বউয়ের ছোটবেলার মর্মান্তিক ঘটনা
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আশারী পূর্ণিমা তাই সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোর ছুটির দিন। সেই সুবাদে আমার অর্ধাঙ্গিনীও আজ সারাটা দিন বাসায় থাকার সুযোগ পেয়েছিল। বিকেল বেলা আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী বসে বসে যে যার মত মোবাইল চালাচ্ছিলাম। আমি কমেন্ট করছিলাম আর সে ইউটিউবে "আপন ঠিকানা" নামক একটি স্টেজ শো দেখছিল। আর এই সো পরিচালনা করে আর জে কিবরিয়া ভাই। যদিও বা আমি বেশ কয়েক পর্ব দেখেছিলাম। আর দেখে আর জে কিবরিয়া ভাইয়ের এমন প্রশংসনীয় কাজের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছিলাম।
এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মানুষের পরিবার খুঁজে বের করা। যে হারিয়ে যাবে সে আপন ঠিকানার এই স্টেজে এসে, তার হারিয়ে যাওয়ার সমস্ত বিবরণ তুলে ধরবে, তখন এই শো এর মাধ্যমে তারা সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষের পরিবার খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করবে। আমার বিশ্বাস আপনারা অনেকেই হয়তো এই অনুষ্ঠানটি দেখে থাকবেন। তো আমার অর্ধাঙ্গিনী যখন আজ এই শো দেখছিল তখন সে মনের অজান্তেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কাঁদছো কেন। তখন সে বলল এই অনুষ্ঠানের যতগুলো পর্ব সে দেখেছে সবগুলো পড়বেই সে এভাবে কেঁদেছে। কেননা হারিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২০,২৫,৩০ কিংবা ৪০ বছর পর একজন হারিয়ে যাওয়া মানুষ যখন তার পরিবার ফিরে পায়, তখনকার সেই সময়টুকু সত্যিই খুবই আবেগময় হয়ে ওঠে। আমি আমার অর্ধাঙ্গিনী কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি এই শো এত বেশি দেখো কেন । সে আমাকে বলল, সেই ছোটবেলায় বাবার সাথে ঢাকায় গিয়ে ঢাকার অজানা রাস্তায় সে হারিয়ে গিয়েছিল।
আর সেই সময় আমার শ্বশুর প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর আমার অর্ধাঙ্গিনীকে খুঁজে পেয়েছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী তার বাবার হাত ধরে ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় কখন যে তার বাবার হাত ছেড়ে দিয়েছিল সে বুঝতেও পারেনি। আর যখন সে হাত ছেড়ে দিয়েছিল তখন ফুটপাতে থাকা একটি খেলনার দোকান দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আমার শশুর যখন বুঝতে পারলেন মেয়ের হাত সে কখন ছেড়ে দিয়েছে তা বুঝতে না পেরে সামনে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখন সে হাউমাউ করে কেঁদে পেছনে ফেলে আসা রাস্তায় ছুটে চলতে শুরু করেছিল।
ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, আর সেখানে আমার শ্বশুর প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট হেঁটে চলেছিল। ভাগ্যিস আমার অর্ধাঙ্গিনী সেই খেলনার দোকানে দাঁড়িয়ে ছিল। যদি সে কোনভাবে বুঝতে পারত তার বাবা তার হাত ছেড়ে দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে, তাহলে সে কিছুতেই সেখানে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত না। এ বোধহয় মহান আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত ছিল, যার কারনে আমার শ্বশুর সেই খেলনার দোকানের সামনে গিয়ে আমার অর্ধাঙ্গিনীকে খুজে পেয়েছিল।
আর যখন খুঁজে পেয়েছিল তখন সে আমার অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেছিল। তখনও আমার অর্ধাঙ্গিনী বুঝতেই পারেনি তাকে রেখে তার বাবা অনেক দূর চলে গিয়েছিল। সেই সময় আমার শ্বশুর আমার অর্ধাঙ্গিনীকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী বলেছিল, বাবা আমি অনেক বড় হয়েছি আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটলে তোমার খুব অসুবিধা হবে, তবুও আমার শ্বশুর নাকি কোন কথা শুনতেই চাইছিল না। তখন হয়তো আমার অর্ধাঙ্গিনী ছোট থাকার কারণে তার বাবার আবেগটা বুঝতে পারেনি।
তবে এখন সে বেশ উপলব্ধি করতে পারে সেদিনের সেই দিনটি। যখন সে এই আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানটি দেখে, তখন সে মনে করে হয়তো সেদিন আমার অর্ধাঙ্গিনী হারিয়ে গেলে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার পরিবার খুঁজে বের করতে হতো। যদিও বা এই ঘটনাটি আমি আমার অর্ধাঙ্গিনির মুখে অনেকবার শুনেছি, আজ আবারো যখন ঘটনাটি শুনলাম, তাই আপনাদের মাঝে ঘটনাটি ভাগাভাগি করে নিলাম।
তবে হ্যাঁ শেষ করার আগে আমি এই আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানকে, বিশেষ করে আর জে কিবরিয়া ভাইকে মন থেকে সম্মান জানাচ্ছি। এত বছর পর হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো যখন তাদের পরিবার খুঁজে পায় তখন সত্যিই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় না করে পারা যায় না। আর এই মহামিলনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আপন ঠিকানা নামের এই স্টেজ শো ও কিবরিয়া ভাই বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আর জে কিবরিয়া ভাইয়ার এই অনুষ্ঠান দেখা হয়নি তবে টিভিতে এবং রেডিও তে আরও কিছু অনুষ্ঠান ছিল আমি সেগুলো দেখেছি। তার অনুষ্ঠান এবং কথাবার্তা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। যাই হোক"আপন ঠিকানা" নামক অনুষ্ঠান দেখে আপনার অর্ধাঙ্গিনীর ছোটবেলার কথা মনে পড়াতে হয়তো আমরাও জানতে পেরেছি। সে হয়তো ছোট ছিল বলে বুঝতে পারেনি কিন্তু আপনার শ্বশুর তাকে খুঁজে পেয়েছে এটাই অনেক। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন আপু, আমার অর্ধাঙ্গিনী ছোট বেলায় হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তেমন উপলব্ধি করতে পারেনি তবে বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সে বেশ ভালই উপলব্ধি করতে পেরেছে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যদিও আপন ঠিকানা নামক এই স্টেজ শো টা আমার আগে কখনোই দেখা হয়নি, তবে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে এটি সম্পর্কে কিছু একটা জানতে পেরে ভালো লেগেছে। এই উদ্যোগ টা কিন্তু অনেক ভালো নিয়েছে পরিচালক। আমি তো সময় পেলে চেষ্টা করব এই স্টেজ শো টি দেখার। আর আপনার অর্ধাঙ্গিনী ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া এরকম মর্মান্তিক ঘটনা শুনে খারাপ লেগেছে। কয়েক মিনিট পর হলেও ওনাকে ওনার বাবা খুঁজে পেয়েছিলেন এটা জেনে ভালো লাগলো। এরকম ঘটনা মনে পড়লে কাঁদারই কথা।
আপু আমার অর্ধাঙ্গীনির বড়ই সৌভাগ্য বলে সেদিন আমার শ্বশুর তাকে খুঁজে পেয়েছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের ছোটবেলায় অনেক ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনাগুলোও রয়েছে। তবে আপনার স্ত্রীর এরকম মর্মান্তিক ঘটনার কথা শুনে খারাপ লেগেছে। এই ঘটনাটা মনে করে তিনি কান্না করেছিলেন আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানটি দেখে। এই অনুষ্ঠানের কথা আমি আগে কখনোই শুনিনি এবং কে দেখিনি। আমি তো ভাবছি এই অনুষ্ঠান টা দেখব একবারের জন্য হলেও।
ভাই আমার অর্ধাঙ্গিনী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আমিও মনে করলে আমার কাছেও খুবই খারাপ লাগে। তবে তার কপাল ভালো বলে আজ আমার ঘরের ঘরণী হয়ে রয়েছে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।