উপকারের প্রতিদান
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমি আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া বাস্তব এক গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। তখন ছিল ১৯৯৮ সাল। আর এই ১৯৯৮ সালে আমি ক্লাস এইট এর ছাত্র ছিলাম। তখন চোখের সামনে যা কিছু দেখতাম সবকিছুই ভালো লাগতো। সেরকম ভাবে ভালো-মন্দ বিচার করার মতো বোধ বুদ্ধি ছিল না। তাই হয়তো আমি আমার ওই বয়সে খুবই বিরম্বনার শিকার হয়েছিলাম।
আমার বাড়ির পাশে একটি রেল স্টেশন রয়েছে। আমি ও আমার দুই বন্ধু মিলে ওই রেল স্টেশনে প্লাটফর্মে বসে বসে ছোট ছোট ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখছিলাম। এমন সময় প্ল্যাটফর্মের পাশে বসে একটি ছেলে খুব কান্নাকাটি করছিল। এই দৃশ্যটি দেখে আমার একটুও ভালো লাগেনি, তাই তার কাছে গিয়ে আমরা তিন বন্ধু মিলে তার সমস্যা জানতে চেষ্টা করেছিলাম। তো সেই ছেলেটি আমাদেরকে জানায় তার বাড়ি সৈয়দপুরের কোন এক এলাকায়।
সে তার বাবা মার সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে ট্রেনে করে আমাদের এইখানে এসে পৌঁছেছে। এইখানে এসে সে মহা বিপত্তিতে পড়ে গিয়েছে। কেন না সে কাউকে চিনে না, কোথায় থাকবে তাও জানেনা। তার কান্নাকাটি ও আলাভোলা চেহারা দেখে আমার খুবই মায়া হয়েছিল। তাই তাকে আমি বলেছিলাম, সে যেন কোন দুশ্চিন্তা না করে আর আমার বাসাতেই থাকতে পারে। আর আমার বাসাতে থাকা অবস্থায় সে যেন তার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করে চলে যেতে পারে।
সেই ছেলেটির নাম ছিল আনোয়ার। আমরা তিন বন্ধু মিলে আনোয়ারকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছিলাম এবং তাকে খুব আদর যত্ন করে থাকতে দিয়েছিলাম। আনোয়ার খুব সহজে আমাদের সকলের সাথে মিশতে শুরু করল। তার ভালো ব্যবহার ও মায়াবী মুখ দেখে আমরাও তাকে খুবই ভালো ভাবতে শুরু করেছিলাম। তো এইভাবে থাকতে থাকতে সে যখন তিনদিন পার করে ফেলেছে, তখন আমার পরিবারের লোকজন তাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য যোগাযোগ করার জন্য ঠিকানা চাইতে থাকল।
তবে কেন জানি সে তার বাড়ির ঠিকানা পুরোপুরি ভাবে আমাদেরকে জানায়নি। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম তখন আমার বাবা আমাকে খুব শখ করে একটি রেঞ্জার সাইকেল কিনে দিয়েছিল। আমরা তিন বন্ধু মিলে সাথে আনোয়ারকে সহ বিকেল হলেই সেই রেঞ্জার সাইকেলে করে ঘুরতে যেতাম। একদিন বিকেল বেলায় আমরা তিন বন্ধু ও আনোয়ার যখন আমাদের এলাকার একটি মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম।
ঠিক তখন আনোয়ার বলল ভাইয়া তোমার সাইকেলটা একটু দাও আমি বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম বাসায় কি জন্য যেতে চাচ্ছ। তখন সে বলল আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে, একটু চাবিটা দাও এক্ষুনি তোমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি। আমি তার কথায় কোন কিছু চিন্তাভাবনা না করেই সাইকেলের চাবিটা আনোয়ারকে দিয়ে দেই। আমরা যখন ফুটবল খেলা একদম শেষ করেছিলাম, তখন পর্যন্ত আনোয়ার আর আমাদের কাছে ফিরে আসেনি।
তো আমি ভাবলাম আনোয়ার হয়তো বাসায় গিয়েছে আর আমার মা হয়তো তাকে কোন কাজে ব্যস্ত রেখেছে। তাই আমরা তিন বন্ধু মিলে আমার বাসায় ফিরে আসি। কিন্তু বাসায় ফিরে এসে দেখি আনোয়ার আমার বাসায় আসেনি। তখনতো আমি মহা বিপদে পড়ে গেলাম। একে তো আমার বাবা খুব শখ করে আমাকে সাইকেলটি কিনে দিয়েছে, তার ওপরে সাইকেলটি কেনার একমাসও হয়নি। আনোয়ার বাসায় ফিরে না আসাতে আমি ও আমার বন্ধুরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই তাকে খোঁজার জন্য আমরা তিন বন্ধু মিলে বাড়ির আশে পাশে থাকে খুঁজতে শুরু করলাম।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছিল এই, আনোয়ারের ধোকা খাওয়া। আমি তাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাড়িতে থাকতে ও খেতে দিয়েছিলাম, আর সেই কিনা অবশেষে আমার প্রিয় সাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে গেল। সেই মুহূর্তে আমি আমার মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না। মানুষের উপকার করলে ঠিক কতটা অসুবিধায় পড়তে হয়। আমার প্রিয় সাইকেলটির জন্য আমার বাবা ও মা দুজনেই আমার উপরে খুবই চড়াও হয়েছিল। কিন্তু কি আর করার, যা হবার তাই তো হয়েছে, আনোয়ার আমার সাইকেলটি চুরি করে পালিয়ে গেছে। আমি এখনো যখন এই ঘটনাটি মনে করি, তখন শুধু আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে, উপকারের প্রতিদান কেউ বুঝি এভাবে দেয়।
এখনো যখন আমি কারো উপকার করতে যাই, তখন কেন জানি আমার সেই দিনের কথা খুবই মনে পড়ে। তবে সেই দিনের কথা মনে রেখে আমি কিন্তু কখনো অপরের উপকার করতে পিছপা হইনা। যখন যার উপকারের প্রয়োজন হয়, তখন তাকে সেই ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। এভাবে অনেকের উপকার করতে গিয়ে আমি এখনো অনেক ভাবেই বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। তবু কেন যেন মনে হয়, আমি মানুষ, তাই অপর মানুষের উপকার করা আমার এক প্রকার ধর্ম। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষ মানুষের জন্য।
আশা করি আমার পোস্ট আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
ভাইয়া, আপনারা এই পোস্টটিতে যদিও আপনার একটি মানুষকে বিশ্বাস করে তাকে সহায়তা করার পরিনাম হিসেবে আপনার প্রিয় রেঞ্জার সাইকেল কে নিয়ে সে পালিয়েছে, সে রাগ করেছে সেটা অবশ্যই অন্যায় আনোয়ার আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারিনি,কিন্তু আপনি কিন্তু ঠকেননি ভাইয়া আপনি ঠিকই জিতেছেন। অপরদিকে আপনের পোষ্টটি থেকে আমরা এবং অন্যরা খুব ভালোভাবে একটা শিক্ষা নিয়েছি, কাউকে উপকার করতে গেলে অন্তত তার সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে জেনেশুনে নেয়া দরকার।ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, আমার পোস্ট পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আপনার উপকারের প্রতিদান আনোয়ার আপনাকে এভাবে দিবে আমি মনে করি এটা আনোয়ারের কখনোই ঠিক হয়নি।। সে আপনার দ্বারা উপকৃত হয়েছে থাকা খাওয়ার জায়গা পেয়েও সে আপনার সাইকেলটা নিয়ে চলে যাওয়া তার উচিত হয়নি । এটা জেনে ভালো লাগলো যে এরকম ঘটনার শিকার হয়েও আপনি কারো উপকার করতে কখনো পিছপা হননি আসলে সব মানুষ এক রকম না। আপনার উপকারের প্রতিদান বাস্তব গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু, আমার গল্পটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ খুশি হলাম। সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনার উপকারের প্রতিদান গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আসলে মানুষ মাত্র ই এমন।উপকারের প্রতিদান এভাবেই দেয়।তবে ভাল লাগলো এটা ভেবে আপনি আপনার মত উপকার এখনও করছেন।খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
আপু, একজনের জন্য অন্য সবাইকে সেই দাঁড়িপাল্লায় তো মাপতে পারি না। তাই এখনো কারো উপকারে আসলে নিজের কাছেই ভালো লাগে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কিছু কিছু লোক আছে ভাইয়া এরকমই,তারা নিজের। স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝেনা।আনোয়ার লোকটার এমন করা মোটেও ঠিক হয়নি।তবে আপনি যে এর পরেও কখনও উপকার করতে পিছপা হবেন না,এটা শুনে বেশ ভালো লাগলো।আপনার একমাস কেনা প্রিয় সাইকেল টা নিয়ে ধোঁকা দিয়ে চলে গেল।ভালো লেগেছে ভাইয়া গল্পটি অনেক আগের ঘটনা ছিল,আপনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপু, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একটি সমাজে সর্বস্তরের মানুষ বসবাস করে থাকে। এক একজনের আচার ব্যবহার কালচার এক এক রকম হয়ে থাকে, তবে সভ্য সমাজে খুব কম সংখ্যক খারাপ কার্যকলাপের লোক থেকে থাকে। জয় হোক অনেক সময় অনেক খারাপ মানুষের মুখোমুখি সম্মুখীন হতে হয় তবে নিজেকে তার মধ্য থেকে ঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে এটাই বুদ্ধিমানের পরিচয়।
ভাই, আমার পোস্ট পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন। এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।