প্রতিযোগিতা -২৩ || আমার স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজ আমি স্কুল জীবনের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করব। স্কুল জীবনে আমাদের সকলের তিক্ত অভিজ্ঞতার চেয়ে আনন্দ উল্লাসের অভিজ্ঞতাই বেশি আছে তবে স্কুল জীবনে এমন কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে যা হয়তো সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে রবে। আমরা যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি,তাদের সকলেরই স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছি। আর এই অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা কারো সাথে কারো অভিজ্ঞতার কোন প্রকার মিল নেই। স্কুল জীবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের কোমল হৃদয়ে এতটাই বিষাদময় স্বাদ এনে দিয়েছে যার কারণে এত বছরের পুরনো সেই স্মৃতি অবলীলায় লিখতে পারছি। আমার জীবনেও এমনই একটি বেদনাদায়ক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে যা আপনাদের মাঝে তুলে ধরছি।
স্কুল জীবনে আমি খুব একটা সুবোধ বালক ছিলাম না। আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে স্কুলের গাছে আম পেড়ে খাওয়া, বড়ই গাছ থেকে বড়ই পেরে খাওয়া, বন্ধু-বান্ধবীদের মাথায় চুইংগাম আটকে দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমিতে আমিই ছিলাম সেরা। তবে কখনো স্কুলে অনুপস্থিত থাকার কথা চিন্তাও করতে পারতাম না। এজন্য সকল স্যার ও ম্যাম আমাকে ভীষণ পছন্দ করত। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি ঠিক তখনকার সময়ের কথা। আমি সেদিন কিছুটা অসুস্থ ছিলাম, গায়ে হালকা হালকা জ্বর। তাই আমার মা আমাকে কিছুতেই স্কুলে যেতে দিচ্ছিল না। কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা মায়ের কথাকে অমান্য করে সেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম। ক্লাসে বসে যখন ক্লাস করছিলাম তখন আমার শরীরে যেন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছিল। আমি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ক্লাস টিচার শামসুল স্যার কে বলে ছুটি চেয়ে নিলাম। স্যার আমার গায়ে হাত দিয়ে জ্বর বুঝতে পেরে ছুটি দিয়ে দিল। আমি অসুস্থ হওয়ার কারণে আমার স্কুল ব্যাগটি আমার এক বন্ধুকে দিয়ে বললাম ছুটি হলে আমার ব্যাগটি বাড়ি নিয়ে আসতে। কেননা প্রচন্ড শরীর দুর্বল তাই ব্যাগটি নেয়ার মতো কোনো শক্তি আমার ছিল না।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে আমি আস্তে আস্তে হেঁটে বাড়ির মুখ হয়েছি। ঠিক তখন কেন জানি মনে হলো বাড়িতে যাওয়ার আগে স্কুলের টয়লেট থেকে ঘুরে আসি। কেননা আমার বাড়িটা স্কুল থেকে অনেক দূরে, তাই পথিমধ্যে আপত্তিকর কোন অবস্থায় পরতে না হয় তাই টয়লেটে গিয়েছিলাম। আমি যখন টয়লেটে প্রবেশ করছিলাম তখনই টয়লেটের দরজায় একটি বড় খোলা তালা লক্ষ্য করেছিলাম, তবে বুঝতে পারিনি এই বড় তালাটি আমাকে ঠিক কতটা বিপদে ফেলতে চলেছে। আমি টয়লেটে থাকা অবস্থায় আমারই মত কোন দুষ্টু ছাত্র অথবা ছাত্রী চট করে আমার টয়লেটের তালাটি লাগিয়ে দিয়েছিল। আমি বুঝে ওঠার আগে সে সেখান থেকে চলে যায়। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তাম তখনকার সময় স্কুলগুলো এখনকার মত এত উন্নত ছিল না। আমাদের স্কুলে টয়লেটে একসাথে দুটি কক্ষ পাশাপাশি ভাবে ছিল তবে টয়লেটটি স্কুল ও টিউবলের পাশ থেকে একটু দূরে অবস্থিত ছিল। যার কারণে আমি যখন টয়লেটে বন্দী হয়ে গেলাম তখন আমার কথা শোনার মত কেউ ছিল না। টয়লেট ইট সিমেন্টের বিল্ডিং এবং তার লোহার দরজা ছিল। টয়লেটের ভিতরে জায়গাটা অনেক কম ছিল এবং মাথার উপরে ছোট্ট একটি ভেন্টিলেটার ছিল। আমি তখন অনেক ছোট যার কারণে ভেন্ডি লেটার আমার থেকে অনেক উপরে। একে আমি ভীষণ অসুস্থ তারপরে অন্ধকার টয়লেটের ভিতরে আমি বন্দি হয়ে আছি। তখন আমার ভীষণ ভয় করছিল আর ভয়ে আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। গায়ে প্রচন্ড জ্বর তার উপর অন্ধকার টয়লেটের ভয় সব মিলিয়ে আমার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। তখন আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়তে লাগলো। আমার মা আমাকে কিছুতেই স্কুলে আসতে দিতে চাইছিলেন না। ইস কেন যে মায়ের কথা অমান্য করলাম। পরক্ষণে আমার মনে হল আমাকে জোরে চিৎকার করতে হবে। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরে রেখেছে আমি কিছুতে কথা বলতে পারছিলাম না। আমি আমার পায়ের চামের স্যান্ডেল খুলে দরজায় জোড়ে আঘাত করতে লাগলাম। কিন্তু ক্লাস চলার কারণে টয়লেটের এদিকে কেউ আসছিল না। মৃত্যু কি জিনিস অত ছোট বয়সে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এটা বুঝতে পারছিলাম আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল। ছোট্ট টয়লেটের ভেতরে প্রচন্ড গরমে ঘেমে শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। আর তখন শুধু একটি কথাই ভাবছিলাম কেন যে স্কুলে এসেছিলাম, এখান থেকে বের হতে পারলে আর কোনদিন স্কুল মুখো হবো না। আমি সেদিন প্রায় 35 থেকে 40 মিনিট টয়লেটে বন্দি ছিলাম। আমি যখন একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলাম ঠিক তখন আমার স্কুলের সানোয়ার স্যার বলে উঠলো, এই টয়লেটে তালা কেন রে, কেউ একজন চাবি নিয়ে আসো। আমার স্যার তখন পর্যন্ত জানতো না আমি টয়লেটের ভিতর বন্দি। ঠিক তখনই আবার আমি স্যান্ডেল দিয়ে দরজায় শব্দ করে গোঙাতে লাগলাম। আমার স্যার কিছু বুঝতে পেরে খুব দ্রুত চাবি আনতে বলল আর আমার সাথে কথা বলতে লাগলো। কে ভিতরে, তোমাকে কে তালা দিল, তুমি কি ঠিক আছো বলতে বলতে চাবি দিয়ে তালাটি খুলে ফেলল। আর তখন আমি টয়লেটের ভিতরে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার স্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে অফিস কক্ষের সামনে নিয়ে এসে দুটো বেঞ্চের উপরে শুয়ে মাথায় পানি দিতে লাগলো। আমি কিছুক্ষণের জন্য হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলাম, যখন হুশ ফিরলো দেখি মাথার উপরে স্কুলের সব স্যার, ম্যাম ও ছাত্র-ছাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমি টয়লেটের বাইরে মুক্ত অবস্থায় আছি। আমাকে কে তালা দিয়েছে তার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। সেই স্কুল জীবনের পর থেকে আজ অবধি টয়লেটের দরজা অথবা ঘরের দরজা কিংবা লিফটে চড়তে আমার ভীষণ ভয় করে। স্কুলে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় সেই দিনটির তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার মনকে আজও অস্থির করে তোলে। আর কারো জীবনে যেন এরকম বিষাদ ময় দিন ও বিভীষিকাময় দিন না আসে।
এখানে কিছু কথা না বললেই নয়, সেদিন যদি আমার ক্লাস টিচার আমার অসুস্থতার জন্য কোন একজন ছাত্রকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিত তাহলে হয়তো সেদিন আমাকে এরকম বিভীষিকাময় দিনটি দেখতে হতো না। ক্লাস টিচারের অবহেলার কারণে তিনি আমাদের হেড টিচারের অনেক বকাবকি শুনেছিলেন। তাই তারপর থেকে কখনো স্কুলে কোন ছাত্র-ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটা পালন করে আসছে। এই ছিল আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, যা আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
আশা করি আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা -২৩ এ অংশগ্রহণের পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ সুন্দর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এরকম একটা মুভিও ছিল সম্ভবত।"ছুটির ঘন্টা" নাম মুভিটার।অসুস্থ শরীরে আপনাকে এই বিভীষিকা সহ্য করতে হয়েছে ভাবতেই শিউরে উঠছি।শুভ কামনা রইল ভাই আপনার জন্য।
ছবিটি আমিও দেখেছি ভাই, ছবির নাম ছুটির ঘন্টা। তবে ছুটির ঘন্টা ছবিতে ছেলেটি পুরো একটা রুমে আবদ্ধ ছিল। আর আমি যে বাথরুমের ছোট্ট একটি রুমে বন্দী ছিলাম তা খুবই শ্বাসরুদ্ধকর ছিল। কোন প্রকার আলো বাতাস নেই, একদম অন্ধকার ও প্রচন্ড গরমে সত্যিই বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল। আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপনার জীবনের তিক্ত অনুভূতি জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। তবে আপনার অনুভূতিটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কারণ এরকম ঘটনা আমি মুভিতে দেখেছিলাম। ছুটিরঘণ্টা সেই মুভিটির নাম। আসলে 35 থেকে 40 মিনিটের ভিতরে থাকা খুবই কষ্টকর। আপনি শেষমেষ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। আপনার স্যার তালা খুলে আপনাকে বের করে নিয়ে।পরে আপনি চোখ খুলে দেখলেন স্যার আপনার মাথার সামনে আসলে। এটি খুবই কষ্টকর ছিল।
ছুটির ঘন্টা মুভিটি আমিও দেখেছিলাম। খুবই কষ্টদায়ক মুভি ছিল। সেই সাথে আমার ঘটনাটিও খুবই কষ্টদায়ক। কেননা এই পরিস্থিতির শিকার আমি হয়েছিলাম তাই বিভীষিকাময় সেই দিনের সময় টুকু আমি কখনোই কোনদিন ভুলতে পারবো না। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।