গল্প-মিথ্যে ভরসা||

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তবে গল্প লেখার জন্য মানসিক প্রস্তুতি ভীষণ প্রয়োজনীয়। আজকে কি পোস্ট করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না। আর গল্প লিখতেও খুব একটা ইচ্ছে করছিল না। তবুও ভাবলাম একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করি। ভুলত্রুটি ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।


মিথ্যে ভরসা:

IMG_20240423_152901.jpg


ভালোবাসা মানেই অদৃশ্য এক ভরসা। ভালোবাসা মানেই প্রিয়জনের হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়ার এক অনুভূতি। ভালোবাসা মানেই তার হাত দুটো ধরে জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দেওয়ার তীব্র ব্যাকুলতা। নীলিমা নিলয়ের ভরসার দুটো হাত ধরে নিজের ঘর ছেড়েছিল। পরিবার-পরিজন সবাইকে ছেড়ে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। তাদের এই পথ চলা মোটেও সহজ ছিল না। নীলিমা এবং নিলয়ের পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই তাদের জানাশোনা ছিল তাইতো দুই পরিবার মিলে বেশ ঘটা করেই বিয়ের আয়োজন করেছিল। দেখতে দেখতে সময়টা বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল। আর নিলয় নীলিমার মাঝেও সম্পর্কটা বেশ মধুর হয়ে উঠেছিল।তাদের এই সুন্দর সম্পর্কের মাঝে হঠাৎ এক বিষাক্ত ছায়া নেমে এসেছিল। হঠাৎ করে নিলয় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। নিলয়কে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় নিলয়ের দুটো কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে।


এই কথা শুনে নিলয়ের পরিবার যেমন ভেঙে পড়েছিল তেমনি নীলিমার পরিবারের মানুষগুলো এই বিয়ে থেকে পিছিয়ে এসেছিল। কিন্তু নীলিমা তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে আসতে পারেনি। পরিবারের অমতে গিয়ে বারবার নিলয়ের সাথে দেখা করত। নীলিমা নিলয় কে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেরিয়েছে। নীলিমা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। অবশেষে নীলিমা জানতে পারে কেউ যদি নিলয়কে একটি কিডনি দান করে তাহলে নিলয়ের জীবনে বেঁচে যেতে পারে। এই কথা শোনার পর নীলিমা দ্বিতীয়বার আর চিন্তা করেনি। প্রথমেই ডক্টর কে বলে দিয়েছিল সে নিলয় কে কিডনি দান করতে চায়। কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডক্টর এতে রাজি হয়নি। কারণ নীলিমার শরীরে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এখন যদি নীলিমা নিলয়কে একটি কিডনি দান করে তাহলে ভবিষ্যতে নীলিমার বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়ে যেতে পারে। নীলিমা কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। এবার সে নিজের একটি কিডনি দান করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এরপর ডক্টর জানায় কাছের কোন মানুষ ছাড়া কিডনি দান করা যাবে না।


এবার নীলিমা সেদিন রাতেই নিজের পরিবারের সবার অমতে গিয়ে নিলয়কে বিয়ে করে। হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকা নিলয়কে নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। এবার কিডনি দান করতে তার আর কোন বাঁধা নেই। অবশেষে অপারেশনটা হয়ে যায়। আর নিলয় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগে। নিলয় নীলিমার ভালোবাসায় পুরো বাড়িটা যেন আনন্দে ভরে উঠেছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। দেখতে দেখতে বিয়ের চারটে বছর কেটে গেল। হঠাৎ করে নীলিমা বুঝতে পারল নিলয়ের পরিবারের মানুষগুলো ধীরে ধীরে বদলে গেছে। তারা নিলয়ের সন্তানের মুখ দেখতে চায়। অন্যদিকে নীলিমা জানতে পারে যদি সে মা হতে চায় তাহলে তার জীবনের ঝুঁকি আছে। এবার কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না সে কি করবে। নিলয়ের সাথে কথা বলে নীলিমা বুঝতে পারে নিলয়ের জীবনে নীলিমার চেয়ে তার সন্তানের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। যেই হাত দুটোর উপর ভরসা করে নীলিমা নিজের আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে এসেছিল সেই ভরসার হাত দুটো যে আজ আলগা হয়ে গেছে।


এবার নীলিমা নিজের জীবন বাজি রেখে নতুন আশায় মা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল নয়টি মাস। নীলিমা ভয়ে ভয়ে থাকতো যে তার মৃত্যুর পর তার সন্তানকে সবাই ভালোবাসবে তো? নীলিমা বুঝতে পেরেছিল এই পৃথিবীতে তার প্রয়োজনীয়তা যেমন ফুরিয়ে এসেছে তেমনি তার সময়টাও ফুরিয়ে এসেছে। নিলয় নীলিমাকে সব সময় ভরসা দিতো দেখো তোমার কিছুই হবে না। কিন্তু নিলয়ের সেই মিথ্যে ভরসা নীলিমাকে ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত করে দিত। নীলিমারও তো ইচ্ছা করে মা ডাক শুনতে। কিন্তু তার ভাগ্যে যে সেই সুখ লেখা নেই। দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে এলো। হঠাৎ একদিন নীলিমা মাথা ঘুরে পড়ে গেল। দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো নীলিমাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর নীলিমার জ্ঞান ফিরে এলো। তখন নিলয় নীলিমার পাশে বসে আছে। পরিবারের সবাই ডাক্তারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। আর বলছে তাদের বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয়ে যায়।


অন্যদিকে অপারেশনের সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে নীলিমা নিলয়ের হাত দুটো ধরে বলে গেল জীবনের শেষ বেলায় আমাকে মিথ্যে ভরসা দিও না তুমি। আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে বলেই আমাকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছো। আমার সন্তানকে কখনো দূরে ছুড়ে ফেলে দিও না। তোমার উপর ভরসা করে আমি আমার সন্তানকে এই পৃথিবীতে রেখে যাব। আমার সেই ভরসা তুমি মিথ্যে ভরসা করে দিও না।নীলিমার কথাগুলো শুনে নিলয় অনেক কেঁদেছিল। নিলয় বুঝতে পেরেছিল সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তার আরো কিছুটা সময় ভাবা উচিত ছিল। পরিবারের চাপ পড়ে নিলয়ের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। দেখতে দেখতে অপারেশন হয়ে গেল। ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে নীলিমা। মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো নিজের সন্তানকে দেখতে পায়নি নীলিমা। মনে কষ্ট আর হতাশা নিয়ে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে নীলিমাকে। হয়তো তার ভেতরে বাঁচার ইচ্ছেটাই হারিয়ে গিয়েছিল। কারণ যাকে ভালোবেসে বাঁচতে চেয়েছিল তার ভেতরে নীলিমার জন্য আর কোন ভালোবাসা ছিল না। ভালোবাসা হীন জীবনে বেঁচে থাকা যে বড্ড কঠিন। মিথ্যে ভরসা যে মৃত্যুর চেয়েও আরো বেশি ভয়ানক।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখা গল্পটি পড়তে সত্যি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। নিজের জীবন ঝুঁকিপূর্ণর মধ্যেও নিজে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সত্যি আমার কাছে এই বিষয়টি বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু এই নীলিমা প্রথমে তার পরিবারের অমতে গিয়ে বিয়ে করেছিল। গল্পটি বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপু।

 3 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। নীলিমা তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য সবাইকে ছেড়েছিল। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

নীলিমা নিজের জীবন বাজি রেখে, নিলয় কে বাঁচাতে কিডনি দান করেছে। অথচ সেই নিলয় সময়ের ব্যবধানে এতটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে, নীলিমার চাইতে তার সন্তানের প্রয়োজনটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। সত্যিই নীলিমা, মিথ্যে ভালোবাসার উপরে ভরসা করেছিল। যে ভালোবাসা নীলিমা কখনোই প্রত্যাশা করেনি। যাইহোক আপু, নিলয় ও নীলিমাকে নিয়ে মিথ্যে ভরসার খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 3 months ago 

মিথ্যে ভরসা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। নীলিমার সময় ফুরিয়ে এসেছিল। তাইতো নিলয়ের অবহেলা নীলিমাকে আরো বেশি কষ্ট দিয়েছিল। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 3 months ago 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে সত্যি আমার কাছে খুব খারাপ লাগলো। নীলিমা নিজের জীবন বাজি রেখে নিলয়কে বাঁচিয়েছে কিডনি দিয়ে। এবং ফ্যামিলির ও মতে নিলয়কে বিয়ে করল। আর তার মনের মানুষ তার সাথে এরকম করল। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসা আছে যেগুলো মানুষকে বেশি কষ্ট দিয়ে থাকে। তবে নীলিমা মরে গিয়ে নিলয়কে কন্যা দিয়ে গেলেন। যদিও নিলয় তার মিথ্যে ভালোবাসা বুঝতে পেরেছেন। সুন্দর করে মিথ্যে ভরসা গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়। তাইতো নীলিমা বুঝতে পেরেছিল তার ভালোবাসার মানুষটিকে বদলে গেছে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

 3 months ago 

আপু এই গল্পটি পড়ে ভীষণ মর্মাহত হলাম। নিলয়কে বাঁচাতে নীলিমা তার একটি কিডনি দান করে দিলো,কিন্তু নিলয় একটি সন্তান নেওয়ার জন্য নীলিমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলো। নিলয় একবারের জন্যও ভাবলো না,যদি নীলিমা কিডনি দান না করতো,তাহলে তো নিলয় এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারতো না। নিলয়ের উচিত ছিলো তার পরিবারকে বুঝিয়ে, সারাজীবন নীলিমাকে নিয়ে বেঁচে থাকা। যাইহোক গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65641.09
ETH 3479.54
USDT 1.00
SBD 2.50