এক দুঃখিনী মায়ের গল্প || পর্ব - ১

" আজ রবিবার - ২৯শে শ্রাবণ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩,আগস্ট - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

pexels-keira-burton-6624439.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে এক দুখিনী মায়ের গল্প নিয়ে। এক দুঃখিনী মা যার নাম রেখা। আর এই রেখা ছিল খুবই হাসিখুশি ও একজন সহজ সরল মেয়ে। যে কিনা বাবা-মায়ের বাধ্য হয়ে চলতো। বাবা মায়ের কথা সে কখনোই অমান্য করত না। আর তাইতো বাবা-মায়ের কথা রাখতে গিয়ে রেখাকে অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। রেখা সবেমাত্র দশম শ্রেণীতে উঠেছে। তার খুব ইচ্ছে ছিল এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে লেখাপড়া করবে।

কিন্তু রেখার বাবা মা রেখার সে আশা পূরণ করতে সহযোগিতা না করে বরং তাকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। রেখার স্বামী দেখতে মোটেও ভালো ছিলনা, তার ওপরে আবার নেশায় আসক্ত। রেখার বাবা-মা রেখার স্বামীর বিষয়ে তেমন একটা খোঁজখবর না নিয়ে মেয়ের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। আর এই বিয়েটা যেন রেখার জীবন ধ্বংসের প্রথম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। রেখা তার শ্বশুরালয় এসে সকলের সাথে মিলেমিশে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল ততই যেন রেখার শ্বশুর বাড়ির লোকেদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসছিল। সেই সাথে স্বামীর অত্যাচার তো রয়েছে। এভাবেই কেটে যায় রেখার জীবনের দুই দুটি বছর। আর এই দুই বছরের মধ্যে রেখা একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এই কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে রেখাকে অনেক কথায় শুনতে হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। কেননা তারা সবাই ছিল গ্রামের অশিক্ষিত লোক। রেখা তার ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করছিল।

হঠাৎ এক দিন রেখার স্বামী মাতাল হয়ে এসে রেখার কাছে টাকা-পয়সা চাইলে, রেখার কাছে টাকা নেই জানিয়ে দিলে, তার স্বামী তাকে বেধড়ক মারপিট করে। আর এই মারপিট যেন রেখার কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না। তাই সে স্বামীর বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কিন্তু হঠাৎই রেখা দেখে তার শিশু কন্যাটির গায়ে ভিষণ জ্বর এসেছে। তাই সে মার খেয়েও মেয়ের মুখের দিক তাকিয়ে স্বামীর বাড়িতেই থেকে গেল। এভাবে সারারাত কেটে যাওয়ার পর মাতাল স্বামী যখন সকালে এসে রেখাকে বাড়িতে দেখতে পেয়েছিল তখন একপ্রকার জোর করেই চুলের মুঠি ধরে রেখাকে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়েছিল।

রেখা চিৎকার করে বলেছিল আমার মেয়ে ভীষণ অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু রেখার স্বামী প্রচন্ড বদ মেজাজি লোক, সে কিছুতেই রেখার কথা না শুনে, রেখাকে ও তার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। রেখা তার স্বামীর পা জরিয়ে ধরে চিৎকার করে বলেছিল, আমার ওপর যা প্রতিশোধ নেয়ার তা পরে নিও। এখন আমার মেয়ে ভীষণ অসুস্থ অন্তত তার প্রতি দয়া করে হলেও আমাদেরকে একটু হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করো। কিন্তু কে শুনে কার কথা, রেখার স্বামী তো শুনলোই না, উপরোক্ত তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও রেখা ও তার মেয়ের দিকে ফিরেও তাকালো না।

অসহায় রেখা তার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাবে, না হাসপাতালে যাবে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। যেহেতু রেখার কাছে রিকশা ভাড়া দেয়ার মত কোন টাকা পয়সা ছিল না, তাই অবশেষে রেখা চিন্তাভাবনা করল আগে তার বাবার বাসায় গিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_22-12-07_06-14-15-124.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন কেউ হয় না।তাই মায়েরা শত কষ্ট শত অপমান সহ্য করে সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে।রেখার বাবা-মার প্রথম ভুল ছিলো তাকে পড়াশোনা না করিয়ে বিয়ে দেওয়া।আর দ্বিতীয় ভুল ছিলো ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে একজম মাতাল লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া।প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত সন্তানরা কি চায় তা পূরণ করা।রেখার বাবা মা যদি রেখার কথা শুনতো তাহলে আজ রেখার এই পরিস্থিতি হতো না।সবমিলিয়ে অনেক সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন ভাইয়া তার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু, বাবা-মায়ের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সন্তানদের জীবন অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

খুবই দুঃখজনক একটি গল্প পড়লাম ভাই। আসলেই রেখার বাবা-মা রেখাকে খুবই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় তাকে এরকম একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে অন্তত বিয়ে দেওয়ার আগে পাত্রের সম্পর্কে কিছু জেনে শুনে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। অসুস্থ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েও যে রেখার স্বামীর মনে দুঃখ জাগলো না এটাই দুঃখজনক।

 last year 

মেয়েকে অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিতে গেলে অনেক বাবা-মা আছে যারা পাত্রের ঠিকঠাক খোঁজ-খবর না নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়। যাইহোক আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বিয়ে দেওয়ার আগে যদি পাত্রের সম্পর্কে একটু খোঁজ নেওয়া হতো, তাহলে রেখাকে আজ মাতাল স্বামীর কবলে পড়তে হতো না। তার ওপর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও সুবিধার নয় দেখলাম। রেখার উপর তার স্বামী প্রতিনিয়ত এভাবে অন্যায় অত্যাচার চালালেও, তাদের মেয়ে অসুস্থ দেখে একটা দিনও ছাড় দিতে পারলো না। তার মনে করুণা হলো না কোনোরকম। আসলেই সে নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। ভালই লাগছে গল্পটা ভাই।

 last year 

রেখার মেয়ে অসুস্থ তবুও তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি হয়নি। ব্যাপারটি সত্যি খুবই দুঃখজনক। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

আসলে কিছু কিছু বাবা-মায়ের জন্য সন্তানের জীবনটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। যেমন রেখার বাবা-মায়ের জন্য আজ রেখার এরকম অবস্থা। অল্প বয়সে রেখাকে বিয়ে দিয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু যদি ভালো দেখে একটা ছেলেকে বিয়ে দিত তবুও মানা যেত। কিন্তু তার বাবা-মা বিয়ে দেওয়ার আগে ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়নি। এখন রেখা তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করছে। মেয়ের জন্য স্বামীর বাড়ি ছাড়তে চেয়েছিল না, কিন্তু সবশেষে তার স্বামী তাকে বের করে দিয়েছে এটা সত্যি অনেক কষ্টকর। তার স্বামী সত্যি অনেক জঘন্য মনের মানুষ। পরবর্তীতে সে তার মেয়েকে নিয়ে কি করে এটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

বাবা মা যদি ছেলে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে রেখাকে বিয়ে দিত, তাহলে হয়তো রেখার জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে যেত না। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

গল্পটা পড়ে সত্যি খুব খারাপ লাগলো ভাই। এক দুঃখিনী মায়ের গল্পের প্রথম পর্ব আজকে শেয়ার করেছেন। প্রথম পর্বটা পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে। এরকম নিষ্ঠুর মানুষের জন্য অনেক মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটা কি দোষ করেছিল তার ভাগ্যে এরকম কিছু লেখা রয়েছে। আসলে সন্তানের প্রতি প্রত্যেকটা মায়ের ভালোবাসা সবার থেকে অন্যরকম হয়, তাই তো সে নিজের মেয়ের জন্য এত কষ্ট করছে। দ্বিতীয় পর্বটা খুব তাড়াতাড়ি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

রেখার জীবন কাহিনী পড়তে গেলে সত্যিই ভাই ভীষণ কষ্ট পেতে হয়। রেখার বাবা মা যদি তার আশা পূরণ করে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ তৈরি করত, তাহলে হয়তো রেখার জীবনটাই বদলে যেত। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58544.56
ETH 2629.02
USDT 1.00
SBD 2.44