ভ্রমণ পোস্ট || সোনারগাঁও ভাটিবন্দর কাশফুল এরিয়া ভ্রমণ
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।
প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা অনেকেই জানেন যে আমি ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। সময় এবং সুযোগ হলেই ঘুরতে বের হয়ে যাই বিভিন্ন জায়গায়। সেটা বন্ধু বান্ধবদের সাথে হোক,কিংবা পরিবারের সাথে হোক। তবে ব্যস্ততার জন্য ইদানীং তেমন একটা ঘুরাঘুরি করা হয় না। যাইহোক এই মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি এবং আমার ওয়াইফ সোনারগাঁও ভাটি বন্দর ভ্রমণে গিয়েছিলাম কাশফুল দেখতে। ইতিমধ্যে কাশফুলের ভিডিওগ্রাফি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। যাইহোক গত বছর সেখানে কাশফুল দেখতে যাওয়ার কথা থাকলেও ব্যস্ততার জন্য যাওয়া হয়নি। তবে এই বছর আগেই ভেবে রেখেছিলাম সেখানে অবশ্যই ঘুরতে যাবো। ইউটিউবে কাশফুলের অনেকগুলো ভিডিও দেখার পর কাশফুল দেখতে যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল।
তাই এই মাসের ২ তারিখ দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪ টার পর বাসা থেকে বের হলাম। এমন জায়গায় বিকেলে ঘুরতে খুব ভালো লাগে, কারণ এমনিতে প্রচুর রোদ থাকে সেখানে। আমরা মদনপুর স্ট্যান্ড থেকে একটি সিএনজি ভাড়া করলাম। মদনপুর থেকে সেখানে যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগে সিএনজি দিয়ে। তো সিএনজি ড্রাইভার বললো যে উনি ভাটি বন্দর জায়গাটা চিনে না। তখন আমি বললাম আমি চিনিয়ে নিয়ে যাবো আপনাকে। মদনপুর থেকে আমরা সেখানে যাওয়ার পর সিএনজি ড্রাইভার সেখানে অপেক্ষা করবে এবং মাগরিবের আজানের সময় সেখান থেকে রওনা দিবো। আসা যাওয়া বাবদ ৫০০ টাকা সিএনজি ভাড়া। যাইহোক আমরা রওনা দিলাম এবং মোবাইলে নেভিগেশন সেট করলাম ভাটি বন্দর লিখে।
আসলে আমিও সেখানে আগে যাইনি এবং সিএনজি ড্রাইভার সেই লোকেশনটা চিনে না। আমিও সিএনজি ড্রাইভারকে বুঝতে দেইনি যে আমিও লোকেশনটা চিনি না। আমি শুধু মোবাইলে নেভিগেশন সেট করে ড্রাইভারকে দিক নির্দেশনা দিতে লাগলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা সেখানকার এরিয়াতে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু রাস্তার নির্মাণ কাজ চলছিল বিধায় ৮/১০ মিনিট হেঁটে কাশফুল এরিয়াতে যেতে হয়েছিল। সিএনজি ড্রাইভারকে বললাম সেখানে অপেক্ষা করতে। যাইহোক অনেক মানুষ সেখানে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল এবং আমরাও তাদের সাথে যাওয়া শুরু করলাম। সেখানে যাওয়ার পর মনটা একেবারে সতেজ হয়ে গিয়েছিল। চারিদিকে শুধু কাশফুল আর কাশফুল। একেবারে মেঘনা নদীর পাড়ে বিশাল এরিয়ায় কাশফুল ফুটেছিল।
বিকেল বেলা নদীর পাড়ে সময় কাটাতে এমনিতেই দারুণ লাগে। আবার যদি চারিদিকে কাশফুল থাকে, তাহলে সেই ভালো লাগা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ছোট ছোট ছেলেরা ফুটবল খেলছিল কয়েক জায়গায়। দর্শনার্থীরা মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আমরাও বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি করলাম এবং ভিডিওগ্রাফি করলাম। সেখানে একটি রিসোর্টও ছিলো। রিসোর্ট এর নাম হচ্ছে সুবর্ণ উইন্ড ক্যাফে। আমরা ভেবেছিলাম রিসোর্টে ঢুকে উপরে উঠে কাশফুল দেখবো, কিন্তু উপরে অনেক ছেলেরা ছিলো বিধায় আমার ওয়াইফ যেতে রাজি হয়নি। সেই রিসোর্টে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, কিন্তু থাই,চাইনিজ এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
যাইহোক এরিয়াটা খুব ছোট এবং মানুষজন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ছিল সেখানে, তাই আমরা অল্প কিছুক্ষণ পর রিসোর্ট থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ সেখানে ঘুরাঘুরি করলাম। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন রক্তিম রং ধারণ করেছিল,তখন কাশফুলের সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল। সেখানে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকানও ছিলো। ফুচকা,চটপটি, ঝালমুড়ি, কোল্ড ড্রিংকস আরো অনেক কিছু বিক্রি করছিল সেখানে। আমরা হালকা পাতলা নাস্তা করে নিলাম সেখান থেকে। এরপর নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। ফুরফুরে বাতাস এসে শরীরটাকে একেবারে শীতল করে দিয়েছিল। তখন যে কি ভালো লেগেছিল, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
এরইমধ্যে খেয়াল করলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তারপর আমরা সেখান থেকে হেঁটে রওনা দিলাম এবং সিএনজি তে চড়ে ৩০ মিনিটের মধ্যেই মদনপুর চলে আসলাম। সবমিলিয়ে দারুণ উপভোগ করেছি পুরোটা বিকেল। কেউ যদি ঢাকা থেকে কাশফুল দেখতে সোনারগাঁও ভাটি বন্দর যেতে চান, তাহলে গুলিস্তান মাওলানা হকি স্টেডিয়াম এর সামনে থেকে দোয়েল বা স্বদেশ বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নেমে, অটো নিয়ে অল্প সময়েই ভাটি বন্দর চলে যেতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে ভাটি বন্দর কাশফুল এরিয়ার দুরত্ব ২৫/২৬ কিলোমিটার। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে সোনারগাঁও পানাম জাদুঘর ঘুরে যেতে পারবেন কেউ ইচ্ছে করলে। কারণ পানাম জাদুঘর থেকে ভাটি বন্দর কাশফুল এরিয়ার দুরত্ব মাত্র ৩/৪ কিলোমিটার।
পোস্টের বিবরণ
ক্যাটাগরি | ভ্রমণ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @mohinahmed |
ডিভাইস | Samsung Galaxy Note 20 Ultra 5g |
তারিখ | ১৮.১০.২০২৩ |
লোকেশন | w3w |
বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹
কাশফুলের বাগান আমার খুবই ফেভারিট। আমি এই কয়েকদিন ধরে এমনিতেই ভাবছিলাম কাশফুলের বাগানে যাব। কাশফুলের বাগানে গেলে আর ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না সেখান থেকে। জায়গাটা কিন্তু আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। এরকম পরিবেশ আমার খুব পছন্দের। ঘুরতে আমি এমনিতেই পছন্দ করি, আর যদি হয় এরকম সুন্দর কাশফুল বাগানে তাহলে কথা নেই। দারুন দারুন ফটোগ্রাফিও করেছেন যেগুলো সুন্দর ছিল।
কাশফুল আমারও খুব পছন্দ আপু,তাই সেখান থেকে আমারও ফিরে আসতে ইচ্ছে করছিল না। যাইহোক এমন প্রশংসনীয় মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
ইতোমধ্যে আপনি এই সুন্দর স্থানের দৃশ্য আমাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। আজকে আবারো সুন্দরভাবে আপনি বেশ চমৎকার ফটোগ্রাফি গুলো বর্ণনার সাথে তুলে ধরেছেন এবং দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন কাশবনের এবং নদীর পাড়ের অপরূপ দৃশ্য। সব মিলিয়ে অসাধারণ ছিল আপনার এই পোস্ট।
Twitter Link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সোনারগাঁও বাটি বন্ধর কাশফুল এরিয়া ভ্রমণ করেছেন দেখে, আমার তো খুবই ইচ্ছে করছে কাশফুল বাগানে যেতে। এই সময়টাতে চারিদিকে কাশফুলের যেন মেলা বসে। আর কাশফুল বাগানে ঘোরাঘুরি করলে মনটাও একেবারে ভালো হয়ে যায়। আপনার মুহূর্তটা খুব ভালো কেটেছিল যা দেখে বুঝতে পারছি। ফটোগ্রাফির মাধ্যমে জায়গাটির সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। জাস্ট অসাধারণ লেগেছে পুরোটা আমার কাছে।
ভাটি বন্দর চমৎকার একটি জায়গা ভাই। সেখানে ঘুরতে গেলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে আশা করি। যাইহোক পোস্টটি দেখে এতো সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সত্যি কিন্তু ভাইয়া জায়গাটি অনেক সুন্দর। আর এমন সুন্দর জায়গা দেখলে তো যাওয়ার জন্য একটু একটু লোভ হবেই। আমার তো মনে চাচেছ আজই ছুটে যাই। এত সুন্দর কাশফুল আর খোলা আকাশ। তার উপর আবার নদী। সব মিলিয়ে বেশ দারুন একটি পোস্ট ছিল। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি জায়গার সন্ধ্যান দেওয়ার জন্য।
হ্যাঁ আপু জায়গাটি আসলেই খুব সুন্দর। সময় পেলে সেখানে ঘুরতে যাবেন আপু। আশা করি বেশ উপভোগ করবেন। যাইহোক যথাযথ মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
শরৎকালের নদীর তীরে গিয়ে এরকম সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারলে মনটা আসলেই ভালো হয়ে যায় । কাশফুলের এই সৌন্দর্য যেটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। এই সময় নদীর পাড়ে গেলেই এই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারা যায়। ভালো লাগলো আপনার কাটানো মুহূর্ত।
আপনি ঠিক বলেছেন ভাই, এমন সময় নদীর পাড়ে সময় কাটাতে আসলেই খুব ভালো লাগে এবং সাথে যদি এতো কাশফুল থাকে, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। যাইহোক পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
যাক ভাইয়া আপনিও কাশফুল ভ্রমণ করেছেন দেখে ভালো লাগলো। আসলে আমার এলাকায় মেহেরপুরে এরকম একটি বড় এলাকা জুড়ে কাশফুলের দারুন একটি জায়গা আছে। সেখানেও অনেক জায়গা থেকে এই কাশফুল ভ্রমণ করতে আসে ।যদি ও আমার এখনো যাওয়া হয়নি তবে আপনার পোস্ট দেখে আমার যাওয়ার অনুভূতিটা আরো বেড়ে গেলো ধন্যবাদ।
শরৎকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাশফুল ফুটে থাকে। তবে নদীর পাড়ে বিশাল এরিয়াতে কাশফুল ফুটেছিল বিধায়, সেই জায়গাটা অনেক বেশি সুন্দর লাগে। তাই অনেক দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ সেখানে যায় ঘুরতে। যাইহোক পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।