একটি ভয়ানক রাতের গল্প (শেষ পর্ব)
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
দুইদিন ধরে যে গল্পটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছি আজকের সেটার শেষ সমাপ্তি টানতে চলেছি।তো যাইহোক আগের দুইটা পর্বের লিংক আমি দিয়ে দিলাম চাইলে পড়তে পারেন।প্রথম পর্ব,দ্বিতীয় পর্ব
বিভিন্ন প্রশ্ন মাথায় ঘুরতেছিল তখন।কিন্তু এতকিছুর পরেও নিজেকে কুল দেখানোর চেষ্টা করতেছিলাম,এমন ভাব নিচ্ছিলাম যেনো কিছু হয়েই নাই আমার সাথে।আর গুন গুন করে গান গাইতেছিলাম কারণ এই পরিস্থিতিতে আমি যত ফোকাস দিবো ওই ভূতুড়ে ব্যাপারগুলয় তত ভয় পাবো এটাই সাভাবিক।আর এজন্যই ওইসব চিন্তাভাবনা মন থেকে দুর করার জন্য গান গাইতেছিলাম।কিন্তু দুঃখের বিষয় পথ আর শেষ হয় না,সেই মিনিট 15 ধরে হেঁটেই চলেছি।আর পিনপতন নিরবতায় গাছের পাতার মড়মড় শব্দগুলো কেমন যানি একটা ভূতুড়ে শিহরণ জাগাচ্ছিলো মনে।আবার মাঝে মাঝে বড়ো বড় গাছগুলোর দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে কে যেনো দাড়িয়ে আছে সেখানে।আর আমি যতই চেষ্টা করছি এই ব্যাপারগুলো ভুলে যেতে ততই আরো বেশি মনে পড়ছে।আবার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে কেউ পিছন থেকে আমাদের ফলো করছে আর আমাদের সাথে সাথেই হাঁটছে।মাঝে মাঝে আমাদের ছাড়া আরও কারো পায়ে হাটার শব্দ পাচ্ছিলাম।কিন্তু সেটা আসলেও আমার মতিভ্রম ছিল কি না এটা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এতকিছু হয়ে যাচ্ছে তবুও আমি লুমানকে বুঝতে দিচ্ছি না,ও হাঁটছে ওর মত আর আমি আমার মত।একটা পর্যায়ে গিয়ে লুমানকে জিজ্ঞেস করলাম "কিরে রাস্তা আরো কতদূর,নাকি আজকে সারারাত হাটা লাগবে। লুমান কিছুই বললো না,আমি এবার অনেকটা রাগ হয়ে কইলাম মেজাজটা খারাপ করিস না।নাটক শুরু করছিস নাকি?ওয় মুহূর্তেই চোখ লাল করে আমার দিকে তাকাইলো।আমি রীতিমত একটু ভয় পেয়ে গেলাম।কারণ লুমান এর আগে থেকেই প্যারানরমাল একটু সমস্যা আছে। ও আমাদের বলছিলো ওর সাথে একটা জ্বীন থাকে যেইটা মাঝে মাঝেই ওকে বিরক্ত করে।আর এই জন্য লুমান এর গায়ে এখনও তাবিজ দেখা যায়।যাইহোক ও আমারে বললো এখনো তো প্রথম শ্মশান ঘাট এই পার হইলাম না তাতেই এই অবস্থা।আমি রীতিমত অবাক ,এতক্ষণ ধরে হাঁটছি তবুও এতদূর পিছনে পড়ে আছি এটা কিভাবে সম্ভব!
এরপর হাঁটতে হাঁটতে সেই শ্মশান ঘাটের কাছে চলে আসলাম যেই শ্মশান ঘাটে এর আগেরবার তিনটে কুকুরের দেখা পেয়েছিলাম।তো এবারও শ্মশান এর গেটের সামনে দিয়ে যাবো আর অমনি কাকতালীয় ভাবে আবার সেই কুকুর তিনটি আমাদের সামনে এসে উপস্থিত।আমি আর লুমান এবার সত্যিই একটু ঘাবড়ে গেলাম কারণ কুকুর গুলও ঠিক আমাদের রাস্তা ব্লক করে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।এখন না পারছি পিছনে দৌড়াতে না পারছি সামনে এগিয়ে যেতে।এদিকে লুমান ও মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারতেছে না আমিও কিছুই বলতে পারতেছি না।একদম বোবার মত দুইজন দাড়িয়ে আছি আর একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা দেওয়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু একটু পরেই সেই কুকুরগুলো আমাদের সামনে থেকে পিছনে চলে গেলো।চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি লুমানকে ডাক দিয়ে বললাম "একটা বিষয় খেয়াল করছিস,আমরা কিন্তু কথা বলার চেষ্টা করেও কইতে পারি নাই।এই কথায় ও আমার সাথে সম্মতি পোষণ করলো,তারপর ও বললো আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না তাড়াতাড়ি চল।"
আমরা দুইজনে বড়ো বড়ো ধাপে হাটা শুরু করলাম।মনের মধ্যে যে ঝড় চলতেছে এইটা কেউ কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না।ঠিক একটু দুর পথ হেটে আসার পর খেয়াল করলাম আমাদের পিছনে কেউ আসছে দৌড়ায় দৌড়ায়।আমি লুমানকে ইশারা দিয়ে বললাম হাটা একটু ধীরে করতো!এরপর স্পষ্ট শুনতে পেলাম সেই কুকুরগুলো আমাদের পিছনে পিছনে আসতেছে আর আমরা দাড়িয়ে গেছি দেখে ওরাও দাড়িয়ে গেছে কিন্তু ওদের হাপানোর যে শব্দ সেটা ওই নিরিবিলি পরিবেশে স্পষ্ট কানে আসতেছিল।কিন্তু পিছনে ঘুরে যে তাকাবো সেই সাহসটা ছিল না আমাদের।আর আমরাও হাঁটছি আর ওই শব্দটা তখন ও কানে আসছে।আর চারদিকে থেকে অদ্ভুত সব পাখির ডাক ভেসে আসছিলো,যেগুলা এর আগে জীবনেও শুনি নাই।আর ভয়ে মুখ চোখ সব শুকায় গেছে,মনে তখন একটাই ভাবনা বাসা কখন যাবো?আর এদিকে যত জোরে হাটার চেষ্টা করছি ততই যেনো ধীরে হয়ে যাচ্ছি।কোনো দিশা না পেয়ে এক ধ্যানে শুধু হাঁটতেই আছি।
অনেক্ষন ধরে হাটার পর সামনে দেখতে পেলাম সেই কবরস্থান!কিন্তু মাঝখানে যে শ্মশানটা ছিল ওটা যে কখন পার হয়ে এসেছি সেটা ভুলেই গেছি।এবার লুমান আমারে জিজ্ঞেস করলো "কি ব্যাপার মাঝখানের রাস্তাটা তো পারই করলাম না?আমি আর কিছু বলি নাই ওই মুহূর্তে।ঠিক একটু পরে খেয়াল করলাম আমাদের পিছনে যে কুকুরগুলো আসতেছিল সেগুলার আর কোনো সাড়াশব্দ নেই।কিন্তু যেই পিছন ঘুরেছি আমি রীতিমত অবাক!ভয়ে গা হিম হওয়ার উপক্রম আর এমন দৃশ্য দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।দেখি কুকুরগুলো তখন ও আছে পিছনে দাঁড়িয়ে আর কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওদের চোখগুলো খালি অগ্নি গোলকের মত জ্বলছে,আর মনে হচ্ছে প্রচন্ড খুদা আর রাগ নিয়ে ওরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,"এই বুঝি এক লহমায় আমাদের গ্রাস করে ফেলবে!"আর কুকুরগুলো এতটা বিদঘুটে কালো আর কুৎসিত ছিল যে এমন কুকুর এর আগে আমি কখনো দেখি নাই।এবং সাধারণ কুকুরের থেকেও বেশ বড়ো।আর এমন দৃশ্য দেখে আমি আগ পাচ না ভেবে দিলাম এক দৌড় আমার দৌড় দেখে লুমান ও দৌড়।
যে কবরস্থানটির কথা বলেছিলাম সেটা আমাদের বাসা থেকে প্রায় 5-7 মিনিট এর দূরত্ব।আর ঐযে দৌড় শুরু করেছি একবারে বাসায় এসে দৌড় থামিয়েছি।এরপর সজীব এসে দরজা খুলে দিল,আর আমরা হাপাতে হাপাতে উপরে উঠলাম।আসার পর শুধু মনে হচ্ছিল আমরা বোধয় অনেকক্ষণ ধরে হেঁটেছি আর আসতে যে সময় লাগার কথা তার থেকে বেশি সময় হেঁটেছি।কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে মোবাইল বের করে দেখি,আমরা যাওয়ার সময় যে সময় লেগেছে ঠিক তার থেকেও কম সময়ে এসে গেছি।আর এসে সজীব সহ বাকি সবাই ইচ্ছে মত দিল ধোলাই।যাইহোক ওই রাতে আর ঘুমাতেই পারি নাই ঠিকমতো,মাথায় খালি বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরতেছিল।আর ওই রাত অভাবে থাকার পর পরেরদিন সেখানকার এক স্থানীয় হুজুরের কাছে গেলাম এবং বিষয়টা ওনাকে খুলে বললাম।আমাদের কথা শুনে উনি কি যেনো দোয়া পড়ে আমার গায়ে ফু দিয়ে বললো ভয় পাওয়ার কিছু নাই,আর এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করিও তাইলে আর কোনো সমস্যা নাই।আর সেই রাতের কথা মনে হইলে এখনো দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।
যাইহোক শেষমেষ এই গল্পের সমাপ্তি হলো এখন।জানি না কতটুকু গোছায় লিখতে পেরেছি তবে নিজে যেভাবে উপলদ্ধি করেছি সেই বিষয়গুলো ওভাবেই তুলে ধরেছি।অতিরিক্ত কোনোকিছুই বাড়িয়ে বলি নি, যা লিখেছি সব সত্য।যাইহোক সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন এই কামনা করি।আর আমার মত অতিরিক্ত সাহস দেখাতে যাবেন না,নাইলে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।🙏
আপনার গল্পটি পড়ে আমার শরীর পুরো ঠান্ডা হয়ে গেল যেন। কিন্তু আমার কাছে ভূতের গল্প পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে। আমি তো ভাবছি আপনি তো সামনাসামনি এরকম কিছু ফিল করেছেন তাহলে আপনার কি অবস্থা হয়েছে। এরকম বাস্তব ঘটনা গুলো পড়িতে খুবই ভালো লাগে। আরো ঘটনা দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
আমিও মাঝে মাঝে ভূতের গল্প পড়ি আমারও ভালই লাগে।তবে এই ঘটনা যে আমার সাথেই হবে এমনটা ভাবি নি।যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে পুরো ঘটনাটি পড়ার জন্য।
কোয়াইট স্পুকি🧟♂️
দুই পর্বই শেষ হলো।হরর ফিল মোটামুটি ভালোই পেয়েছি।খুব সুন্দরভাবে আপনার ঘটনাটা বলেছেন।
শুভ কামনা রইলো।
ওইদিন আমার তাইলে কি অবস্থা হয়েছিল একবার ভাবেন🤗।
যাইহোক আপনি যে পুরোটা সিরিজ পড়েছেন এই জন্য কৃতজ্ঞ আমি আপনার কাছে 🥺
আপনার গল্পটি পড়ে আমি তো অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। রাতের বেলা কারো সাথে এমন হলে তার মুখের ভাষায় তো বন্ধ হয়ে যায়। আমি হলে সেখানেই শেষ। যখন আপনারা পিছে তাকিয়ে দেখলেন কুকুরগুলো তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। ওই সময় আমি দেখলে ওখানে মারায় যেতাম। এবং কবরের পাশ দিয়ে রাতের বেলা চলাফেলা করতে আমার অনেক ভয় লাগে। যাইহোক এক দৌড়ে আপনি ভাষা পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। ধন্যবাদ ভয়ংকর গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ভিতরে ভিতরে যে আমার অবস্থা নাজেহাল হয়েছিল সেটা মুখ খুলে না হয় নাই বলি। তবে যাই হোক আমার হুশ আক্কেল সব হয়ে গেছে। 😁
আপনার গল্পটি পড়ে আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আপনার তো অনেক সাহস বলতে হয়। রাতে এরকম পরিবেশে আমি হলে মারা যেতাম। যখন আপনার পিছনে কুকুরগুলো ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাকিয়ে রইল। এবং কবরের পাশ দিয়ে যখন আপনি যেতে লাগলেন। আমি হলে ওখানে শেষ হয়ে যেতাম। তারপর আপনি এক দৌড়ে বাসায় পৌছে গেলেন। তারপর আপনার বন্ধুরা শুনে আপনাকে দিলেন উত্তম মাধ্যম। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য।
তবে সাহস থাকলেও সেই দিনের ঘটনা একটু হলেও ভয় পেয়েছিলাম আপু। ঐদিন শুধু একটা জিনিস মাথায় আসছিল সেটা হলো সাহস রাখতে হবে নাইলে আমি শেষ এজন্য হয়তো ভালোই ভালোই ফিরে আসতে পেরেছি।
আপনার লেখা একটি ভয়ানক রাতের গল্প, শেষ পর্ব পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো। আসলে খুবই রোমাঞ্চকর গল্প ছিলো। মাঝে মাঝে আমার কাছে ভয় কাজ করতো। তারপরও পুরো গল্পটি পড়ে শেষ করলাম। এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
হাহা তাইলে একবার ভাবেন আমার কি অবস্থা হয়েছিল।যাইহোক পুরো গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।🙏
আমি তো ভাইয়া ভূতকে এমনি ভয় পাই। তবে ভূতের গল্প পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবছি আপনি কিভাবে তখন সহ্য করেছিলেন। আপনার তো সাহস অত্যাধিক ভাইয়া।
সাহস বলতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করি।কিন্তু ভয় যে পাই না এমন না।ভয় পাই কিন্তু ওই মুহূর্তে নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারি এই আরকি।😅
ভৌতিক কাহিনী গুলো সব সময় রহস্যময় হয়। এমন ঘটনা পড়তে মজাও লাগে। যাইহোক পুরো ঘটনা তাকে ভালোভাবে উপভোগ করেছি।