ঐতিহাসিক ইফতার মাহফিল
আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধুগন
আমি @mostafezur001 বাংলাদেশ থেকে
আজকে বুধবার, এপ্রিল ১০/২০২৪
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন আমিও ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে পুনরায় আরও একটা নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমাদের গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়া ঐতিহাসিক একটা জিনিসের বিষয়ে শেয়ার করার জন্য হাজির হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করে আসছি এই জিনিসটা আমাদের গ্রামে প্রত্যেক বছরই অনেক ধুমধাম করে পালন করা হয়। আপনারা হয়তোবা আমার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারছেন না আমি কি বিষয়ের কথা বলতে চলেছি। রমজান মাসের সব থেকে বড় একটা উৎসবের নাম হচ্ছে ইফতারি। ইফতারিকে কেন্দ্র করে আমরা অনেক ধরনের অনুষ্ঠান বা উৎসব লক্ষ্য করে থাকি। ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করে আসছি ২৯ রমজানের দিনে আমাদের গ্রামের সকল মানুষদেরকে নিয়ে একটা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। যেহেতু এই ইফতার মাহফিল এ আমাদের পুরো গ্রামের সকল মানুষেরা অংশগ্রহণ করে তাই এটা আমাদের গ্রামের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বুঝতেই পারছেন যখন একটা গ্রামের সকল রোজাদার একটা জায়গাতে এসে ইফতারি করে তাহলে সেখানে কতটা বেশি মানুষের সমাগম হয় আর তারা সকলে একত্রিত ভাবে ইফতার করতে পেরে কতটা আনন্দিত হয়। যেহেতু প্রতি বছর এমনটা হয়ে থাকে তাই এ বছরেও তার ব্যতিক্রম করলাম না আমরা। আর এই কাজটি করার জন্য সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করে গ্রামের যুবক সম্প্রদায়। যেহেতু আমি আমাদের গ্রামের যুবক সম্প্রদায়ের একজন সদস্য তাই আমি নিজেও এই ইফতার মাহফিল এর সাথে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিলাম। সেই ইফতার মাহফিলের বিষয়গুলোই আজকে আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য হাজির হয়েছি।
প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ফল এর সমন্বয়ে এই ইফতার মাহফিল টাকে সাজানো হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা চিন্তা করলাম যে আমাদের গ্রামে হয়তোবা এমনও অনেক মানুষ রয়েছে যারা আজ পর্যন্ত বিরিয়ানি এর সাথে পরিচিত নয়। আসলে গ্রামে এমনটা হয়েই থাকে অনেক মানুষ রয়েছে যারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পারে না। ঠিক তেমনটাই চিন্তা করে আমরা এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা অন্যান্য বছরের মত না করে এবার ইফতারিতে বিরিয়ানি এর ব্যবস্থা করব। যেন সেই সমস্ত মানুষেরা অন্তত একবার হলেও বিরিয়ানি স্বাদ গ্রহণ করতে পারে যারা কোনদিন বিরিয়ানি খাইনি। যেহেতু ইফতারিতে বিরিয়ানি তাই এই বিষয়ে আমরা অনেকেরই বিরোধিতা করতে লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করেন যে, হ্যাঁ আমাদের এই উদ্যোগটা সত্যি প্রশংসনীয়। যদিও বিরিয়ানি এর ব্যবস্থা করার জন্য অনেক বেশি টাকার প্রয়োজন তারপরও তিনি আমাদেরকে সাহস দেন যেন আমরা এই কাজটা করতে পারি। যখনই আমরা একজন বড় মানুষের সাহস পেয়ে গেলাম তখন আর আমরা কোনভাবেই থেমে থাকলাম না। অনেক কষ্টে আমরা পুরো গ্রাম থেকে টাকা উত্তোলন করলাম এবং ২৯ রমজানের দিনে সকালেই সকল বাজার শেষ করে ফেললাম। আমরা সকাল ছয়টার দিকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম কেননা এখানে অনেক বড় একটা আয়োজন করতে হবে তাই কোনভাবে দেরি করা সম্ভব নয়।
সকল জিনিসপত্র চলে আসার পরেই আমরা দুপুরের দিকে রান্নার কাজ শুরু করে দিলাম। সত্য কথা বলতে যখনই আমাদের গ্রামের স্কুলের মধ্যে বিরিয়ানি রান্না চলছিল ঠিক সেই মুহূর্তে যেন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করছিলাম। সকলে মিলে একসাথে রান্না করছিলাম এবং সকল জিনিসপত্র আমরা নিজেরাই গুছিয়ে দিয়েছিলাম এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভালো লাগছিল।
যেহেতু প্রায়ই ৮০০ সদস্য এর জন্য আমরা বিরিয়ানি রান্না করতে শুরু করেছিলাম তাই বেশ কয়েক ডেকজি বিরিয়ানি রান্না করতে হয়েছে আমাদেরকে। প্রথম ডেকজি বিরিয়ানি রান্না শেষ হয়ে যাবার পরে আমি এই ফটোগ্রাফি টা ধারণ করেছিলাম শুধুমাত্র আপনাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে।
শুধুমাত্র রান্না করলেই তো আর শেষ হয়ে যাবে না সেখানে পরিবেশন করার জন্য আরো অনেক কাজ রয়েছে। এর জন্য আমাদের সালাদ তৈরি করা শরবত তৈরি করা এবং বিরিয়ানি প্যাকেটিং করা অনেক কাজ। আমরা শেষমেষ ৭৫০ প্যাকেট করেছিলাম। আমরা আইডিয়া করেছিলাম যে এই ৭৫০ প্যাকেট দিয়েই এই বছরের মত আমাদের কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারবো।
সকল কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে সন্ধ্যা হবার ঠিক ৩০ মিনিট আগ মুহূর্ত থেকেই মানুষের আগমন শুরু হয়ে গেল। আমরা সেখানে একটা সুন্দর ব্যবস্থা করেছিলাম যেখানে আমাদের গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সকলের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে পারে। এই অনুষ্ঠানে আমাদের গ্রামের আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন অন্যান্য ব্যক্তিদের কে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল যেন তারা সকলে আমাদের এই ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করতে পারে। ইফতারির আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি ছিল সেই সময়টাতে হঠাৎ একই সাথে অনেক মানুষের সমাগম লক্ষ্য করলাম। একটা সময় তো আমরা রীতিমতো একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম যে এই ৭৫০ প্যাকেটে কি আমরা সকলকে ইফতারের ব্যবস্থা করে দিতে পারব। মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা অবশেষে সেটা করতে পেরেছি এর জন্য তার কাছে লাখো শুকরিয়া। এরপরে মাগরিবের আজান হবার সাথে সাথেই আমরা সকলে একত্রিত হয়ে ইফতারি করতে শুরু করলাম। আর এরই মধ্য দিয়েই এই বছরের মত আমাদের ২৯ রমজানের এই ইফতারি মাহফিলের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেল।
আশা করি পরবর্তী বছরে আবারও এমন একটা সুন্দর মাহফিল আমাদের গ্রামবাসীদের কে উপহার দিতে পারব। আমাদের যুব সমাজের গ্রহণ করা এই উদ্যোগটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আজকের মত এ পর্যন্তই পরবর্তী সময়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব নতুন কোন একটা পোস্টের মধ্য দিয়ে।
আমি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।আমি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানায় বসবাস করি।আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশকে খুবই ভালোবাসি।বর্তমানে আমি গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরী স্কুলের একজন শিক্ষক।আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।আমি বিশ্বাস করি, আমার এই সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার সৃজনশীল কাজটি সার্থক হবে। তাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের মাঝে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৃজনশীল জিনিস নিয়ে উপস্থিত হতে। আমি ২০১৭ সালে প্রথম এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছিলাম সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই প্লাটফর্মের সাথেই রয়ে গিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতেও এই প্লাটফর্মের সাথেই থেকে যাব।
আমার কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ফেসবুক টুইটার
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Posted using SteemPro Mobile
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
যেহেতু আপনারা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন ২৯ রমজানে গ্রামের সবাই মিলে একসাথে ইফতার করে তাহলে তো এটা আসলেই ঐতিহাসিক। গ্রামের সব মানুষরা মিলে একসাথে এরকম খোলা মাঠে ইফতার করার অনুভূতিটাই আলাদা। আয়োজন দেখে আসলেই একটা উৎসব মনে হচ্ছে। ৭৫০ প্যাকেট ইফতারের আয়োজন করেছেন আপনারা। বেশ ভালো লাগলো মুহূর্তগুলো দেখে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য।
এ বছরেই সব থেকে বেশি মানুষের সমাগম হয়েছে আমাদের এই ইফতারের মাহফিলে।
প্রতিবছর আপনাদের এই ঐতিহাসিক ইফতার মাহফিল আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। কালকের ইফতারের বিরিয়ানি টা দারুন হয়েছিল। এভাবে গ্রামের মানুষ সবাইকে একত্র হয়ে ইফতার করলে কেমন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। আপনার ইফতার মাহফিলের পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
ঠিক কথা বলেছেন গ্রামের সকল মানুষ যখন একত্রিত হয় তখন বিষয়টা খুবই ভালো লাগে।