লোভে পাপ পাপে মৃত্যু

" আজ মঙ্গলবার - ২৮শে চৈত্র - ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ১১এপ্রিল - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

IMG-20230411-WA0000.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি আমার এক প্রতিবেশী আঙ্কেল ও আন্টির করুণ কাহিনী নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আর আমার সেই প্রতিবেশী আন্টির নাম হচ্ছে রোকেয়া এবং আঙ্কেলের নাম হচ্ছে বুলবুল। রোকেয়া আন্টি খুব ছোট বেলায় আমাদের এলাকায় এক সরকারি চাকরিজীবী নানুর বাসায় লালিত পালিত হয়েছিলেন। কেননা রোকেয়া আন্টির আপনজন বলতে তেমন কেউ ছিল না। তাই তাকে লালন পালনের জন্য নিয়ে এসেছিলেন সেই নানু।

ছোট থেকে বড় করা এবং সেই সাথে বিয়ে পর্যন্ত দেওয়া আমার নানু সকল দায়-দায়িত্ব পালন করেছিল। আমার সেই এলাকার নানুরও তেমন আপন কেউ ছিলনা। যার কারণে রোকেয়া আন্টিকে নিজের মেয়ে বলে ভাবতেন। রোকেয়া আন্টির বিয়ের পরে তার একজন পুত্র সন্তান হয়েছিল। আর সেই পুত্র সন্তান যখন ১৫-১৬ বছরের হয়ে গেছিল তখন সেই নানু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আর কিছুদিন বিছানায় থাকা অবস্থায় সেই নানু মারা যান।

মারা যাওয়ার আগে এই সরকারি চাকরিজীবী নানু তার পালিত মেয়েকে তার পুরো বাড়ি ও বাড়ির জমি সেই সাথে ব্যাংকে থাকা কয়েক লাখ টাকা সমস্তটুকুই রোকেয়া আন্টিকে বুঝিয়ে দিয়ে তবেইনা মারা গিয়েছিলেন। আর এই জায়গা জমি ও নগদ টাকার জন্য সেই নানুর কিছু দূর সম্পর্কের আত্মীয় রোকেয়া আন্টির সাথে খুবই ঝামেলাও করেছিল। কিন্তু সমস্ত কিছু রোকেয়া আন্টির নিজের নামে করে দিয়ে গিয়েছিল বলে, সেই আত্মীয়রা তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি।

যাক অনেক ঝড় ঝাপটা সহ্য করে রোকেয়া আন্টি সেই নানুর বাসাতেই বসবাস করতে লাগলেন। নানুর ব্যাংকে থাকা নগদ কয়েক লাখ টাকা রোকেয়া আন্টি ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে এসে, তার স্বামী ও ছেলেকে দুটি মোটর বাইক কিনে দিয়েছিলেন। এবং দু চার মাস সেই মোটরবাইক ব্যবহার করার পর আবারো তারা নতুন করে নিউ মডেলের গাড়ি কিনেছিল। আর মোবাইলের কথা তো বলে শেষ করা যাবেনা। নানুর কষ্টে অর্জিত টাকাগুলো তারা যেন কোন তোয়াক্কা না করে, অর্থের অসৎ ব্যবহার শুরু করে দিয়েছিল।

এরকম পর্যায়ে হঠাৎ করে একদিন শুনতে পেলাম, রোকেয়া আন্টি সেই নানুর দেয়া বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে। আর বাড়িটি বিক্রি করার মূল কারণ ছিল তাদের ব্যক্তিগত ঋণ হয়ে যাওয়ার কারণে। যা নানু জীবিত থাকলে কখনোই হতো না। বাড়তি টাকা হাতে পেয়ে তারা যেন সবকিছুই ভুলে গিয়ে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিল। রোকেয়া আন্টি শহরের এই বাড়িটি চরা মূল্যে বিক্রি করে, গ্রামের দিকে গিয়ে অল্প টাকায় কিছু জমি কিনে সেখানেও বাড়ি তৈরি করেছিল।

সেখানে কয়েক বছর কাটতে না কাটতে বিধি যেন বাম হয়ে দাঁড়ালো। আবারো রোকেয়া আন্টির স্বামী ও সন্তান ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে, রোকেয়া আন্টি সেই গ্রামের বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়ে, শহরে এসে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেছিলেন। আর এরই মাঝে তার সন্তানকে রোকেয়া আন্টি বিয়েও দিয়ে দিয়েছিলেন। ভাড়া বাসায় তারা চারজন মিলে বেশ ভালোই দিন কাটাতে শুরু করেছিলেন।

on-the-street-2713688_640.jpg

source

কিন্তু এখানেও যেন গল্পের শেষ নেই। রোকেয়া আন্টি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু আঙ্কেল, রোকেয়া আন্টির উন্নত চিকিৎসা করা তো দূরে থাক, টাকার অভাবে সুচিকিৎসা টুকু করাতে পারেননি। এভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে একদিন রোকেয়া আন্টি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন। আর এখন তার সন্তান আঙ্কেলের ঠিকমতো দেখভাল করতে পারে না। লোকমুখে শুনেছি, রোকেয়া আন্টির সন্তান নাকি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

যার কারণে আঙ্কেলের এখন খুবই করুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদি প্রথম থেকেই রোকেয়া আন্টি ও আংকেল টাকার সদ্ব্যবহার করতেন তাহলে হয়তো তাদের আর এরকম করুণ পরিনিতি কখনোই আসতো না। কিন্তু তারা পরের টাকায় লোভ করে, অতিরিক্ত বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে, আজ যেন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।

আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_23-03-04_04-00-09-256.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 years ago 

লোভে পাপ পাপে মৃত্যু কথাটি কমবেশি আমরা সকলেই জানি। আপনার গল্পটি মাধ্যমে অনেক কিছু শেখার বোঝার রয়েছে। পরের টাকার লোভ করে কখনো নিজে সুখী হওয়া যায় না। এই গল্পের মাধ্যম অনেকটাই বোঝা যাচ্ছে। সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

বিনা পরিশ্রমে অনেক টাকা পেয়ে রোকেয়া আন্টি ও তার পরিবার টাকার অপব্যবহার করেছিল যার কারনে তাদের এই পরিণতি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

মানুষ যখন কোন কিছু বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যায় তখন তার মূল্য বুঝতে পারে না। আপনার রোকেয়া আন্টির পরিবারের একই দশা হয়েছে।তারা যদি আপনার নানুর মত কষ্ট করে টাকা জমাতো তাইলে তারা এভাবে খরচ করত না।অনেক শিক্ষামূলক পোস্ট দিয়েছেন ভাইয়া। আমাদের সবার উচিত খরচের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া।

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাই, না চাইতে সবকিছু পেয়ে গেছে রোকেয়া আন্টি, আর তাই সব কিছুই বিলাসিতাই ভাসিয়ে দিয়েছে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনার আজকের পোস্টটি কিন্তু অনেক শিক্ষামূলক একটি পোস্ট। আসলে কথাটি চিরন্ত সত্য যে, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। আপনার রোকেয়া আন্টি আসলে বেশ বোকা। তার আপনার নানুর পথ অবলম্বন করা দরকার ছিল। আপনার নানুর মত যদি পরিশ্রম করে টাকা জমাতো তবে হয়তো আপনার রোকেয়া আন্টির অবস্থা এমন হত না।

 3 years ago 

বিনা পরিশ্রমে অনেক কিছুই পেয়ে গেছে রোকেয়া আন্টি, তাই অর্থের কদর বুঝতে পারেনি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আসলে অনেক মানুষ আছে কষ্ট ছাড়া অর্থ সম্পদ পেলে সেটার মূল্যায়ন করে না। আবার যদি নিজে উপার্জন করে তাহলে সেটার মূল্য বুঝে। তাদের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। ব্যাংকের টাকা উঠিয়ে মোটরসাইকেল কেনা, নিউ মডেলের গাড়ি কেনা এবং সর্বোপরি বিলাসিতা করাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। সেজন্য চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছে। তাই লোভ করা ঠিক নয়। আর বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাই, বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়। আপনার খুব সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.08
TRX 0.29
JST 0.035
BTC 107446.53
ETH 3766.48
USDT 1.00
SBD 0.58