🌊নমস্কার🌊

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

🏖️🏖️🏖️🌊🏖️🏖️🏖️

---

---

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

---

---

দীর্ঘদিন সমুদ্রের ধারে থেকে থেকে আমার যে খুব একটা সমুদ্রে ঘুরতে যেতে ভালো লাগে বিষয়টা সেরকম নয়। এখন আমার কাছে বেড়ানো মানে পরিবারের লোকজনদের সাথে বেশ কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটানো। সমুদ্র যে একেবারে ভালো লাগে না তা না কিন্তু সারা বছরই যেখানে সমুদ্রের ধারে যখন তখন যাতায়াত করি তাই আর আলাদা করে ইচ্ছে জন্মায় না। এবার যখন গরমের ছুটিতে দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম তখন দুই বাড়ির সবাই মিলে বারবার বলছিল কোথাও বেড়াতে যেতে। অনেকদিন জগন্নাথ মন্দির দর্শন হয়নি তাই ভাবলাম পুরী বেড়িয়ে আসি।

যেই ভাবা সেই কাজ। হঠাৎ করেই টিকিট কেটে ফেললাম। এদিকে পুরী গিয়ে যে কোথায় থাকবো তার কোন ঠিকানা নেই। আবার টিকিট কাটা হয়েছে ভুবনেশ্বর পর্যন্ত। অথচ ট্রেনটি একেবারে পুরী যায়। আসলে সবার সাথে গল্প করতে করতে এদিক ওদিক হয়ে কি যে মাথায় চলে আমি নিজেও বুঝতে পারি না। আমি একটু এরকমই চঞ্চল ধরনের। আর আমার মা সমস্ত সমাধান নিয়ে যেন আমার পাশে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকেন। মায়ের দিকে তাকালাম কাঁচুমাচু মুখে। মা আশ্বাস দিলেন। বললেন "কোন চিন্তা নেই আমি আছি তো!" সত্যি সত্যিই আমার মা যেন মুশকিল আসান। উনি ঠিক করলেন ভুবনেশ্বরী আমাদের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় আছেন যার দীর্ঘদিনের বাস এবং বিশাল একখানা বাড়ি। যোগাযোগ করে রাতটুকু থাকার ব্যবস্থা করলেন এবং পরের দিন যাবার জন্য একটি গাড়ি ভাড়ার কথাও বললেন। আবার পুরীতে মায়ের আরেক দূর সম্পর্কের ভাইপো রয়েছেন তার আবার হোটেল ব্যবসা। যদিও সমুদ্র থেকে প্রায় পাঁচ সাত মিনিট হাঁটার পথে দূরত্ব কিন্তু আমার মনে হল পরিচিত মানুষের কাছেই থাকা ভালো সে ক্ষেত্রে খরচাও একটু কম হয়। এভাবেই হয়ে গেছিল থাকার বন্দোবস্ত।

সেই দিনগুলোতে জানতাম না যে আমি এখানে ব্লগিং করব তাই যাত্রাপুর থেকে আমার আর ছবি তোলা হয়নি যেমন সাধারণভাবে ভালো ভালো স্পট দেখে ছবি তুলি সেরকমই ছবি রয়েছে। তাই বলে কি আপনাদের সাথে ভ্রমণের ষোলআনা গল্প করব না? নিশ্চয়ই করব। কারণ এতজন লোককে নিয়ে যে গিয়েছিলাম সেখানে আমাদের হাস্যকর বিপত্তির কোন শেষ ছিল না। প্রথমত শতাব্দি নামক ট্রেনটিতে যে খাবার দাবার দেয় সে কথা আমরা কেউই নোটিশ করিনি। অনেক লোকজন তাই বাড়ি থেকে আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে ট্রেনে উঠার পর ট্রেন খাবার খাব না বাড়ির খাবার খাব সেটা ভেবে নিজেরা প্রচন্ড হাসাহাসি করেছি। আবার রাতের কথায় যদি বলি মাসির বাড়িতে মাসি প্রচুর রান্নাবান্না করে রেখেছে। ফলে আমাদের অত রান্না যেন সর্বত্রই বাড়তি।

সে যাই হোক বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে হই হই করতে করতে আমরা সময়মতেই পৌঁছে গিয়েছিলাম ভুবনেশ্বর। তখন কিন্তু বেশ রাত্রি হয়ে গেছিল সম্ভবত সাড়ে আটটা নটা। সময়টা আমার ঠিক মনে নেই। ওখানে নেমে অটো করে চলে গিয়েছিলাম আমার ওই দূর সম্পর্কের মাসি বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখলাম সত্যিই তাদের বিরাট বাড়ি। আমাদের এই ৮-১০ জন লোকের থাকার কোন অসুবিধা নেই। আর মাসিও সত্যি সত্যি অনেক রান্নাবান্না করে রেখেছিলেন। আমরা হাত-পা ধুয়ে বাচ্চাদের খাইয়ে নিজেরাও খাওয়া-দাওয়া করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম। কারণ পরের দিন আবার বেরোনো।

ভুবনেশ্বর দিয়ে যাবার একটাই উদ্দেশ্য ছিল কোনারকের মন্দির দর্শন। তো শুধু কি আর কোনারকের মন্দির দেখে বেরোবো? টাকা তো সারাদিনেরই নেবে। তাই ঠিক করলাম একটু এদিক-ওদিক ঘুরব৷ মাঝখান থেকে মা বললেন লিঙ্গরাজের মন্দিরটা যেতেই হবে। হোক যাওয়া হোক। সবার বাবা আমাদের নিয়ে বেরিয়েছি আমরা ছোটরা। এতকাল আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদের ঘুরিয়েছে এখন আমাদের পালা। আসলে বাবা মায়েদের জন্য কিছু করতে পারলে খুব ভালো লাগে। বাবা-মায়ের ঋণ তো আর কখনো শোধ করা যায় না। তাই চেষ্টা করি ওনাদের ইচ্ছেগুলোকে মেটানোর। তাই মার মত রেখে দেদার বলে দিলাম "চলো কোন সমস্যা নেই"।

লিঙ্গরাজ মন্দিরটা কিন্তু বেশ ভালো। আমি আগে কোনদিনও যায়নি। ভেতরে শিব মন্দির রয়েছে। যথারীতি মানুষের বাইরে ভিড় না থাকলেও ভেতরে মারাত্মক ভিড়৷ ঠেলাঠেলির মধ্যে দেখলাম চাতালের উপর বিশাল শিবলিঙ্গ। এসবের থেকেও আমার যেটা মজাদার লেগেছিল ওই মন্দিরের সামনে একটি লোক বসে বসে রুদ্রাক্ষের ফল কেটে রুদ্রাক্ষ বিক্রি করছিলেন। আমিও দুটো নিয়েছিলাম। কাটার পর আমার পাঁচ মুখী রুদ্রাক্ষ বেরিয়ে ছিল।

এরপর আমরা চলে গিয়েছিলাম ধবলগিরি। ধবলগিরি - সে কোন ছোটবেলায় এসেছিলাম, তখন শুনেছিলাম সাদা রঙের স্তুপ বলে একে ধবলগিরি বলা হয়। সেদিন বীভৎস গরম ছিল। তার মধ্যেই আমরা গেলাম সিঁড়ি চড়ে। আমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক তাদের পাঠিয়ে দিলাম লিফটে করে। গরমে সবারই খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই নেমে এসে ডাবের জল খেলাম। ডাবের মধ্যে অনেক শাঁস ছিল আমার একেবারে ইচ্ছে হচ্ছিল না সব ফেলে দেই। আমার মাসি আমাকে বললেন সব নিয়ে নিতে। ব্যাস দোকানদারকে বলে সমস্ত নারকেল আর কচি শাঁস কাটিয়ে নিয়েছিলাম।

এরপর সোজা কোনারক। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল কোনারক মন্দির দেখবার। কেন জানেন? আগেও তো বহুবার দেখেছি তবু কেন মন হল। একবার মেয়েকে পড়াতে গিয়ে জেনেছিলাম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মতো ভারতের সপ্তম আশ্চর্য রয়েছে। সেই সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি কোনারকের মন্দির। তারপর থেকেই কোনারকের মন্দির নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছি। কোনারকে গিয়েও একটি এক্সিবিশন ঘরে যেখানে অনেক ধরনের স্কালপচার রাখা আছে সেখানে একটি ভিডিওর মাধ্যমে দেখেছি। এই গল্প আপনাদের কাছে আরেকদিন করব। মেয়েকে ১০ টাকার নোট বের করে দেখালাম। ওই রথের চাকা এই মন্দিরের রথের চাকা।

মাত্র কয়েক মাস আগে হাম্পি গিয়েও দেখেছিলাম স্টোন চ্যারিয়ট। অর্থাৎ পাথরের রথ। সেটি ও ভারতবর্ষের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। তবে সেটি ১০ টাকায় নয় ৫০ টাকার নোটে দেখা যায়। স্টিমিট জয়েন করার পরেই একটি পরীক্ষা মূলক পোস্ট করতে গিয়ে ওই হাম্পির কথা লিখেছিলাম। তখন পোষ্টের নিয়ম কানুন খুব একটা জানতাম না। তো ভাবছি এ পুরী আর কোনারকের কথা শেষ হলে হাম্পির কথা ভালোভাবে একবার বলবো। অনেকক্ষণ ধরে এই মন্দিরটা দেখলাম যেন একটি রথের মতো। মন্দিরের পাশে অনেকগুলো বড় বড় পাথরের চাকা। কি অপূর্ব তার কারুকার্য৷ এদিকে গরমের তো শেষ নেই। রোদের তীব্র দাবদাহ। ড্রাইভার অস্থির হয়ে যাচ্ছিল। বারবার তাড়া দিচ্ছিল। অগত্যা আমরাও চলে আসতে বাধ্য হলাম। গাড়িতে উঠেই এসির জন্য হাঁপিয়ে পড়ছিলাম। একটু পরে স্থিতিশীল হলো অবস্থা। আমরা চললাম পুরীর দিকে। সমুদ্রের ধার দিয়ে গাড়ি ছুটল৷ পথে পড়েছিল পিপুলি গ্রাম। কেউ বলল না দেখার কথা, আর আমারও ঘুম ধরে গিয়েছিল।

বিকেলের দিকে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম। সামান্য রেস্ট নিয়ে, জামা কাপড় বদলে সন্ধ্যেবেলায় বিচের ধারে চলে গেলাম। তারপরও অনেক ঘটনা ঘটলো অনেক গল্প তৈরি হলো। একদিনে তো আর সবটা লেখা যায় না তাই আগামী কোন পোস্টে আবার লিখব।

ছবিগুলো কিছু পুরীর কিছু ভুবনেশ্বরের। কয়েকটি আজ শেয়ার করলাম। বাকি আবার পরে করব। কারণ এবার পুরী গিয়ে অনেক না দেখা জায়গা দেখেছি। সেগুলোর ইতিহাস কিন্তু বেশ রোমহর্ষক। আপনাদের আগামী পোস্টে জানাবো।

আজ এ পর্যন্তই থাক। আমার প্রিয় বাংলাদেশী বন্ধুরা আপনারা তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন এই কামনাই করছি। আপনাদের সাথে কোন লেখা শেয়ার না করতে পারলে, আপনারা না পড়লে সত্যিই ভালো লাগেনা। আমার বাংলা ব্লগ কিন্তু খাঁ খাঁ করছে আপনাদের ছাড়া। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

এই ছবিগুলো কিন্তু সবই আইফোন ১৪ প্রো তে তোলা।

৫% এবিবি স্কুল কে বেনিফিসিয়ারি ও ১০% লাজুক খ্যাঁক কে