স্বপ্নগুলোও কখনো কখনো সফলতার দেখা পায় না।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
খুব তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য তারাবির নামাজ পড়ে খেতে বসেছি। খাওয়া শেষ করে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। এমন সময় আমার এক কলিগ ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় দুঃখ প্রকাশ করলেন। সারাদিন আমার ফোন ধরতে না পারায় আমাকে বিস্তারিত জানানোর জন্যই কল দিয়েছিল।
আসলে আমার আজ ক্লোজিং এর শেষ দিন। তাই প্রচন্ড গরমে সারাদিন ঘুরে অনেক ক্লান্ত ছিলাম। তারউপর এই কলিগকে ফোন দিয়ে না পেয়ে আমার মেজাজ খুব গরম ছিল। তাই অসুস্থ থাকার কারণে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছি। ভেবেছিলাম আজ কিছু লিখতে পারবো না।
কিন্তু আমার কলিগের খারাপ খবরটি শুনে আর ঘুম আসছিল না, তাই আবারও লিখতে বসলাম। আমি যখন এই লেখাটি লিখতে বসেছি তখন রাত ১ টা বেজে ১৫ মিনিট। মনে হল তার কষ্টের কথাগুলো এখানে শেয়ার করি।
সাধারণত গ্রামের লোকজন নিজেদের জমিতে দিনমজুরের সাথে সমানভাবে কাজ করে যায়। বছরে তারা দুইটি সিজনে ধান চাষ করে। তারা এভাবেই সারা বছরের নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে দেশের খাদ্য ভান্ডার সমুন্নত রাখতে সাহায্য করে।
তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের জমিতে ধানের চারা রোপন করে। তারপর ধীরে ধীরে সেই চারা থেকে ধান উৎপাদনের জন্য পর্যায়ক্রমে নানাবিধ কার্য সম্পাদন করেন। জমিতে নিয়মিত সেচ দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন রকম মেডিসিন স্প্রে করতে হয়। তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলন ঘরে তোলার জন্য।
কৃষকের এই বুক ভরা স্বপ্ন অনেক সময় মাঝপথে হারিয়ে যায়। স্বপ্নগুলো কোনোভাবেই সফলতার দেখা পায় না। অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেন সোনালী ফসল গড়ে তোলার আশায়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয় না অনেক সময়।
বর্তমান সময়ে ফসলের মাঠে নতুন এক ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। যখন ধান পরিপক্ক হতে শুরু করে ঠিক সেই সময় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আগে থেকেই প্রতিষেধক হিসাবে বিভিন্ন প্রকার স্প্রে করা হয়। কারণ যদি কখনো কোন জমি আক্রান্ত হয় তাহলে দুই থেকে তিন দিনের মাথায় সব পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ আগে আমার এই কলিগ ফোন করে কান্না জড়িত কন্ঠে আমাকে অনুরোধ করছেন আমার চাকরিটা যেন চলে না যায়। ক্লোজিং এর সময় টাকা পরিশোধ না করে সারাদিন ফোন বন্ধ করেছিল এটাই তার সবচেয়ে বড় অপরাধ। সে বুঝতে পেরেছিল তার এই অপরাধের জন্য হয়তো চাকরিচ্যুত হতে পারেন।
সে অনেক কষ্ট করে বেশ কিছু টাকা খরচ করে এক একর পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। আশা ছিল সারা বছরের খাদ্যের যোগান হয়েও বেশ কিছু ধান মজুদ থাকবে। কিন্তু সকালে জমিতে গিয়ে ছত্রাকের আক্রমণ লক্ষ্য করলো ব্যাপকভাবে।
যতই ঔষধ প্রয়োগ করুক না কেন এই মুহূর্তে হয়তো আগামী কালকের মধ্যে সব নষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যদি চাকরি হারিয়ে ফেলে তাহলে পরিবার নিয়ে অনেক বিপদে পড়তে হবে। তাই তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে চাকরিতে পুনর্বহাল থাকার অনুরোধ করেছেন।
ঘটনাটি শুনে আমিও অনেক মর্মাহত কারণ আমি জানি তার পারিবারিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। এখন কি করে সব রক্ষা হয় তাই ভাবছি। আসলে মানুষ হয়ে যদি মানুষের জন্য কিছু করতে না পারি, তাহলে আমরা কিসের মানুষ। আমি এখন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেভাবেই হোক ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | realme narzo 50 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সত্যি লোকটির জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে একদিকে তার এত স্বপ্ন নিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা জমির এই অবস্থা আর অন্যদিকে ক্লোজিং এর সময় টাকা পরিশোধ না করে সারাদিন ফোন বন্ধ করেছিল বলে চাকরিচ্যুত হতে পারে।তার আজ সব স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। এখন যদি চাকরি হারায় তাহলে পরিবার নিয়ে সে কি করবে। ভাইয়া খুব জানতে ইচ্ছে করছে লোকটি কি তার চাকরি হারিয়ে ফেলেছে নাকি রয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনার এমন সুন্দর অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আমি চেষ্টা করছি যেন শেষ রক্ষা করতে পারি।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তার নিকট থেকে পজিটিভ কিছু পাইনি।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
একদিকে ধান জন্মানোর স্বপ্নভঙ্গ অন্যদিকে চাকরি নিয়ে টানাটানি আসলে লোকটার জন্য খুব আফসোস হচ্ছে।।
আসলে ক্লোজিং রিপোর্টটা যে কি আর কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি ভালো কোন স্টেবল কোম্পানি হলে সাথে সাথে চাকরিযুক্ত হয়ে যায়।।
আমাদের কোম্পানির কথাই বলি ক্লোজিং রিপোর্ট যদি ১৮ -২০ হয় তাহলেও আমার চাকরি থাকবে না।
যাহোক ভাই আপনাকে বলব যতদূর সম্ভব তাকে আপনি হেল্প এর মাধ্যমে চাকরিটা যেন থাকে একটা ব্যবস্থা করিয়েন এতে আল্লাহ অনেক খুশি হবে আপনার উপর।।
একদম ভাই ক্লোজিং ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
জি ভাই গ্রামের প্রতিটি কৃষক তার সর্বোচ্চ দিয়ে ফসল ফলার চেষ্টা করে ৷ কিন্তু এখন যত রকম ছত্রাক তাতে ফসল ফলাও অনেক কষ্টের ব্যাপার৷ যা হোক একটা কথা ঠিক বলেছেন ৷
মানুষ তো মানুষের জন্য তাই বিপদে পাশে থাকা প্রয়োজন ৷ আর এটাই মানুষের প্রধান ধর্ম বলে মনে করি ৷
একদম ঠিক বলেছেন এই জমিগুলোর সামনে দাঁড়াতেই খুব খারাপ লাগে।
খুবই দু:খ ও হতাশাজনক ঘটনা।চোখের সামনে উনার স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে,অথচ চেয়ে দেখা ছাড়া উনার কোন উপায় নেই। কতটা অসহায় মানুষ।ঈশ্বর উনাকে ধৈর্য ধরার ক্ষমতাদিক। আর আপনিও যথাসম্ভব চেষ্টা করিয়েন যেন উনার চাকুরি টা রক্ষা পায়। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন।
চাকুরী রক্ষা করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ ওনাকেই নিতে হবে তারপর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ আপনাকে।