গল্প-যদি ফিরে পেতাম তারে||

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝে গল্প লিখি। তবে অনেক সময় গল্পের কথাগুলো হয়তো কারো জীবনের সাথে মিলে যায় কখনো বা অনুভূতির সাথে মিলে যায়। আজকে আমি একটি নতুন গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


যদি ফিরে পেতাম তারে:

fantasy-4220505_1280.jpg

Source


নিলয় আর নন্দিনী ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালো বন্ধু ছিল। নিলয়ের বাবা আর নন্দিনির বাবা অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন। সেই সুবাদে নিলয়ের সাথে নন্দিনীর ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। দেখতে দেখতে নিলয় নন্দিনী বড় হয়ে উঠেছে। বড় হওয়ার সাথে সাথে দুজনের মাঝে সম্পর্কটা আরো গভীর হয়েছে। নন্দিনী মনে মনে নিলয়কে ভালোবাসতো। কিন্তু নিলয় নন্দিনীকে সেভাবে কখনো ভালোবাসেনি। ভালো বন্ধু মনে করেছিল। নন্দিনী কখনোই তার ভালোবাসার কথা নিলয়কে বলতে পারেনি। শুধু আড়ালে ভালোবেসে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে নন্দিনী আর নিলয় দুজনেই বড় হয়ে যায়। নন্দিনী তখনও নিলয়কে নিজের মনের কথা বলতে পারিনি। এরপর কয়েক বছর কেটে যায়। নিলয় পড়াশোনার জন্য দূরে কোথাও চলে যায়। নিলয়ের চলে যাওয়া নন্দিনীকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। নন্দিনীও নিজের পড়াশোনার জন্য অন্য একটি শহরে চলে যায়।


দুজন দুই শহরে গিয়ে নিজেদের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তখনও নন্দিনী নিলয়কে ভুলতে পারেনি। মাঝে মাঝেই তাদের কথা হতো। কিন্তু কখনো নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি। দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো কিছুদিন। হঠাৎ একদিন অচেনা একটি মেয়ের সাথে নিলয়ের পরিচয় হয়। নিলয় ধীরে ধীরে মেয়েটিকে পছন্দ করতে শুরু করে। মেয়েটির লেখা কবিতা পড়ে নিলয়ের ভালো লাগে। ধীরে ধীরে তাদের বেশ কথা হচ্ছিল। নিলয় মেয়েটির সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু মেয়েটি নিলয়ের সাথে দেখা করতে রাজি হয় না। কারণ মেয়েটি আর কেউ নয় সে ছিল নন্দিনী।দিন যত যেতে লাগে নিলয় মেয়েটিকে আরো বেশি ভালোবাসতে শুরু করে। নিলয় যখন মেয়েটিকে তার ভালোবাসার কথা বলে তখন নন্দিনী ভীষণ কষ্ট পায়। কারণ যেই নন্দিনী ছোটবেলা থেকে তাকে ভালোবাসে সেই নন্দিনীকে কখনো নিলয় ভালোবাসতে পারল না।


অথচ অচেনা একটি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলল। মাঝে মাঝে নন্দিনীর ভীষণ অভিমান হতো। অন্যদিকে নিলয় সেই অচেনা মেয়েটির প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিল। বারবার দেখা করার জন্য পাগলামি করছিল। এসব পাগলামি দেখে নন্দিনীর কষ্ট টা আরো বেড়ে যাচ্ছিল। নন্দিনী বারবার ভাবছিল তার জন্য তো কখনো সে এতটা পাগলামি করেনি। তাহলে কেন অচেনা সেই মেয়েটির জন্য তার হৃদয় জুড়ে এত ভালোবাসা। নন্দিনী বড্ড অভিমান করেছিল। এমনকি বেশ কিছুদিন নিলয়ের সাথে কথা বলেনি। অন্যদিকে অচেনা পরিচয়ে তাদের বেশ ভালোই কথা হতো। এরপর হঠাৎ একদিন নন্দিনী ফোন করে জানায় সে নিলয়ের সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু নিলয় তাকে নানান অজুহাত দেখায়। আর বলে তার হাতে একদম সময় নেই। এই কথা শুনে তার কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। নন্দিনীর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।


কয়েকদিন থেকে শরীরটা তার একদম ভালো ছিল না। ডক্টরের কাছে একা যাওয়ার সাহস তার ছিল না। তাই নিলয়কে ডেকেছিল। কিন্তু নিলয় তাকে সময় দিল না। অথচ সে অচেনা মেয়েটির সাথে দেখা করতে পাগল। নন্দিনীকে সময় দেওয়ার মতো সময় তার নেই। নন্দিনীর বড্ড অভিমান হল। এরপর ধীরে ধীরে তার শরীর অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেল। নিলয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। নিলয় সেই অচেনা মেয়েটিকে হারিয়ে যেন পাগলের মত হয়ে গেল। কেটে গেল বেশ কিছুদিন। অন্যদিকে নন্দিনী ধীরে ধীরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই খবর নিলয়ের কাছে পৌঁছে গেছে। কিন্তু নিলয় তার সামনে এসে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি। হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে নন্দিনী। ক্যান্সারে তার দেহটা শেষ হয়ে গেছে। হয়তো মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে। নন্দিনীর এই অবস্থায় নিলয় নন্দিনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছিল না। কোথাও যেন শূন্যতা অনুভব করছিল। নন্দিনীকে হারানোর ভয় তার হৃদয়ে ঝড় তুলছিল।


কিন্তু সে তো কখনো নন্দিনীকে ভালোবাসেনি। তাহলে কেন তার এমন হচ্ছে নিলয় বুঝতে পারছিল না। হয়তো তার হৃদয় নন্দিনীকে ভালোবেসেছিল। নিলয় যখন আড়াল থেকে নন্দিনীকে দেখছিল তখন নন্দিনী নিলয়কে ডেকে পাঠায়। আর তার হাতে একটি ডায়েরী তুলে দেয়। নন্দিনী নিলয়কে অনুরোধ করে তার মৃত্যুর পর যেন সে এই ডায়েরী পড়ে। নিলয় নন্দিনীর শেষ অনুরোধ টা রাখে। দুদিন পরেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে নন্দিনী এই পৃথিবী থেকে চলে যায়। নিলয় যখন নন্দিনীর ডায়েরীটা পড়া শুরু করে তখন তার ভেতরটা কেঁদে ওঠে। কারণ সে তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে। তার লেখা কথাগুলো তার মনে অনেক বেশি আঘাত করছে। নন্দিনী তার ডায়েরীতে লিখেছে ছোটবেলা থেকেই সে নিলয়কে পছন্দ করতো। নিলয়ের ভালোবাসা পাবার অপেক্ষায় ছিল নন্দিনী। কিন্তু নিলয় তো অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছিল। নিলয়কে এটাও বলে অচেনা সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সে ছিল নন্দিনী।


জীবনের শেষ দিনগুলোতে এসে একটু ভালোবাসা পাবার আশায় কিংবা প্রিয় মানুষটির সাথে একটু কথা বলার আশায় অন্য পরিচয় দিয়ে নিলয়ের সাথে কথা বলেছিল। ভালোবাসার মানুষটির সাথে কিছুটা ভালো সময় কাটাতে চেয়েছিল। যখন সে অসুস্থতার মাঝে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল তখন তার জীবনের শেষ সময় গুলো তার নিলয়ের সাথে কাটাতে চেয়েছিল। তাইতো অচেনা কেউ হয়ে নিলয়ের মনে জায়গা করে নিয়েছিল। নন্দিনীর লেখাগুলো পড়ে নিলয়ের দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। নিলয় বুঝতে পারছিল সে তার সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। আর হারিয়ে গেছে তার নন্দিনীকে। যখন প্রিয় মানুষটি জীবনে থাকে তখন আমরা তার মূল্য বুঝতে পারি না। আর যখন হারিয়ে যায় তখন প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যাওয়ার সেই কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারি। নন্দিনীকে হারিয়ে নিলয় বুঝতে পেরেছিল সেও নন্দিনীকে অনেক ভালোবাসতো। নন্দিনীকে হারিয়ে ফেলার পর আজও নিলয় নন্দিনীর শূন্যতা অনুভব করে। হয়তো কল্পনায় নন্দিনীকে খোঁজে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

আপনার লেখা গল্প "যদি ফিরে পেতাম তারে" হৃদয়স্পর্শী এবং অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। নিলয় ও নন্দিনীর সম্পর্কের এই করুণ কাহিনী পাঠকদের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুরণিত হবে। নন্দিনীর একতরফা ভালোবাসা, নিলয়ের অজানা অনুভূতি, এবং তাদের জীবনের করুণ পরিণতি বাস্তব জীবনের গল্পের মতোই মনে হয়। আপনার লেখার কৌশল এবং গল্পের বুনন প্রশংসার যোগ্য। গল্পটি পড়তে গিয়ে চোখে জল চলে আসলো। আশা করি ভবিষ্যতে আপনার আরও অনেক গল্প পড়ার সুযোগ পাব। ধন্যবাদ আমাদের সাথে এই সুন্দর এবং মর্মস্পর্শী গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

[@redwanhossain]

 3 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। চেষ্টা করবো আবারো নতুন কোন গল্প উপস্থাপন করার। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

আপু এ কেমন ভালোবাসা? যে ভালোবাসা থাকতে সম্মান পায় না মরে গেলে তার আবার কিসের সম্মান। আমার তো নিলয়ের উপর বেশ জেদ হচ্ছে। ইস্ যদি এই বেটা পেতাম তাহলে বেদম পেটাতাম। আমি আবার এমন কষ্ট গুলো মেনে নিতে পারি না। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 3 months ago 

সত্যি আপু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালোবাসার মানুষটি বেঁচে থাকলে তার মর্ম কেউ বোঝে না। যখন হারিয়ে যায় তখন বুঝতে পারে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 3 months ago 

বাহ আপু গল্পটা চমৎকার লিখেছেন। এ ধরনের গল্প পড়তে বেশ ভালো লাগে।তবে শেষ টা একদমই ভালো লাগলো না । নিলয় কেন নন্দিনীকে আগে থেকে ভালবাসল না ।আর নন্দিনী বা কেন নিলয় কে আগে থেকে বলল না ।বললে হয়তো তাদের ভালোবাসাটা পরিণতি না পেলেও কিছুটা সময় তারা আনন্দের সাথে কাটাতে পারতো ।যাইহোক নন্দিনীর মৃত্যুর পর নিলয় যে বুঝতে পেরেছে তাকে ভীষণ ভালোবাসতো এটাই অনেক ।ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ।

 3 months ago 

মাঝে মাঝে জীবনের সমীকরণটা একটু ভিন্ন থাকে। তাই তো মিলন হয় না। কিংবা ভালোবাসার পরেও মানুষটি আপন হয় না। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 3 months ago 

আপু আপনি তো খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন। আপনার গল্পটি প্রথম দিকে করতে বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু শেষের দিকে এসে পড়ে নিজের কাছেও খারাপ লাগলো। কারণ কিছু কিছু ভালোবাসা আছে হারিয়ে ফেললে পরে বুঝতে পারে। নিলয় ও তেমন করেছে।নন্দিনীকে হারিয়ে ফেলেছে এবং সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেললে অনেক কষ্ট লাগে। তবে এটি ঠিক সবাই চায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকতে তাকে ভালবাসতে। সুন্দর একটি গল্প লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62404.06
ETH 2426.64
USDT 1.00
SBD 2.65