আখলাক স্যারের বিদায়।।

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে এসেছি।

বিদায় বেলা সময়টা আসলেই খুব কষ্টের সেটি যে ধরনের বিদায়ই হোক না কেন। আপনারা অনেকেই জানেন আমি প্রাইভেট একটি ঔষধ কোম্পানী তে জব করি। বেশ কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে অনেক বস্ এর (সুপেরিয়র) সাথেই কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকেই অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু মাত্র চার মাস আগে আমার ডিপার্টমেন্ট এ একজন ডিরেক্টর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং উনার কাছ থেকে এই অল্প সময়ে এত কিছু শিখেছি যা বলে বোঝানো যাবে না। উনি পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। খুব অল্প বয়সেই ডিরেক্টর পদবী অর্জন করেছেন। অল্প বয়স হলেও কিন্তু কাজের দক্ষতা অনেক।

সাদা টুপি পরা লোকটি আখলাক স্যার

আখলাক স্যার আমাদের সাথে জয়েন করার আগে উনার বেপারে অনেক নেগেটিভ কমেন্ট শুনেছি। এমনকি স্যার যখণ প্রথম জয়েন করেন তার পর থেকে উনার সাথে খাপ খাওয়াতে আমার প্রায় এক মাস সময় লেগেছে। শুরুতে স্যারের সাথে আমার খুব একটা ভালো মিল ছিল না। আমি চুপচাপ থাকি বলে এক পর্যায়ে স্যার আমাকে ডিপ্লোম্যাটিক বলেও সম্মোধন করেছেন। তারপর আমার সাথে কাজ করতে করতে এক সময় আমার কাজকে পছন্দ করা শুরু করলেন এবং শেষ পর্যন্ত আমার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করেছেন তা আমার এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে নেই।

স্যার যেমন প্রো একটিভ তেমন ক্রিয়েটিভ তেমন এনার্যেটিক। যেকোন কাজ উনি শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই চিন্তা করতেন। নতুন ঔষধ কিভাবে বাজারে আনা যায় সেই চিন্তা করতেন। কোন কাজে কেউ আটকে গেলে নিজে দৌড়ে গিয়ে আগে হাল ধরতেন। স্যারের আরেকটি বড় বেপার হচ্ছে কোন কাজ কেউ করতে ইতস্তত বোধ করলে উনি নিজে আগে শুরু করে দিতেন। যাই হোক স্যারের গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমি আমার ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চাপ নিতে হয়েছে কাজ বের করতে কিন্তু এখন বোধ করছি যে কত কিছু শেখা হয়ে গেল। উনি আমাকে অনেক প্রেশারে থেকেও কিভাবে সহজেই কাজ বের করে নেয়া যায় সেটা শিখিয়েছেন।

আজ স্যার আমাদের সাথে শেষ অফিস করলেন। স্যার অনেক ভালো একটি কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এখানেও সর্বোচ্চ টা দিয়ে কাজ করেছেন তবে কিছু বেপারে স্যারের মন মত হচ্ছিল না। আর স্যার খুব প্রেস্টিজিয়াস মানুষ সব কিছু উনার চিন্তা অনুযায়ী না হলে সেখানে কাজ করেন না। আজ বিদায় ক্ষণে স্যারকে নিয়ে বোর্ড মিটিং এ কথা বলতে গিয়ে মনের অজান্তেই চোখের কোণে পানি জমে গেল।

বিকেলে যখণ সবাই গাড়িতে উঠবে তার আজ মুহূর্তে সবাই স্যারকে শেষ বারের বিদায় দেয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। স্যার সবার মাঝ থেকে আমাকে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন তোমার সাথে বেশিদিন কাজ করতে পারলাম না, আরো কিছুদিন কাজ করতে পারলে ভালো লাগত। যাই হোক শেষ বিদায় দিয়ে গাড়ি করে বাসায় চলে এসেছি। খুব মন খারাপ লাগছিল এবং আবেগ আপ্লুত হয়ে স্যারকে ফোন দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছি। আশা করছি স্যার তার নতুন কর্মস্থলে ভালো থাকবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।