গল্প-অপূর্ণতা||

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। অনেকদিন থেকেই গল্প লেখা হয় না। তাই আজকে ভাবলাম একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করি। আর আজকে আমি একটি নতুন গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আশা করছি আমার দেখে গল্প আপনাদের ভালো লাগবে।


অপূর্ণতা:

clear-dark-2871554_1280.jpg

Source


জীবন যেন অপূর্ণতার পাহাড়। এই কথাগুলো আনমনে ভাবছিল শিলা। আজ বহু বছর পর মাহিন শিলা মুখোমুখি বসে আছে। মাহিনের সাথে শিলার পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল। পাঁচটি বছর একে অপরকে আঁকড়ে ধরে নতুন স্বপ্ন দেখেছিল। শিলা যেমন মাহিনকে ভালোবাসতো তেমনি মাহিনও শিলাকে পাগলের মত ভালোবাসতো। শিলাকে এক নজর দেখার জন্য হোস্টেলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। ঝগড়া হলে অভিমান ভাঙ্গাতে ছুটে চলে যেত। শিলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে বলতো এবারের মত ক্ষমা করে দাও। মাহিনের পাগলামো দেখে তাদের সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে যেতো। এভাবেই চলছিল তাদের দিনগুলো। সুখে-দুখে একে অপরের হাত ধরে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল তাদের জীবনের বাকিটা পথ। সবকিছু ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন সবকিছু কেন জানি এলোমেলো হয়ে গেল। শিলা জানতে পারলো তার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই দ্রুত থাকে বিয়ে দিতে চায়।


অন্যদিকে মাহিনের তেমন কোন যোগ্যতা ছিল না। সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ হয়েছে। শিলা নিজের ভালোবাসাকে হারাতে চায়নি। তাই সাহস করে বাবাকে মাহিনের কথা বলে ফেলে। শিলার বাবা প্রথমে অমত করলেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছুই মেনে নেয়। অন্যদিকে মাহিনের পরিবারের সবাই এই বিয়েতে খুব একটা রাজি ছিল না। অবশেষে ঘরোয়াভাবেই তাদের বিয়েটা হয়ে যায়। বিয়ের পর মাহিন ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে। শশুর বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর শিলা বুঝতে পারে সবাই তাকে অবহেলা করছে। নিজের কষ্টগুলো মাহিনকে বলতে গেলেই তার কথার আঘাত শীলাকে হতবিক্ষত করে দিতো। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। দেখতে দেখতে কেটে গেল প্রায় দুটি বছর। মাহিনের নতুন চাকরি হয়েছে। আজকাল শিলার সাথে কথা বলার সময় নেই তার। যে যার মতই ভালো আছে।


একদিকে শিলা তার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে অন্যদিকে মাহিনের এই বদলে যাওয়া শীলাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে ফেলেছিল। রাত জেগে অপেক্ষা করতো মাহিনের জন্য। এমন অনেক রাত কেটে গেছে মাহিন বাসায় ফেরেনি। শিলার সেই ক্লান্ত শরীর আর নির্ঘুম রাত কাটানো মলিন মুখটা দেখে মাহিনের কখনো হৃদয় কাঁদেনি। দেখতে দেখতে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। একদিন হঠাৎ করে শিলা বুঝতে পারে তার ভেতরে অন্য একজন বেড়ে উঠছে। শিলা মা হতে চলেছে। কিন্তু কেন জানি এই কথাটা মাহিন কে বলতে পারছিল না শিলা। এভাবে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। এরই মাঝে শিলা বুঝতে পারে মাহিন অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। শিলা ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পায়। কিন্তু কখনো চিৎকার করে বলতে পারেনি তার কষ্টের কথা। শিলা অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় মাহিনকে ছেড়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে। মাহিনের অবহেলা শিলাকে মৃত বানিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু নিজের সন্তানের কথা ভেবে শিলা নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আর একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য মাহিনের থেকে দূরে চলে গিয়েছিল।


শিলার চলে যাওয়াতে মাহিন যেন হাফ ছেড়ে বেঁচে যায়। তার কোন আফসোস ছিলোনা। কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। শিলা মা হয়েছে। ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান হয়েছে শিলার। দেখতে ঠিক শিলার মত। মনে হয় এ যেন অন্য এক শিলা। এদিকে মাহিন বিয়ে করেছে। সংসার জীবনে সে অনেক সুখে আছে। শিলার খবর নেওয়ার সময় তার নেই। দেখতে দেখতে কেটে গেছে পাঁচটি বছর। শিলার ছোট মেয়েটা আজ অনেক বড় হয়েছে। ভারী মিষ্টি দেখতে হয়েছে মেয়েটি। অন্যদিকে মাহিন এখনো বাবা ডাক শুনতে পারেনি। তার ঘর আলো করে এখনো কোনো সন্তান আসেনি। তার নতুন জীবনে অপূর্ণতা রয়েই গেছে। অন্যদিকে শিলা হাজারো অপূর্ণতার মাঝেও পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে। হঠাৎ করে যে মাহিনের সাথে শিলার দেখা হয়ে যাবে বুঝতেই পারেনি। চলার পথে হয়তো কত মানুষের সাথেই দেখা হয়। কিন্তু মাহিন যে এভাবে তার সামনে চলে আসবে শিলা বুঝতে পারেনি। ট্রেন চলছিল ট্রেনের মতই। মুখোমুখি বসে থাকা মাহিন আর শিলা আজ নিশ্চুপ। তবে মাহিনের স্ত্রী শিলার ছোট্ট মেয়েটির সাথে দুষ্টুমি করে যাচ্ছিল। ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেছিল তাকে।


যখন মাহিনের স্ত্রী শিলাকে বলে আপনার মেয়েটা ভারী মিষ্টি দেখতে তখন শিলা বলে এই মেয়ে আমার হাজারো অপূর্ণতার মাঝেও পূর্ণতা এনে দিয়েছে। মাহিনের স্ত্রী শিলার হাজব্যান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তখন শিলা বলে আমার মেয়ে তার জন্মের আগেই তার বাবাকে হারিয়েছে। আর সবকিছু হারিয়ে আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি। তখন মাহিনের বুকে অজানা এক ব্যাথা তৈরি হয়। মাহিন বুঝতে পারে শিলার পাশে বসে থাকা ছোট্ট মেয়েটি তার নিজের সন্তান। মাহিন বড্ড অপরাধবোধে ভুগছে। নিজের সন্তানকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করার সাহস তার নেই। নিজের মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলার অধিকার তার নেই। সে সবকিছুর অধিকার হারিয়েছে। মাহিন তার সব ভুল বুঝতে পারলেও অপূর্ণতা তার জীবনটাকে গ্রাস করে নিয়েছে। হয়তো আবারো চলার পথে কোন একদিন দেখা হবে তাদের। তবে সারা জীবন হৃদয়ের মাঝে অপূর্ণতা রয়েই যাবে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

এটাই হলো প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি কোন কিছুর প্রতিশোধ নিতে ভুল করে না। কিন্তু আমার কথা ভালোবাসা গুলো কেন এমন হয়? কেন আমরা এমন স্বার্থপরতা করি। যেখানে দুটো মনের মিলন হওয়ার কথা সেখানে কেন এমন হয় আপু? বেশ দারুন একটি গল্প সত্যিকারের লেখিকার মতই লিখেছেন আপু। আমার তো দারুন লেগেছে।

 2 months ago 

ভালোবাসা সব সময় এক রকম থাকে না আপু। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা রং বদলায়। কিংবা ফিকে হয়ে যায়। ধন্যবাদ অপু মন্তব্য করার জন্য।

 2 months ago 

কাউকে কষ্ট দিয়ে কখনো নিজের সুখী হওয়া যায় না। এটি মাহিনের থেকে বোঝা যায়। এতটা কষ্ট দিয়েছিল শীলাকে এখন সে বাবা ডাক শুনতে না পেরে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। শিলা এত কষ্টের পরেও তার মেয়ের মাঝে অপূর্ণতার মধ্যেও পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে। দারুন একটি গল্প লিখেছেন আপু। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না। তাই মাহিন শেষ পর্যন্ত সুখী হতে পারেনি। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 2 months ago 

সকল মানুষের সকল অপূর্ণতার মাঝে পূর্ণ তার থাকে,কারো অনেক বেশি কারো কম।তেমনি শিলার অপূর্ণ তার মাঝে তার মেয়েটি পূর্নতা।আপু আপনার গল্পটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ

 2 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু হাজারো অপূর্ণতার মাঝে কিছু কিছু পূর্ণতা থাকে। শিলার মেয়েটি হচ্ছে তার জীবনের পূর্ণতা। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

 2 months ago 

বাহ্ চমৎকার একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু।পৃথিবীতে সবকিছুরই বিচার হয়ে যায়।যে অন্যায় করে তার হয়তো সাময়িক প্রবলেম হয়না।এক পর্যায় গিয়ে সেও বুঝে অন্যায় করার শাস্তি। মাহিন এর চরিত্রে আমরা সেটা দেখতে পেলাম।অন্যদিকে শিলা তার মেয়ের মাঝে পূর্ণতা পেল।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

সত্যি আপু পৃথিবীতে সব কিছুর বিচার হয়। অন্যায় করলে সেই অন্যায়ের শাস্তি পেতে হয়। তাই তো মাহিন শেষ পর্যন্ত কষ্ট পেয়েছে।

 2 months ago 

বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। বেশ সুন্দর জীবন হতে পারতো শিলা আর মাহিনের । কিন্তু তা হলো না। আসলে মানুষের মন বড়ই রহস্যময় সে নিজেও জানে না তার মন কি যায়। যে বুঝতে পারে তার মন সেই সুখি হয়। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 months ago 

আপু খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার এত সুন্দর গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যারা ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না, বিশেষ করে যারা ভালোবেসে বিয়ে করে পরিবর্তন হয়ে যায় তাদের থেকে দূরে চলে যাওয়াই মঙ্গল। এতে অত্যন্ত নিজে ভালো থাকা যাবে। শিলার চোখের পানিই হয়তো মাহিনের জীবনে অপূর্ণতা এনে দিয়েছে। কারণ ছাড়া কাউকে কষ্ট দিলে তার জীবন কখনো সুখের হয় না। তাছাড়া যারা বিয়ের পরেও পরকীয়া মগ্ন হয়ে পড়ে তারা তো কখনোই সুখের দেখা পায় না। এত বছর পর দেখা হয়েছে আর নিজের সন্তান জেনেও মাহিন তার সন্তান কে জড়িয়ে ধরতে পারছে না। অন্যদিকে শিলা সবকিছু হারিয়েও তার জীবন পূর্ণতায় ভরে রয়েছে।এটাই হয়তো তার নিয়তির লিখন ছিল। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

দু'জন দুজনকে এতো ভালোবেসে বিয়ে করার পর মানুষ যে কেনো এমন বদলে যায়, সেটা আমার বোধগম্য হয় না। মাহিনের মতো ছেলেরা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। শিলা মাহিনকে ছেড়ে গিয়ে খুব ভালো করেছে। কারণ যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে থাকার কোনো মানেই হয় না। দারুণ লিখেছেন আপু। গল্পটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58440.50
ETH 2618.70
USDT 1.00
SBD 2.39