"পথ গেছে বেঁকে" বাংলা নাটক রিভিউ
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি খুব সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ উপস্থাপন করব। নাটকটির নাম হচ্ছে "পথ গেছে বেঁকে"। সেদিন হঠাৎ করে ইউটিউব ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখের সামনে নাটকটি এসে পড়ল। অপূর্ব ও তানজিন তিশা আমার খুবই প্রিয় অভিনেতা- অভিনেত্রী। আর তাইতো ইউটিউবে নাটকটি দেখে চোখ এড়িয়ে যেতে পারিনি। তাই ভাবলাম একটু সময় যেহেতু আছে নাটকটি দেখেই নিই। নাটকটি দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে তাই আজ আপনাদের মাঝে নাটকটির রিভিউ উপস্থাপন করছি। তো বন্ধুরা চলুন খুব সুন্দর নাটক "পথ গেছে বেঁকে" নাটকের রিভিউ থেকে ঘুরে আসা যাক।
"পথ গেছে বেঁকে"
| নাটক | পথ গেছে বেঁকে |
|---|---|
| পরিচালক | নাজমুল রনি |
| লেখক | জাকারিয়া সৌখিন |
| অভিনয় | জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তানজিন তিশা, অবাক, নলোক |
| সিনেমাটোগ্রাফি | মোহাম্মদ সুলাইমান |
| এডিটর | আমিনুল শিকদার |
নাটকের শুরুতে নাটকের মূল নায়ক যার নাম সাব্বির। তো সাব্বির ও তার বন্ধু আদিবের সাথে অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিল কিভাবে কোটিপতি হওয়া যায়। তারা দুই বন্ধু মিলে চিন্তা-ভাবনা করেছিল, অনলাইনে মেয়েদের প্রোডাক্ট বিক্রি করবে। কিন্তু এজন্য তো তাদের একজন সুন্দরী মেয়ের বিশেষ প্রয়োজন। তাই তারা দুই বন্ধু মিলে অনেক চিন্তা করতে করতে তাদের এক কাজিন মালিহার কথা মনে করে ফেলল সাব্বির।
কাজিন মালিহার মাধ্যমে তার বান্ধবীদের সাথে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে ফেলল। তাও আবার মালিহার জন্মদিনের মাধ্যমে। আর এই বান্ধবীদের মধ্যেই তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সুন্দর মেয়েটিকে নির্বাচন করে ফেলবে। কিন্তু সুন্দর মেয়ে হলে তো হবে না, তাদের সুন্দর পায়ের প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই পায়ে নুপুর পরিয়ে মডেলিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট বিক্রি করবে।
তাই তারা দুই বন্ধু মিলে মালিহার বান্ধবীদের পা দেখার জন্য একটি নকল ইদুর ফেলে দিয়ে ভয় দেখাতে লাগলো। নকল ইদুর দেখে মালিহার সব বান্ধবী লাফাতে শুরু করলো, আর ঠিক সেই সময় সাব্বির ও আদিব,মালিহার বান্ধবীদের পা দেখতে শুরু করল। ঠিক এমনই সময় সাব্বিরের রুমাল পড়ে গেলে, রুমাল তুলতে গিয়ে খুব সুন্দর এক জোড়া পা দেখতে পায়। আর এই পা অন্য কারো নয় এই নাটকটির মূল নায়িকা টিউলিপের। এভাবেই নাটকে নায়িকার এন্ট্রি হয়ে যায়।
যাইহোক এরপরে মালিহার জন্মদিনের কেক কাটা হয় আর সেই সময় সাব্বির টিউলিপের দিকে বারবার আড় চোখে দেখতে লাগল। সাব্বিরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানেই টিউলিপকে দেখে একদম ফিদা হয়ে গিয়েছে। যাক একপর্যায়ে গল্পে গল্পে মালিহা ও অপূর্ব তাদের অনলাইনের বিষয়ে টিউলিপকে জানিয়ে দিবে বলে কথা এখানেই শেষ করে দিল।
আর এই অনলাইনে মডেলিং করার জন্য একদিন মালিহা তার বান্ধবী টিউলিপকে নিয়ে আসে সাব্বিরের কাছে শুটিং করানোর জন্য। আর সেখানে বান্ধবীকে রেখে মালিহা চলে যায়। এরপর শুটিংয়ের দৃশ্য দেখানো হয় যেখানে সাব্বির খুব আদলে টিউলিপের পায়ে নুপুর পরিয়ে দেয়। আর এই নুপুর পায়ে দিয়ে যখন টিউলিপ মডেলিং করছিল তখন সাব্বির তার দিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল।
এরপর যখন মডেলিং শেষে টিউলিপ বাড়ি ফিরছিল তখন সাব্বির, টিউলিপ কে একটি নুপুর উপহার দেয়। আর সেই নুপুর পেয়ে টিউলিপ ভীষণ খুশি হয়। বাড়িতে গিয়ে টিউলিপ বারবার সেই নুপুর দেখে মনে মনে ভীষণ আনন্দ পাচ্ছিল। এবার সাব্বিরের বন্ধু আবিদ বুঝতে পারে যে তার বন্ধু সাব্বির, টিউলিপের প্রেমে পড়ে গেছে।
এভাবেই বেশ কিছুদিন চলে যাওয়ার পর সাব্বির টিউলিপকে ফোন দিয়ে কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তখনই টিউলিপ বুঝতে পেরে গিয়েছিল, সাব্বির তাকে প্রপোজ করার জন্য ডাকছে। আর এই কথোপকথন গুলো হয় মালিহা ও টিউলিপের ফোনালাপের মাধ্যমে। এরপর টিউলিপ সাব্বিরের সাথে দেখা করার জন্য একটি কফি শপে চলে যায়। আর সেখানেই সাব্বির টিউলিপকে প্রপোজ করে।
কিন্তু টিউলিপ এখানে সাব্বিরকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেয় সে একজন খ্রিস্টান। তাই খ্রিস্টানের সাথে একজন মুসলিমের কখনোই রিলেশন সম্ভব নয়। সমাজ তাদেরকে কখনো মেনে নেবে না। এমন কথা শুনে সাব্বির খুবই হতভম্ব হয়ে যায়। আর কফি শপ থেকে চলে যায়। এরপর শুরু হয় টিউলিপ ও সাব্বিরের বিরহের পালা। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেলে সাব্বির অনুভব করে টিউলিপকে ছাড়া সে কোনভাবেই থাকতে পারবে না।
তাই সাব্বির আবারো টিউলিপকে ফোন করে দেখা করার অনুরোধ জানায়। আর এখানেও সাব্বির একই কথা বলে টিউলিপকে ছাড়া সে কিছুতেই চলতে পারবে না। আর তখন টিউলিপ সাব্বির কে থামিয়ে দিয়ে বলে ইমোশনাল দিয়ে সবকিছু চিন্তা ভাবনা না করতে। কারণ এগুলোর কোন মূল্য নেই, বাস্তব অনেক কঠিন। তখন সাব্বির জিজ্ঞেস করে টিউলিপ তাকে ভালবাসে কিনা। তখন টিউলিপ জানিয়ে দেয় সে সাব্বিরকে ভালোবাসে তবে রিলেশন সম্ভব নয়।
তখন টিউলিপ সাব্বিরকে একটা ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে বলে। আর এই পরীক্ষা হচ্ছে ঠিক তিন বছর তাদের দুজনের দেখা হবে না। এভাবে যদি তারা তিন বছর কাটাতে পারে তাহলেই বুঝবে এই ভালোবাসা ইমোশনাল নয়। এটাই হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা। আর এই পরীক্ষায় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সাব্বির টিউলিপের কাছ থেকে একেবারেই চলে যায় তিন বছরের জন্য।
আর এই তিন বছরে সে কারোর সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখে না। এমনকি তার ঠিকানা, ফেসবুক, মোবাইল সকল যোগাযোগের ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখে। এভাবে তিনটি বছর কেটে গেলে একদিন হঠাৎ করেই সাব্বির ফিরে আসে এবং মালিহাকে ফোন করে তার ফিরে আসার কথা জানিয়ে দেয়। এবার সাব্বির মালিহাকে টিউলিপের কথা জিজ্ঞেস করতেই মালিহা বলে ওঠে টিউলিপের বিয়ে হয়ে গেছে। তখন সাব্বির খুবই আপসেট হয়ে পড়ে এবং মালিহার কাছে টিউলিপের ঠিকানা চেয়েছে। টিউলিপের ঠিকানা অনুযায়ী সাব্বির দেখা করার জন্য চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে সাব্বির খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে টিউলিপকে বলতে থাকে কেন সে সাব্বিরের জন্য অপেক্ষা করেনি।
কেন সে সাব্বিরকে তিন বছর অপেক্ষা করতে বলে নিজেই বিয়ে করেছে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে মালিহা আসে, টিউলিপ ও সাব্বির এর কাছে। আর সাব্বিরকে সান্তনা দিয়ে বলে টিউলিপের এখনো বিয়ে হয়নি। আর টিউলিপ খ্রিস্টান নয়। সাব্বিরকে ভালোবাসার পরীক্ষা দেয়ার জন্য তারা এই ছোট্ট নাটকটি করেছিল। একথা শুনে সাব্বির খুবই খুশি তো হয়, কিন্তু তাদের দুজনকে মারার জন্য চড়াও হয়ে পড়ে। আর তারা দুজন হাসতে হাসতে পালাতে শুরু করে। এভাবেই নাটকটির সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটে।
"পথ গেছে বেঁকে" নাটকটি খুবই সাদামাটা। প্রথম দিকে দেখলে যতটা ভালো লাগে শেষের দিকটা দেখলে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে। তুলনামূলকভাবে সব সময় ছেলেদেরকে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে হয়, আমিও এক সময় এরকম একটি পরীক্ষা দিয়েছি। এই নাটকটি দেখে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,ভালোবাসা কখনো আবেগ দিয়ে হয় না। তাই ভালোবাসা পেতে হলে সাধনারও প্রয়োজন হয়। সত্যিকারের ভালোবাসা পেতে হলে তার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমান সময়ে এমন সাধনা এমন ধৈর্য খুব বেশি একটা চোখে পড়ে না। একটানা তিন বছর প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ না করে, তার সাথে দেখা না করে সময় পার করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেননা আমি নিজেও তার বাস্তব উদাহরণ। তাই এই নাটকটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে নাটকের শেষ অংশটি নায়ক নায়িকার মিলনের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে। যেকোনো নাটকে নায়ক নায়িকার মিলনের অংশটুকু আমার কাছে বেশি ভালো লাগে আর বিরহ একদম পছন্দ নয়। যাই হোক এই নাটকটি খুব চমৎকার একটি নাটক তাই আপনারা সময় সুযোগ করে চমৎকার এই নাটকটি দেখবেন এই প্রত্যাশা করছি।
| অভিনয় | ৮/১০ |
|---|---|
| কাহিনি | ৯/১০ |
| সব মিলিয়ে | ৮.৫/১০ |
আশা করি আমার নাটকের রিভিউ পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।









Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমার কাছে এমনিতে অপূর্বের নাটকগুলো ভীষণ ভালো লাগে দেখতে। আপনি আজকে অপূর্বের খুবই সুন্দর একটা নাটকের রিভিউ পোস্ট করেছেন যা পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে ঠিকই বলেছেন সত্যিকারের ভালোবাসা পেতে হলে তার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। আপনি এই নাটকটির থেকে নিজস্ব মতামত খুবই ভালোভাবে লিখেছেন যা পড়ে একটু বেশি ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ ভাই, খুব সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর একটি নাটক রিভিউ দিয়েছেন। আমি অপূর্ব ও তানজিন তিশার নাটক দেখতে অনেক পছন্দ করি। যখনই সময় পাই তখনই এই ছুটির নাটক দেখি। তবে এই নাটক এখনো দেখা হয়নি। কিন্তু আপনার রিভিউ পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আমি যখনই সময় পাবো অবশ্যই দেখে নেব। ধন্যবাদ সুন্দর একটি নাটক রিভিউ দেওয়ার জন্য।
আপু,আমার নাটকের রিভিউটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লেগেছে এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সময় সুযোগ পেলে দেখে নিবেন।
আসলে কিছু কিছু নাটক আছে অনেক বেশি শিক্ষনীয় আর এই শিক্ষনীয় নাটকগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। সত্যি ভালোবাসা কখনো আবেগ দিয়ে হয় না আবেগ দিয়ে কোন কিছুই হয় না আবেগের পাশাপাশি নিজেকে ভালোবাসার দিকে ধাবিত করতে হবে। ভালো লাগলো এই নাটক রিভিউ করে খুব শীঘ্রই নাটক দেখব। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার কাছে তাই মনে হয় ভাই, ভালোবাসা কখনো আবেগ দিয়ে হয় না। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।