মধুর মাসের আগমন (জ্যৈষ্ঠ মাস)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আজ - ১লা জ্যৈষ্ঠ, | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।




man-g76046640e_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি আবার কখনো রোদ, এটাই হচ্ছে আজকের আবহাওয়া। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠেছি তখন দেখলাম বাহিরের আবহাওয়া বেশ ভালো, হালকা মিষ্টি রোদ উঠেছে। এরপর ঘন্টাখানেক পর দেখি আকাশ কালো হয়ে মেঘ ধরেছে। আকাশ দেখে মনে হচ্ছিল জোরে বৃষ্টি নামবে। কিন্তু এক দুই ফোঁটা বৃষ্টি হওয়ার পর দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে এবং আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, আবার রোদ উঠেছে। এভাবেই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছে এখনো পর্যন্ত। ছোটবেলায় এই রোদ বৃষ্টি নিয়ে একটি মজার ধারণা ছিল। ছোটবেলায় ভাবতাম যখন বৃষ্টির পর রোদ ওঠে তখন লাল পাহাড়ে খেকশিয়ালের বিয়ে হয়।

আমাদের বাসার থেকে দূরে একটি বড় পাহাড় দেখা যেত ওই পাহাড়ের মাটি লাল ছিল বিধায় ওইটিকে সকলেই লালপাহার বলতো। তখন আমি ভাবতাম যখন ওই লালপাহারে শিয়ালের বিয়ে হয় তখন আকাশে ঐরকম রোদ বৃষ্টি হয়।

আসলে ছোটবেলায় চিন্তা ভাবনা গুলো ছিল অদ্ভুত যা বড় হওয়ার পরে বুঝতে পারছি। ওই বয়সে, ছোট্ট ওই মাথায় আশেপাশের সব জিনিসগুলোকে কল্পনা করতাম নিজের মতো করে। তখন মানে করতাম আমি যেটাই চিন্তা করি সেটাই ঠিক। কল্পনার জগতে ডুবিয়ে রাখতেন নিজেকে সবসময়।

যাই হোক, সকালের দিকে আমাদের এখানে তাপমাত্রা ছিল ৩১°। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা আরও ২° বেড়ে গেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাপমাত্রা ৪০°বেশি। ভ্যাপসা একটা গরম। আসলে আর্দ্রতার কারণে এমনটা হচ্ছে। জোরে একটা বৃষ্টি হলে আশা করছি এই ভ্যাপসা গরমটা কেটে যাবে। আসলে হালকা বৃষ্টির পর বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায় যার কারণে গরম বেড়ে যায়। রোদের গরম সহ্য করা গেলেও এরকম ভ্যাপসাগরম সহ্য করাটা আসলেই একটু কষ্টকর। শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে এই ভ্যাপসা গরমে।


summer-gbaac70994_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

যাই হোক, আজ বৈশাখ মাসের শেষ জ্যৈষ্ঠ মাসে শুরু। আর এই জ্যৈষ্ঠ হচ্ছে বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস। এই জ্যেষ্ঠ মাসটাকে বলে মধুর মাস। এই মাসে আম কাঁঠাল লিচুর পাকার সময়। জৈষ্ঠ্য মাসের গরমে আম কাঁঠাল লিচু সব পাকতে শুরু করে। বাংলাদেশের সবথেকে বেশি গরম পরে এই জ্যৈষ্ঠ মাসে। এমনকি জৈষ্টের এই তীব্র গরমে নদী-নালা খাল-বিল সব শুকাতে শুরু করে। আর এ জ্যৈষ্ঠ মাসেই প্রতিফলিত হয় গ্রীস্মের আসল গরম। জৈষ্টের এই মাসে কয়েকদিনের অনাবৃষ্টিতে ধুধু মরুভূমির মতো সবকিছু শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। গ্রামগঞ্জে জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচন্ড উত্তাপে পুকুরের পানি গুলো শুকিয়ে যায়।

জৈষ্টের প্রচন্ড তাপদাহে মানুষ অতিষ্ট হয়ে গেল ও এই মধুর মাসের পাকা ফলমূলে মানুষের মন ভরে যায়। এ জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রামগঞ্জে চিত্র গুলো যেন পুরোপুরি পাল্টে যায়। প্রত্যেকের বাড়ির আঙিনা গাছ গুলোতে পাকা আম কাঁঠাল ঝুলতে থাকে। পুরো বাড়ির আঙ্গিনায় যেন পাকা ফলমূলের গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। তখন সবার ঘরে ঘরে পাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ভরপুর থাকে।



mango-g21d8aed3f_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

আমাদের বাড়িতে অনেক বড় একটি আম গাছ ছিল। জ্যৈষ্ঠ মাসে এই আমগুলো পাকে যেতো। এমনিতেই দেশি আম গুলো দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি পেকে যায়। যাইহোক গাছটি অনেক বড় তাই ওখানে প্রচুর আম ধরত। যদি ও আম কিছুটা ছোট ছিল। কিন্তু পেকে গেলে উপর থেকে পুরা হলুদ হয়ে যেত। এবং খেতেও অসম্ভব মজার ছিল। যে দিন আম গাছ থেকে আম পাড়া হত সেদিন পুরা বাড়িতে যেন আমের বন্যা বয়ে যেত। চারদিকে আমার আম। বাড়ির আশেপাশে প্রতিবেশীর প্রত্যেকে বাড়িতে আম দিয়ে আসা হতো। পুরাবাড়ি যেন আমের গন্ধে ভরে যেত। আর সারাদিন ব্যাপী চলত আমাদের আম খাওয়া। আর আমি আম খাওয়ার পর আঁটি গুলো সংগ্রহ করতাম। কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার কিছু বছর পর জায়গা ভাগ হয়ে য়ায় এবং এখানে ঘর তোলার কারণে ওই বিশাল আমগাছটি কেটে ফেলা হয়। খুব কষ্ট হয়েছিল তখন। এরপর থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের সেই মজার মুহূর্ত গুলো যেন আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছি।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার কিছু বছর পর জায়গা ভাগ হয়ে য়ায় এবং এখানে ঘর তোলার কারণে ওই বিশাল আমগাছটি কেটে ফেলা হয়। খুব কষ্ট হয়েছিল তখন। এরপর থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের সেই মজার মুহূর্ত গুলো যেন আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছি।

নিজের গাছের আম খাওয়ার মজাই আলাদা। এর মাঝে অন্য রকমের আনন্দ আছে। আসলে সময়ের সাথে সাথে যৌথ পরিবার গুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফলে সবাই নিজেদের জায়গা গুলো আলাদা ভাবে ভাগ করে নিচ্ছে। এর ফলে আমরা আমাদের প্রিয় ফলের গাছগুলো হারিয়ে ফেলছি। বিশেষ করে যখন ফলের গাছগুলো কেটে ফেলা হয় তখন খুবই খারাপ লাগে। কারণ একটি ফলের গাছ অনেক স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে এই ফল গাছের সাথে। তবে যাইহোক ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার কথাগুলো উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।❤️❤️

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

সত্যি বলতে রোদ বৃষ্টির এই খেলা গুলো ছোট বেলায় আমরা যখন উপভোগ করতাম সেটাই যেন বেশি মধুর ছিল ভাই। জীবন টাকে নির্ভেজাল ভাবে উপভোগ করা যেত।

আর ভাই এখন তো হাতে গোনা কিছু সময় বাকি শুধু। তার পরেই পাকা ফলের গন্ধে বাজার মো মো করবে পুরো। ছোটবেলা তে এই সময় মামার বাড়ি যেতাম যখন পুরো বাড়িতে কাঠাল আর আমের গন্ধে মজে থাকতো। কি যে ছিল সেই দিন গুলো। অনেক মনে পরে গেল আজ আপনার পোস্ট টা পড়ে।

 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া জৈষ্ঠ্য মাস কে বলা হয় মধুর মাস এই মাসে আম কাঁঠাল জাম সহ বাংলাদেশের প্রায় সব রকমের ফল পাওয়া যায়। সেই সাথে অসহ্য গরম সহ্য করতে হয়। সবথেকে এই মাসে বেশি গরম থাকে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে জৈষ্ঠ্য মাসের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছেন বিশেষ করে ফসলের মাঠ গুলো নদী-নালা পুকুর গুলো শুকিয়ে যায়। খা খা করে ফসলের মাঠ। আর আমাদের এই দিকে আমরা ছোট বেলায় বলতাম সামান্য বৃষ্টিতে কেউ যদি পিছলে যেত আমরা বলতাম খেক শেয়ালের বিয়ে হবে । রোদ উঠবে । আপনার পোস্টটি পড়ে ছেলেবেলার অনেক কিছুই মনে পড়লে ভাইয়া ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ছোটবেলায় ভাবতাম যখন বৃষ্টির পর রোদ ওঠে তখন লাল পাহাড়ে খেকশিয়ালের বিয়ে হয়।

এরকমটা আমিও ভাবতাম আপনার মতো ছোটবেলায়। জৈষ্ঠ মাসে যেমন অনেক রোদ উঠে ঠিক তেমনি প্রচুর ফল পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে কাঠাঁল পাকা শুরু হয়ে গেছে,গাছেী আমগুলো পেকে হলুদ রঙ ধারণ করছে। এ সময়টাতে গ্রামে যারা ধান শুকায় তাদের জন্য ভালো বলা চলে। খুব তাড়াতড়ি ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে পারে।

 2 years ago 

আপনার লেখাগুলো পড়লাম খুবই ভালো লাগলো। আসলে ছোটবেলার যে ভাবনা গুলো সেগুলো আসলে সবই ছিল ছিল হাস্যকর। আমরা ছোটবেলায় ভাবতাম যদি রোদ-বৃষ্টি একসাথে হয় তাহলে হয়তো শিয়ালের বিয়ে হচ্ছে- সেই জন্য এরকম রোদ-বৃষ্টি একসাথে হচ্ছে। আসলে এরকম ভাবনা যে কোথা থেকে আসছো সেটা এখন বুঝতে পারিনা। এরকম আরো ভাবনায় ডুবে থাকতাম।

 2 years ago 

ভাইয়া,আমরা ও রোদ আর বৃষ্টি একসাথে হলে বলতাম শিয়াল মামার বিয়ে।যাই হোক আমাদের বাসার সামনে একটা আম গাছ আছে,পাকার কোন সুযোগ নেই, এর আগেই সবাই সাবার করে ফেলে।যাই হোক ভালো ছিলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

জি ভাই এসময় আবহাওয়া টি খুবই তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয়, এই গরমে, এই ঠাণ্ডা ,এই চমৎকার পরিবেশ, এই আবার বৃষ্টি তবে এই সময় আমরা অনেক গ্রীষ্মকালীন ফল পাই, সেজন্যই এটিকে মধুমাস বলা হয়, খুব ভালো লাগলো আপনার আজকের এই চমৎকার পোস্ট পড়ে।

 2 years ago 

আর আমি আম খাওয়ার পর আঁটি গুলো সংগ্রহ করতাম।

এই কাজটা কেনো করতেন ভাইয়া?
মধুর মাস ঠিকাছে তবে এই গরম আর নেওয়া যাচ্ছেনা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 61814.34
ETH 2979.06
USDT 1.00
SBD 2.48