প্রযুক্তি জীবনকে সহজ করে দেয়। আমার নিত্য সঙ্গী রোবট ভ্যাকিউম ক্লিনারের গল্প। লাইফস্টাইল ব্লগ।

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000230603.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



1000230624.jpg

এতদিন রোজই পরিচিত বিষয় নিয়ে ব্লগিং করেছি আজ আমি আপনাদের সামনে যে জিনিসটা নিয়ে এসেছি সেটি বিজ্ঞানের উন্নয়ন। আমরা প্রত্যেকেই জানি আজকালকার দিনে একান্নবর্তী পরিবারগুলো আর নেই। ছোট ছোট পরিবারে যেমন কারো সাথে মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে হয় না তেমনি অনেক অসুবিধেও থাকে। শরীর খারাপ হোক বা অন্য কোন অসুবিধে বাড়ির সমস্ত কাজ একা হাতেই সবটা করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের যদি একটা হেল্পার থাকে তাহলে কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যায়। শহরাঞ্চলে তো অবশ্যই কাজের দিদি পাওয়া যায় কিন্তু গ্রামাঞ্চলে খুব একটা লোক পাওয়া যায় না। তার ওপরে আজকাল সব কিছুরই যা মূল্যবৃদ্ধি সত্যি বলতে কি কাজের জন্য একজন লোক রাখাও ব্যয়বহুল হয়ে গিয়েছে। শুধু তো তাই নয় ভালো মানুষ পাওয়া তার ব্যবহার কেমন কিংবা সে কতটা বিশ্বস্ত সবকিছু নির্ভর করে। এই সমস্ত দোদুল্যমান জীবনে যদি প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে তা জীবনযাপনকে অনেক বেশি সহজ করে তোলে।

পৃথিবীটাই বদলে গেছে। একথা প্রতি পদেই বুঝি। দীর্ঘ বছর ধরে প্রবাসে থাকার পর নানান ধরনের মানুষদের সাথে মিশেছি দেখেছি মানুষ তার প্রয়োজন এবং স্বার্থের বাইরে মানবিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে এমন লোকজন খুবই কম। আপনাদের একটা ছোট্ট গল্প বলি। করোনার লকডাউন মনে আছে? মহারাষ্ট্রের মুম্বাই তে খুবই দুর্বিষহ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তখন আমাদের কোন কাজের লোক ছিল না। আর যারা কাজ করতো তাদের ঐ সমস্ত রুজি রোজকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনের কারনে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শহরে নিয়ে এসে বিক্রি করা খুব কঠিন ছিল ফলত জিনিসপত্রের দামও অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আমার আজও মনে পড়ে কুমড়োর দাম ছিল প্রায় দু'শ আড়াইশ টাকা করে কেজি। এমত অবস্থায় ওই কাজের দিদিদের বাড়ি কিভাবে চলত! আমার মত অনেকেই যাদের বাড়িতে বাড়িতে ওরা কাজ করতো আমরা প্রত্যেকেই পরপর বেশ কিছু মাস ওদের টাকা দিয়ে গেছি। যেমনি হোক ওরাও তো মানুষ ওদেরও তো পেট চালাতে হবে। অদ্ভুত বিষয় হল, যেই লকডাউন ফুরিয়ে গেল খুব সম্ভবত ২০২১ এর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওরা আবার কাজে আসতে শুরু করলো। আমার যে কাজ করে দিতে তাকে শুধু বলেছিলাম 'নভেম্বরের তো কয়েকটা দিন বাকি তুমি ডিসেম্বর থেকে এসো।' মাত্র ১০-১২ দিন সে আমার জন্য কোন অপেক্ষাই করলো না। হয়তো তার কাজের খুবই প্রয়োজন ছিল। আবার সেটাও ভাবলো না যে দিদি আমাকে টানা ৪-৫ মাস টাকা দিয়ে গেছে না কাজ করিয়েও। আসলে মানবিকতা আর স্বার্থ অনেকটাই আলাদা। বলা বাহুল্য এরা বিপরীতমুখী। এছাড়াও আমি যখন খুব কম সময়ের জন্য অন্য কোন রাজ্যে গিয়ে থেকেছি তখন হুট করে কাউকে বিশ্বাস করব এটাও সম্ভব হয় না। সময় তো সব বিষয়ই লাগে তাই না?

1000230665.jpg

এই ধরনের নানান অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি একা যেহেতু সবটা করতে হয় তখন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া ভালো। সে কারণেই বাড়িতে আমদানি করলাম একটি রোবট ভ্যাকিউম ক্লিনারের। বিগত দুমাস ধরে আমি এই রোবটটি ব্যবহার করছি। এক কথায় যাকে বলে অসাধারণ। রোজের ঘরদোর পরিষ্কার করার জন্য এই ভ্যাকিউম ক্লিনারের জুড়ি মেলা ভার। আমাকে এর পেছনে কোন সময়ই ব্যয় করতে হয় না। বরং ওই সময়গুলোতে আমি অন্যান্য কাজ সেরে নিই। সাথে আমার কিছুটা সময় বেঁচেও যায় আর আমি লেখালেখির কাজে একটু সময় পাই। আজকের ব্লগে আমি ভাবলাম আপনাদেরকে আমার এই রোবট ভ্যাকিউম ক্লিনারটির বিস্তারিত তথ্য দিই।

ইকোভ্যাক্স কম্পানির রোবটটির মডেল হল ডিবট ওয়াই ওয়ান প্রো। এর ভেতরে একটি বক্স আছে যেখানে ধুলো ময়লা সবটা জমা হয় এবং সপ্তাহান্তে সেটি পরিষ্কারও করে দিতে হয়।

1000230658.jpg

ছবিতে দেখুন মাপিং প্যাড। অর্থাৎ এই রুমালের মতো প্যাড দিয়ে ঘর মোছার কাজ হয়।

এই যে দেখছেন ওপরে ছবিটিতে এই অংশটা দিয়ে জল ভরতে হয়। তবে ডিবোটে সাধারন জল ভরা যায় না। মিনারেল ওয়াটার বা ইউভি আরো ওয়ালা ফিল্টারের জল দিতে হয়। এই জলের মধ্যে কোনরকম সাবান গুঁড়ো বা ফ্লোর ক্লিনার দেওয়া যায় না।

1000230669.jpg

ধুলো পরিষ্কার করার জন্য রোবটির মোট দুটি ঝাড়ু রয়েছে। একটি ঝাড়ু সাইডের দিকে রয়েছে যা দেওয়ালের ধারে এবং সমস্ত ফার্নিচারের কোনাগুলো থেকে ধুলো ঝেড়ে তুলে নেয়। আর মাছ বরাবর একটি ঝাড়ু রয়েছে যা মেঝের মাঝের দিকে সমস্ত ধুলো ঝাটিয়ে তুলে নেয়।

1000230663.jpg

এই ভাবে মপিং প্যাড টি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

1000230667.jpg

রোবটটি তার পাওয়ার স্টেশনে সারাদিন থাকে। তবে পাওয়ার সেশনটির প্লাগিং পয়েন্ট চাইলেই বারবার পরিবর্তন করা যায় না। যেকোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একে রেখে দিতে হয়। রোবট নিজেই স্টেশন থেকে বেরিয়ে গোটা ঘরদোর মোছামুছি করে আবার স্টেশনেই ফিরে আসে। তবে এই সমস্ত কিছু কন্ট্রোল করা যায় যেমন রোবটের মধ্যেকার সুইচ দিয়ে তেমনি ফোনেও একটি অ্যাপ রয়েছে ইকোভ্যাক্সের অ্যাপ। যেখানে আমার মেশিনটি কানেক্ট করা আছে। ফোন থেকে একে চালানো যায়।

1000230657.jpg

প্রথম যখন ইনস্টল করেছিলাম তখন রোবটির প্রথম কাজ ছিল সারা ঘরের ফাঁকা জায়গার একটি ম্যাপ তৈরি করে নেওয়া। এবং সেই ম্যাপ অনুযায়ী ও প্রত্যেকদিন ঘর মোছে। আমার শুধু কাজ থাকে মাপিং প্যাডটা পরিষ্কার করে নেওয়া আর সময় সময়ে জল দেওয়া ও জমে যাওয়া ধুলোগুলো পরিষ্কার করে নেওয়া। এই মপিং প্যাড কিন্তু কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া যায় না। এটিকে হাতেই পরিষ্কার করতে হয়।

তবে যে কথাটি বলবো, ভ্যাকিউম ক্লিনারটি যেহেতু একটি রোবট এবং একটি মেশিন সব ধরণের ধুলো ময়লা তুললেও চুলের সাথে মোকাবিলায় হেরে যায়৷ তাই ডিবট চালানোর আগে আমি হাল্কা করে নিজেই ঝাড়ু দিয়ে চুলগুলো তুলে নিই। তাছাড়াও কোন কিছু মেঝেতে চিটে থাকলে সেটিও আমাকে পরিষ্কার করতে হয়। বা আলমারির ফাঁক যেখানে ডিবট ঢুকতে পারে না সেই জায়গাগুলো। তবে সামান্য না পারা থাকলেও বেশিরভাগটাই করে দেয় যা অবশ্যই অনকটা সাহায্য হয়ে যায়৷

এবার ভিডিওটি দিচ্ছি। কেমন করে পরিষ্কার করে আপনারা নিজেরাই দেখে নিন।

আচ্ছা, পরিষ্কার আদৌ করল কিনা তারও নজির হিসেবে কিছু ছবি দিলাম। দেখুন তো ঝকঝকে লাগছে মেঝেগুলো?

1000230666.jpg

1000230664.jpg

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল/ তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
ভিডিও ওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 days ago 

বেশ দরকারী একটি ডিভাইস দিদি। আর একক পরিবারের জন্য বেশ প্রয়োজনীয়।তবে বাসা পরিবর্তনের সাথে সাথে ডিভাইসের ম্যাপিংও নিশ্চয়ই পরিবর্তন করতে হয়। আর এ ধরনের একটি ডিভাইস যদি থাকে তবে সময়ও কিছুটা বাঁচে। বেশ ভালো লাগলো আপনার ব্লগটি পড়ে। ধন্যবাদ দিদি।

 11 days ago 

হ্যাঁ, নতুন জায়গায় নিয়ে গেলে ও নিজে নিজেই ম্যাপিং টা চেঞ্জ করে নেয়। আবার অনেকগুলো ম্যাপিং স্টোর করে রাখতে পারে। ধরুন আপনার দোতলা বাড়ি, দুটো ফ্লোর ই ম্যাপ ওয়ান ম্যাপ টু বলে স্টোর করে রাখবে। আপনার যখন যেই ফ্লোরটা পরিষ্কার করতে লাগবে সেই ফ্লোরে নিয়ে গিয়ে সেই ম্যাপটা তে ক্লিক করলেই সেই হিসেবে ও কাজ করবে।

সব থেকে বড় কথা ও একবার কাজ করে পাওয়ার স্টেশনে ফেরার আগে আরো দু'বার চেক করে ও কাজটা ঠিক মতো করেছে কিনা। ঘর পরিষ্কার করার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।

 11 days ago 

এখন রোবটিক্সের যুগ। এই যুগে দাঁড়িয়ে এমন সব মেশিনারি মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। অত্যাধুনিক যুগের একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিনারি নিয়ে এমন পোস্ট খুবই আনকমন লাগলো। ভীষণ সুন্দর করে ছবি তুলেছিস এবং উপস্থাপনা করেছিস। স্বয়ংক্রিয় এই রোবটের ম্যাপিং পদ্ধতি এবং সর্বোপরি ক্লিনিং পদ্ধতি অবাক করার মত। অসাধারণ ব্যাখ্যা হয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64261.31
ETH 2787.80
USDT 1.00
SBD 2.66