জেনারেল রাইটিং-আপন ঘর||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। লেখালেখি করতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে নিজের অনুভূতি থেকে কিছু কথা লিখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকে আমি একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট সবার মাঝে শেয়ার করবো। আশা করছি আমার এই পোস্ট সবার ভালো লাগবে। তবে এই বিষয়ে এর আগে লিখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। কিন্তু মাঝে মাঝে কেন জানি এই বিষয়টি আমার হৃদয়ে গভীরভাবে আঘাত করে। তাই বারবার লিখতে ইচ্ছে করে। তাইতো আজকে আমি এই পোস্ট সবার মাঝে শেয়ার করবো।
আপন ঘর:
আপন ঘর শব্দটির সাথে অনেক মায়া, অনেক ভালোবাসা, আর অনেক অনুভূতি মিশে আছে। কথাটি হয়তো অনেক ছোট।
কিন্তু এই কথাটির সাথে মিশে থাকা আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, আর আপন মানুষগুলোর যে বড্ড বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একটি মেয়ে যখন এই পৃথিবীতে আসে তখন তার ঠায় হয় নিজের বাবার ঘরে। বাবা মায়ের আদর স্নেহে পালিত হয় ছোট্ট সেই মেয়েটি। অনেক আদর, ভালোবাসা আর সবার নয়নের মনি ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। আপন মানুষগুলোর আদর ভালোবাসায় বেড়ে উঠে সেই ছোট্ট মেয়েটি। ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকে। তখন আদরের সেই মেয়েটি ভালোবাসতে শিখে নিজের ঘর, নিজের মানুষগুলো, কিংবা নিজের প্রিয়জনদের। এভাবেই যদি বাকি জীবনটা কেটে যেত তাহলে বোধয় মন্দ হতো না।
কিন্তু জীবনের সমীকরণটা যে বড্ড বেশি বাঁকা। বড় হওয়ার সাথে সাথে আপন মানুষগুলোই তাকে বিদায় করার যুদ্ধে নেমে পড়ে। অন্য একটি বাড়িতে পাঠানোর জন্য আয়োজন শুরু করে। যেই মানুষগুলো তাকে ছোট থেকে লালন পালন করে বড় করেছে সেই মানুষগুলোই আজ তাকে পরের ঘরে পাঠাবে। পরের ঘরে পাঠাবে বলে উঠে পড়ে লাগে। অচেনা অজানা সেই পরের ঘর। আদরের লালন করা মেয়েটিকে চলে যেতে হয় অচেনা উদ্দেশ্যে। পরের ঘরে পা দেওয়ার সাথে সাথেই মেয়েটি বুঝতে শিখে তার জীবনের বাস্তবতা। বুঝতে শিখে তার আপন মানুষগুলোকে হারানোর কষ্ট। বুঝতে শেখে তার প্রিয় আপন ঘর পর করার কষ্ট। কেটে যায় আরো কিছুদিন। চলতে থাকে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। চলতে থাকে নিজেকে ভালো প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা।
হয়তো কথার আঘাত কিংবা কথার লড়াইয়ে মেয়েটি বারবার হেরে যায়। বারবার বিষাক্ত কথার ছোবল মেয়েটিকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। যেই মেয়েটি ছোট থেকে ভালোবাসা পেয়ে অভ্যস্ত সেই মেয়েটি যখন অবহেলার শিকার হয় তখন ঘরের কোন এক কোনায় ঠাঁই হয় সেই মেয়েটির। অসহায়ের মত ফ্যাল ফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে ওই চার দেয়ালের পানে। বারবার খুঁজে সেই নিজের আপন ঘর। আজ যখন কারো কথার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেই মেয়েটি ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে বসে আছে তখন তার কষ্ট বোঝার কেউ নেই। হাজার লোকের মাঝেও যেন সে আজ অসহায়। পরের ঘরে সে আজ পরবাসী। আপন ঘর যে তাকে পর করেছে। আর যেই মানুষটি পরের ঘর আপন করে বাঁচতে চেয়েছিল সেই পর মানুষগুলো তাকে আপন করতে পারেনি। ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ওই ময়লা আবর্জনার মত।
যেই মেয়েটিকে তার পরিবার এত যত্ন বড় করেছে সেই মেয়েটি আজ সবার অবহেলার শিকার। যেই মানুষগুলো তাকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে পরের ঘরে পাঠিয়েছে সেই মানুষগুলোই আজ অনেক দূরে। নিজের ঘরকে পর করে পর মানুষকে আপন করে বাঁচার লড়াইয়ে যখন একটি মেয়ে হাঁপিয়ে উঠে তখন চার দেয়ালের ইট পাথরগুলো তাকে বড্ড বেশি আঘাত করে। তখন মনে হয় নিজের যদি একটি ঘর থাকতো তাহলে হয়তো একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম। খড়কুটো দিয়ে তৈরি করা ছোট্ট ঘর যদি থাকতো তাহলে হয়তো একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়। কিন্তু মেয়েদের সেই কষ্টের অনুভূতিটা হৃদয়ের মাঝে থেকেই যায়। আর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।
আমার কাছে কেন জানি মনে হয় প্রত্যেকটি মেয়ের নিজের একটি আপন ঘর থাকা খুবই জরুরী। যখন একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তখন বাবার বাড়ি আর আপন থাকে না। আর যখন পরের ঘর আপন করে সেই মেয়েটি নতুন সংসার সাজায় সেই ঘর কখনোই তার আপন হয় না। অনেক সময় পরিস্থিতি তাকে সেই ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু কোথাও যে তার ঠাঁই নেই। একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর তার বড্ড বেশি প্রয়োজন। যেই ঘর শুধুই তার একান্ত নিজের। যেই ঘরের চার দেয়াল তাকে ধিক্কার জানাবে না। যেই ঘরের প্রতিটি কোনায় গিয়ে হাহাকার খুঁজে পাবে না। তেমন একটি ঘর থাকা মনে হয় প্রত্যেকটি মেয়ের অধিকার।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
https://x.com/Monira93732137/status/1806221724842868874?t=JWq6GT457GLUaEspxXzrOg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আজ আপনার জেনারেল রাইটিং আপন ঘর পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আপনার সাথে আমিও একমত। একটা মেয়ে ছোটবেলা থেকে বাবা-মার কাছে যেভাবে আদর যত্নে বড় হতে থাকে পরের ঘরে গিয়ে তার কপালে আদর যত্ন নাও থাকতে পারে। আসলে মেয়েদের আপন বলে কোন ঘর নেই। বিয়ের আগে বলে বাবার বাড়ি আর বিয়ের পর বলে শশুর বাড়ি। তাহলে তো মেয়েদের কোন বাড়িই থাকলো না। তবে মেয়েদের আপন ঘর থাকা দরকার। আপনার জন্য রইল শুভকামনা আপু।
ঠিক বলেছেন আপু অনেক যত্ন বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে হয়তো পরবর্তী জীবনে আদর যত্ন নাও পেতে পারে। তাই নিজেদের একটি জায়গা থাকা অনেক বেশি দরকারি। ধন্যবাদ আপু।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু প্রতিটি মেয়ের নিজের একটি ঘর থাকা খুবই জরুরী। আমি অনেক পরিবারে বলতে শুনেছি পিতা-মাতা বলে মেয়ে অন্য ঘরের লক্ষ্মী আবার শ্বশুর বাড়ির লোক বলে সে তো পরের ঘরের মেয়ে। তাই আপনার মত আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা মেয়ের যদি নিজস্ব একটি ঘর থাকতো। তাহলে প্রতিটি মেয়েই মনের শান্তিতে বাঁচতে পারতো। আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি খুবই ভালো লাগলো আপু। এরকম সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন আপু মেয়েদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। আসলে আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটি মেয়ের আলাদা একটি জায়গা দরকার। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
দারুন আপু। এক কথায় অসাধারণ কিছু কথা আজ আপনি শেয়ার করেছেন। আসলে আপনার আজকের কথা গুলো মনে হয় হাজারও নারীর মনের কথা। হাজারও নারীর না বলা কষ্ট। আমি জাস্ট পড়ছিলাম যে কি সুন্দর করে আপনি একটি মেয়ের বেড়ে উঠা থেকে তার সমগ্র জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপু এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপু আমার লিখা কথা গুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই ভালো লাগলো। সত্যিই আপু মেয়েদের জীবনের কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো অন্য কারো সাথেও মিলে যায়।