সুখহীন জীবন নিয়ে মৃত্যুবরণ
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আর আজ আমি আপনাদের মাঝে খুবই বেদনাদায়ক একটি ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছি। যদিও বা এই ঘটনাটি আমার তেমন কোন নিকট আত্মীয়র নয়। তবে ঘটনাটি শুনে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। তাই ভাবলাম এই ঘটনাটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নেই। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন আমার বাবা ভীষণ অসুস্থ ছিল। তবে আল্লাহর রহমতে আমার বাবা আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে। যদিও বা সুস্থ হয়ে গেছে, তবে তিনি কিন্তু একা একাই হাটা চলাফেরা করতে পারে না।
আর এজন্যই মূলত আজ সকালে আমার বাবাকে দেখার জন্য আমার খালা আমাদের বাড়িতে এসেছে। আমার বাবার ঘরে যখন সবাই মিলে আমরা গল্পগুজব করছিলাম, তখন আমার খালা তার বাড়ির পাশে ঘটে যাওয়া একটি বেদনাদায়ক ঘটনা বলতে শুরু করেছিলেন। ঘটনাটি শুনে সত্যিই আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। দুশ্চিন্তা মানুষকে কখনোই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেয় না। আর তাইতো আমার খালার বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাড়িতে এক দম্পতির দুশ্চিন্তাআর কোন শেষ ছিল না। আর এই দম্পতির ছিল এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েটি ক্লাস সিক্সে পড়ে, আর ছেলেটি ক্লাস ফাইভে পড়ে।
বয়সের দিক থেকে তারা এক বছরের ছোট বড়। যাই হোক বাইরের দিক থেকে এই দম্পতিকে দেখলে মনে হবে তারা হয়তো খুব সুখেই রয়েছে। তবে সত্যি কথা বলতে কি তাদের ঘরে কোন সুখই ছিল না। আর তার একমাত্র কারণ হচ্ছে ওই দম্পতির স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মতের মিল ছিল না। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে সারাদিন অহেতুক ঝগড়া করত। তবে এতে স্বামীর দোষ ছিল স্ত্রীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। স্বামী সারাদিন বাইরে থেকে এসেই স্ত্রীর সাথে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিত। কারণে অকারণে স্ত্রীকে গালিগালাজ করতো। এক কথায় বলা চলে স্ত্রীকে মানসিক টর্চার করত।
স্ত্রী যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল, স্বামীর সব কথা শুনে নিশ্চুপভাবে চলাফেরা করতে। তবে কি রক্ত মাংসে গড়া মানুষ কতই আর সহ্য করা যায়, আর তাইতো স্ত্রী অনেক সময় চুপ করে থাকতে না পেরে স্বামীর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিত। তবে ঝগড়া থামাবার জন্য স্ত্রী আগে স্বামীর কাছে মাথা নত করত। এভাবে তাদের প্রতিদিন ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকতো। সেই বিয়ের শুরুর দিক থেকে ছেলে মেয়ে বড় হওয়া পর্যন্ত তারা ঝগড়া বিবাদ করেই চলতো। তবে ইদানিং ছেলে মেয়ে দুটোকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দেয়ার কারণে, স্ত্রীর কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।
একদিকে যেমন সাংসারিক কাজকর্ম করতে হয়, ঠিক তেমনি অন্যদিকে ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। সবমিলিয়ে স্ত্রীকে ভীষণ চাপের মুখে থাকতে হতো । অথচ স্বামী বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীর ভুল ত্রুটি ধরে ভীষণ ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিত। আর এমন পরিস্থিতি চলতে চলতে স্ত্রী খুবই নাজেহাল অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। যার কারনে সে মাঝে মাঝে সবাইকে বলতো, আমার কোন কিছু ভালো লাগে না, সেই বিয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ঝগড়া বিবাদ করেই গেলাম। কখনো মনের মিল হলো না। কিভাবে স্বামীর মন পাব তাও বুঝতে পারি না। আমার যেন দিনে দিনে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
সারাদিন আমার মাথা ঘুরতে থাকে। দুশ্চিন্তায় দুশ্চিন্তায় আমি যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের কথাগুলো সব সময় তার পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে বলে বেড়াতো। এই তো কিছুদিন আগে সেই স্ত্রী রাতে স্বামী ও সন্তানদেরকে রাতের খাবার খাইয়ে, সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে ঘুম আসার জন্য বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। আর যখন বিছানায় শুয়েছিল তখন নাকি তার সন্তানদেরকে বলেছিল, তোমরা দুই ভাই বোন খুব ভালোভাবে থেকো। কখনো মারামারি করো না। একে অপরকে দেখেশুনে রাখবে। হয়তো ওই স্ত্রী মনের অজান্তেই কথাগুলো তার সন্তানদেরকে বলে ফেলেছিল।
তবে স্ত্রী ঐদিন তার স্বামীর সাথে তেমন কোন কথাই বলেনি। রাতে সবার সাথে ওই স্ত্রিও ঘুমিয়ে ছিল। সকালে উঠে যখন ছেলে-মেয়ে দুটো তার মামণিকে ডাকছিল, তারা স্কুলে যাবে রেডি করে দেয়ার জন্য। তখন পর্যন্ত তার মা কোন সারা শব্দ করছিল না। আর এমন পরিস্থিতি দেখে ছেলে মেয়ে দুটো মামনি মামনি বলে জোরে চিৎকার করতে শুরু করলে, তার বাবা পাশের ঘর থেকে দৌড়ে আসে। সেই সাথে পাড়া-প্রতিবেশী তাদের বাড়িতে চলে আসে। আর সকলে এসে দেখে ওই স্ত্রী রাতেই ঘুমের ঘোরে মৃত্যুবরণ করেছে। আর সেখানে থাকা পাড়া-প্রতিবেশীরা বলতে শুরু করেছিল, ওই স্ত্রী মানসিক যন্ত্রণার কারণে, পারিবারিক অশান্তির কারণে, সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকত।
আর এজন্যই হয়তো ওই স্ত্রী রাতে ঘুমের ঘোরে স্ট্রোক করে মারা গেছে। ওই স্ত্রীর বয়স খুব একটা ছিল না, সবে মাত্র ছোট ছোট দুটি ছেলে মেয়ে ছিল। আর এত অল্প বয়সে ওই স্ত্রীর এমন পরিণতি দেখে অনেকে আবেগআপ্লুত হয়ে গিয়েছিল। আর এই ঘটনাটি শুনে আমার কাছেও খুবই খারাপ লেগেছিল। যদি ওই স্বামী তার স্ত্রীর সাথে একটু মানিয়ে চলার চেষ্টা করত, সব সময় ভুল ত্রুটি না ধরে স্ত্রীকে একটু শান্তিতে রাখতো, সব সময় খুনসুটি ও ঝগড়া বিবাদ না করত, তাহলে হয়তো এমনটা নাও হতে পারতো। সংসার জীবনে সকলে সুখী হয় না, সুখ নিজেদেরকেই তৈরি করে নিতে হয়। ওই স্ত্রী তার বিবাহিত জীবনে স্বামীর সংসারে এতোটুকু সুখ পায়নি। তাই তিনি যেন পরপারে গিয়ে বেহেস্ত নসিব করেন মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। আসলে ভাইয়া একা ভালো হলে কখনো সুখ পাওয়া যায় না । আর মানুষের মানসিক চাপ অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করে। আর মানসিক চাপ স্ট্রোক বেশি করে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
হ্যাঁ আপু, ওই স্ত্রীর কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যার কারনে মানসিক চাপে স্ট্রোক করেছে। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া খুক সুন্দর করে আপনি পোস্টটি লিখেছেন। আসলে মহিলাটির জন্য বেশ মায়া হচ্ছে। আপনি বেশ সুন্দর করে অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আমি মনে করি মানুষের জীবনে যতই দুঃখ কষ্ট থাকুক না কেন। স্বামী যদি ভালো হয় তাহলে আর কিছু লাগে না। ধন্যবাদ এমন মর্মান্তিক একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
আপু আপনি ঠিকই বলেছেন, স্বামী যদি ভাল হয় তাহলে স্ত্রীর আর কোন কিছুই লাগে না। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে সবার কপালে সুখ সয় না।
এরকম অনেক পরিবার আমাদের আশেপাশে রয়েছে। দুজনের মতের অমিলের কারণে দেখা যায় সংসার ভেঙ্গে যায়। তবে এখানে যেটা ঘটেছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। উপর ওয়ালা তাকে বেহেশত নসিব করুন। আমাদের পরস্পরের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলা উচিত।
এটা একদম সত্যি কথা বলেছেন ভাই, সবার কপালে সুখ সয়না। আর তাইতো ওই স্ত্রীর কপালে সুখ ছিল না বললেই চলে। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
https://twitter.com/mahbubullemon/status/1776304514351743431?t=5YDw5WXMjOD0xsI2TkbgLw&s=19
পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ সুন্দর করে লিখেছেন। তবে মেয়েটির জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে কারণ বেচারি সংসারে সুখ কি জিনিস সে বুঝলো না। একটি সংসারে প্রকৃত সুখ হচ্ছে দুজনের প্রতি বিশ্বাস ও একজন আরেকজনকে বোঝার ক্ষমতা। তবে এখানে যেটা হয়েছে সেটা অনেক কষ্টদায়ক । অনেক ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপু ওই স্ত্রীর দুঃখের কথা শুনে আমার কাছেও ভীষণ খারাপ লেগেছিল। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সত্যি ভাই ওই স্ত্রী লোকের মৃত্যুর কথাগুলো জানতে পেরে খুবই খারাপ লাগলো আমার। আরো বেশি খারাপ লাগলো ওই স্ত্রী লোকের ছোট ছোট দুটি সন্তানের কথা জানতে পেরে। আসলে আমাদের সকলের উচিত একে অপরের সাথে ভালো ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে সংসার জীবনে সুখী হওয়ার চেষ্টা করা।
ভাই, আপনার মত আমিও ওই স্ত্রীর মৃত্যুর কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রথমত আপনার বাবার সুস্থতা কামনা করছি ৷ যা হোক আজকের ব্লগে আপনি অনেক দু়ঃখজনক বিষয়ে তুলে ধরেছেন ৷ আসলে সুখ যেমনই হোক সবার জীবনে দুঃখ থাকবে ৷ তবে বর্তমান সময়ে আমাদের আশে পাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে ৷ প্রথমে বলতে হয় স্বামী স্ত্রী দুই সন্তান সহ বলা যায় সুখের বটে ৷ কিন্তু তার. ভিতরে পুরোটা কষ্ট ৷ তবে এমন মৃত্যু আশে পাশে না ঘটুক এমনটাই প্রার্থনা করি ৷
ভাই, আপনার মত আমিও এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু না ঘটুক সেই প্রত্যাশা করছি। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।