গল্প-প্রতীক্ষার প্রহর||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে গল্প লিখি। আজকে একটি দারুন গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
প্রতীক্ষার প্রহর:
Source
মাঝে মাঝে ভালোবাসা রং বদলায়। মাঝে মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আবার কখনো কখনো অপূর্ণই থেকে যায়। সজল আর সখীর ভালোবাসা ছিল হৃদয়ের পবিত্র ভালোবাসা। ভালোই কাটছিল তাদের দিনগুলো। কখন যে সময়টা অনেক পেরিয়ে গেছে দুজনের কেউ বুঝতেই পারেনি। হয়তো বিলাসিতা তাদের জীবনে ছিল না কিন্তু ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না দুটি হৃদয়ে ।সজল ছোটবেলা থেকেই সখীকে ভালোবাসতো। সখীও সজলকে মনেপ্রাণে চাইতো। তাদের জুটি দেখে সবাই হিংসে করতো। মনে হতো যেন সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে নিজ হাতে বানিয়েছে।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। সজল পড়াশোনাতে যেমন মেধাবী ছিল তেমনি ছিল বিচক্ষণ। ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার ছিল না। তাকে যে যেতেই হবে। সখীর মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সজলকে সে অনেক উৎসাহ দিয়েছিল। অবশেষে তাকে ছেড়ে চলে গেল দূর অজানায়। সখী তার পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকতো। এই অপেক্ষার প্রহর যেন আর কাটছিল না। পেরিয়ে গেল দিন। দিনের পরে সপ্তাহ, এরপর মাস, কিন্তু সজল আর ফিরে এলো না। বড্ড অভিমান হয়েছিল মেয়েটার। তবুও অপেক্ষায় ছিল সজলের। অবশেষে সজল ফিরে এলো। এক বুক ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল সখী। কিন্তু কেন জানি তার ভালোবাসার মানুষটি ধীরে ধীরে বদলে গেছে।
সেই পুরনো নদীর ঘাটে দেখা হলো সজল আর সখীর। সজলকে দেখে সখী যেন সব দুঃখ ভুলে গেল। আবারো বিদায়ের পালা। সজল চলে গেল। সখী আবারও একা হয়ে পড়লো। সখী গ্রামের একটি কলেজেই ভর্তি হয়েছে। একদিন হঠাৎ করে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সখী বাড়ি ফিরতে পারছিল না। অবশেষে একটি অটো পেয়ে গেল বাড়ি ফেরার জন্য। শুনশান রাস্তা আর চারপাশের নীরবতায় সখীর ভীষণ ভয় লাগছিল। যে ভয়টা সখী পাচ্ছিল সেটাই হলো। সখীকে ধর্ষণ করা হলো। এই মুখ নিয়ে সখী আর বাঁচতে চায় না।
সখীর জীবনে ঘটে গেল বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনা। চারপাশের মানুষজন সখীকেই দোষারোপ করতে শুরু করলো। সখী বুঝতে পারছিল না তার অন্যায়টা কোথায়। সবার কথার আঘাত আর লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিল সখী। অবশেষে নিজেকে বন্ধ করে আবদ্ধ করলো মেয়েটি। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। শুধু একটি মানুষের কথা ভেবে নিজেকে শেষ করে দেয়নি। সে অপেক্ষায় ছিল হয়তো সজল ফিরবে। আর তার জীবনের সব দুঃখগুলো ভুলিয়ে দিবে। এভাবে কেটে গেল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। সজল আর ফিরে এলো না। কেটে গেল ছয়টি মাস। সখী নিজেকে অন্ধকার ঘরে বন্দী করে নিয়েছে। কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না।
ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে মেয়েটি। একদিন সখীর কাছে খবর এলো সজল ফিরেছে। সজল সখীর সাথে দেখা করতে চাইছে। দেখা করলো তারা সেই নদীর পাড়ে। কিন্তু সেদিন সজলকে চিনতে সখীর অনেক কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল অচেনা কাউকে দেখছে। এরপর আর সজলের সাথে কথা হয়নি সখীর। কেটে গেছে অনেক দিন। সখী অভিমান করে বসেছিল। হয়তো কোনদিন সজল তার অভিমান ভাঙ্গাবে। কিন্তু সেই দিন আর কখনোই এলো না। শহরের কোন মেয়ের সাথে সজলের বিয়ে হয়ে গেছে। সেদিন সখী অনেক কেঁদেছিল। নিজের জীবনের নির্মম পরিহাস মেনে নিতে যেন তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। যার জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করেছে সেই মানুষটি ফিরেছে কিন্তু অন্য কারো হয়ে ফিরেছে। নির্ঘুম কেটেছে তার সারাটি রাত। ভোরের আলো ফোটার আগেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছে মেয়েটি। নিঃশব্দে নিরালায় অন্ধকার ঘরে পরেছিল একটি মৃতদেহ। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল একটি প্রতীক্ষার প্রহর।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
https://x.com/Monira93732137/status/1828329707529740634?t=F78ufKBTnWDH3UVKH8H0Yg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনার গল্পটা পড়ে সখীর জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে আপু কিছু কিছু অপেক্ষা আছে যা কখনো শেষ হবার নয়। সত্যি সখীর দোষ ছিল না কিন্তু নির্মম সমাজ তাকে দোষারূপ করলো।যাইহোক সজল তার ভালোবাসার দাম দিল না।ধন্যবাদ আপু বেশ ভালো লেগেছে গল্পটি পড়ে।
সত্যি আপু কিছু কিছু অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। হয়তো মৃত্যু দিয়েই সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
ভুল মানুষ ভুল সময়ের জন্য অপেক্ষা করলে সেই প্রহর কখনোই শেষ হয়না।অবশ্য যারা এটার ভুক্তভুগী হয় তারাই জানে কত কষ্টের মুহূর্ত এটা।সখীর গল্পটি খারাপ লাগলো অনেক।সজলের মত লোকরা বর্তমান সমাজে এরকম অনেককেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে বাধ্য করায়।আর এরপর সমাজের কাছে মাথা নত করতে হয় সখীর মত মেয়েদের।একটি শিক্ষণীয় পোস্ট ছিল আপু,আমাদের চিন্তা ভাবনা করে আবেগ দিয়ে বিচার না করে বিবেক দিয়ে অবস্থা বিচার করতে হবে এরপর অপেক্ষার বিষয়টি আনতে হবে।ধন্যবাদ সুন্দর একটি বাস্তবিক পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ভুল মানুষ জীবনে এলে সারাজীবন কষ্ট করতে হয়। আর অপেক্ষা করতে হয়। হয়তো মৃত্যু দিয়েই সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়।