থাকুন।

আমার আজকের ব্লগ কেমন লাগলো জানাবেন। আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন লেখা নিয়ে৷ আজ এ পর্যন্তই থাক।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ডিভাইসস্যামসাং F54
ব্যবহৃত অ্যাপইনশট


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 days ago 

মানুষের জীবনের লড়াইতে পজেটিভ মনোভাবটা যে কতটা জরুরী তা এই লেখার মাধ্যমে উঠে এলো। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হলো যে মনটাই বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জীবনকে সঠিক পথে চালিত করার জন্য। একটি মন্তব্যকে কোট না করে পারছি না -

আসলে ঠিক-ভুল সবটাই তো নিজ নিজ দর্শনবোধ, বুদ্ধি, বিচার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে

এই কথার চেয়ে সার সত্য আর কিছু হয় না। সবকিছুই নিজের উপর। নিজেকে ভালো রাখতে পারলে সবকিছুই যেন ভালো থাকে।

 5 days ago 

জীবন তো এমনই বলো। আরো অন্ধকার দুটোই থাকবে। আমাদের আলো নিয়ে আলোর উদ্দেশ্যে হেঁটে গেলেই জীবন সার্থক। আমার লেখাটি পড়ে যে তোমার এতটা ভালো লেগেছে একটা জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি । ভালো থেকো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60843.64
ETH 2711.61
USDT 1.00
SBD 2.43