একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা

" আজ শনিবার - ২৭শে মাঘ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ই জানুয়ারি - ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

pexels-beyza-yalçın-12245311.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে খুবই তুচ্ছ একটি ঘটনা কে কেন্দ্র করে মৃত্যু বরণ করা সোহান ভাইকে নিয়ে। গতকাল বিকেল ৪ ঘটিকার সময় আমাদের কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্বরে খুবই নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা ঘটে গেছে। আর এই ঘটনার বলিদান হয়েছে আমার দূর সম্পর্কের এক বড় ভাই, যার নাম সোহান। তিনি গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার এর ডিলার হিসেবে বহুদিন থেকে ব্যবসা করে আসছিলেন।

সোহান ভাই মানুষ হিসেবে খুবই সাদামাটা ও সরল প্রকৃতির ছিলেন। তার কথাবার্তা এতটাই নম্র ও ভদ্র ছিল যে তার ব্যবহারে সকলেই খুবই মুগ্ধ ছিল। একটা সময় সোহান ভাই কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাবেক ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রাজনীতি করলেও তিনি কখনো উশৃংখল রাজনীতি করেননি। যার কারণে সকলেই তাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। বর্তমানে তিনি রাজনীতির সাথে তেমন একটা জড়িত ছিলেন না। বরং ব্যবসাটাকে তিনি খুবই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

ব্যবসা আর তার ছোট সংসার নিয়ে সোহান ভাই বেশ ভালই দিন যাপন করছিলেন। সোহান ভাই ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। আর সোহান ভাইয়ের ছিল দুটি পুত্র সন্তান। বাবা-মা বউ ও সন্তানদের নিয়ে তার সুখের সীমা ছিল না। তবে ভালো মানুষ গুলো বোধ হয় সুখ বেশি দিন সহ্য করতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া থেকে খুব তাড়াতাড়ি তাদের বোধহয় তুলে নেন। কেন বলছি এই কথা, গতকাল সোহান ভাই দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

আর সে সময় কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্বরে কয়েকটি ছেলেপেলের মোটরসাইকেল এর সাথে সোহান ভাইয়ের মাইক্রোবাসের হালকা ধাক্কা লেগে যায়। আর যে ছেলে গুলোর মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে যায়, সেই ছেলেগুলো ছিল আওয়ামী ছাত্রলীগের বখাটে কিছু ছেলের দল। যখন মাইক্রোবাস ও মোটর সাইকেলে ধাক্কা লেগে যায়, তখন সোহান ভাই মাইক্রোবাস থেকে নেমে ছেলেদের সাথে কিছুটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। যদিওবা সোহান ভাই খুব ভদ্রভাবে সবকিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিল, তবুও বখাটে ছেলেগুলো কিছুতেই সোহান ভাইয়ের কথা মানতে চাইছিল না।

আর তাই এক পর্যায়ে ছেলেগুলো হঠাৎ করে সোহান ভাইয়ের উপরে চড়াও হয়ে পড়ে। সোহান ভাইকে বেধড়ক মারতে থাকে। সোহান ভাই একা থাকার কারণে ছেলেগুলোর সাথে কিছুতেই পেরে উঠছিল না, তাই সেখানেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পাশে থাকা বেশ কয়েক জন লোক সোহান ভাইকে ধরাধরি করে হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এমার্জেন্সিতে যেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সোহান ভাইয়ের। কেননা ইমার্জেন্সি রুমে গিয়েও সেই বখাটে ছেলেগুলো আবারো নতুন করে তাকে পেটাতে শুরু করেছিল। আর সেই পেটানোর ফলে ইমার্জেন্সি রুমেই সোহান ভাই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে ছিল।

আর এই ঘটনা যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন আমাদের কুড়িগ্রাম শহরের রাস্তাগুলোতে পুলিশের বেরিকেট দিয়ে দিয়েছিল। সোহান ভাইয়ের পরিবার ছিল খুবই ক্ষমতাশীল। তবে ছেলেগুলো বুঝতে না পেরে অতর্কিতভাবে হামলা করে সোহান ভাইয়ের জীবনটা কেড়ে নিয়েছিল। আর তাই এই ভুলের মাশুল ছেলেগুলোকে অবশ্যই অবশ্যই দিতে হবে। কেননা যতই তারা রাজনীতি করুক না কেন, উশৃংখল বখাটে ছেলে হিসেবে তাদের খুবই দুর্নাম ছিল। আর এই ঘটনার পরপরই পুলিশও তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়েছে। সামান্য একটু ধাক্কা লাগার কারণে, সামান্য তর্কের কারণে এভাবে কারো জীবন কেড়ে নিতে হবে তার কোন মানে নেই। কিভাবে যে এই নরপিচাস গুলো মানুষের জীবন কেড়ে নেয় তা আমার মাথায় আসেনা।

সোহান ভাইয়ের দুটি ছেলে সবেমাত্র বড় হতে শুরু করেছে, আর সেই মুহূর্তেই তারা পিতৃহারা হয়ে গেল। আর সোহানের বাবা-মা তাদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ফেলে অসহায় হয়ে গেল। সব মিলিয়ে এই নিষ্ঠুর ঘটনাটি আমাদের কুড়িগ্রাম শহরে যেন শোকের ছায়া ফেলে দিয়েছিল। আর যখনই আমি এই ঘটনাটি মনে করছি তখনই আমার ভেতরে কেমন যেন শিহরণ দিয়ে উঠছে। যাইহোক পরিশেষে শুধু বলতে চাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন সোহান ভাইয়ের পরিবারের সকলকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দান করেন। সেই সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা সোহান ভাইকে পরপারে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_22-12-07_06-14-15-124.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 months ago 

আসলে কিছু মানুষ আছে যারা একেবারে নরপিশাচ। সেই মানুষগুলোর ছোট্ট একটা কারণে অনেক মানুষকে মেরে ফেলে। আবার ছোট একটা তর্কের কারণে অনেক কিছুতেই চলে যায়। ওই বখাটে ছেলেগুলো অনেক বেশি খারাপ ছিল। শুধুমাত্র ধাক্কা লেগেছিল একটু তর্ক হয়েছিল, সেখান থেকে একটা মানুষকে তারা মেরে ফেলেছিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে সোহান ভাইয়ের জন্য দোয়া করি। আর ওনার ফ্যামেলির জন্য। আর এটাও কামনা করি যেন সেই বখাটে ছেলেগুলোর কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।

আপু,সেই নরপিশাচকে গ্রেফতার করেছে এবং তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আশা করছি তার কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি হবে।

 7 months ago 

আপনার অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে আসলে সামান্য গাড়িতে ধাক্কা লাগার কারণে তারা কিভাবে একজন মানুষের জীবন নিয়ে নিতে পারল। যদিও কিছু মানুষ থাকে বাঁচাতে হাসপাতালে নিয়ে গেল হাসপাতালে গিয়েও তাকে মেরে ফেলল। আসলে এরকম কিছু নরপিশাচ আছে যারা মানুষকে মেরে ফেলতো দ্বিধাবোধ করে না। আমি চাই এগুলোর উপযুক্ত শাস্তি হোক।

আপু, উপযুক্ত শাস্তি দেবার জন্য সেই নর পিচাসদের গ্রেফতার করেছে। আশা করছি সোহান ভাইয়ের হত্যাকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

 7 months ago 

আমরা কোন দেশে বাস করছি ভাইয়া।আমি আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি আতংকিত।সমাজের মানুষ দিন দিন এতোটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে যে পশুকেও হার মানিয়েছে।কি ভয়ংকর ঘটনা শেয়ার করলেন ভাইয়া। বখাটে ছেলে গুলোর এমন শাস্তি দেয়া দরকার যাতে করে দ্বিতীয় কোন ব্যাক্তি কারো শরীরে হাত তোলার আগে দশবার ভেবে নেয়।

ঠিক বলেছেন আপু, সোহান ভাইয়ের হত্যাকারী পশুদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি হওয়া উচিত। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 7 months ago 

কার মৃত্যু কখন হয়ে যায় এটা বলা মুশকিল। তবে উনার অকাল মৃত্যুতে সত্যি অনেক খারাপ লেগেছে। আর এভাবে কারো মৃত্যু হলে আরো বেশি খারাপ লাগে। সামান্য বিষয়ে কাউকে মেরে ফেলা এটা সত্যিই অনেক কষ্টের।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 59820.46
ETH 2409.96
USDT 1.00
SBD 2.42