ভাগ্নির অকাল মৃত্যু || শেষ - পর্ব
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি ভাগ্নীর অকাল মৃত্যুর দ্বিতীয় পর্ব উপস্থাপন করব। আমার খালাতো বোন যখন আমার ভাগ্নির কথা মনে করে করে বিলাপ করছিল, আর আমাকে এ সকল বিষয় জানাচ্ছিল তখন আমি নিজেও যেন ঠিক থাকতে পারিনি। এ তো গেল আমার বোনের কথা অন্যদিকে আমার দুলাভাই অর্থাৎ সামিহার বাবা সামিহার সাথে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত গিয়েছিল। যখন ডাক্তার রংপুর থেকে ঢাকা বারডেন হাসপাতালে রেফার্ড করেছিল তখনও আমার দুলাভাই সামিহার সাথেই ছিল। সেই সাথে ছিল আমার আরও একটি খালাতো বোন অর্থাৎ সামিহার বড় খালামনি।
ঢাকা বারডেন হাসপাতালে নেয়ার পরে সামিহার অবস্থার আরো অবনতি হয়েছিল। তার এমন অবনতি দেখে তার বাবা প্রতিনিয়ত হাউমাউ করে কাঁদতো। কারণ সামিহার বাবা তার একমাত্র মেয়ে সামিহাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। তাদের বাবা মেয়ের আদর, খুনসুটি ও ভালোবাসা দেখলে আমার নিজের কাছেও খুবই ভালো লাগতো। আর বারডেন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লরা সামিহাকে দেখে তার বাবা যেন কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছিল না।
সামিহা যখন বার্ডেন হাসপাতালে ভর্তি ছিল, তখন তার ডায়াবেটিসের মাত্রা ৩২ শে গিয়ে পৌঁছেছিল। এমন অবস্থায় ডাক্তাররাও যেন সামিহার অবস্থার অবনতি দেখে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল। সামিহা বার্ডেন হাসপাতালে একটানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিল। হাসপাতালে থাকা পঞ্চম দিনে যখন ভোর ছয়টা বাজে তখন সামিহা চারিদিকে কাকে যেন খুঁজতে শুরু করেছিল। তখন সামিহার বড় খালামণি সামিহাকে আদর করে বলেছিল মা তুমি কি কাউকে খুঁজছো। তখন সামিহা বিষন্নতায় ভরা মুখ নিয়ে বলেছিল আমার মামনি কোথায়।
সামিহার এমন মুখ দেখে তার খালামণি, ভয় পেয়ে গিয়েছিল আর বলেছিল, তোমার মামনি বাসায় আছে। তখন সামিহা বলছিল আমি মামনি কে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই। আমি মামনিকে একটা চুমু দিতে চাই। তখন সেখানে থাকা তার বাবা ও বড় খালামণি ভীষণ কাঁদতে লাগলো। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের দূরত্ব এতটাই বেশি যে ইচ্ছে করলেও সামিহার শেষ ইচ্ছেটুকু কেউ পূরণ করতে পারবে না।
ঠিক যখন সাড়ে ছটা বাজে তখন সামিহা তার নিস্তেজ দেহটাকে রেখে, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে, পরপারে চলে যায়। সামিহার বাবা, খালামনি ও সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কান্নায় যেন হাসপাতালের চারিদিক ভারী হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে সকাল আটটার দিকে সামিহার বাবা লাশবাহী এম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে সামিহার লাশ কুড়িগ্রামে নিয়ে এসেছিল।
যখন কুড়িগ্রামে সামিহার লাশ শেষে পৌঁছেছিল, তখন পর্যন্ত সামিহার মামনি জানেনা যে তার মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। যখন লাশবাহি এম্বুলেন্স তাদের বাড়ির গেটে প্রবেশ করেছিল তখন সামিহার মায়ের যেন আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। সামিহার মা লাশবাহী গাড়ির দিকে দৌড়ে এসে সোনা মা,আমার সোনা মা বলতে বলতে চিৎকার করতে লাগলো। এমন দৃশ্য দেখে সেখানে থাকা অগণিত লোকের চোখে অশ্রু ঝরে পড়েছিল।
এমনিতেই সামিহা খুব সুন্দর ও খুবই কিউট একটি মেয়ে ছিল। যাকে এক দেখাতেই ভালো লেগে যায়। খুবই শান্ত ও মায়াবী চেহারার অধিকারী ছিল। আর সেই ১০ বছরের সামিহা আজ আর নেই। এমন ঘটনা যেন তার এলাকার কেউই মেনে নিতে পারছিল না। আমি যখন ছোট্ট সামিহার পবিত্র মুখটা দেখেছিলাম, তখন আমি নিজেও যেন ঠিক থাকতে পারছিলাম না। দুচোখ বেয়ে অশ্রু শুধু অঝরে ঝরে পড়েছিল।
এরপর সন্ধ্যার মধ্যেই সামিহার লাশ দাফন করা হয়েছিল। এত ছোট্ট ও কিউট একটি মেয়ে মারা যাওয়ার কথা শুনে চারিদিকে যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। আর তাই সামিহার জানাজার সময় অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছিল। আমি আজ যখন এই ঘটনাটি লিখছি, তখন বারবার যেন সামিহার মায়াবী মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। বুকের ভিতরে কষ্ট অনুভব করছিলাম। চোখের পানি যেন কিছুতেই ধরে রাখতে পারছিলাম না।
সামিহাকে নিয়ে এখনো আমার যে কষ্ট অনুভব হয়, না জানি তার বাবা মা এখন পর্যন্ত কতটা কষ্ট বুকের ভিতর লালন পালন করছে। প্রতিটি মানুষের জন্ম যেমন চিরন্তন সত্য, মৃত্যুও তেমনি চিরন্তন সত্য। তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকালমৃত্যু গুলো সত্যিই মেনে নেয়া খুবই কঠিন। আপনারা সকলে দোয়া করবেন, আমার ভাগ্নি যেন পরপারে বেহেস্ত নসিব হয়। এবং তার বাবা ও মা যেন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
সত্যিই এতটুকু বাচ্চার চলে যাওয়া মেনে নেয়া বেশ কষ্টের। তবে বাচ্চাটা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, উপর ওয়ালা বেহেশত নসিব করুন। খুব খারাপ লাগলো ভাই পুরোটা পড়ে। আল্লাহ পাক তার পিতা-মাতাকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।
ভাই আপনার মত আমিও শুধু বলতে চাই, মহান আল্লাহ তাআলা সামিহার বাবা মাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে কিন্তু এই অকাল মৃত্যু গুলো একদম মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আপনার ভাগ্নির অকাল মৃত্যুর ঘটনাটি আমি গত পর্বে পড়েছিলাম এবং আজকে পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। ইশশ্ কতবার মাকে দেখতে চেয়েছে কিন্তু শেষ দেখাটা মাকে দেখতে পেল না। খুব খারাপ লাগলো ভাইয়া।😪
ঠিক বলেছেন আপু, সামিহা অনেকবার তার মাকে দেখতে চেয়েছিল এবং বুকে জড়িয়ে ধরতে বলেছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মৃত্যু তাকে শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে দেয়নি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলেই কাছের মানুষগুলো যদি এরকম অকাল মৃত্যু ঘটে তাহলে নিজেকে ঠিক রাখা বড় কঠিন হয়ে পড়ে। আপনার ভাগ্নির জন্য আমারও ভীষণ খারাপ লাগলো। ছোটদের কে তো সবাই অনেক ভালোবাসে তাদেরকে হারানোর কষ্ট যেন সারা জীবন বয়ে বাড়াতে হয়। আপনার এত কষ্ট হচ্ছে আসলেই তার মা বাবার কতই না কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের সবার জন্যই অনেক অনেক দোয়া রইল যাতে সবাই এই কঠিন পরিস্থিতিটা ভুলে থাকতে পারেন।
আমার ভাগ্নি মাত্র ১০ বছরের ছিল, সে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মায়াবী চেহারার অধিকারী ছিল। তাই তাকে ভুলে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমার বোনকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক।
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে তবে কাছের মানুষগুলো অকাল মৃত্যু মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। আপনার অকাল মৃত্যু ঘটনাটি পড়ে আমার নিজের কাছেও খুবই খারাপ লাগছে। কারণ সবচেয়ে বড় কষ্ট বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। আল্লাহ সামিহার মা-বাবাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক। এবং সামিহাকে জান্নাতে নসিব করুন ।
আমার দুলাভাই সামিহার মৃত্যু যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই সে অনেকদিন ঘর থেকেও বের হয়নি। এখনো তার মুখ দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।
প্রথম পর্ব যেহেতু পড়ি নাই কিন্তু পুরো ঘটনাটা জানি না। যতটুকু পড়েছি খুব খারাপ লেগেছে মায়ের মন বলে কথা। এত অল্প বয়সে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি মেনে নেওয়া বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার কাছে। আজকাল মৃত্যুর এত অনিশ্চিত হয়ে গেছে কখন যে কে চলে যাচ্ছে তার কোন নিস্তার নেই। রোগ এত বেড়ে গেছে ছোট বড় সকলেরই যে মুহূর্তে যেকোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে এবং চোখের সামনে তরতাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। তবে সানিহার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি সে যেন পরপারে অনেক ভালো থাকে।
আপু, আমার বোন ও দুলাভাই এখন পর্যন্ত আমার ভাগ্নির মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই তাদের দুজনের মুখের দিকে তাকালে ভীষণ কষ্ট পাই।
সামিহা তার আম্মুকে শেষ দেখাটা দেখতে পেলো না।আপনার ভাগ্নির অকাল মৃত্যু প্রথম পর্বটিও পড়েছিলাম ভাইয়া।আসলেই এই মৃত্যুগুলো মেনে নেওয়া খুব কঠিন।ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম এর দূরত্ব আসলেই অনেকটা বেশি।এজন্যই সামিহা তার আম্মুকে দেখতে পেলো না।যাইহোক সামিহা জান্নাতবাসী হোক দোয়া করি।সামিহা পরিবারকে আল্লাহ সবর দান করুক এই পরিস্থিতিতে।ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
সামিহার মা এখনো বিলাপ করে আর বলে আমার মেয়েকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু অবস্থায় বুকে জড়িয়ে ধরতে হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কেন জীবিত অবস্থায় জড়িয়ে ধরার সুযোগ দিল না।
আপনার ভাগ্নির এই অকাল মৃত্যুর খবরটা পড়ে সত্যিই আমি খুব ব্যথিত হলাম। কারণ মাত্র দশ বছর বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ে এত কষ্ট নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে,যা কোনো বাবা মায়ের পক্ষে এত সহজে মেনে নেয়া সম্ভব নয়।তবে এটা সবচেয়ে কষ্টের বিষয় যে সামিহা তার শেষ ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে পারল না।একবার তার মাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল,মেয়েটা হয়ত তখন বুঝেছিল তার আর বেঁচে থাকা হবে না।সত্যি বলতে খুব কষ্ট পেলাম আপনার ভাগ্নির অকাল মৃত্যুর বিষয়টা জানতে পেরে।
আমার ভাগ্নি মৃত্যুর আগেও তার মাকে জড়িয়ে ধরার কথা বলেছিল। আর এই কথাটি শুনে তার মা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। এখনো মাঝে মাঝে এই কথাটি মনে করে সামিহার মা শুধু অঝরে কেঁদে যায়।