জমসেরের গল্প

" আজ বুধবার - ১০ই জ্যৈষ্ঠ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৪,মে - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

agriculture-1807497_1920.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজ আমি জমশের নামের একজন ছেলের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। জামশের ছেলেটি ছিল আমার দাদু বাড়ির প্রতিবেশী একজন চাচার ছেলে। আমার বাবা যেহেতু একজন সরকারি চাকরিজীবী লোক। তাই বাসায় ঠিকমতো বাজার খরচ ও সাংসারিক কাজগুলো দেখাশোনা করতে পারত না। যার কারণে আমার বাবা, দাদু বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এই জমসেরের বাবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে, জামসেরকে আমাদের বাড়ির টুকিটাকি কাজের জন্য কন্টাক করে নিয়ে এসেছিল।

আর তার কন্টাক ছিল, বছরে ২০ হাজার টাকা। যদিওবা এই ঘটনা অনেক অনেক বছর আগে, তাই হয়তো এভাবে লোক পাওয়া গিয়েছিল।তবে বর্তমানে টুকিটাকি কাজের জন্য লোক খুঁজে পাওয়া আর সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়া একই ব্যাপার হয়ে গেছে। যাই হোক এই জামশেরকে যখন আমার বাবা আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিল, তখন আমার মা এবং সাথে আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। বিশেষ করে আমি বেশি খুশি হয়েছিলাম, কারণ আমার বয়স আর যশোরের বয়স খুব বেশি তারতম্য নয়। তাই ভেবেছিলাম জামশের আমার একজন খেলার সাথী হয়ে আমাদের বাসায় থাকবে।

জামশের ছেলেটি যখন আমাদের বাসায় এসেছিল তখন তার বয়স প্রায় ১৩ কিংবা ১৪ হবে। ছেলেটি দেখতে শ্যামবরণের, খুব বেশি লম্বা নয় আবার খাটো বললেও ভুল হবে। সে খুব মনোযোগের সাথে আমাদের বাসার সকল কাজকর্ম করতো এবং আমার সাথে খেলাধুলা করে আনন্দে দিন কাটিয়েছিল। তাকে দেখে কখনো মনে হতো না সে গ্রাম থেকে শহরে এসে বাবা মাকে ছেড়ে আছে। বরং শহরে এসে আমাদের সাথে থাকতে পেরে সে ভীষণ খুশি ছিল।

জামশের থাকা অবস্থায় আমার দিনও বেশ ভালই কেটেছিল। এভাবে চলতে চলতে কখন যে একটি বছর শেষ হয়ে গিয়েছিল, তা যেন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যেহেতু সে এক বছরের কন্টাকে এসেছে, সেহেতু তার দেনা পাওনা মিটিয়ে দিলে আবারো সে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আমার বাবা জামসেরকে রাখার জন্য খুব বেশি জোর করেনি। কারণ তাকে রাখতে হলে আবারও একটি বছরের কন্টাক করতে হবে। আর সেই কন্টাকের টাকা বলেছিল ৩৬ হাজার টাকা। তখন আমার বাবার কাছে টাকার পরিমাণটা বেশি মনে হওয়ার কারণে, সানন্দে জমশেরকে বিদায় দিয়েছিল।

এরপর আমাদের সাথে আর জমসেরের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। আর আমরা খুব বেশি একটা গ্রামের বাড়িতে যেতাম না, যার কারণে জামসের কোথায় কি করছে সে সম্পর্কে কোন ধারণাও ছিল না। হঠাৎ করে বছর খানেক আগে আমার মোবাইলে বিদেশি নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না বাইরের দেশ থেকে আমাকে কে ফোন করবে। যখন ফোনটা রিসিভ করেছিলাম তখন তো আমি পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

construction-site-1359136_1920.jpg

source

কেননা ফোনের ওপাশে যে কথা বলছে, সে আর কেউ নয় সে হচ্ছে জমশের। সেতো মহা খুশি আমার সাথে কথা বলতে পেরে, আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ভাইয়া আপনি কেমন আছেন। আমি তো তার সাথে কথা বলে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে আমার নাম্বার কোথা থেকে পেল। তখন বলল আমার এক চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে আমার নাম্বারটি কালেক্ট করেছে তার বাবার মাধ্যমে। সে আরো বললো বিভিন্ন মানুষের বাসায় কাজ করে করে টাকা যোগাড় করে তবে সে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।

আমি জামশের কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার বর্তমান পরিস্থিতি কি, তখন সে আমাকে জানায় সে খুব সুখে আছে এবং ভালো আছে। বিদেশে যাবার বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। যার কারণে সে গ্রামের বাড়িতে বেশ কিছু জায়গা জমি কিনেছে সেই সাথে বসতবাড়িও পাকা করে ফেলেছে। আমি জানতাম জামশের খুব পরিশ্রমই ও একজন ভালো মনের মানুষ। আর তাই তার এরকম উন্নতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। জামশেরের সাথে কথা বলে আমার কাছেও ভীষণ রকম ভালো লেগেছিল।

জমশের আমাকে জানিয়েছে পরবর্তীতে বাংলাদেশে আসলে সে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। জমশের এখনো মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে আমার এবং আমার পরিবারের খোঁজ খবর নেয়। পরিশ্রম করলে এবং সৎ থাকলে মানুষের এগিয়ে যেতে খুব বেশি একটা সময় লাগে না। যার প্রমাণ হিসেবে চোখের সামনে জমশেরকেই দেখতে পাই। আজ হঠাৎ করে জমশের আমাকে ফোন দিয়েছিল খোঁজখবর নেয়ার জন্য, তার সাথে আমার প্রায় ঘন্টাখানেক কথা হয়েছিল। তার এরকম উন্নতি ও ভালো থাকার কথা শুনে সত্যিই মনের মধ্যে আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। যার কারণে এই জমশেরের কথা গুলো আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম। আমার বিশ্বাস জমসেরের এই কাহিনী শুনে আপনাদের কাছেও খুবই ভালো লাগবে।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

Picsart_22-12-06_06-32-35-909.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

সত্যি বলতে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। জমশের এর মত অনেক উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশে যারা পরিশ্রম করে অর্থ উপর্জন করতে পিছ পা হয় না। এই জমশের এর কথাই যদি ভাবেন তাহলে দেখেন একদিন যে ছেলে আপনাদের বাড়িতে কন্ট্রাকে কাজ করেছে সে আজ পরিশ্রমের মাধৎমে নিজের বাড়িকে পাকা ঘরে পরিনত করেছেন। আবার নাকি গ্রামে জায়গা জমিও কিনেছেন। শুভ কামনা রইল আপনার জমশের এর প্রতি।

 2 years ago 

জমসেরের কঠোর পরিশ্রম এবং সৎ মনের মানুষ হওয়ার কারণে আজ তার এই উন্নতি হয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

এটা কিন্তু ঠিকই বলেছেন পরিশ্রম করলে এবং সৎ থাকলে মানুষের জীবনে এগিয়ে যেতে সময় লাগে না। জামসেরের গল্পটা পড়ে সত্যি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। সে তার জীবনে খুব সুন্দর ভাবে এগিয়ে গিয়েছে দেখে এবং সফলতার অর্জন করেছে দেখে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। ও পরবর্তীতে যখন দেশে আসবে তখন আপনাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে এবং আপনার সাথে দেখা করবে এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। খুব সুন্দর ভাবে আপনি জামসেরের এরকম উন্নতির কথাটি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা পোস্ট ছিল।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু জমশের আমাকে বলেছে বাংলাদেশে আসলে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসবে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.34
JST 0.033
BTC 113090.19
ETH 4202.87
USDT 1.00
SBD 0.86