ফেলে আসা মর্মান্তিক ঘটনা
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আমার ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। অনেক অনেক বছর আগে খুব সম্ভবত ২০০২ সালের একটি ঘটনা হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল। আমার মামা টাঙ্গাইল জেলার কাশেম গ্রুপে চাকরি করতেন। আর সেই সুবাদে আমি মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বেশ কয়েকদিন থেকে ছিলাম। তো একদিন আমি মামার বাড়ি থেকে বের হয়ে মেইন রোড ধরে বাজারে যাওয়ার জন্য হাঁটতে শুরু করেছিলাম।
এমন সময় দেখি দুটি ছেলে বয়স সম্ভবত ১০ বছরের মত হবে, তারা হেঁটে হেঁটে তাদের প্রাইমারি স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। আর রাস্তার অপর প্রান্তে তাদের আরও একটি বন্ধু রাস্তা ধরে ওই একই স্কুলে যাচ্ছিল। তারা তিনজনে রাস্তার এপার থেকে ওপারে জোরে চিৎকার করে কথা বলতে বলতে স্কুলের দিকে হেঁটে চলছিল। সে সময় আমি লক্ষ্য করেছিলাম, সকাল ১০ টার দিকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কটি খুবই ব্যস্ত ছিল।
বিশেষ করে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া গাড়িগুলো প্রচন্ড গতিতে ছুটে চলছিল। এক পর্যায়ে দুই বন্ধু রাস্তার ওপাশ থেকে এ পাশের বন্ধুটিকে রাস্তা পার হতে বললে, বন্ধুটি কোন দিকবিদিক চিন্তা না করেই রাস্তা পার হতে শুরু করেছিল। এমন সময় উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি গাড়ি ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছিল। আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তিন বন্ধুর কথোপকথন শুনছিলাম আর সামনের দিকে এগোচ্ছিলাম।
হঠাৎ করেই যখন রাস্তার এপাশের বন্ধুটি রাস্তা পার হতে যাচ্ছিল ঠিক ওই সময়ে উত্তরবঙ্গগামী বাসটি সেই বন্ধুটিকে সজোরে একটি ধাক্কা মেরে চলে যায়। আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে এই দৃশ্য দেখে একদম থমকে গিয়েছিলাম। ছেলেটি বয়সে অনেক ছোট, তার উপরে আবার বাসের ধাক্কা, এমতঅবস্থায় ছেলেটির নিথর দেহ রাস্তার মাঝে পড়ে রইল। তার নাক ও মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত ঝরতে শুরু করেছিল। ছেলেটিকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল ছেলেটি আর বেঁচে নেই ।
তাকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার পাশে থাকা অসংখ্য লোকজন এসে ছেলেটির দেহ দেখতে শুরু করেছিল। আর যে দুজন বন্ধু ছেলেটিকে রাস্তা পার হতে বলেছিল, তারা যেন দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিল। যখন তারা হুসে আসলো তখন দেখল তাদের বন্ধু আর এ পৃথিবীতে নেই। আর সেই মুহূর্তে ছেলে দুটো এমন চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করেছিল যেন আকাশ বাতাস তাদের কান্নায় ভারী হয়ে গিয়েছিল।
আর আমি স্বচক্ষে এই দৃশ্য দেখে নিজেকে যেন আর স্থির রাখতে পারিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতেই মুহূর্তের মধ্যে তার মায়ের কাছে খবর চলে গিয়েছিল। তার আদরের সন্তান আর এ পৃথিবীতে নেই। তার মায়ের চিৎকার সেইসাথে আত্মীয় স্বজনের চিৎকারে, আমার যেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল এই ছেলেটি বোধহয় আমার কোন আত্মীয়। আমি যেন নিজেকে কোন ভাবে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।
তাদের সকলের কান্না দেখে আমি নিজেও কেঁদে ফেলেছিলাম। কেন এমন হলো ছেলেটির সাথে। সে তো মনের আনন্দে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল । সামান্য একটু ভুলের জন্য ছেলেটি অকালে মৃত্যুবরণ করে ফেলল। আর সেই দুজন বন্ধু নিজেদেরকে অপরাধী ভাবতে শুরু করেছিল। তারা দুজন বারবার বলছিল, আমরা যদি তাকে না ডাকতাম হয়তো সে রাস্তা পার হত না। তবে সেখানে থাকা লোকজন ছেলে দুটিকে বুঝিয়েছিল, যার হায়াত যতোটুকু সে পৃথিবীতে ততটুকুই বেঁচে থাকবে।
হয়তো ছেলেটির মৃত্যু এবং পৃথিবীতে রিজিক এটুকুই ছিল। যার কারনে তাকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হলো। রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় আমরা অনেকেই হয়তো ঠিকমতো খেয়াল না করেই রাস্তা পার হতে শুরু করে দেই। যা একটি বড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন করতে পারে।
তাহলে হয়তো দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। আজ অনেকদিন পর মামা বাড়ি যাওয়ার গল্পটি মনে করতেই, ছেলেটির এই করুন কাহিনী আমার মনে পড়ে গেল। সেদিনের কথা চিন্তা করে খুবই খারাপ লাগছিল, তাই আপনাদের মাঝে কথাগুলো শেয়ার করে নিলাম।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
ভাই আপনার লেখাটা পড়ে গায়ের লোমগুলো যেন শিউরে উঠলো। বর্তমানে বাংলাদেশে এক্সিডেন্ট এর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। নিজেদের অসতর্কতা এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য এই ঘটনা গুলো নিত্য প্রতিদিন ঘটেই চলেছে। আসলে যে কোন মানুষের সামনে যদি এ ধরনের বড় ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। ওই মুহূর্তে কি করবে আর কোন কিছু ভেবে উঠতে পারে না। ছেলেটির হঠাৎ এই অবস্থার জন্য নিজের খুবই কষ্ট লাগলো। খুবই মর্মান্তিক একটা ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাই। আমি আমার নিজের কাছে কিছু বলা বা লেখার ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
ভাই, এই ঘটনাটি আমার কাছেও খুবই হৃদয়বিদারক ছিল,তাই আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিবছর দূর্ঘটনায় অনেক মানুষ নিহত হচ্ছে। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা নেই এবং মানুষজন ভীষণ অসচেতন। কিছু মানুষ তো রাস্তায় আসলে কানে হেডফোন লাগিয়ে চলাফেরা করে। যাইহোক ছোট ছেলেটির এরকম মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো ভাই। আল্লাহপাক সবাইকে হেফাজত করুন।
সচেতনতামূলক পোস্ট ছিল এটি।
ভাই আমিও সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই ছেলেটির জন্য দোয়া প্রার্থনা করি যাতে করে সে পরপারে গিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে।
গল্পটি পড়ে বেশ মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা অনেক অহরহ ঘটছে। তবু তো ভাই আপনি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখেছিলেন। ঘটনাটি সহ্য করতে পারতাম না। ভাবছি তার মা কিভাবে সহ্য করেছিল সেদিন। আমাদের প্রত্যেকের রাস্তা পারাপারে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ছেলেটি যেখানে থাকুক ভালো থাকুক এই দোয়াই করি।
ঠিক বলেছেন আপু, রাস্তাঘাট পারাপারের সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আমাদের আশেপাশে অনেক বেশি দেখা যায় এরকম মর্মান্তিক ঘটনাগুলো। এরকম ঘটনা গুলো দেখলে সত্যি নিজের চোখেও জল চলে আসে। দূরের কেউ হলেও তারা যদি মৃত্যুবরণ করে তখন একেবারে আপন মানুষ মনে হয়। ছোট্ট বাচ্চাটার কতই বা বয়স হয়েছে। এভাবে বাস এক্সিডেন্টে তার অকাল মৃত্যু হয়েছে। সত্যি আমার ভাবতেই অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। চোখের জল আটকানো যাচ্ছে না। হয়তো এতদিন বাচ্চাটা বেঁচে থাকলে অনেক বড় হয়ে যেত
আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে বেহেশত নসিব করে।
আপু,সেই ছেলেটির অকাল মৃত্যু মেনে নিতে আমার কাছে ভীষণ কষ্টের ছিল। যাইহোক আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সামান্য একটু সময় এর কারনে অনেক বড় দুর্ঘটনা হয়ে যায়। আপনার পোস্ট টি পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। দোয়া রইল ছেলেটির জন্য। ওপারে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত বাসী করুক আমিন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ মিতা, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ছোট্ট ছেলেটির এরকম মৃত্যুর কথা শুনে আমার নিজের চোখে জল চলে এসেছে। আর আপনি তো সরাসরি দেখেছিলেন। আসলে এরকম মর্মান্তিক ঘটনাগুলো আমাদেরকে অনেক বেশি কষ্ট দেয়। ছোট্ট ছেলেটার হায়াতি ছিল এতটুকু। মায়ের আদরের সন্তানটা যদি চলে যায় তাহলে কষ্টটা সত্যি অন্যরকম হয়। আসলে আমাদের সবার উচিত চোখ কান খোলা রেখে রাস্তা পারাপার হওয়া। আর অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
হ্যাঁ ভাই আমি এই ঘটনাটি সরাসরি চোখে দেখে বেশ কিছুদিন অস্বস্তিতে ছিলাম। যাইহোক ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাই আপনার লেখাটি পড়ে আমার মন একটু খারাপ হয়ে গেল। আসলে এক্সিডেন্ট বাংলাদেশে এখন প্রায় সব সময় দেখা যায়। আসলে আমার সামনেও একদিন বড় ধরনের একটি এক্সিডেন্ট দেখেছিলাম আমিও সেটা শেয়ার করেছিলাম এখানে। আসলে আপনার সামনে যে এক্সিডেন্টে হয়েছিল যেকোন মানুষের সামনে হলে একটু ভয় পেয়ে যাবে। আসলে যে কোনো মানুষের এমন ধরনের ক্ষতি হলে নিজের অনেক খারাপ লাগে। ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য
ভাই সামনাসামনি এক্সিডেন্ট দেখার পরে নিজেকে সামলানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। যেহেতু আপনিও এরকম একটি ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তাহলে তো বুঝতেই পারছেন।