ভাগ্য পরিবর্তন
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার দাদু বাড়ির প্রতিবেশী এক চাচার বাস্তব জীবনের কাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছি। । ঘটনাটি ছিল কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার। সেখানে আমার দাদু ভাই এর বাড়ি। আমার দাদু ভাইয়ের বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িটার এই গল্প। বাড়িটার কর্তা ছিল আব্দুল গফুর সরকার। পেশায় ছিল একজন নৌকা চালক। গ্রামের ছোট্ট একটি নদীতে আব্দুল গফুর সরকার নৌকা চালাতেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে সহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো মোট ছয় জন। আমি আব্দুল গফুর সরকারকে চাচা বলে ডাকতাম।
আমি তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। আমরা প্রতি ডিসেম্বর মাসে গ্রামের বাড়িতে অর্থাৎ রৌমারী উপজেলাতে বেড়াতে যেতাম। আর সুযোগ টা পেতাম ডিসেম্বর মাস পুরোটাই জজকোর্ট বন্ধ থাকার কারনে। কারন আমার বাবা জজকোর্ট এ চাকুরি করতো। আর আমদের সব ভাই-বোনদের ও বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো। রৌমারী উপজেলাতে আমার নানা ভাই ও দাদা ভাইয়ের বাড়ি। তাই পুরো ডিসেম্বর মাস টাই আমারা রৌমারীতে কাটিয়ে দিতাম।
যাই হোক এখন মূল কথায় যাচ্ছি।এই চাচার সংসার নৌকা চালিয়ে খুব কষ্টেই কাটতো।তাই চাচার পরিবার কখনো তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারতোনা। কোনো দিন আবার একবেলা না খেয়েই কাটাতো। চাচা যে নদীতে নৌকা চালাতো, এখন আর সেই নদীতে নৌকা নেই। কারন নদীর উপরে এখন ব্রিজ হয়েছে। যার কারনে চাচার সংসারে দুঃখের কালো ছায়া যেন নেমে এসেছিল। এভাবেই কিছু বছর চলতে চলতে তার দুই ছেলে সংসারের বোঝা নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ল।
আর তারা যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাদের কুড়িগ্রাম জেলায় এসেছিল, তখন তারা দুই ভাই দেখতে পেল কুড়িগ্রামের স্টেডিয়াম মাঠে আর্মিতে যোগ দেয়ার জন্য অনেকেই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা দুই ভাই সেই সারি বদ্ধ লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এই সময় বোধ হয় ভাগ্য তাদের সহায় হয়েছিল। আর তাইতো তারা দুই ভাই একই সাথে সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছিল। তাদের দুই ভাইয়ের এই সরকারি চাকরি পাওয়ার কথা শুনে আব্দুল গফুর চাচা খুবই খুশি হয়েছিল। কেননা এই চাকুরীর ফলে তাদের সংসারের অভাব অনটনের দুর্বিসহ জীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল।
আর এভাবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই, তার বড় ছেলে মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। মিশন থেকে ফিরে এসেই তার বড় ছেলে অনেক টাকা পয়সা পেয়েছিল। যার কারণে রংপুর বিভাগে দশ শতক জায়গা কিনে রেখেছিল। এরপর আবার কিছুদিন যেতে না যেতেই গফুর চাচার ছোট ছেলে মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। আর সেই ছোট ছেলের মিশনে যাওয়ার টাকা দিয়ে, রংপুরের সেই জায়গাতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছিল। এখন আব্দুল গফুর চাচার সুখের যেন আর অন্ত রইল না। তারা দুই ভাই মিলে, ছোট ভাই বোনদেরকেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছিল।
আব্দুল গফুর চাচা কখনোই চিন্তা ভাবনা করেনি, নৌকা চালিয়ে তার কষ্টের সংসার কখনো এমনিভাবে সুখের জোয়ারে ভাসবে। গফুর চাচার দুই ছেলের একেতো সরকারি চাকরি, তার ওপরে আবার বেশ কয়েকবার করে মিশনে যাওয়া। সব মিলিয়ে যেন গফুর চাচার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছিল। বর্তমানে গফুর চাচা পায়ের উপর পা তুলে, খুব আরামে জীবন-যাপন করছেন। তার এমন সুখ দেখে সত্যিই আমরা অনেক খুশি।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কথায় আছে বিপদে র্ধৈয ধারণ করতে হয় তাহলে একসময় না এক সময় তার ফল পাওয়া যাবে। যেই লোকটার সংসার চলতো নৌকা চালিয়ে আর নদীর উপর ব্রিজ হওয়াতে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই লোক আজ কত টাকা পয়সার মালিক হয়ে গিয়েছে। কখন কিভাবে কার ভাগ্য পরিবর্তন হয় কেউ জানে না। সবাই ভালো থাকুক এই দোয়া কামনা করি। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
আপু আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে অনেক মানুষ জীবনে প্রথমে অনেক কষ্ট করে। একসময় তাদের ছেলেমেয়েরা তাদের জীবন বদলিয়ে দেয়। গফুর চাচা প্রথমে নৌকা চালাতেন। তার বড় দুটি ছেলে যখন আর্মিতে চাকরি করেন তখন থেকে তার জীবনের ভাগ্য ঘুরে গেল। আসলে তার জীবন সুখের হয়ে সে শুনে খুব ভালো লাগলো। দাদুর বাড়ির পাশের লোকের বাস্তব কাহিনী আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাই, তার সুখের কথা শুনে সত্যিই আমাদের কাছেও ভীষণ ভালো লাগে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাগ্য এমন একটা জিনিস কখন কার জীবনে কি আসে কেউ বলতে পারেনা। আপনার দাদুর এলাকার গফুর মিয়া একসময় নৌকা চালাতেন। অথচ তার দুটি ছেলে আর্মিতে চাকরি হওয়ার কারণ একটা জীবন পাল্টে গেল। এবং তার ছেলে দুটি মিশর ট্রেনিং যাওয়ার কারণে তাদের ফ্যামিলিতে আরো উন্নতি হয়ে গেল। সত্যিই আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
হ্যাঁ আপু গফুর চাচার দুই ছেলের একই সাথে সরকারি চাকরি হওয়ার কারণে তাদের ভাগ্যটাই বদলে গিয়েছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে কার ভাগ্যে কখন কি ঘটে সেটা কখনো বলা যায় না। আপনার গফুর চাচার বিপদে ধৈর্য ধারণ করছেন তাই আল্লাহ তাকে সুখের দিন দিয়েছে। আপনার গফুর চাচার সুখের গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। আসলে কেউ সুখে আছে শুনলে খুব ভালো লাগে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন আপু, কেউ সুখে আছে জানলেও খুবই ভালো লাগে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের জীবনে কোন একটা সুযোগ পুরো জীবনের মানেটাই পরিবর্তন করে দিতে পারে। আবার কোন একটা পরিস্থিতি মুহূর্তেই জীবনের সব আনন্দ ম্লান করে দিতে পারে। এটাই হয়তো ভাগ্য। চমৎকার লেগেছে একদম বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা এই গল্প টা। যদিও আমি নিজেই নিজের জন্য আজকাল হতাশায় ভুগি। তবুও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে হয়তো কোন একটা মিরাক্কেল ঘোটেও যেতে পারে।
ভাই আপনার জীবনেও যেন মিরাক্কেল কিছু ঘটে সর্বদা এই প্রার্থনা করি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।