জেনারেল রাইটিং-আমার শৈশবের প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলা||

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। লেখালেখি করতে আমার অনেক ভালো লাগে। আর শৈশব স্মৃতি নিয়ে লিখতে বেশি ভালো লাগে। আজকে আমি আমার শৈশব স্মৃতির কিছু কথা সবার মাঝে তুলে ধরব। সেই সাথে আমার শৈশবের প্রিয় বান্ধবীর কথা আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আশা করছি আমার এই পোস্ট সবার ভালো লাগবে।


আমার শৈশবের প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলা:

girls-1290735_1280.jpg

Source


আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। যেহেতু এই চাকরিগুলোতে ট্রান্সফার অনেক বেশি হয়। তাই ফ্যামিলি নিয়ে নতুন নতুন জায়গায় শিফট হতে হয়। ছোটবেলায় আমি আমার চাচার সাথেই ছিলাম। চাচার ফ্যামিলির সাথেই বিভিন্ন জায়গায় ছিলাম। যখন একটু বড় হলাম তখন আবারো বাবা-মার কাছে গেলাম। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বাবা বদলি হলেন কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে। নতুন জায়গায় যাওয়ার পর বাবা কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসে কোয়াটার পেয়ে গেলেন। এরপর ফ্যামিলি নিয়ে আবারও কুমিল্লা সেনানিবাসে শিফট হলেন। আমি এর আগে আমার চাচা চাচির সাথেই ছিলাম। এবার যখন কুমিল্লায় বদলি হলেন আমাকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো। নতুন জায়গায় গিয়ে প্রথমে একটু খারাপ লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না নতুন জায়গায় কিভাবে এডজাস্ট করবো। নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু বান্ধবী সবকিছু মিলে মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। প্রথম দিন যখন স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলাম তখন ভর্তি পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়ে গেলাম। আর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলাম।


প্রথম দিন যখন স্কুলে গেলাম তখন বেশ মন খারাপ ছিল। কাউকে তেমন একটা চিনি না। নতুন জায়গায় গিয়ে তো আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। বার বার শুধু কান্না পাচ্ছিল। আমাদের স্কুলের স্যারের মেয়ে আমাদের সাথেই পড়তো। মেয়েটি বেশ ভালো ছিল। এরপর সে আমাকে বলল তোমার কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাতে পারো। তখন আমার ভীষণ মন খারাপ লাগতো। কোথাও যেন শূন্যতা রয়ে গিয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে একটি মেয়ের সাথে আমার বেশ বন্ধুত্ব হলো। মেয়েটির নাম ছিল তানজিলা। আমরা যেহেতু স্কুলের টিচারদের কাছেই টিউশন পড়তাম সেই সুবাদেই তানজিলার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। কখন যে ধীরে ধীরে তার সাথে আমার এতটা বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো তানজিলা আর আমার মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। আমি ওর থেকে অনেকটাই লম্বা ছিলাম। আর তানজিলা সাইজে অনেক শর্ট ছিল। দুজনের জুটি দেখে মাঝে মাঝে নিজেরও হাসি পেত। কিন্তু কেন জানি তার সাথেই আমার বন্ধুত্বটা হয়ে গিয়েছিল। আসলে বন্ধুত্ব কখনো চেহারা কিংবা রূপ দেখে হয় না। বন্ধুত্ব হয় মন থেকে।


তানজিলার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর আমার সময় গুলো ভালোই কাটছিল। তানজিলা ভালো গান গাইতে পারতো। আর আমি সবসময় তাকে উৎসাহ দিতাম স্কুলের প্রোগ্রামগুলোতে গান গাওয়ার জন্য। যেহেতু আমরা স্কুলের পাশের কোয়ার্টারে থাকতাম তাই স্কুলে যেতে খুব একটা সমস্যা হতো না। অন্যদিকে তানজিলা যেহেতু কিছুটা দূরে থাকতো তাই মাঝে মাঝেই লেট করে আসতো। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করলাম। ও যদি কখনো স্কুলে না আসতো তখন আমার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যেত।এরপর ক্লাস ক্যাপ্টেন কে বলে আমাদের দুজনের সিট কাছাকাছি করে নিলাম। আমাদের ওই স্কুলে সিট নির্ধারণ করা ছিল। যার যেটা সিট সেখানেই বসতে হবে। তাই আমি তানজিলাকে ফাস্ট বেঞ্চে দিয়ে সেকেন্ড বেঞ্চে আমি বসেছিলাম। তানজিলা যেহেতু একটু শর্ট ছিল তাই তাকে ফার্স্ট বেঞ্চে দেওয়া হয়েছিল। তানজিলা আর আমি কখন যে এতটা আন্তরিক হয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি। এরপর হঠাৎ করে আমার বাবার আবারো বদলি হয়ে গেল। তখন ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। এমনকি তানজিলার অনেক মন খারাপ হয়েছিল। আমি যেদিন স্কুল থেকে বিদায় নিয়েছিলাম সেদিন তানজিলা আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য স্কুলে আসেনি। তার অনেক মন খারাপ ছিল। হয়তো শেষবার আমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারেনি। তাকে শেষবার না দেখতে পেয়ে আমার খুবই খারাপ লেগেছিল।


এরপর বেশ কয়েকজন বান্ধবীর ফোন নাম্বার ডাইরিতে নোট করে নিয়েছিলাম। তখন হয়তো সেভাবে হাতে হাতে ফোন ছিল না। তাই যোগাযোগটা খুব ভালো ছিল না। বাবার ফোন দিয়ে মাঝে মাঝে সবার সাথে কথা বলতাম। কিন্তু কেন জানি সময়ের সাথে সাথে সবাই হারিয়ে গেল। তানজিলার সেই ফোন নম্বরটি আজও আমার কাছে আছে। কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাইনি। এখনো মাঝে মাঝে সেই ফোন নম্বরটিতে ফোন করি। অন্য কেউ একজন ফোন রিসিভ করে। সে তানজিলাকে চেনে না। কিভাবে যে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। এখনো মাঝে মাঝে ফেসবুকে তার নাম দিয়ে সার্চ করি। সত্যি কথা বলতে এই শূন্যতা আজও আমার হৃদয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে। হয়তো আর কখনো তার সাথে দেখা হবে না। তবে সারা জীবন সে আমার মনে রয়ে যাবে। আমার হারিয়ে ফেলা সেই বান্ধবীর কথা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। আমার মত হয়তো অনেকেই আছেন যাদের বাবা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতেন। আর সেই সুবাদে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যেত। কিন্তু তাদেরকে ছেড়ে আসার সেই শূন্যতা আর চিরতরে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা অনেক বেশি। সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই আজও তোকে অনেক মিস করি বান্ধবী।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

দারুণ লিখেছেন আপু ...।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু বাবা-মায়ের বদলি হওয়ার কারণে আমরা নিজেদের কাছের বান্ধবী গুলোকে হারিয়ে ফেলি। আমি দেখেছি আপনি তার জন্য এখনো অনেক মন খারাপ করেন। আমারও ভীষণ খারাপ লাগে তানজিলা আপুর জন্য। তানজিলা আপুর ছোট বোন ছিল আমার বান্ধবী আমিও তাকে ভীষণ মিস করি। যদিও তার আমার স্কুল আলাদা ছিল আপনাদের বান্ধবীর খাতিরে তার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হয়েছিল। আপনার পোস্টটি পড়ে তাদের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

সেই সময় গুলো হারিয়ে গেছে। আর মানুষগুলোও জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। হয়তো চাইলেও আর তাদেরকে কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

ট্রান্সফারের এই চাকরি গুলো সন্তানদের উপরে কিন্তু একটা প্রভাব ফেলে। কিন্তু কি আর করার সবকিছু আমাদের মেনে নিতে হয়। এটা ঠিক বলেছেন আপু বন্ধুত্ব কখনো চেহারা দেখে হয় না। বন্ধুত্ব হয় মন থেকে। মনের মিল না থাকলে কখনোই কেউ আমাদের বন্ধু হয় না। আপনার স্মৃতি গুলো পড়ে ভালো লাগলো। দোয়া করি যেন আপনি আপনার বান্ধবীকে কোনো না কোনোভাবে ফিরে পান।

 2 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু ট্রান্সফারের চাকরিগুলোর ক্ষেত্রে সন্তানদের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। অনেকের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হলেও তাকে ছেড়ে চলে আসতে হয়।

 2 months ago 

আপু আপনার ছেলেবেলার গল্পটি পড়ে মনের কোনায় আমার একটু ব্যথা অনুভব হলো। আমিও আমার এমন কিছু বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলেছি।আমি আজ ও খুঁজি। আপনার মতো ফেসবুকে নাম লিখে সার্চ করি।কিন্তু দুঃখের বিষয় খুঁজে আজ ও পাইনি।বাবার বাসা পুরনো ঢাকাতে গেলে রিকশায় বসে এদিক-সেদিক খুঁজে ফিরি।কিন্তু নেই কোথাও নেই।খুব কষ্ট লাগলো মনে।পৃথিবীটা গোল হয়তো কোন এক সময় ঠিক সামনে এসে দাঁড়াবে।

 2 months ago 

আপু আপনি তবুও আশেপাশের খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমাদের দূরত্বটা অনেক বেশি। আমার আর কখনো কুমিল্লা যাও হবে না তাকে খোঁজাও হবে না।

 2 months ago 

খুবই খারাপ লাগলো আপু আপনার গল্পটি পড়ে। সত্যিই আমাদের এমন কাছের অনেক বন্ধু আছে তাদেরকে আমরা একটা সময় হারিয়ে ফেলি। আমারও খুবই কাছের একজন বন্ধু আছে কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তবে তার সাথে কাটানোর সময় গুলো খুবই মিস করি। যদিও জানিনা মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া হবে কিনা তবে আমি চাই একবার হলেও যেন আপনার বান্ধবীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়।

 2 months ago 

সত্যি আপু আমার সেই প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। এখনো অনেক খারাপ লাগে। হয়তো কখনোই তার সাথে দেখা হওয়া সম্ভব নয় আপু।

 2 months ago 

ব্যাপারটা জেনে আসলেই খুব খারাপ লাগলো আপু। এটা ঠিক বন্ধুত্ব কখনো রূপ দেখে হয় না। ছোটবেলার বন্ধু বান্ধবদের কখনোই ভুলা যায় না। তবে আপনার সাইড থেকে আপনি যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন আপনার বান্ধবী তানজিলাকে খোঁজার জন্য। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকের সাথে আমরা কানেক্ট হতে পারি। হয়তোবা পরবর্তীতে ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার বান্ধবীকে খুঁজে পেতেও পারেন। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 64689.27
ETH 3135.60
USDT 1.00
SBD 2.56