জেনারেল রাইটিং-শৈশবের একটি মজার স্মৃতি||

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে শৈশবে স্মৃতি নিয়ে লিখতে অনেক ভালো লাগে। তবে আজকে আমি একটি মজার স্মৃতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। শৈশবের এই মজার স্মৃতি যখন মনে পড়ে তখন সত্যি ভীষণ হাসি পায়। আশা করছি আমার এই শৈশব স্মৃতি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।


শৈশবের একটি মজার স্মৃতি:

child-1241825_1280.jpg

Source


ছোটবেলায় গ্রামের বাসায় খুব একটা থাকার সুযোগ হয়নি। যখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতো তখন মাঝেমাঝে গ্রামের বাসায় যেতাম। গ্রামের বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যেতাম। খুব সম্ভবত তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম। সেইবার যখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল তখন দাদু বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমার দাদু বাড়ি গ্রামে ছিল তাই গ্রামে যেতে অনেক ভালো লাগতো। গ্রামের বাসায় গিয়ে সবাই মিলে খেলতে অনেক ভালো লাগতো। সেজন্যই মূলত দাদু বাড়িতে যেতাম। পরীক্ষা শেষ হয়েছে যাওয়ার পর পড়াশোনার চাপ যেমন কম থাকতো তেমনি সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করতাম।


তো এবার আসি মূল ঘটনায়। আমার দাদু বাড়ির পাশেই ছিল মনি আপুর বাড়ি। মনি আপু দেখতে খুবই সুন্দরী ছিল। যদিও তাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে প্রথম দেখাতেই মনি আপুকে সবার ভালো লেগে যেত। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটি দেখতে যেমন সুন্দর ছিল তেমনি ছিল তার মায়াবী চেহারা। খুব একটা ফর্সা ছিল না মনি আপু। কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। মনি আপু আর শফি ভাইয়া চুপি চুপি একে অপরকে ভালোবাসতো। যেটা কেউ জানতো না। হয়তো সেভাবে কখনো কেউ বুঝতে পারেনি। আমিও যেহেতু অনেকটাই ছোট ছিলাম তাই সেভাবে কিছু বুঝতে পারিনি। একদিন জানতে পারলাম মনি আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। শুক্রবারে মনি আপুর বিয়ে। এই কথা শুনে তো বেশ ভালো লেগেছে।


যেহেতু পাশাপাশি বাসা ছিল আমাদের তাই আনন্দ অনেক হবে এটা ভেবেই ভালো লাগছিল। আমাদের গ্রামের বাসার পুকুরের পাশে তাদের বাসা ছিল। শুধু মাঝখানে একটি পুকুর ছিল। তাই খুব সহজেই মনি আপুদের বাসায় যেতে পারতাম। অন্যদিকে শফি ভাইয়াদের বাসাও আমাদের বাসার খুবই কাছে ছিল। এদিকে মনি আপুর বিয়ের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। সবাই তো বেশ খুশি। কিন্তু মনি আপুর মুখে কোন হাসি নেই। কেমন জানি মলিন হয়ে গেছে তার মুখ। আমি যখন বাড়ির বাহিরের অংশে আমার এক বান্ধবীর সাথে খেলছিলাম তখন শফি ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল কিরে কি করিস? আমি বললাম খেলছি। তখন বলল তুই একটা কাজ করে দিবি আমাকে? আমি বললাম বলো ভাইয়া কি করবো? তখন বলল এই কাগজটি তোর মনি আপুকে গিয়ে দিয়ে আয়। আমি বললাম ঠিক আছে।


এরপর দৌড়ে চলে গেলাম মনি আপুদের বাসায়। গিয়ে দেখি বাসায় তেমন কেউ নেই। মনি আপুকে ডাক দেওয়া মাত্রই আপু বেরিয়ে এলো। এরপর কাগজটি দিয়ে বললাম শফি ভাইয়া কাগজটি তোমাকে দিতে বলেছে। আমার কথা শুনে মনি আপু দ্রুতই কাগজটি নিলো। আর অন্য একটি কাগজে তাড়াতাড়ি করে কি যেন লিখে দিল। এক হাতে কাগজ দিল আর কিছু লিচু হাতে ধরাইয়া দিলো। বলল এই কথা কাউকে বলবি না। এমনকি খুলেও দেখবি না। আমি তো তখন বুঝতেই পারছিলাম না এটা কাউকে বলার মত কি আছে।যেহেতু শুক্রবার মনি আপুর বিয়ে ছিল। তাই মাঝে মাত্র এক রাত ছিল। শুক্রবার সকালবেলায় দেখি মনি আপুর মা চিল্লাচিল্লি করছে।


ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে পুকুর পাড়ের দিকে গেলাম। সবাই বলাবলি করছে মনি আপু আর শফি ভাইয়া পালিয়ে গেছে। এই কথা শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে গেছে। আসলে তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যেই কাগজটি আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছিল সেই কাগজটিতে হয়তো তাদের গভীর পরিকল্পনা লেখা ছিল। আমি তো ভয়ে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তবে মনি আপুর মায়ের কান্না দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। অবশেষে কেউ বুঝতে পারেনি সেই কথা। আমার তো এখনো সেই কথাগুলো মনে পরে। আর ভীষণ হাসি পায়। সত্যি কথা বলতে বড়রা ছোটদের দিয়ে এসব অনেক কাজ করায়। কিন্তু তখন বুঝতে না পারার ফলে হয়তো সেই কাজগুলো করেছিলাম। এখন যখন সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে তখন একা একাই মনের অজান্তে হাসি পায়। আশা করছি আমার শৈশবের সেই স্মৃতি সবার ভালো লেগেছে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 
 2 months ago 

আসলে শৈশবের স্মৃতি বেশি মজার হয় তবে কিছু স্মৃতি মনে আসলে এমনিতেই হাসি পেয়ে যায়। তবে আপনি তো কিছু না বুঝে কাউকে পালাতে সাহায্য করেছেন। আসলেই এটা মনে পড়লে হাসি পাবে। তাহলে শেষ মেষ মনি আপু কে শফি ভাই-ই পেলো। আর আপনি ভয় ও প্রচুর পেয়ে ছিলেন যদি কেউ বুঝে যায়।হি হি। আপনার ছোট বেলার গল্পটি শুনে অনেক মজা পেলাম।ধন্যবাদ এতো সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last month 

ঠিক বলেছেন আপু শৈশবের স্মৃতিগুলো অনেক মজার হয়। তখন আমি না বুঝেই সাহায্য করে ফেলেছিলাম। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 2 months ago 

ছোট বেলার খুবই মজার একটি স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপু। কেউ না জানলেও আমি তো জেনে গেলাম আপু😜। যাইহোক আপু খুবই সুন্দর ভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন।আপনার লেখা গুলো পড়ে ভীষণ মজা পেলাম। এখন তো তাদের সাথে আমার দেখা হলে এই ঘটনাটির কথা মনে পড়ে যাবে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 last month 

আরে আপনি তো জেনে ফেললেন। তাহলে তো মহাবিপদ। আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

হাহাহা এরকম আমার সাথেও হয়েছিলো আপু একদিন শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।তবে খুব হাসি পাচ্ছে যে আপনার হাতে যে কাগজ পাঠিয়েছে সেই কাগজেই গভীর পরিকল্পনা করা ছিলো পালানোর হাহাহা। আপনি তো কাউকে ঘটনাটা বলতেও পারছিলেন না আবার সইতেও পারছিলেন না কি এক মহা মুসকিলে পড়েছিলেন আপনি।খুব ভালো লাগলো গল্পটি।ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last month 

আর বলবেন না আপু সেদিন সত্যিই অনেক বিপদে পড়েছিলাম। কাউকে কিছু বলারও উপায় ছিল না। আর বেশ ভয় লেগেছিল তখন। আপনার সেই স্মৃতিটি জানার অপেক্ষায় রইলাম আপু।

 2 months ago 

আপু একই ঘটনা আমার সঙ্গেও ঘটেছিল। তবে তাদের দুজনের বিয়ে হয়নি।কারণ আমি যে আপুটাকে চিঠি দিয়েছিলাম সেটা কোনো ভাবে তার এক আত্মীয়ের হাতে পরেছিল। পরে আপুটার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়।আপনার ঘটনাটি পড়ে আমার সেই সময়ের কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর স্মৃতিচারণ শেয়ার করার জন্য।

 last month 

আপু আপনারও এরকম ঘটনা ঘটেছিল জেনে ভালো লাগলো। তবে তাদের বিয়ে হয়নি এটা জেনে সত্যি খারাপ লাগছে। কি আর করার আপু অনেক সময় পরিকল্পনা সার্থক হয় না।

 2 months ago 

তাহলে তো দেখছি, আপনিই আপু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মনি আর শফি ভাই কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। যদিও আপনি ছোট থাকার কারণে তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। এক্ষেত্রে আপনার দোষ দেওয়া চলে না। তবে একদিক থেকে আপনি ঠিকই করেছিলেন। কারণ মেয়েটার যদি অন্য জায়গায় বিয়ে হতো, তাহলে হয়তো সে সুখে থাকতে পারত না। তবে এই ঘটনা যদি কোনদিন সেই পরিবারের লোক জানতে পারে, তাহলে তো আপনার খবর আছে। হা হা হা...🤭🤭

 last month 

সত্যি ভাইয়া এই কথাটা এখনো কেউ জানতে পারেনি। মনে হয় না আর কেউ জানতে পারবে। কারণ অনেকদিন হয়ে গেছে ঘটনাটির। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 2 months ago 

বেশ মজার একটি গল্প শেয়ার করলেন আপু আপনি ছোটবেলার। বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল। কারণ আপনি ঘটকালি করলেন অথচ আপনি বুঝলেন না। যাক অবশেষে পালিয়ে গেলো বেঁচে গেলো দুজনে হি হি হি। যদি আপনি চিঠিটি আদান প্রদান করেছেন জানতে পারতো তাহলে বিপদ আপনার ওপরে দিয়ে যেত। আপনার সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন ভালো লাগলো পড়ে।

 last month 

সত্যি আপু সেই সময় কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম। তবে কেউ না বোঝার কারণে তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি আপু।

 last month 

আসলে আপু শৈশব তো শৈশবি। শৈশব আমরা অনেক কিছু করি না বুঝে।এটাতে আপনার কোন দোষ ছিল না। আসলে ছোট বাচ্চারা এমন প্রেম সম্পর্কে বোঝে না।যাইহোক অবশেষে আপনার মাধ্যমে মনি আপু তার প্রিয়জনকে পেয়েছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 last month 

সত্যি আপু শৈশবে আমরা অনেক কিছুই করে ফেলি না বোঝার কারণে। আর সেই সময় হয়তো আমিও খুব একটা বুঝতে পারিনি আপু।

 last month 

বাহ আপু আপনি তো ছোটবেলায়ই প্রেমে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন দেখছি। বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে ।আসলে আগের দিনের সবাই বাচ্চাদের দিয়ে এই ধরনের চিঠি আদান প্রদান করত। মোবাইলের কারণে এ ধরনের জিনিস আর দেখাই যায় না ।যাই হোক আপনার গল্পটি কিন্তু ভীষণ মজার ছিল ।ভাগ্যিস কেউ জানতে পারিনি পালিয়ে যাওয়ার মূল কাজটি আপনি করেছিলেন ।যাইহোক বেশ ভালো লাগলো।

 last month 

সত্যি আপু সেই সময় চিঠি আদান-প্রদান অনেক বেশি হত। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিল না। আর এখন তো সেই দৃশ্যগুলো দেখাই যায় না।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57653.41
ETH 3122.86
USDT 1.00
SBD 2.41