নাটক রিভিউ-নরসুন্দরী||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি@monira999। আমি একজন বাংলাদেশী। আজকে আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে একটি নাটক রিভিউ শেয়ার করতে যাচ্ছি। প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে নাটক রিভিউ শেয়ার করি। তাই আজকে ভাবলাম একটি নাটক রিভিউ শেয়ার করি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।
নাম | নরসুন্দরী |
---|---|
পরিচালনা | রাফাত মজুমদার রিঙ্কু |
গল্প | আহাম্মেদ তৌকির |
অভিনয়ে | তানজিন তিশা, শরীফ সিরাজ ও আরো অনেকে |
দৈর্ঘ্য | ৫৬ মিনিট |
মুক্তির তারিখ | ২৮ জুন ২০২৪ |
ধরন | ড্রামা |
ভাষা | বাংলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
চরিত্রেঃ
- তানজিন তিশা(বর্নী)
নাটকের শুরুতেই দেখতে পাই বর্নী নামের একটি মেয়ে সেলুনে কাজ করছে। বর্নী সেলুনে কাজ করছিল আর নিজে অতীত জীবনের কথা মনে করছিল। বর্নীর বাবার একটি সেলুন ছিল। উনি সেলুনে কাজ করেই নিজের সংসার চালাতেন এবং সন্তানদের খরচ চালাতেন। ছোটবেলা থেকে বর্নী সেলুনের কাজ করতে আগ্রহী ছিল। বাবার কাছ থেকে সবকিছু শিখেছিল। এমনকি মাঝে মাঝে নিজের বাবাকে বলত সেই কাজ করতে তার ভালো লাগে। বর্নীর বাবা চাইতেন তার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে চাকরি করবে। তিনি কষ্ট করে তার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করে পড়াতেন। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এরই মাঝে বর্নীর বাবা এলাকার একটি লোকের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা লোন নিয়ে একটি দোকান ঠিক করেন এবং সেখানে সেলুন দেন। হঠাৎ করে একদিন এক দুর্ঘটনায় অর্থাৎ দুই পক্ষের সংঘর্ষে বর্নীর বাবা আহত হয় এবং মারা যায়।
বর্নীর বাবা ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই বর্নীর বাবা চলে যাওয়ার পর সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পরে। অন্যদিকে বর্নীর বাবা মারা যাওয়ার পর তারা জানতে পারে তাদের সেলুনটি ঋণের টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। বর্নী ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। এরপর বাধ্য হয়ে নিজেই সেলুন চালু করে। আর নিজের সংসার খরচের দায়িত্ব নেয়। একদিকে সংসারের দায়িত্ব অন্য দিকে ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করে। যেই লোকটির কাছে বর্নীর বাবা টাকা নিয়েছিল সেই লোকটি বর্নীকে বাজে প্রস্তাব দেয়। বর্নী প্রতিবাদ করলে সেই লোকটি বর্নীর নামে বদনাম দিয়ে দোকান থেকে বের করে দেয়। এমনকি তাদেরকে বাড়ি ছাড়া করে। অবশেষে তারা নতুন শহরে চলে আসে। বর্নীকে তার এলাকার একটি ছেলে খুবই পছন্দ করত। সেই ছেলেটি বর্নী এবং তার পরিবারকে সাহায্য করে।
নতুন জায়গায় এসে বর্নী সবখানে ঘুরতে থাকে আর কাজের সন্ধান করে। কিন্তু মেয়ে বলে কেউ তাকে কাজে নিতে চায় না। আবার কিছু কিছু জায়গায় তাকে কাজে নিলেও মানুষের কুদৃষ্টি বর্নীর উপরে পরে এবং তারা বর্নীকে বাজে প্রস্তাব দেয়। বর্নী সেখান থেকে চলে আসে। একদিকে ভাই বোন আর মায়ের সংসার চালাতে হয় অন্যদিকে কাজের কোন ব্যবস্থা করতে পারছে না। কাজের সন্ধানে এদিকে ওদিকে ঘুরতে থাকে। বর্নীর বারবার তাদের পুরনো জীবনের কথা মনে পড়ছিল। তার বাবার কথা মনে পড়ছিল। পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে বর্নীর খুবই খারাপ লাগছিল। কারণ সে কারো জন্য কিছু করতে পারছে না। অন্যদিকে সমাজের নোংরা মানুষগুলোর সামনে কাজ করা তার সম্ভব হচ্ছিল না।
বর্নী হার মেনে নিতে চায়নি। তাই নিজের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে ওদিকে ঘুরেও যখন সে কিছুই করতে পারছিল না তখন অসহায়ের মত সময় কাটাতে শুরু করে। এমন সময় গ্রামের সেই ছেলেটি তাদের সাথে দেখা করতে আসে এবং জানায় তার চাকরি হয়েছে। এরপর ছেলেটি বর্নীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। ছেলেটি মানসিকভাবে বর্নীকে সাপোর্ট করে। আর একটি জায়গায় কাজের ব্যবস্থা করে। বর্নী অনেক খুশি হয়ে যায়। বর্নী ছেলেটির সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটায়। আর পরে যখন সেই সেলুনে কাজ করতে যায় তখন বুঝতে পারে আসলে সেই মানুষগুলোর মানসিকতাও খুবই নোংরা। ইশারায় অন্য কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। এই সব বুঝতে পেরে বর্নীর খুবই খারাপ লাগে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।
বর্নী ভেবে পাচ্ছিল না এবার কি করবে। সবখান থেকে যখন সে ফিরে আসছে তখন সে অসহায় হয়ে যায়। আর সেই ছেলেটির সাথে আবারো দেখা করে। ছেলেটিকে বলে আমি কিছুতেই কিছু করতে পারছি না। আসলে সৎভাবে কাজ করতে চাইলেও সবার নোংরা মানসিকতার স্বীকার হতে হচ্ছে। আমি কোনোভাবেই নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারছি না। তখন ছেলেটি বর্নীকে উৎসাহ দেয়। বর্ণী ছেলেটিকে বলে সে সারাজীবন তার সাথে থাকবে কিনা। তখন ছেলেটি বলে তুমি যদি নাও চাও তবুও আমি সারা জীবন তোমার পাশে থাকতে চাই। এই কথা শুনে বর্নীর খুবই ভালো লাগে।
বর্নী আবারো নতুন উদ্যমে কাজ করা শুরু করে। খোলা একটি জায়গায় নিজেই সেলুন তৈরি করে। আর কাগজের মধ্যে বিভিন্ন রকমের কথা লিখে দেয়। এই সমাজের মানুষের মানসিকতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। আসলে নিচু মানুষের মানসিকতার জন্যই মেয়েরা কোথাও টিকে থাকতে পারে না। অবশেষে বর্নী সফল হয় এবং নিজ উদ্যোগে করা সেলুন ভালোভাবেই পরিচালনা করতে থাকে। ছেলেটি বর্নীর সাথে দেখা করতে আসে এবং ইশারায় জানতে চায় সবকিছু ঠিক আছে কিনা। তখন বর্নী খুশি মনে জানায় সবকিছুই ঠিক আছে। এই কথা শুনে ছেলেটির অনেক ভালো লাগে আর বর্নীর হাসিমাখা মুখ দেখে তার ভালো লাগে। তখনই নাটকটি শেষ হয়ে যায়।
বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া একটি মেয়ের জন্য সত্যি অনেক কঠিন। এই সমাজে মেয়েরা সহজে কোথাও কাজ পায় না। আর যদিও কোথাও কাজ পেয়ে যায় সেখানেও লাঞ্চনা শিকার হয়। মানুষরূপী কিছু জানোয়ারের লালসার শিকার হয়। তাদের কুদৃষ্টি মেয়েটিকে আহত করে। আর সেইসব মানুষরূপী পশুদের জন্যই মেয়েরা টিকে থাকতে পারে না। এমনকি নিজের পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারেনা। এই নাটকটিতে সত্যি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একটি মেয়ের সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। আমার কাছে ভালোই লেগেছে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
https://x.com/Monira93732137/status/1818251506606612985?t=kChEfbMSwpD3C7IM-ffyLQ&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নরসুন্দরী নাটকটার রিভিউ পোস্ট পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনি অনেক সুন্দর করে এই নাটকটার সম্পূর্ণ রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমার কাছে তানজিন তিশার নাটকগুলো দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। তার প্রত্যেকটা নাটক অনেক সুন্দর। নরসুন্দরী নাটকটার সম্পূর্ণ রিভিউ পড়ে পুরো কাহিনীটা জেনে নিতে পারলাম। নাটকের শেষটা অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। বর্ণি নিজের কাজে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে এটা দেখে তো খুব ভালো লাগলো।
এই নাটকটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে ভাইয়া। তাই তো রিভিউ শেয়ার করেছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
নরসুন্দরী নাটকটি খুব সুন্দর ভাবে এনালাইসিস করে আমাদের মাঝে রিভিউ আকারে প্রকাশ করেছেন।আপনার রিভিউ দেখে মনে হচ্ছে নাটকটি অনেকটা দুঃখ বেদনা সম্মিলিত একটি নাটক।নাটকটি এখনো আমি দেখিনি।কিন্তু আজকে আপনার রিভিউ দেখে মনে হচ্ছে নাটকটি আমার একবার হলেও দেখা উচিত।যাইহোক নরসুন্দরী নাটকের এত সুন্দর একটি রিভিউ আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
সত্যি ভাইয়া নাটকটির মাঝে ভিন্নতা ছিল। একটি মেয়ের সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
নরসুন্দরী নাটকটি আমি দেখেছি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। নাটকে বনের বাবা দোকানটা যে ঋণ হিসেবে নেয় এটা ওদেরকে না জানিয়ে খুব একটা ভালো করেনি। তবে নাটকের মধ্যে নায়িকা অনেক চেষ্টা করেছে একটি কাজ খোঁজার জন্য। সে পায়নি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নারীদেরকে খারাপ নজরে দেখে। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে যদি আমরা মেয়েদের কেউ প্রতিটি কাজে সুযোগ সুবিধা করে দিই তাহলে দেশের অনেক উন্নতি হতে পারে। খুবই ভালো লাগলো আপু আপনার নাটক রিভিউ পড়ে ধন্যবাদ।
এই নাটকটি আপনি দেখেছেন জেনে ভালো লাগলো আপু। নাটকটি সত্যিই দারুণ ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলেই আপু একটা মেয়ে যদি পরিবারের সব কিছু দায়িত্ব নেই সেটা অনেক কষ্ট হয়ে যায়। আপু আপনি অনেক সুন্দর একটি নাটকের শেয়ার করছেন। তানজিন তিশার অভিনয় আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। সময় করে নাটকটি দেখে নেব আপু। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া যখন একটি মেয়ে পরিবারের দায়িত্ব নেয় তখন সত্যি অনেক কষ্ট হয়ে যায়। আর এই সমাজের মানুষগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
এই নাটকটি সোশাল মিডিয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।আমি নাটকটি ডাউনলোড করে রেখেছি দেখা হয়নি সময় করে দেখে নিব।আপনি বেশ সুন্দর করে ডিটেইল এ রিভিউ শেয়ার করেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপু আপনি সময় পেলে নাটকটি দেখতে পারেন। আমার কাছেও ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু, একটা মেয়ের জন্য পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া টা বেশ চ্যালেঞ্জের একটা বিষয়। নাটকটা যদিও দেখা হয়নি তবে আপনার রিভিউ পড়ে মনে হল নাটকটা বেশ সুন্দর। খুব সুন্দরভাবে পুরো গল্পটা উপস্থাপন করেছেন। নাটকটা দেখার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ আপু।
সত্যি আপু একটি মেয়ের জন্য পরিবারের দায়িত্ব নেওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আর এই নাটকটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
নর সুন্দরী নাটকটি আপনি খুব সুন্দর ভাবে রিভিউ করেছেন আপু। নাটকটির রিভিউ পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার পড়া রিভিউ দেখে মনে হচ্ছে নাটকটি অনেক কষ্টকর। যদিও নাটকটি আমার দেখা হয়নি তবে সময় করে একদিন অবশ্যই দেখবো নাটকটি। নাটকের রিভিউটি পড়ে আমার কাছে সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। নরসুন্দরী সুন্দরী নাটকের খুব সুন্দর একটি রিভিউ আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।