একটি সড়ক দুর্ঘটনা
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে আমাদের এখানে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এইতো সেদিন আমাদের এখানে একটি মোটরসাইকেল ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়। আর মোটরসাইকেলটি চালিয়েছিল ১৫ বছরের এক কিশোর। আর পিছনে বসে ছিল তারই বন্ধু। তারা দুজনে দশম শ্রেণীতে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে দুই বন্ধু মিলে মোটরসাইকেলে করে ধরলা নদীতে সময় কাটাতে গিয়েছিল।
আর সেখানে সময় কাটিয়ে ফিরে আসার সময় এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যায়। যে মোটরসাইকেল চালিয়েছিল তার নাম হচ্ছে অপু। আর অপু যখন মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি মোড় ঘুরাচ্ছিল, ঠিক তখন হঠাৎ করে ট্রাক সামনে চলে আসায়, সে গতি কন্ট্রোল করতে না পেরে একদম ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যায়। ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার সাথে সাথে অপু সেখানে একদম ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। আর অপর বন্ধু রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায়। যখন অপুর বন্ধুর হুঁশ ফিরে আসে, তখন সে বারবার জিজ্ঞেস করছিল আমার বন্ধু অপু কেমন আছে।
তখন পর্যন্ত অপুর বন্ধুর করুন পরিণতি সেখানে থাকা কোন ব্যক্তি উপলব্ধি করতে পারেনি। কেননা তখন পর্যন্ত সে তার বন্ধুর খোঁজ খবর নিচ্ছিল। আর যখন সেখানে থাকা লোকগুলো যখন অপুর বন্ধুকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায়। আর একটা সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে অপুর বন্ধু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দুই বন্ধু একই সাথে মোটরসাইকেলে অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা যাওয়ার কারণে আমাদের কুড়িগ্রাম শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। এত অল্প বয়সে এমন তর তাজা প্রাণ চলে গেলে কোন বাবা-মায়ের কাছেই তা সহ্য করবার মতো নয়। অপু ছিল আমার অর্ধাঙ্গিনীর কলিগের ছেলে।
তবে তিনি অন্য স্কুলে ছিলেন। বিভিন্ন ট্রেনিং কিংবা সাব ক্লাসটারে তাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো। অপুর মায়ের নাম কাকলি। আর এই কাকলি ম্যাডাম ছেলে অপুর এক্সিডেন্টের সময় কক্সবাজারে ছিলেন। ছেলে বড় হয়েছে ভেবে, মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সাথে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছেলেকেও বেড়াতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, তবে সে যেতে চাইনি বলে তাকে রেখে গিয়েছিল। নানীর সাথেই অপু সারাটি দিন খুব হাসি খুশিতেই কাটিয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে বন্ধুর ডাকে অপু ধরলা নদীর তীরে বেড়াতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।
যখন এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা অপুর মা কক্সবাজারে শুনেছিল, তখন থেকেই তিনি নাকি বেহুশ হয়ে গিয়েছিল। আর এমন মর্মান্তিক এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে তৎক্ষণাৎ ভাবে তারা কক্সবাজার থেকে রওনা হয়েছিল। কাকলি ম্যাডাম ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তার ছেলেকে রেখে গেলে, সে আর কখনো তাকে ফিরে পাবে না। একসাথে দুই বন্ধুর মৃত্যু সত্যিই মেনে নেয়ার নয়। তবে এখানে কিন্তু অভিভাবকদের অসতর্কতার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন উঠতি বয়সের ছেলেদের মোটরসাইকেল দেয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি।
যেখানে তাদের বয়স একদম কম, আবার তাদের ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমতঅবস্থায় তাদের হাতে মোটরসাইকেল দেয়াটা কতটা ঠিক হয়েছে তা আপনারাও উপলব্ধি করতে পারছেন। আমি যখন এই পোস্ট লিখছিলাম তখন যেন আমার চোখের সামনে সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি ভেসে উঠছিল। যদিও বা আমি সামনাসামনি গিয়ে ঘটনাস্থল দেখিনি, তবে অনেকের ফেসবুকে আপলোড দেয়া ছবিতে মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো দেখেছিলাম। আজ আমার অর্ধাঙ্গিনী হঠাৎ করে কাকলি ম্যাডামের জীবন বৃত্তান্ত বলতে গিয়ে আবারো নতুন করে তার ছেলের কথাগুলো আমার সামনে বলছিল।
যখন আমরা আলাপ-আলোচনা করছিলাম তখন আমাদের কাছে কি যে খারাপ লাগছিল, তা বলে বোঝাতে পারবো না। যাইহোক আমি শুধু বলতে চাই, একটি সড়ক দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না। তাই যে যখন যেভাবেই থাকি না কেন সতর্কতা অবলম্বন করে চলাফেরা করা উচিত। বিশেষ করে যারা মোটরসাইকেল চালান তাদের অবশ্যই অবশ্যই চোখ কান খোলা রেখে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করে রাস্তায় চলাচল করা উচিত। পরিশেষে বলতে চাই অপু ও অপুর বন্ধু পরপারে গিয়ে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করেন।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
কথায় বলে একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না ৷ সেটা পরিবারের জন্য নিজের জন্য ৷ আর মোটরসাইকেল কে আমি মরনসাইকেল বলি ৷ আমিও একবার দূর্ঘটনা পরেছি ৷ যা হোক অকাল মৃত্যু গুলো সত্যি কষ্ট দায়ক ৷ তবে বর্তমান সময়ে জেনারেশন বাবা কাকা মামা গাড়ি পেলে নিজেকে হিরো মনে করে ৷ কিন্তু এটা বোঝে না যে দিনশেষে একটা জীবন আছে ৷ যা হোক এমন দূর্ঘটনা খুবই দুঃখজনক ৷
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই, মোটরসাইকেলকে মরণ সাইকেলেও বলা যেতে পারে। কেননা মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট খুবই ভয়াবহ হয়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি। প্রতিদিন অকালে ঝরে যাচ্ছে অপুদের মত কত শত তাজা প্রাণ।কে সাড়াবে এই ব্যাধি? তবে অপুদের মত কিশোরদের বাইক চালাতে না দেওয়াই ভালো। ট্রাফিক আইনেও ১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের বাইকসহ অন্যান্য বাহন চালোনো অবৈধ। এজন্য আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে। আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া,একটি সড়ক দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সড়ক দুর্ঘটনায় অপু ও অপুর বন্ধুর মৃত্যুতে সত্যিই আমরা শোকাহত। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মানুষের মৃত্যু যে কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু আমার মনে হয় এই উঠতি বয়সের ছেলেদের মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে বাবা মা মৃত্যুর এক ধাপ কাছে এগিয়ে দেয়। এদের স্প্রীড এত বেশি থাকে যে একটু এদিক সেদিক হলেই মৃত। খুব খারাপ লাগলো আপনার ওয়াইফের কলিগের ছেলে এবং বন্ধুর মৃত্যুর খবরটি শুনে।
ঠিক বলেছেন আপু, সেদিন অপুর মোটরসাইকেলের স্পিড অনেক টাই বেশি ছিল যার কারণে এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলেই ভাই, একটি সড়ক দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না। উপরওয়ালা সেই দুই পরিবারকেই এই গভীর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করুক। বাইক জিনিসটাকে আমার ভীষণ ভয় ই লাগে। বাইম এক্সিডেন্ট মারাত্মক হয়ে থাকে। আপনি নিজেও সবসময় সাবধানে চালাবেন ভাই৷
ঠিক বলেছেন দিদিভাই, বাইক এক্সিডেন্টগুলো খুবই মারাত্মক হয়। আমার কাছেও ভীষণ ভয় লাগে। আমার জন্য দোয়া করবেন দিদিভাই, যেন সব সময় সতর্কতার সাথে মোটরসাইকেল চালাতে পারি।
দশম শ্রেণিতে পড়া একজন ছাত্র কে মোটর সাইকেল দেয়া খুব ই অযৌক্তিক ব্যাপার।খুব অবাক লাগলো লেখাগুলো পড়ে। একজন মা কি করে এতো ছোট একটি ছেলেকে মোটর সাইকেল কিনে দেয় খুবই আশ্চর্য হলাম।এই পরিনতির জন্য মা-বাবাই দায়ী।খুব খারাপ লাগলো পড়ে। মা-বাবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠিন হওয়া উচিত।
বাবা-মায়ের অসতর্কতার জন্যইতো অপুর এই অকাল মৃত্যু হয়েছে। কেননা এত অল্প বয়সে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়াটা একদমই ঠিক হয়নি। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এমন ঘটনা আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এখানে শুধুমাত্র যে ছেলেগুলো মারা গেছে তাদের দোষ দিলে হবেনা। কারন তাদের পিতা-মাতা তাদের হাতে দামী মোবাইল এবং দামী মোটরসাইকেল তুলে দিয়েছে।
যাইহোক এরকম মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা কখনো কাম্য নয়, কারন এতে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। যাইহোক এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি বেশ সতর্ক বার্তা দিলেন ভাই। ধন্যবাদ বিষয়টি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাই, এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা কারোরই কাম্য নয়। আর হ্যাঁ বাবা মায়ের ভুলের কারণেই অল্প বয়সের ছেলেরাই এমন বিপদের সম্মুখীন হয়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার গল্পটা পরিবেশ কষ্ট লাগলো আসলে এরকম মৃত্যু মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। কিছু কিছু ছেলেদের বাইক চালানো দেখলে মনে হয় যদি প্রতিটা মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকতো তাহলে বেশি ভালো হতো। কেননা এই ছোট্ট ছেলেগুলো এরকম বেপরোয়াভাবে বাইক চালাতে পারতো না।
ঠিক বলেছেন ভাই, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে অপুর এক্সিডেন্টটি হয়েছিল। যার কারণে তাকে অকাল মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।