গল্প-মেঘলা দিনে||

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে গল্প লিখার চেষ্টা করি। তবে আজকে অনেক ব্যস্ত সময় কেটেছে। ব্যস্ততা শেষ করে এসে যখন গল্প লিখতে বসলাম তখন এলোমেলো চিন্তা গুলো এসে বারবার ভিড় করছিল। মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া গল্প লেখা যায় না। এরপরও চেষ্টা করবো একটি গল্প সবার মাঝে উপস্থাপন করার। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


মেঘলা দিনে:

dark-2600257_1280.jpg

Source


দিনটা আজ বড্ড মেঘলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে সজলের চোখ মুখ যেন ছলছল করছে। একটা সময় মেঘলা আকাশ তার বেশ প্রিয় ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজের মনের ইচ্ছে গুলো বিলীন হয়ে গেছে। ভালোলাগাগুলো হারিয়ে গেছে ওই দূর আকাশের মেঘের ভাঁজে। আর সজলের সেই ভালোলাগাগুলো যেন সময়ের সাথে থমকে গেছে। সময়ের সাথে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। হয়তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা সজলকে বদলে দিয়েছে। সেই সাথে সজল বরণ করে নিয়েছে একাকীত্ব। কোন এক মেঘলা দিনে সজল নীলাকে প্রথমবার দেখেছিল। সেই মেঘলা দিনের মৃদু হাওয়ায় নীলার চুল গুলো যখন বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তখন সজলের বারবার মন চাইছিল একটুখানি চুলগুলো সরিয়ে তার মায়া ভরা মুখটাকে দেখতে।


ভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রথম সজলের সাথে নীলার দেখা হয়েছিল। সজল প্রথম দেখাতেই নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। নীলার মায়াবী চোখের চাহনি আর কাজল কালো দুটি চোখের মায়ায় পড়েছিল সজল। মেঘলা আকাশের প্রকৃতি আর নীলার খোলা চুলের দোল খাওয়া দেখে সজলের মনেও প্রেমের অনুভূতি জেগে উঠেছিল। সজল আড়াল থেকে নীলাকে দেখতো। আড়াল থেকে নীলাকে ভালোবাসত। সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস করে উঠতে পারেনি। বেশ কিছুদিন নীলা ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দিল। এভাবে যখন দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল তখন সজল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না। বারবার নীলাকে দেখার জন্য ছুটে চলে যেত নীলার হোস্টেলের সামনে। নীলা হয়তো বুঝতে পেরেছিল সজল তাকে ভালোবাসে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ভয় নীলাকে বারবার আটকে দিচ্ছিল। নীলাকে বড্ড বেশি মন মরা লাগছিল।


কোন এক মেঘলা দিনে সজল নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। ছুটে চলে গেল নীলার হোস্টেলের সামনে। নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলে দিল নিজের মনের কথা। নীলার মায়াবী চোখ যেন নিমিষেই বদলে গেল। কোন এক অজানা ভয় কিংবা আতঙ্কে নীলা শিউরে উঠছিল। নীলা কোন কথা বলেনি। চুপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ। দুজনের মুখে কোন কথা নেই। মনে হয় যেন দুটি মানুষের মনে হাজারো কথা কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। সেদিন নীলা সজলের চোখে চোখ রেখে কিছু বলতে পারেনি। শুধু নীরবে কেঁদেছিল। নীলর কান্না দেখে সজল ভেবেছিল হয়তো নীলা তাকে ভালোবাসতে পারেনি। এরপর থেকে সজল আর কখনোই নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি। বড্ড অভিমান করেছিল সজল। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। নীলকে আর এখনো ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।


অন্যদিকে সজলও বেশ অভিমান করেছিল। হঠাৎ একদিন নীলার এক বান্ধবীর সাথে সজলের দেখা হয়। যদিও নীলার বান্ধবীর সাথে স্বজনের কোন পরিচয় ছিল না। মেয়েটি এসে সজলকে বলল আপনি কি জানেন সেদিন নীলা কেন চুপ ছিল? সজল উত্তর দিল না। এরপর মেয়েটি বলল ভাইয়া আপনি মেঘলা দিন পছন্দ করেন আর মেঘলা দিন দেখলে নীলা ভয়ে আতকে উঠে। কোনো এক সময় সময় নীলাও মেঘলা দিন ভীষণ পছন্দ করত। কিন্তু তার জীবনে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগে এক মেঘলা দিনে নীলা যখন টিউশন পড়িয়ে হোস্টেলে ফিরছিল তখন কয়েকজন বখাটে ছেলে তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। আর কেড়ে নেয় তার সতীত্ব। নীলকে গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নীলাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল কোন এক ডাস্টবিনের পাশে। মেঘলা দিনের সেই আবহাওয়ায় লোক চলাচল খুবই কম ছিল। আর বৃষ্টির শব্দে নীলার সেই চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। সারারাত পড়েছিল রাস্তার পাশে। এরপর নীলাকে আমরা যখন কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন পুলিশ আমাদের কল করে জানায় নীলা হাসপাতালে আছে। ছুটে চলে গেলাম হাসপাতালে। মেয়েটিকে চেনাই যাচ্ছে না।


ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে মেয়েটি। চিৎকার করে কাঁদতে গিয়েও যেন কাঁদতে পারছে না। গলায় ওড়না পেচিয়ে আঘাত করার কারণে গলায় আঘাত পেয়েছে নীলা। সেই সাথে কথা বলার ভাষা হারিয়ে গেছে তার। তখন থেকে নীলা কথা বলতে পারে না। এমনকি নিজের ভিতরে লুকানো কষ্টগুলো প্রকাশ করতেও পারে না। চিৎকার করে কাঁদতে পারেনি মেয়েটা। নীলার বান্ধবীর কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনে সজলের দুচোখে পানি চলে এসেছিল। নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি সে। তাইতো সে নীলার ঠিকানা নিয়ে চলে যায় নীলার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখে মাঠের কোন এক প্রান্তে বসে মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নীলা। সজল নীলার পাশে গিয়ে যখন বসে তখন নীলা অবাক হয়ে যায়। সজল বলে নীলা আমি আবারো তোমার মেঘলা দিনের আনন্দ উপহার দিতে চাই। আবারো মেঘলা দিনের মাঝে দুজনে মিলে হারিয়ে যেতে চাই। তুমি কি আমার মেঘলা দিনে পথ চলার সঙ্গী হবে? সজলের মুখে এই কথাগুলো শুনে নীলা যেন অবাক হয়ে গেল। নির্বাক নয়নে শুধু তাকিয়ে ছিল নীলা। যেদিন নীলা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। আপন করে নিয়েছিল সজলকে। কিন্তু বিধাতা তাদের এই সুখ বেশিদিন দেননি। সময়ের সাথে সাথে মিলার গলার সমস্যাটি বাড়তে থাকে। নীলা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে ধাবিত হয় মৃত্যুর পথে। শেষ হয়ে যায় একটি ফুলের মত জীবন। আর সজল অনেক ভালোবেসেও হারিয়ে ফেলে তার নীলাকে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

নিলা ও সজলের সুন্দর ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। বেশ ভালো লাগলো আপনার এই অসাধারণ গল্প পড়ে। গল্প পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। গল্প পড়ার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানা যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ।

 4 months ago 

গল্প পড়তে আপনার ভালো লাগে জেনে খুশি হলাম আপু। আমিও গল্প লিখতে ভালোবাসি। এত সুন্দর করে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 4 months ago 

আমিও কোন এক সময় গল্প পরতে খুব ভালবাসতাম। আমাদের সেই সময়টাতে বেশি লাইব্রেরি ছিল না। হাতি গোনা দু তিনটে লাইব্রেরি ছিল তাও আবার গল্পের বই বিক্রি করতো না। গল্পের বই কেনার জন্য শুক্রবার ছুটির দিনে চলে যেতাম শহরে। শহরে গিয়ে ১ শো সিনেমা দেখতাম এবং দুই তিনটে গল্পের বই কিনে নিয়ে আসতাম। যাইহোক সময়ের সাথে সাথে বয়সও বেড়ে চলেছিল আর গল্প পড়াও ভুলে গিয়েছিলাম। আজ আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ করার মাধ্যমে আবারও গল্প পরার প্রতি অনুপ্রাণিত হলাম। আপনি নীলা এবং সজলের সুন্দর একটা ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। গল্পটা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল এবং শরীরের লোমগুলো শিরশির করে উঠেছিল। শুধু নিলা আর সজলের না এরকম অনেক নিলা আর সজল ফুল ভোটার আগেই ঝরে পরে গিয়েছে। যাইহোক আপু সুন্দর একটা গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 4 months ago 

মাঝে মাঝে ফুল ফোটার আগেই ঝরে পড়ে যায়। আর গল্পের মত অনেক জীবন নষ্ট হয়ে যায়। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে।

 4 months ago 

আপনার গল্প লেখার হাত খুবই দারুণ আপু। যদিও দুঃখ ভরা গল্প, তবুও পড়ে শান্তি পাচ্ছিলাম। তবে শেষ টা আরো সুন্দর হলেও পারতো! হয়তো এমন আফসোস গুলো বাস্তবিক জীবনে যেমন থাকে, গল্পে পাঠকরা এমন শেষ তাই চায় না। তবে সব তো আমাদের চাওয়া অনুযায়ী হয় না। দুজনের একটা সুন্দর সংসার থাকলে মন্দ হতো না! এতটা সাহস নিয়ে কাছে টেনে নেয়ার পরেও এই সুখ বেশিদিন সহ্য হলো না ভাবতে খারাপ লাগলো।

 4 months ago 

মাঝে মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও অপূর্ণ থেকে যায় আপু। পাঠকের মনে হয়তো আফসোস রয়েই যায়। যাই হোক চেষ্টা করব ভিন্নভাবে লিখার।

 4 months ago 

নীলা ও সজলের গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু গল্পের মাঝে পড়তে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছিল।অনেক কষ্টের পরে যখন তাদের মিলন হলো সেটা দেখে আরো অনেক ভালো লাগলো।কিন্তু অবশেষে নীলা সজলকে ছেড়ে এভাবে চলে গেল। যাইহোক সজলের জীবনে ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী ছিল,সেই ভালোবাসা নিয়েই সজল বেঁচে থাকবে আজীবন । ধন্যবাদ আপু।

 4 months ago 

গল্প জীবনের কথা বলে। তাই তো আমি নিজের মতো করে গল্প লিখার চেষ্টা করেছি আপু। ক্ষণস্থায়ী জীবনে তাদের ভালোবাসা খুবই অল্প দিনের ছিল আপু।

 4 months ago 

আপু নীলা আর সজলের এমন অপূর্ণ জীবন কাহিনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যখন গল্পটি পড়ছি তখন মনে হলো যেনো আমার চোখের সামনেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। সজল যখন নীলার ব্যাপারে সব জানতে পারলো আর নীলাও সজলকে গ্ৰহণ করে নিলো কিন্তু সেই সময় বিধাতা বাঁধা হয়ে এসে তাদের আবারও আলাদা করে দেয় আর নীলা হারিয়ে যায় দূর অজানা দেশে। আপু আপনার গল্প পড়তে সবসময়ই আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 4 months ago 

আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনি মুগ্ধ হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো আপু। মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। সত্যি আপু মাঝে মাঝে বিধাতা ভালোবাসাকে হারিয়ে দেয়।

 4 months ago 

কিছু কিছু নরপিশাচদের জন্য ফুলের মতো নিষ্পাপ জীবন একেবারে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব নরপিশাচদের যথাযথ বিচার হয় না। তাইতো এই ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। নীলা আর সজলের জন্য ভীষণ খারাপ লাগলো। সজল নীলার ব্যাপারে সবকিছু জেনেও, নীলাকে আপন করে নিয়েছিল। বর্তমানে এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়াটা খুবই কঠিন। যাইহোক গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 57679.84
ETH 2442.12
USDT 1.00
SBD 2.34