শৈশব স্মৃতি-হারিয়ে যাওয়া পুতুলগুলো||

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। শৈশবের অনেক স্মৃতি এখনো আমাদের জীবনে রয়ে গেছে। শৈশবের কিছু কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো কখনোই ভুলা যায় না। তেমনি আমার শৈশবের একটি স্মৃতি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো।


হারিয়ে যাওয়া পুতুলগুলো:

doll-7325500_1280.jpg

Source


শৈশবের কিছু কিছু স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে। এখনো মনে পড়ে সেই পুতুল খেলার কথা। শৈশবে পুতুল খেলেনি এমন মানুষ হয়তো খুবই কম আছে। যদিও ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। তবে মেয়েদের সোনালী দিনগুলোর মাঝে পুতুল খেলার স্মৃতিগুলো যেন বেশি ভেসে বেড়ায়। পুতুলের জন্য ছোট ছোট ড্রেস তৈরি করা থেকে শুরু করে তাদের জন্য কাঁথা সেলাই করা এসব কথা এখনো মনে পড়ে। সময় চলে গেছে তবে স্মৃতিগুলো এখনো আগের মতই রয়ে গেছে। মেলা থেকে আমি বেশ কয়েকটি ছোট ছোট পুতুল কিনেছিলাম। সেই সময় মাটির পুতুল অনেক বেশি পাওয়া যেত। এরপর একদিন বাবা শহর থেকে আমার জন্য দুটো রাবারের পুতুল এনেছিলেন। পুতুলের চুল গুলো দেখতে অনেক সুন্দর ছিল।


সোনালী রঙের পুতুলের চুল আর সুন্দর তার গঠন দেখে আমার তো বেশ পছন্দ হয়েছিল। এরপর আমি আমার খেলার সাথীদের সেই পুতুল দেখাতাম। সবাই অনেক পছন্দ করতো। যেহেতু সেই সময় এই পুতুলগুলো গ্রামের দিকে পাওয়া যেত না তাই সবার কাছেই পুতুলগুলো বেশ পছন্দ হয়েছিল। আর সবাই দেখার জন্য আসতো। একদিন আমার দাদি নিজের শাড়ি কেটে কেটে কাঁথা সেলাই করার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। এরপর হঠাৎ করে আমার দাদি বললেন শাড়ির পাড় দিয়ে তোমার পুতুলের জামা বানাও তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। আমিও যেই দৌড় দিয়ে সেখানে যাওয়া শুরু করেছিলাম ওমনিতে একটি বোটির উপর পড়ে গিয়েছিলাম। অনেক দূর পর্যন্ত কেটে গিয়েছিল। এখনো আমার পায়ে সেই দাগ আছে। একদিকে পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল তাতে কোন সমস্যা ছিল না। এটা ভেবে খুশি হয়েছিলাম এই সুন্দর শাড়ির পাড়গুলো দিয়ে আমি জামা বানাতে পারবো।


এরপর শুরু হলো সুঁই সুতা দিয়ে পুতুলের জামা বানানোর পালা। তখন তো আর সেভাবে কিছু বানাতে পারতাম না। তাই যেভাবে পেরেছি হালকা হালকা সেলাই করে অনেক কষ্ট করে জামা বানিয়েছিলাম। পুতুলের জামাগুলো সেলাই করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। আর অনেকদিন সময় লেগেছিল। আমার মা অবশ্য বলেছে আমি তৈরি করে দিবো। তখন আমি বলেছি নিজে তৈরি করবো। এখনো মনে আছে সেই জামা গুলোর কথা। আমি তো জামাগুলো তৈরি করতে পেরে অনেক খুশি হয়েছিলাম। পুতুলের শাড়ি বানিয়েছিলাম, জামা বানিয়েছিলাম, ওড়না বানিয়েছিলাম। সবকিছুই একসাথে সাজিয়ে রেখেছিলাম। যখন আমার খেলার সাথীরা আসতো তখন আমি সবগুলো বের করে খেলতে যেতাম।


সে সময় ঘরে ঘরে টিভি ছিল না। আমাদের বাড়িতে একটি সাদা কালো টিভি ছিল। যেদিন করে বিটিভিতে ছবি হত সেদিন টিভিটা অন করে দেওয়া হতো। ঘর ভর্তি মানুষ টিভি দেখতো। সেদিনও ছিল শুক্রবার। সবাই যখন টিভি দেখছিল তখন আমি আমার পুতুলগুলো বের করে সবাইকে দেখিয়েছিলাম। এরপর রেখে দিয়েছিলাম। সেদিন আর সেভাবে খেয়াল করতে পারিনি। এরপর পরের দিন যখন আবারো পুতুল খেলার জন্য পুতুলগুলো বের করতে গেলাম তখন দেখি পুতুল আর পুতুলের জন্য তৈরি করার ড্রেসগুলো সেখানে নেই। আমি ভেবেছিলাম হয়তো মা রেখে দিয়েছে। এরপর দৌড়ে গেলাম মায়ের কাছে। মা বলল সে জানেনা সেগুলো কোথায়। এই কথা শুনে যেন আমার কান্না আর থামছিলই না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সেগুলো আর কেউ খুঁজে পেল না।


সেদিন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। জানিনা কে আমার পুতুলগুলো চুরি করেছিল। সেই স্মৃতিগুলো মনে হলে এখনো কেন জানি শূন্যতা অনুভব করি। এখনো মনে হয় ঘরের ওই কোনায় বোধয় পুতুলগুলো লুকিয়ে আছে। কিংবা কেউ লুকিয়ে রেখেছে। এখনো মনে মনে সেই জামাগুলো খুঁজি। যেগুলো আমি অনেক দিনের কষ্টের ফলে তৈরি করেছিলাম। পুতুল গুলোর জন্য যতটা খারাপ না লেগেছে পুতুলের জন্য তৈরি করা জামা গুলোর জন্য আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে। পুতুলের জামাগুলো তৈরি করতে আমার খুবই কষ্ট হয়েছিল। সুঁই সুতার সেলাই করা জামা গুলো এখনো খুবই মিস করি। মনে হয় আবার যদি সেই জামাগুলো ফেরত পেতাম তাহলে হয়তো মনের কষ্টটা শেষ হয়ে যেত। পুতুল গুলোর জন্য খুব একটা মন খারাপ হয় না। তবে জামাগুলোকে এখনো খুঁজে বেড়াই। আজও মনে হয় সেই জামাগুলো হয়তো ঘরের কোন কোনায় সে রেখে গেছে। আজও জানিনা আমার সেই শখের পুতুল আর পুতুলের জামা গুলো কে নিয়েছিল। তবে মাঝে মাঝে সেই স্মৃতি মনে পড়ে। আর ভীষণ কষ্ট লাগে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

আপনার ছেলেবেলার পুতুলের কথা পড়তে পড়তে আমি নিজেও হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই ছেলেবেলায়। আমার ও অনেক পুতুল ছিল। আর পুতুলের জন্য আমিও কাপড় বানাতাম। আবার পুতুলের বিয়ে দিতাম। আপনার মত আজও আমার সেই কথা গুলো মনে পড়ে।

 last month 

পুতুলগুলো হারিয়ে গেলে আমার খুবই কষ্ট হয়েছে আপু। পুতুলের জন্য তৈরি করা ড্রেসগুলোর জন্যও খারাপ লাগে।

 last month 

আসলে ছোটবেলার সময় গুলো খুব মধুর হয়।মনে হয় ইস যদি আবারও ফিরে পেতাম সেই দিন গুলো তাহলে কতোই না মজার হতো।আমিও পুতুলের জামা বানাতে গিয়ে আমার মায়ের খুব সুন্দর বিয়ের শাড়ি কেটে পুতুলের শাড়ি বানিয়েছিলাম।আপনার পুতুলের জামা কাপড় চুরি হয়েছে জেনে খারাপ লাগলো।ধন্যবাদ আপু সুন্দর স্মৃতিচারণ করে পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last month 

সত্যি আপু ছোটবেলার অনেক মধুর স্মৃতি আমাদের আছে। হয়তো অনেক সময় স্মৃতি গুলো শেয়ার করা হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 last month 

ছোটবেলার সোনালী দিন গুলোর মধ্যে পুতুল তৈরির সময়টা বেশি চমৎকার ছিল। যদিও আপনি বলেছেন ছেলেদের ক্ষেত্রটা একটু ভিন্ন, তবে আমরা ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে পুতুল তৈরি করতাম। সুই-সুতা দিয়েও অসংখ্য পুতুল তৈরি করেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 last month 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমাদের জীবনের সোনালী দিনগুলো হারিয়ে গেছে। এখন চাইলেও আর সেই সময় ফিরে আসবে না। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65133.17
ETH 3480.37
USDT 1.00
SBD 2.52