জেনারেল রাইটিং-ঝড় বৃষ্টিতে পশুপাখিদের আর্তনাদ||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আজকে আমি আমার একটি অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু কথা লিখার চেষ্টা করবো। আমরা হয়তো অনেক সময় গরমের কারণে ঝড় বৃষ্টির প্রত্যাশা করি। ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেক বেশি খুশি হয়ে যাই। তবে বৃষ্টি সবার জন্যই সুখের হয় না কারো কারো আর্তনাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই বিষয় নিয়ে আজকে একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো।
ঝড় বৃষ্টিতে পশুপাখিদের আর্তনাদ:
Source
বৃষ্টি মানে অন্য রকমের ভালোলাগা। বৃষ্টি মানে অন্য রকমের আবেগ কাজ করে। বৃষ্টির শীতলতায় নিজেকে শীতল করতে অনেক বেশি ভালো লাগে। তবে বৃষ্টি কারো জন্য আনন্দের হলেও কারো জন্য আবার শুধুই আর্তনাদ। কিছুদিন আগে আমি বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়ানোর একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছিলাম। আসলে বৃষ্টির সময়টা আমি খুবই উপভোগ করেছি। মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। প্রকৃতি যেমন শীতল হয়েছিল তেমনি আমিও শীতল হয়েছিলাম। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতেও আমরা অনেক পছন্দ করি। কিন্তু সবসময় যে বৃষ্টি সবার জন্য আনন্দের হয় এমনটাও নয়। সেদিন যখন বৃষ্টি হচ্ছিল তখন আমি অনেকটা সময় বাইরে ছিলাম। আর বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টির সময়টা উপভোগ করেছিলাম।
এরপর হঠাৎ করেই ধুম করে শব্দ হলো। পেছনে ফিরে দেখি একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। তখন তো আমি দৌড়ে ঘরে চলে এলাম। কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম কিছু খড়কুটো পড়ে আছে মাটিতে। বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে এলো। এরপর যখন কাছে গিয়ে দেখলাম তখন দেখি খরকুটোর ভিতর ছোট ছোট চারটি পাখির বাচ্চা। এই বাচ্চা গুলো দেখে আমি তো প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত। এরপর দৌড়ে গিয়ে একটি ঝুড়ি নিয়ে আসলাম। ঝুড়ি নিয়ে এসে বাচ্চাগুলোকে ঝুলতে তুলে নিলাম। যেহেতু খুব বৃষ্টি হচ্ছিল তাই বাচ্চাগুলো অনেকটাই ভিজে গিয়েছিল। আমি তো ভেবেছিলাম বাঁচাতে পারবো না।
এরপর যখন রুমে নিয়ে আসলাম তখন দেখি বাচ্চাগুলো অনেকটাই ভিজে আছে। বুঝতে পারছিলাম না বেঁচে আছে কিনা। এরপর দেখলাম না বাচ্চা গুলো বেঁচে আছে। আর খাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। দ্রুত তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। কি খাওয়াবো বুঝতেই পারছিলাম না। এবার হাতের কাছে পেলাম বিস্কুট। এখন কিভাবে খাওয়াবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। এরপর বুদ্ধি করে বিস্কুট গুলো হালকা একটু পানিতে গুলে নিয়ে চামচ দিয়ে বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাচ্চাগুলো কিন্তু বেশ ভালোভাবেই খাচ্ছিল। যেহেতু অনেকটা সময় ঝড় বৃষ্টি হয়েছে তাই বাচ্চাগুলো হয়তো খুবই ক্ষুধার্ত ছিল। আর তার মা হয়তো খাবার সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েছিল। হয়তো ঝড়ের কারণে বাচ্চাগুলোর আর্তনাদ কেউ শুনতে পারেনি।
এবার দেখি একটু পর বাচ্চাগুলো বেশি নড়াচাড়া করছে না। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। এবার বুদ্ধি করে একটি ইলেকট্রিক বাল্ব সেট করে নিলাম আর হিট দেওয়ার চেষ্টা করলাম। বাচ্চাগুলোকে যখন দুই ঘন্টা সময় হিট দিলাম তখন দেখি বেশ ফুরফুরে হয়েছে। আর অনেকটা সতেজ হয়েছে। তখন বুঝতে পারলাম আসলে তাদের ভীষণ ঠান্ডা লেগেছিল। আবারো তাদের খাওয়ানোর পালা। এবার বুদ্ধি করে চাল পাটায় কিছুটা ভেঙে নিলাম। ভেঙে নিয়ে এরপর সেগুলো সেদ্ধ করে পাখির খাবার তৈরি করার চেষ্টা করলাম। খাবারগুলো ঠান্ডা করে খাইয়ে দিলাম। খাবারগুলো খেয়ে বাচ্চা গুলো বেশ ভালোই ছিল। হয়তো মায়ের জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছিল। আর মা পাখিও হয়তো বাচ্চাগুলোর জন্য কষ্ট পেয়েছে।
বৃষ্টি থেমে গেলো ভাবলাম বাচ্চাগুলোকে তার মায়ের কাছে দিয়ে আসি। বাচ্চা গুলো সুন্দর করে ঝুড়িতে তুলে ফাঁকা জায়গায় রেখে আসলাম। কিন্তু তার মায়ের দেখা পেলাম না। হয়তো তার মা ভয় পেয়েছিল। এরপর আবারও নিয়ে চলে আসলাম। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরপর বাচ্চা গুলোর জন্য বাজার থেকে খাবার কিনে আনলাম। খাবারগুলো খেয়ে বাচ্চাগুলো বেশ ভালোই ছিল। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। আর রাতে আমি আমারও বাল্ব সেট করে রেখেছিলাম। সকালবেলা উঠে দেখি বাচ্চা গুলো বেশ সতেজ হয়েছে। আমার তো তখন ভীষণ ভালো লেগেছিল। তবে এটা ভেবে খারাপ লাগছিল বাচ্চাগুলো তার মাকে হারিয়ে ফেলেছে। আর মা তার ছোট ছোট সন্তানগুলোকে হারিয়ে ফেলেছে। তাদের আর্তনাদ হয়তো আমরা বুঝতে পারি না।
অনেক সময় ঝড় বৃষ্টির কারণে অনেক পশুপাখির ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা হয়তো সময়টা উপভোগ করি। কিন্তু কেউ কষ্টে আর্তনাদ করে কেউবা নিজের খড়কুটোর বাসা হারিয়ে ফেলে। আবার কেউ কেউ নিজের সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমাদের জন্য বৃষ্টি আনন্দের হতে পারে। কিন্তু সবার জন্যই আসলে সৃষ্টি আনন্দের হয় না। অনেক সময় অনেক পাখি আহত হয়ে পড়ে থাকে। আবার অনেক পাখির ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এরকম অনেক পশুপাখি আছে যারা বৃষ্টির সময় অসহায়ের মতো সময় কাটায়। আর অপেক্ষা করে কখন বৃষ্টি শেষ হবে আর কখন আঁধার কেটে যাবে। বৃষ্টির সময়টা ভয়ে কিংবা আতঙ্কে পার করে তারা। আশা করছি আমার লেখা এই পোস্ট সবার ভালো লেগেছে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
চারটি পাখির বাচ্চাকে আপনি যেভাবে যত্ন করে আগলে রেখেছিলেন তা পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। আপনি যদি খড় গুলোর কাছে না যেতেন তাহলে বাচ্চাগুলো হয়তো মারাই যেত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপু আমি চেষ্টা করেছি পাখির বাচ্চাগুলোর যত্ন করার। আর যত্ন করার ফলে বাচ্চাগুলো বেশ ভালোভাবে সতেজ হয়েছে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার এমন মহৎ কাজে প্রশংসা না করে পারছি না আপু।সত্যিই তো আমরা ঝড় বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করি আর ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পশুপাখি কত আর্তনাদ করে। দুদিন আগে আমার বাসার সামনে বাঁশঝাড়ে একটি পাখির বাসা দেখেছিলাম কিন্তু গত দুইদিন ঝড় বৃষ্টির পর দেখলাম সেই বাসাটি আর নেই। এটা দেখার পর আমার খুব খারাপ লেগেছিল। পাখির বাচ্চাগুলো এখন ভালো আছে জেনে খুবই ভালো লাগছে। আশা করছি পাখির বাচ্চাগুলো দ্রুত বড় হবে এবং আমরা তাদেরকে আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখতে পারবো।শুভ কামনা রইল আপু আপনার জন্য।
আপু আমি চেষ্টা করেছি বাচ্চাগুলোকে বাঁচানোর। আর মনে হচ্ছে বাচ্চাগুলো বেঁচে যাবে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
এটা ঠিক বলেছেন বৃষ্টি কারো জন্য আনন্দের তো কারো জন্য কষ্টের হয়ে থাকে। জেনে ভালো লাগলো আপনি ওই পাখির বাচ্চা গুলোকে খুব যত্ন সহকারে রেখেছেন। যাইহোক ঝড় বৃষ্টির সময় যে শুধু পশু পাখিরা আর্তনাদ করে তা কিন্তু নয়। অনেক মানুষদের ও ঘর ভেঙে যায়, শোনা যায় তাদেরও আর্তনাদ। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া ঝড় বৃষ্টির সময় অনেকে আনন্দ করে। আর অনেকে কষ্ট করে সময় পার করে। পশুপাখিরা বেশি কষ্ট করে। তাদের ঘর ভেঙে যায়। আর অনেক মানুষ অসহায়ের মতো দিন কাটায়।
ঝড় বৃষ্টির সময়টা পশুপাখিদের জন্য খুবই কষ্টের।ওই সময় তারা তাদের বাসস্থল হারিয়ে ফেলে।ভালো একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু।সত্যি অনেক কষ্টের একটি সময় পাখিদের জন্য ঝড় বৃষ্টির ওয়েদার।
ঠিক বলেছেন আপু ঝড় বৃষ্টির সময়টা পশুপাখিদের জন্য অনেক কষ্টের। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
আপু আপনি খুব একটি ভাল কাজ করেছেন। এবছর প্রচুর ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। আর এই ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে অনেক পাখি মারা গেছে আবার অনেক পাখি দের বাসা ভেঙে তাদের বাবা-মা সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছে। তবে আপনাদের বাড়িতে চারটি শালিক পাখির বাচ্চা পড়েছিল আর পাখিগুলো নিয়ে আপনি অনেক যত্ন করেছেন ।খাইয়েছেন ,লাইটের হিট দিয়ে রেখেছেন। আশা করছি পাখিগুলো এখন অনেক সুস্থ এবং ভালো আছে।
https://x.com/Monira93732137/status/1797897377619255669?t=rtj9IMVAEwheOMxSbUpmdw&s=19
আমি গত কয়েকদিন আগে আমাদের এলাকায় দেখছিলাম, একটি ছোট পাখি ঝড়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে অনেক কষ্ট অনুভব করছে। এরপর আমি পাখির বাচ্চা টি কে নিয়ে গিয়ে রোদের মধ্যে রাখি। এরপর পাখির বাচ্চা টি একটু স্বস্তি অনুভব করে। ঝড়ের মধ্যে এরকম হাজারো পশু পাখির কষ্ট হয়ে যায়, আবার কিছু কিছু পশু পাখির বাসা ভেঙ্গে যায়।
ঝড়ের সময় অনেক এলাকাতেই এরকম হয়েছে ভাইয়া। পাখিদের আহত হওয়া দেখে অনেক খারাপ লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনার আগের পোস্টে আমি পড়েছিলাম যে আপনি আম কুড়াতে গিয়ে পাখির ছানা পেয়েছিলেন আর সেই পাখি আপনি না ফেলে রেখে আপনি বাসায় নিয়ে আসলেন সেই সাথে সেই পাখির ও যত্ন নিলেন এখন সুস্থ তাই অবশ্যই পাখিগুলো তার মা পাখির কাছে রেখে আসবেন । তাতে করে পাখিগুলো বেচে যাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি আমার অনুভূতি থেকে এই কথাগুলো লিখার।।পাখির বাচ্চাগুলোর জন্য সত্যি অনেক খারাপ লেগেছিল ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি পাখির বাচ্চা গুলো বাসায় নিয়ে গিয়ে সেগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এবং বাল্বের হিট দিয়ে সতেজ করে তুলেছেন শুনে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। কিন্তু এটা ভেবে খারাপ লাগল তাদের মাকে হয়তো বা তারা কখনো খুঁজে পাবে না। সত্যি পশুপাখিদের আর্তনাদ খুবই কষ্টের।বৃষ্টি হলে তাদের অনেক কষ্ট হয়। খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
কিছুক্ষণ হিট দেওয়ার কারণে বাচ্চাগুলো অনেক সতেজ হয়েছে আপু। বৃষ্টির সময় ভিজে একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল।