জেনারেল রাইটিং পোস্ট || শৈশবের ঈদের মধুর স্মৃতি
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।
প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আপনাদের সাথে একটি জেনারেল পোস্ট শেয়ার করবো। দেখতে দেখতে রমজান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং আর ২/১ দিন পরেই ঈদুল ফিতর। তবে ঈদের আমেজ এখন ততোটা নেই। শুধু যে আমরা বড় হয়ে গিয়েছি বলে বা আমাদের মধ্যে আলাদা দায়িত্ববোধ চলে এসেছে, সেজন্য ঈদের আমেজ নেই সেটা না,বরং এখনকার বাচ্চারাও ঈদের সময় তুলনামূলক ভাবে ততোটা আনন্দ করতে পারে না। কারণ মানুষের সাথে মানুষের বন্ডিং আগের মতো নেই। আত্নীয় স্বজনের বাসায় আসা যাওয়া অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাছাড়া ছোটবেলা দেখতাম ঈদগাহে বিভিন্ন ধরনের দোকান থাকতো এবং বাচ্চারা গিয়ে এটা সেটা কিনতো, মোটকথা ঈদগাহে গিয়ে অনেক মজা করতো। কিন্তু এখন তো ঈদগাহ খুব কম রয়েছে। অনেক জায়গায় দেখি মসজিদের ভিতরেই ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
যাইহোক কয়েকদিন ধরেই শৈশবের ঈদের স্মৃতি মনে পরছে। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে সেই মধুর স্মৃতি গুলো শেয়ার করি। ছোট থেকেই আমার প্রচুর বন্ধু বান্ধব ছিলো। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম,ক্যারাম বোর্ড খেলতাম, মার্বেল খেলতাম এবং আরও বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। তো আমরা সবসময়ই একসাথে প্ল্যান করতাম যে ঈদে আমরা কে কি কিনবো, কোথায় ঘুরতে যাবো বা কি করবো এসব নিয়ে। তো ছোটবেলায় দেখতাম বিটিভিতে জাম্প কেডস এর একটি বিজ্ঞাপন দিতো। জাম্প কেডস পায়ে দিয়ে বাচ্চারা জাম্প করছে এবং উড়ে উড়ে যাচ্ছে। তো আমি প্রথমে ভাবতাম জাম্প কেডস পায়ে দিলেই মনে হয় এভাবে উড়তে পারবো😂। আমি যখন ক্লাস থ্রি তে উঠি,তখন আব্বু কুয়েত চলে গিয়েছিলেন।
তো ঈদের শপিং করতে আম্মুর সাথেই মার্কেটে যাওয়া হতো। তো জাম্প কেডস এর বিজ্ঞাপন দেখার সাথে সাথে আম্মুকে বলতাম ঈদে অবশ্যই জাম্প কেডস কিনে দিতে হবে। তারপর মার্কেটে গিয়ে জাম্প কেডস খুঁজে বের করে ঠিকই কিনেছিলাম। তাছাড়া শার্ট, প্যান্ট আমি কখনোই একটি করে কিনতাম না। আমাকে মিনিমাম ২/৩ টা করে কিনে দিতে হতোই। ঈদের শপিং করার পর সবকিছু আলমারিতে রেখে দিতাম, আর আম্মুকে বলতাম যে কাউকে যেনো না দেখায়। কারণ দেখালে কেউ যদি একইরকম কিনে নিয়ে আসে, তাহলে তো ঈদের দিন পরতে ইচ্ছে করবে না। তারপর ঈদ কার্ড কিনে বন্ধু বান্ধবদের গিফট করতাম এবং কার্ডের মধ্যে লিখে দিতাম ঈদের দিন দাওয়াত। যাইহোক চাঁদ রাতে তো অনেক হৈ-হুল্লোড় করতাম এবং কালকে ঈদ কালকে ঈদ বলে চিল্লাচিল্লি করতাম।
সেই আনন্দটা আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিলো না। যাইহোক ঈদের দিন সকালে নতুন জামাকাপড় পরিধান করে ঈদগাহে চলে যেতাম নামাজ পড়তে। তারপর আত্নীয় স্বজনদের বাসায় চলে যেতাম ঈদ সালামী নিতে। ঈদ সালামী বেশ ভালোই পেতাম তখন। এরপর ঈদগাহে গিয়ে চটপটি, আইসক্রিম, চকোলেট আরও অনেক কিছু কিনে খেতাম। তারপর বন্ধুরা সবাই মিলে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার পর ঘুরতে বের হতাম। যদিও বেশি দূরে কোথাও যাওয়ার সাহস পেতাম না ছোট ছিলাম বলে। কিন্তু হাইস্কুলে ওঠার পর,খুব সম্ভবত আমি তখন ক্লাস ৬/৭ এ পড়তাম, ঈদের দিন বাসায় কাউকে না বলে আমরা ৫/৬ জন বন্ধু বান্ধব গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তো যাওয়ার পর সবাই মিলে বিভিন্ন ধরনের রাইডে উঠেছিলাম।
তাছাড়া ভূতের রাজ্যে ঢুকে ভীষণ মজা করেছিলাম। তবে সেদিন একটা বাজে ঘটনাও ঘটেছিল আমাদের সাথে। সেদিন প্রচুর ভিড় ছিলো পার্কে এবং ভিড়ের মধ্যে আমাদের এক বন্ধু হঠাৎ করে হারিয়ে গিয়েছিল পার্কের মধ্যেই। তখন তো আর মোবাইল ছিলো না আমাদের হাতে। সবাই মিলে প্রায় ঘন্টা খানেক খোঁজা-খুঁজি করে সেই বন্ধুকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এভাবে করে ঈদের সাতদিন পর্যন্ত আমরা কোথাও না কোথাও ঘুরতে যেতাম। মোটকথা সাতদিন ঈদের আমেজ থাকতো পুরোপুরি। আর এখন তো ঈদের নামাজ আদায় করার পরেই মনে হয় যে ঈদের আমেজ শেষ হয়ে যায়। সেই দিনগুলো আসলেই খুব মিস করি। বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই সোনালী দিনগুলোতে। তবে ফিরে যেতে না পারলেও, মাঝেমধ্যে স্মৃতিচারণ করতে বেশ ভালোই লাগে।
পোস্টের বিবরণ
ক্যাটাগরি | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @mohinahmed |
ডিভাইস | Samsung Galaxy Note 20 Ultra 5g |
তারিখ | ৮.৪.২০২৪ |
লোকেশন | নারায়ণগঞ্জ,ঢাকা,বাংলাদেশ |
বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি এইচএসসি/ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর, অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে এবং গান গাইতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹
ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি কখনো ভোলার মতো নয়। আপনার ছোট বেলার ঈদের সাথে আমার কিছুটা মিল রয়েছে।আমিও আপনাদের মতো আমাদের গ্ৰামের ছেলেরা সহ ঈদের কয়েকদিন আগে প্লান পরিকল্পনা করে রাখতাম। আমরা ঈদের মেলায় গিয়ে প্রথমে গুলি কিনতাম সকলে এক সাথে। তারপর বাসায় এসে আমরা ওই গুলি দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করতাম। এরকম হয়তো সকলেই ছোট বেলায় খেলা করতো।
আসলে বেশিরভাগ ছেলেরা প্রায় একইরকম ভাবে ঈদ উদযাপন করতো আগে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে অতীতের আনন্দগুলো যেন অন্যরকম ছিল। যেগুলো এখন মনে করলে ইচ্ছে করে আবারও সেই অতীতে ফিরে যেতে। তবে ঈদের কথা যদি বলি তাহলে আমার কেন জানি না কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতীতের থেকে বর্তমানে বেশি ভালো লাগে। যাইহোক আজকে আপনার পোস্টের মাধ্যমে আপনার অতীতের ঈদে কাটানো কিছু স্মৃতি জানতে পেরে ভালো লাগলো। আর হ্যাঁ একটা জিনিস আমি অনেকেই করতে দেখেছি সেটা হচ্ছে নতুন জামা কাপড় কিনে এনে লুকিয়ে রাখা। আসলে ছোট বেলায় প্রায় সবাই চাইতো যেন ঈদের আগে তার জামাকাপড় কেউ না দেখে। যাই হোক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে জন্য।
আপনার কাছে ঈদ উদযাপন করতে, ছোটবেলার চেয়ে এখন বেশি ভালো লাগে, জেনে খুব ভালো লাগলো ভাই। যাইহোক পোস্টটি পড়ে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আগের মত ঈদের আনন্দ এখন কারো মধ্যেই নেই, এটা একেবারে সত্য কথা। ছোট বাচ্চারা এখন ঈদের আনন্দটা আমাদের মত উপভোগ করতে পারেনা। আমরা আগে যেরকম উপভোগ করতাম। আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে এখন কেমন যেন সম্পর্কটাই সবার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারো বাড়িতে কারোই এখন যাওয়া আসা নেই। আর এসব কিছুর থেকে বাচ্চারা অনেক বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। যার কারণে তারা উপভোগ করতে পারছে না মুহূর্তগুলো। সত্যি অনেক বেশি মিস করি আগের সেই ঈদের মুহূর্তটাকে। কতইনা আনন্দের সাথে কাটাতাম। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছে ভাই আপনার লেখা পোস্ট পড়ে।
আসলেই ভাই দিনদিন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সবাই যেনো স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে গুছিয়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
সাত দিন ধরেই ঈদ পালন করতেন আপনারা। পার্কে ঘুরতে গিয়ে আপনার বন্ধু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা শুনে ভালো লাগলো। ছোটবেলার স্মৃতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ছোটবেলার ঈদ আনন্দটাই অন্যরকম ছিল। তবে আমি ছোটবেলা থেকেই শহরে থাকার কারণে ঈদের দিনগুলো কখনোই ভালোভাবে উদযাপন করতে পারতাম না। ঈদের পরদিন বাড়িতে গেলে তখন আসল আনন্দ শুরু হতো। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে।
আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই পোস্ট করার সার্থকতা আপু। যাইহোক পোস্টটি পড়ে গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
অতীতের ঈদের দিনগুলোর সুন্দর স্মৃতিচারণ করেছেন আপনি। বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার শৈশবের সুন্দর এই বিষয়গুলো যেন। অতীতে এমন মধুর স্মৃতি কমবেশি আমাদের সকলের রয়েছে তবে সেই দিন তো আর ফিরে পাবো না শুধু মনে পড়ে যেন অন্য অনুভূতির মধ্যে হারিয়ে যায়।
হ্যাঁ ভাই আমাদের সবারই কমবেশি এমন মধুর স্মৃতি রয়েছে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি যখন থ্রিতে উঠেছিলেন তখন আপনার আব্বু কুয়েতে চলে গিয়েছিল ।আপনি আপনার আম্মুর সাথে মার্কেটে যেতেন মার্কেটে যেতেন। মার্কেট করার পর শার্ট প্যান্টগুলো আলমারিতে রেখে দিতেন আর বলতেন আপনার আম্মুকে কাউকে যেন না দেখায় । আসলেই আমরাও এই কাজটা করতাম ভাইয়া এখন বড় হয়ে সেগুলো খুব মনে পড়ে ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে ঈদের পোশাক কেউ দেখাতে চাইতো না ঈদের আগে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ছোটবেলার ঈদের দিন গুলোর কথা মনে পড়লে আবারো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। আপনি শৈশবের সেই স্মৃতিময় দিনগুলোকে তুলে ধরেছেন অনেক সুন্দর করেই এই পোষ্টের মধ্যে। কত সুন্দরভাবে না উদযাপন করতাম ছোটবেলার সেই ঈদের দিন গুলোকে। আপনি বেশ কিছু ঘটনা ও আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এই পোস্টের মধ্যে, যেটা আরো বেশি ভালো লাগলো। এ ধরনের পোস্টগুলো আমি অনেক পছন্দ করি। অনেক ভালোই লাগলো পুরোটা আমার কাছে।
আসলেই অনেক সুন্দর ভাবে আমরা ঈদ উদযাপন করতাম ছোটবেলা। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এভাবে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ছোটবেলায় এই অভ্যাস টা প্রায় আমাদের সবারই ছিল। আমরা কেউই নিজেদের মার্কেট দেখা চাইতাম না। ভাবতাম দেখালে আমাদের ঈদ থাকবে না হা হা। একসময়ে ঈদ কার্ডের প্রচলন ছিল প্রচুর। কিন্তু এখন একেবারেই নেই। কত রঙিন রঙিন কার্ড আদান প্রদান হতো। আপনার ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি পড়ে আমারও মনে পড়ে গেল। বেশ ভালো লিখেছেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।
সবাই চাইতো ঈদে ইউনিক পোশাক পরিধান করতে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।