কবি সিন্ড্রোম ও একটি অসম্পূর্ণ কবিতা।। জেনারেল রাইটিং।।

in আমার বাংলা ব্লগlast month

।। নমস্কার বন্ধুরা।।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত



1000202889.jpg

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশাকরি আপনি ও আপনার পরিবারের সকলেই সুস্থ ও ভালো আছেন। ঈশ্বরের কাছে আপনাদের সুস্থ জীবন কামনা করে আজকের পোস্ট শুরু করছি।

অনেক রাত হয়ে গেছে। প্রতিদিন কি লিখব আগে থেকেই ভেবে রাখি। আজ কোন ভাবনা নেই৷ বিশেষ কারণে ভাবিনি এমনটা নয়। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। সকাল থেকে রাত যে কিভাবে কাটল আমি নিজেও বুঝিনি। বিশেষ কোন কাজ করেছি তাও না৷ শুধু আকাশ বাতাসের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি। যে ভাবনার কোন তল নেই, কিনারা নেই, পৌঁছোনোর জায়গাও নেই। তাও ভেবেছি। ভাবাটাই হয়তো অভ্যেস তাই ভেবেছি।

আসলে আজ মনটাই ভালো নেই৷ কোন কারণ ছাড়া মনখারাপ হয়তো কবিদের জীবনে খুব সহজ বিষয়। তবে সত্যিই কি কারণ ছাড়া মনখারাপ করে? কি জানি, আমার তো মনে হয় এমন কিছু ঘটনা বা কথা বা ব্যবহার ঘটে যায় যা মুখে বলা যায় না, হয়তো তা আমল দেওয়ার মতো কিছুই না তাও মনের কোথায় কি যে আওয়াজ করে তার হদিশ বোধহয় মন নিজেও জানে না৷

এর থেকে বরং সেই সমস্ত আঘাত অনেক ভালো যা সরাসরি প্রকাশ্যে দেখা যায়৷ সেই আঘাতে মলম লাগানো লোকের অভাব জুটবে না, বরং কেউ কেউ সেই সুযোগে নিজের ভালো থাকা বড়াই করে সুড়সুড়ি দিতে কম করবে না। জীবনে এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে সেখানে মানুষও বৈচিত্রের ভরপুর। কার কখন কোথায় কিরূপ বেরিয়ে পড়ে আমরা নিজেরাও বুঝিনা। এইসব বিচার করে দেখতে গেলে মনে হয় নিজের আঘাত নিজের ভেতরে থাকাই ভালো। অন্তত দুর্বলতার সুযোগ নিতে কেউ পা বাড়াবে না।

সন্ধে থেকেই আজ প্রবল বৃষ্টি। এ বৃষ্টির মাঝে ভালো লাগছিল না দেখে নিচে গিয়ে সোসাইটির মন্দিরের সামনে পাতা বেঞ্চে বসে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। হু হু করে বাতাস বইছে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, আমি মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছিলাম। এভাবে বৃষ্টির মাঝে এসে বসে থাকিনি কোনদিন। আমার কান্না ঠিক পায়নি। তাও বসে থাকতে থাকতে জীবনের অনেক সারমর্ম চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। সেই মুহূর্তে ভাবছিলাম আমি যদি পৃথিবীতে না থাকি তাহলে আজ যারা কষ্ট পাবে কাল কি পাবে? নাকি সময়ের সাথে সাথে সবই অভ্যেস হয়ে যাবে। ফোন করতে ইচ্ছা হয়নি সেই সময়। শুধু বসেছিলাম। মুখের সামনে দু চারজন লোক ছিল বটে। মনেপ্রাণে চাইছিলাম তারা যেন বাড়ি চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর তারা চলেও গেল। আমি রইলাম পরে একা।

যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা
নয়নে আধার রবে ধেয়ানে আলোক রেখা।

সত্যিই তো পথ একার। আমি থেমে গেলে আমিই থেমে যাব। আবার ছুটে গেলে আমিই দৌড়বো। বাকি সঙ্গে যারা জুটে যায় তারা কেউ ক্ষণস্থায়ী আবার কেউ দীর্ঘস্থায়ী। প্রেম কবে কার সাথে? নিজের নাকি অন্যের?

এই ডিপ্রেশনের কোন কারণ নেই। কবি মহলে এই ডিপ্রেশন কবি সিনড্রোম বলে প্রচলিত আছে। কারণ কবিরা নিজেরাই জানেন না তাদের কি কারনে অন্ধকারের মত ঘন গাঢ় হতাশা মনের উপর নেমে আসে। আর তারপরেই এই মন ঘাড়ে বোঝা হয়ে চেপে যায়। কি এলো গেল ঠিক এই মানসিকতায় জীবনকে দেখতে শুরু করে। আসলে আমরা তো কেউ কারো নই তবুও অনেকের। এই চিন্তাভাবনার জট ক্রমশ জটিল হয়। সেই মুহূর্তে বসে আমার খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছিল। এবং একটি কবিতা লিখেছি। আমার এক ষাটোর্ধ্ব পাঠক একবার বলেছিলেন আমি যখন হতাশায় ভুগি ঠিক সেই মুহূর্তের কবিতাগুলো তার মনে দাগ কেটে যায়। আমি জানি না আমি কি লিখি। হয়তো হৃদয়কে নিংড়ে লিখি।



বরং তোমরা তোমাদের মতোই থেকেছ

বাইরে কত জোরে বৃষ্টি পড়ছে
রাস্তায় কেউ ভিজছে
নাকি প্রচন্ড শূন্যের তারুণ্যে খড়কুটো চাইছে

কিচ্ছু জানার ফুরসৎ নেই।

এমত অবস্থায় আমি দুটো মাটির পুতুল তৈরি করেছি।
হঠাৎ ফোন বাজল
পুতুলের নাম হারিয়ে গেল
বৃষ্টির জলে ভেসে গেল তাদের হাড়গোড়।

যেদিন পৃথিবীতে থাকব না
এই পুতুল দুটো কোথাও আবার তৈরি হবে কিনা আমি জানি না
ভেবে দেখব তারও ফুরসৎ নেই

বৃষ্টি-ফুল কেমন যেন ঘন্টার শব্দে ঝরছে।



কবিতাটা এতটাই টাটকা যে আমি ঘুরে পড়িও নি এমনকি শিরোনামও নেই। এরকম কত কবিতাই যে হেলাফেলা হয়ে পড়ে থাকে আমি নিজেও জানিনা। বাড়ি ফেরার পর যখন মোবাইল হাতে নিই তখন হাতে সময় নেই রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। এত রাতে কি নিয়ে পোস্ট করব বলুন তো? ভাবলাম কিছু কেকের ছবি দেখাই। এক সময় খুব কেক বানানোর নেশা চেপেছিল। কিন্তু সেই সমস্ত ছবি এক জায়গায় করে পোস্ট করার জন্য আগে থেকে তৈরি থাকতে হয়। কারণ ছবিগুলো তো আর বললেই পাওয়া যায় না খুঁজে বের করতে হবে। অগত্যা ভাবলাম আমার মানসিক অবস্থা নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।

এখানে অনেকেই কবিতা দেয়, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে। অথচ জানেন কবি মহলে বহুল প্রচলিত একটা কথা রয়েছে। সেটা হলো কবিতার প্রেক্ষাপট জানতে চাইলেও কবিতার মূল বক্তব্য পাঠকের কাছে কবি গিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে এমনটা হয় না। কারণ যে কবিতা কবি এ মন নিয়ে লিখেছেন সেই মনটাই পরবর্তীকালে থাকছে না, আবার কবি যদি সব বলে দেয় পাঠক পড়ে কি উদ্ধার করবে, কবিতার নানান বিশ্লেষণই বা কি করে হবে।

কবিতা যদি পোস্টমর্টেম নাই করলো তবে তো কবি লেখাই বৃথা। এইসব ভেবেই আজকের অকবিতার কোন বিশ্লেষণ করলাম না। আর সত্যি বলতে কি এইসব কবিতার বিশ্লেষণ কিছু নেই। যেটুকু লিখেছি সেটাই কথা। কোন রূপক নেই কোন অলংকার নেই। এরপরেও যদি প্রতিটা লাইন বুঝিয়ে দিতে হয় তাহলে আর সাহিত্যের পাঠক কেন। তাই না?

আচ্ছা বন্ধুরা আমার কথা শুনে মনে হচ্ছে না অন্যান্য দিনের থেকে একটু অন্যরকম বলছি। হ্যাঁ আসলে মনটা খারাপ থাকলে আমি একটু রুষ্ট হয়ে কঠিন ধরনের কথাই বলি। ইচ্ছে করে বলি তেমনটা নয়। কিন্তু বলা হয়ে যায়। আপনাদের খারাপ লাগবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

বন্ধুরা আজ আসি, কাল কথা দিচ্ছি একদম নতুন ধরনের কিছু নিয়ে আসব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টাটা!

ছবিটি আমার ফোনেই তোলা তবে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট করে এডিট করেছি ইনশট অ্যাপে।


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61110.07
ETH 2731.78
USDT 1.00
SBD 2.45