অবাঞ্চিত ঘটনা

" আজ মঙ্গলবার - ২৩শে জ্যৈষ্ঠ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ০৬,জুন - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

ship-952292_1280.jpg

Source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকের পোস্ট হচ্ছে আমার ফেলে আসা একটি স্মৃতিকে কেন্দ্র করে। কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম থেকে রৌমারী যাবার পথে নৌকা ভ্রমণের সময় আমাদের সাথে একটি অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটেছিল, আর সেই ঘটনা আজ আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। কুড়িগ্রাম হচ্ছে আমাদের জেলা যেখানে আমার বসবাস। আর আমার দাদু বাড়ি ছিল রৌমারীতে, যেখানে আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজনের বসবাস। যাইহোক আমার মেয়ের জন্মের পরে আমার দাদু বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা আমার মেয়েকে দেখার জন্য খুব আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তাই আমার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দাদু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। আমার দাদু বাড়িতে যেতে হলে কুড়িগ্রাম থেকে শুধুমাত্র নৌকা করেই যেতে হয়। তাও আবার এই নৌকা ভ্রমন প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

তো আমরা একদিন খুব আনন্দ নিয়ে দাদু বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমরা বিকেল (৪) চার টার নৌকা ধরে রৌমারির উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠেছিলাম। গরমের দিন মাথার উপরে প্রচন্ড রোদ থাকে এজন্যই মূলত সকালের নৌকায় আমরা রওনা হয়নি। যেহেতু ছোট মেয়েকে নিয়ে যাব তাই চিন্তা ভাবনা করেছিলাম বিকেলের দিকে গেলে ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেশ সুন্দরভাবে রৌমারীতে গিয়ে পৌঁছাব। কিন্তু আমরা যা চিন্তা ভাবনা করি তা কি সব সময় ঠিক থাকে। তা হয়তো কখনো কখনো চিন্তার চেয়েও ভয়ানক কিছু হয়ে যায়।

যেহেতু রৌমারি পৌঁছাতে দুই আড়াই ঘণ্টার সময় বেশি লাগবে না, তাই আমরা নৌকাতে ওঠার সময় খুব বেশি একটা খাবার নিয়ে উঠিনি। হালকা চিপস বিস্কিট ও মিনারেল ওয়াটার নিয়েছিলাম। আর সে সময় আমার মেয়ের বয়স প্রায় সাত-আট মাস ছিল বলে শুধুমাত্র এক ফিডার দুধ নিয়েছিলাম। তো আমাদের নৌকা চলতে চলতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ করে আমাদের নৌকাটি নদীর চরের সাথে আটকে পড়ে। নদীতে পানি কম হওয়ার কারণে অনেক সময় চর জেগে ওঠে, আর এই চরের সাথে যদি কখনো নৌকা আটকে যায়, তাহলে নৌকা থেকে নেমে নৌকা ধাক্কিয়ে আবারো পানিতে নিয়ে যেতে হয়।

তো এভাবে আমাদের নৌকাটি চরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পরে অনেক কষ্টে সকলে মিলে নৌকাটিকে আবারো পানিতে নিয়ে আসা হয়। তবে চরের মধ্যে নৌকাটি আটকানোর কারণে কিছুটা ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যার কারণে পানিতে যাওয়ার পরেও নৌকাটি সচল হচ্ছিল না। এরকম পরিস্থিতি দেখে তো আমাদের কাছে খুবই বিরক্ত লাগতে শুরু করেছিল। কিন্তু পানিপথে বিকল্প কোন পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে আমরা ওই নৌকাতে বসেই নৌকা সচল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে শুরু করেছিলাম। এভাবে আমাদের সময় অনেকটা পেরিয়ে যাবার পরে সেখানেই সন্ধ্যে হয়ে যায়। যাক অবশেষে নৌকাটির ইঞ্জিন সচল হয়ে গেলে নৌকা আবার রৌমারির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।

আমরা তো খুব খুশি হয়েছিলাম নৌকা চলতে শুরু করেছে, তাহলে হয়তো আর ঘন্টা খানিকের মধ্যে আমরা রৌমারী ঘাটে গিয়ে পৌঁছাব। কিন্তু উপরওয়ালা বোধ হয় সেরকমটি চাননি। তাই তিনি আবারও আমাদের বিপদের মুখে ফেলে দিলেন। নৌকাটি অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকলেও তবুও যেন কোন কূল কিনারা পাচ্ছিল না। তখন নৌকাতে থাকা সকল যাত্রীরা বলতে শুরু করেছিল, নৌকার মাঝিরা নতুন নাকি, কেননা তারা নৌকাটি ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। নৌকার মাঝি বলেছিল, তারা পুরাতন মাঝি তবে কেন জানি তাদের সাথে আজ এরকমটি হচ্ছে। তারা কেন জানি আজ বার বার পথ হারিয়ে ফেলছে। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল সেহেতু নৌকাতে থাকা যাত্রীরা কোন ভাবে নদীপথ চিনে উঠতে পারছিল না।

এদিকে আমাদের কাছে থাকা বিস্কিট চিপস ও মিনারেল ওয়াটার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদেরও প্রচুর ক্ষুধা লাগতে শুরু করেছিল। আর আমার মেয়ে তো ফিডার ছাড়া কিছুই বোঝেনা। এরকম পরিস্থিতিতে সত্যিই সেদিন আমরা খুবই অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে আমরা সন্ধ্যা সাতটার দিকে রৌমারি গিয়ে পৌঁছাব, সেখানে রাত ৯টা বেজে গেলেও আমরা নৌকা ঘাটের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এক সময় মাঝি চিৎকার করে বলতে শুরু করেছিল, আমরা বোধহয় ভুল করে ভারতে প্রবেশ করে ফেলেছি, যার কারনে আমরা নৌকা ঘাট যাওয়ার রাস্তা খুজে পাচ্ছিলাম না। একথা শুনে তো আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

কেননা ভারতে থাকা বিএসএফ যদি আমাদের নৌকাটিকে জলদস্যুর নৌকা ভেবে গুলি করা শুরু করে তাহলে আমাদের কি হবে। নৌকাতে ওঠার পর থেকেই একের পর এক সমস্যা যেন বেড়েই চলেছে। এরকম সমস্যায় পড়ে সত্যিই অনেক সময় মাথা কাজ করে না। তারপর নৌকায় থাকা এক যাত্রী বলে উঠলো, আরে না এটা হচ্ছে বেহুলার চর, আরেকটু গেলেই হয়তো ভারতে প্রবেশ করত নৌকা। তাই সেখান থেকে দ্রুত নৌকা ঘুরিয়ে উল্টো পথে চলতে শুরু করেছিল। এবার সেই যাত্রীর দেখানো নদী পথ ধরে আমাদের নৌকাটি এগোতে শুরু করে। এভাবে যেতে যেতে আবারো ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়, তবুও যেন আমাদের ঘাট দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষ ে রাত বারোটার দিকে কোনভাবে আমরা যেন ঘাটে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। আর যখন ঘাটে পৌঁছেছিলাম তখন সত্যিই আমরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছিলাম।

আমরা যখন ঘাটে নেমেছিলাম তখন অনেকেই আমাদের ঘটনাটি শুনে বলতে শুরু করেছিল, হয়তো কোন অশুভ দৃষ্টি আমাদের নৌকার উপরে পড়েছিল। যার কারণে হয়তো এরকম ঘটনা ঘটেছে। কারণ নদীর মাঝি বছরের পর বছর ধরে এই নদী পথ দিয়ে হাজারবার যাতায়াত করেছে, তাদের এরকম ভুল হওয়ার কথা নয়। যাইহোক সেদিনের ঘটনা আমারও মাথায় কিছু আসে না। জানিনা সেদিন কি হয়েছিল, তবে সেদিন আমার স্ত্রী ও আমার মেয়ে সহ নৌকায় থাকা সকল যাত্রী ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করেছিল, আর সেই সময়টুকু আমার ভীষন খারাপ লেগেছিল। যা হোক আজ হঠাৎ করে কেন জানি পুরনো দিনের স্মৃতিটুকু মনে পড়ে গেল, তাই আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।



আশা করি আমার পোস্ট আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_23-03-04_04-00-09-256.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আমার কিন্তু ভাইয়া সেদিন ঘটনাটি পরে বেশ ভয় ভয় লাগছিল। যদি কোন একটা কিছু হয়ে যেত আপনাদের। যাক আল্লাহ মাফ করছে। অবশেষে অনেক ভোগান্তির পর ঘাটের দেখা পেলেন।বেশ ভালো ছিল আজকের লেখাগুলো।

 last year 

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু, খুব সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 last year 

ভাইয়া নদীপথে গিয়ে তাহলে তো অনেক কষ্ট করেছেন। ঠিক বলেছেন অনেক সময় নদীতে পানি কম থাকলে নদীর বুকে চর দেখা যায়। এই কারণে নৌকাগুলো আটকে গেলে পানিতে নিতে অনেক কষ্ট হয়। আর গরমের কারণে আসলে কিছুই ভালো লাগেনা। আপনারা অনেক কষ্ট করে বাবুকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়িতে পৌঁছলেন। আসলে মাঝি সব সময় যখন এই পথে নৌকা চালাই। তাহলে মনে হয় আপনাদের নৌকার মধ্যে কোন ঘটনা হয়েছে। ক্ষুধার্ত হলেও ঠিকমতো বাড়িতে পৌঁছলেন শুনে খুব ভালো লাগলো।

 last year 

সেদিন মাঝি কেন পথ ভুলে গিয়েছিল তার সমাধান আজও খুঁজে পাইনি। যাই হোক আমরা ভালোভাবে রৌমারী পৌঁছাতে পেরেছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। ধন্যবাদ

 last year 

ভাইজান নদী পথে যেতে হলে একটু সাবধানে যেতে হয়। তাছাড়া আপনারা আপনাদের দাদার বাড়িতে যেতে হলে নদী ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। আসলে ভাইয়া নদী এলাকায় এরকম অনেক দেখা যায় পানি কম থাকলে অনেক ছোট ছোট মাটির চর দেখা যায়। পানি কমের কারণে এই চরগুলো দেখা যায় না। এই কারণে নৌকাগুলো আটকে যায়। আসলে অনেক কষ্ট করে এবং অনেক সময় দিয়ে দাদুর বাড়িতে গেলেন। যাক আপনারা সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে পৌঁছলেন এটাই বড় কথা। যদিও আপনাদের অনেক ক্ষুধা লেগেছে এবং বিরক্ত লেগেছে। যাক নদী পথের অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাই, পানি কম থাকলে নদীর বুকে চর ভেসে ওঠে, আর সেই চরে নৌকা আটকালে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়, যার কারনে খুবই বিরক্ত লাগে। যাইহোক ভাই, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.18
JST 0.032
BTC 87260.43
ETH 3288.09
USDT 1.00
SBD 2.95