আল-আমিন এর গল্প : শেষ খন্ড
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজকে আমি আল-আমিনের শেষ খন্ড উপস্থাপন করব। কিভাবে আল-আমিনের সুখের সংসারে দুখের আবির্ভাব হলো। যাইহোক গত পর্বে আমি জানিয়েছিলাম, আল-আমিনের বিয়ে তার বাবা খুব ধুমধামের সাথেই সম্পন্ন করেছিল। আল-আমিনের নতুন বউকে তার পরিবারের সবাই অনেক অনেক আদর ও যত্নে রাখার চেষ্টা করেছিল। আল-আমিনের বউ দেখতে খুব সুন্দরী ছিল, কিন্তু গুণের দিক থেকে একদম পিছিয়ে ছিল। আসলে মানুষ ভাবে এক, আর হয়ে যায় আরেক। আল-আমিনের সুন্দরী বউকে দেখে সবাই খুবই গুনবতি মনে করেছিল। কিন্তু আল-আমিনের সংসারে এই সুন্দরী বউ আসতে না আসতেই তাদের সংসারে যেন অশান্তি বিরাজ করতে শুরু করেছিল।
নতুন বউ বাড়িতে এসে আল-আমিনের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে তেমন একটা কথা বলা কিংবা তাদের সাথে খোশগল্প করাটা একদমই পছন্দ করছিল না। সে শুধু এককভাবে একটি রুমে বসে শুয়ে থাকতে ভীষণ পছন্দ করত। যদি তাকে কেউ ডাকতে যেত, কিংবা গল্প করতে যেত, তখন সে খুবই বিরক্তি ভাব দেখাতো। আর এসব দেখে আল-আমিনের বাবা-মা খুবই হতাশায় পড়ে যায়। কেননা আমার বান্ধবী লিপি ও আল-আমিন সহ তাদের বাবা-মা অনেক অনেক মিশুক ও বন্ধুসুলভ ব্যক্তি। তাদের কথাবার্তা অথবা তাদের চলাফেরা দেখলে কারোরই মনে কখনো খারাপ লাগে না। তারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলের সাথেই খুবই সদয় আচরণ করে। অথচ এত সুন্দর একটি পরিবারে, এরকম একটি বউ পেয়ে তারা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু কি আর করার ছেলের বউ যখন হয়েই গেছে, তাহলে তো তার সাথে মানিয়ে চলতে হবে। দেখতে দেখতে একটা সময় আল-আমিনের ছুটি শেষ হয়ে আমেরিকায় ফিরে যায়। আমেরিকায় ফিরে গিয়ে আল-আমিন তার বউকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য, পাসপোর্ট ভিসা সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এবং আমেরিকায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়েও আল-আমিনের সাথে আল-আমিনের বউয়ের খুনসুটি লেগেই থাকতো। এরই মাঝে আল-আমিন প্রকাশ করে তার বাবা-মাকেও সে আমেরিকায় নিয়ে যাবে। আর এখানেই বেধে গেল সকল গন্ডগোল। যখনই আল আমিনের বাবা-মাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, তখন থেকেই আল-আমিনের সুন্দরী বউ তার সাথে বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে।
আল-আমিন যখন তার বউকে জিজ্ঞেস করেছিল, তার এরকম আচরণের কারণ কি? তখন আল-আমিনের সুন্দরী বউ জানায়, আল-আমিনের বাবা মা নয় বরং তার বাবা মাকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে হবে। এ কথা শুনে যেন আল-আমিনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। কেননা আল-আমিন আমেরিকা যাওয়ার পর থেকেই তার বাবা মাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার জন্য খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আল-আমিনের বাবার চাকরির সমস্যার কারণে যেতে পারেনি। কিন্তু এখন যখন তার বাবা মা যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছিল, ঠিক তখনই আল-আমিনের বউ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আলামিনের বাবা-মার পরিবর্তে নিজের বাবা-মাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য খুবই জেদ ধরতে শুরু করেছিল।
এরকম পরিস্থিতিতে আল-আমিন তার বউ এর সাথে যেন কোনোভাবেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারছিল না। তাই সে তার বাবা মাকে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খুবই কান্নাকাটি করে এবং ভালো ও গুণবতী একটি বউ না পাওয়ার জন্য খুবই আফসোস করে। আসলে একটি গুণবতী বউ ও সাংসারিক বউ পাওয়া বর্তমান সময়ে বড়ই মুশকিল হয়ে পড়েছে। মানুষের বাহ্যিক চেহারা দেখে ভেতরের মানুষকে কখনোই চেনা যায় না। আর সেক্ষেত্রে আল-আমিনের বউ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল-আমিনের বাবা-মা বড্ড ভুল করে ফেলেছিল। এখন তাদের এই বউ নিয়ে আফসোস করা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই।
তাই আল-আমিনের বাবা-মা আমেরিকায় যাবে না বলে আল-আমিনকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কিন্তু আল-আমিন ও তার বাবা মাকে ভীষণ ভালোবাসে, তাই সে তার বউয়ের অন্যায় আবদার কখনোই মেনে নেয়নি। তাই অনেক তোড়জড় করে আল-আমিন তার বাবা-মাকে আমেরিকায় নিয়ে যায়। তবে আমি শুনেছি সেখানে গিয়েও আল-আমিনের বাবা মার সাথে আল-আমিনের বউ বিন্দুমাত্র ভালো ব্যবহার করেনি। এখন পর্যন্ত আল-আমিনের বউ আল-আমিনের বাবা-মাকে ভালবেসে কাছে নিতে পারেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এতকিছুর পরও আল-আমিনের বাবা-মা চাচ্ছিল, যেকোনোভাবেই হোক আল-আমিন এর বউ এর সাথে মানিয়ে চলার জন্য।
কিন্তু আল-আমিনের বউ কিছুতেই যেন আল-আমিনের বাবা-মাকে নিজের করে নিতে পারেনি। তাই এখন আমেরিকায় গিয়েও আল-আমিন এর বাবা-মা আল-আমিনের সাথে আলাদা থাকতে শুরু করেছে। যদিও বা এখানে আল-আমিনের কোন প্রকার দোষ নেই, তবুও সন্তানের সুখের জন্য বাবা-মা অনেক অনেক ছাড় দিয়েছিল। যার কারণে একটি মাত্র ছেলের বউ হওয়া সত্ত্বেও আল-আমিনের বাবা-মা আল-আমিনের বউ থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে। ছেলের বউ দিয়ে আল-আমিনের বাবা-মার কপালে হয়তোবা সুখ লেখা নেই। আর এ কথাগুলো ভাবলে সত্যিই আমার কাছে ভীষণ রকম খারাপ লাগে। তবুও বাস্তবতাকে তো মেনে নিতেই হবে। তাই কি আর করার, যা হচ্ছে সব ভালই হচ্ছে বলে সবকিছুই নীরবে সহ্য করা।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সংসার সুখী হয় রমনীর গুনে সেজন্য চেহারা দেখলে হবে না তার গুণাবলী গুলো দেখতে হবে। যেমনটা আলামিনের ক্ষেত্রে হয়েছে সত্যিই এটা কষ্টদায়ক। বাবা-মা পৃথিবীর অনেক বড় ছায়া তাদের ছায়া থাকলে সত্যিই জীবনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। কিন্তু আলামিনের ক্ষেত্রে জীবনটা সত্যি সার্থক জায়গায় গিয়ে কষ্টের বেড়াজালে আটকে গিয়েছে সত্যিই খারাপ লাগলো।
ঠিক বলেছেন ভাই, বর্তমানে আল-আমিন তার বউকে নিয়ে খুবই মানসিক অশান্তিতে আছে। যাইহোক তার এই অশান্তির যেন অবসান ঘটে এই প্রত্যাশা করছি।
কি আর বলবো এখন এমনই চলছে সমাজে। কেন যে মেয়েরা স্বামীর বাবা মা কে নিজের বাবা মা হিসাবে গ্রহন করতে পারে না। এটাই ভাবী মাঝে মাঝে। আল-আমিনের বাবা মায়ের জন্য আসলে আমার খারাপ লাগছে। কারন তারা তাদের ছেলেকে মনে হয় হারিয়ে ফেললো। তাই তো বলে কথায় বলে জাতের মেয়ে কালোও ভালো নদীর জল ঘোলাও ভালো।
আপু আলামিনের বউয়ের সৌন্দর্যের সাথে সাথে গুণের কথাও শুনেছিলাম। তবে আলামিনের বাসায় আসার সাথে সাথে তার গুণগুলো সব হারিয়ে গেছে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো।আসলে আমাদের সমাজে এমন মেয়ে অনেক আছে।আলামিনের জন্য সত্যিই খুব কষ্ট লাগলো।মা-বাবাকে হয়তো সে হারিয়েই ফেললো।তাইতো সুন্দর না দেখে মানবিক মানুষ আমাদের বেছে নেয়া উচিত।ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপু, আল আমিনের কথা চিন্তা করলে আমার কাছেও খুবই খারাপ লাগে। আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।