আমার মেজো বোনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা || শেষ-পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)
"আজ শনিবার ৩০শে চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই এপ্রিল ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

IMG-20240410-WA0002.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজ আমি আমার মেজ বোনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার দ্বিতীয় পর্বটি নিয়ে হাজির হয়েছি। গত পর্বে আমি আমার বোনের অগ্নিদগ্ধ শরীর নিয়ে ঢাকায় রওনা হওয়ার কথা বলেছিলাম। সারাটি রাস্তায় আমার বোন ও দুলাভাই দুজনেই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করার পর, অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে গিয়ে পৌঁছেছিল। আর সেখানে যাওয়া মাত্রই আমার বোন ও দুলাভাইয়ের অবস্থা দেখে, সেখানে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসকরা খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছিল।

যদিওবা আমার দুলাভাইয়ের দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত পোড়া গিয়েছিল, তবে সে পোড়া খুব বেশি ক্ষতর সৃষ্টি করেনি। কিন্তু আমার মেজ বোনের অবস্থা খুবই ভয়ানক হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে পেট ও দুটো হাত একদম ঝলসে গিয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অনেকদিন চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছিল। আর সে সময়টা আশেপাশে অনেক অগ্নিদগ্ধ মানুষের আর্তনাদ শুনে, আমি যেন দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ বন্ধ করলে এখনো সেইসব দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমার বোনের ভয়াবহ অবস্থা আমরা কিছুতেই যেন সহ্য করতে পারছিলাম না।

তাই আমরা অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে ভারতের মাদ্রাজে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেই চিন্তা ভাবনা সেই মোতাবেক কাজও করেছিলাম। আমার বোন ও দুলাভাই দুজনকেই একসাথে মাদ্রাজে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার বোনের উন্নত চিকিৎসার কারণে, অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তবে আমার বোনের দুটো হাত এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে, শুধুমাত্র হাতের রগ গুলো দেখা যাচ্ছিল। ডাক্তার বলে দিয়েছিল, প্রতিদিন আমার বোনের হাত দুটো যেন ড্রেসিং করে দেয়া হয়। তা না হলে হাতের পরা অংশগুলো জমাট বেঁধে, হাতের রগ গুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে।

যার কারণে আমার বোন আর কখনো হাতের আঙ্গুল ঘুরিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না। সেই মোতাবে আমরাও সেই চেষ্টা করেছিলাম। যখন আমার মেজো বোন ও দুলাভাই বাংলাদেশে এসে আমাদের বাসায় পৌঁছেছিল, তারপর দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ড্রেসিং এর কাজ। আর এই কাজটা যে কতটা ভয়াবহ তার স্বচক্ষে না দেখলে আপনারা কেউ বুঝতে পারবেন না। যখন আমার দুলাভাই তার নিজের হাতে আমার বোনের হাত দুটোকে ড্রেসিং করে দিচ্ছিল, তখন তার চিৎকার করে আমরা কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। আমার দুলাভাই বলছিল যেহেতু আমার ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছে, তাই আমি ড্রেসিং করব।

কেননা ড্রেসিং ভালো না হলে হাতের অবস্থা গুরুতর হয়ে যাবে। যেহেতু আমরা আমার বোনের অবস্থা দেখে খুবই কান্নাকাটি করছিলাম, তাই আমার দুলাভাই আমাদের কাউকে ড্রেসিং করতে দেয়নি। প্রতিদিন স্যাভলন, ও পুড়ে যাওয়ার জন্য যে ক্রিম দিয়েছিল তা দিয়ে ড্রেসিং করে দিত। এভাবে প্রায় ছয় থেকে সাত মাস লেগেছিল আমার বোনের সুস্থ হতে। তবে প্রথম দিকে আমার বোন তার আঙ্গুল ঘুরিয়ে কোন কাজই করতে পারত না। রান্নাবান্না তো দূরেই থাক, তার সেবার জন্য একজন লোক ঠিক করে দেয়া হয়েছিল, এমনকি তাকে খাইয়ে পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। এভাবে চলতে চলতে আমার বোন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিল।

আমার বোন এখন বর্তমানে সুস্থ আছে, সে হাতের প্রতিটা আঙ্গুল নাড়িয়ে চাড়িয়ে যে কোন কাজ করতে পারে। তবে আমার মেজ বোনের হাত দুটো যে কেউ দেখলে, এখনো ভয় পেয়ে যাবে। এজন্য আমার মেজ বোন সব সময় তার হাতে কালো দুটো মোজা পড়ে থাকে। আমার মেজো বোনের খুব একটা স্বাস্থ্য ছিল না, তবে যতদিন থেকে সে এই অগ্নিদগ্ধতার কারণে ওষুধ খাচ্ছে, ততদিন থেকে আমার বোনের স্বাস্থ্যটা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল। দ্বিতীয়বারের মতো যখন আমার মেজো বোন আবারো মাদ্রাজে গিয়েছিল, তখন ডাক্তার বলেছিল ওষুধের রিঅ্যাকশনের কারণে তার এই স্বাস্থ্যটা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল।

আমার বোন এখন আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছে, তার চাকরিতেও বহাল রয়েছে। বর্তমানে আমার বোন তার দুটো হাত দিয়ে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সংসার সামলিয়ে যাচ্ছে। আমার এই মেজ বোনের জন্য আপনারা সকলেই দোয়া করবেন, যাতে করে সে সবসময় সুস্থ ও হাসোজ্জ্বল দিন কাটাতে পারে।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

52k6mffrchQhs3Ssm9CLhkXcA8J5RhCbAhzzMtY9rBYwuopLUXrfgFtYAyxDSMSe6DKtfSg5JpL1tTXmWhiaDQ4vxsCRwgn27yQReYuscW...MzSr1bibLsNGz4CYc4SxieDjUSABrfy1MYPtWjYqEqYuLpi9Tz8zghHZHU64XUYKmXDbvztGwoXcJfu5SbnoMxHMJNE2YtQMy3uM2j7em5U7H8i3F6wDoy7oHY.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আপনার বোনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। তবে আগের পর্ব গুলো পড়া হয়নি। যাইহোক এখন সুস্থ আছে বলে অনেক ভালো লেগেছে। এখন সকল কাজ করতে পারে যেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

হ্যাঁ আপু, আমার মেজো বোন এখন একদম সুস্থ। সে সব ধরনের কাজ করতে পারে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

বিশ্বাস করেন ভাইয়া আমি পোস্ট পড়ে শুধু জানতে চাচ্ছিলাম আপনার বোন এখন ও বেঁচে আছে কিনা।যখন পড়লাম বেঁচে আছে তখন থেকে বুকের মাঝের কষ্টটা কিছুটা কমেছে আমার।তবে আপনার দুলাভাইয়ের খুব অবদান আছে বলতে হয়।আপনার বোনের জন্য রইলো অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।সত্যিই গল্পটা পড়ে খুব কষ্ট লাগছিলো।

 last year 

হ্যাঁ আপু, আমার দুলাভাই খুবই ভালো মানুষ। তার সেবা যত্নে আমার মেজো বোন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 last year (edited)

আগুনে পুড়ে গেলে সে সমস্ত জায়গা সেরে উঠতে বেশ অনেক সময় লাগে। তবে এখানে ড্রেসিং করার কোন বিকল্প নেই। ডাক্তারের পরামর্শের মতো ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ড্রেসিং করতে হবে। আপনার বোনের জন্য দোয়া করি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাই, আগুনে পুড়ে যাওয়া অংশ সেরে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.14
TRX 0.35
JST 0.034
BTC 115752.08
ETH 4725.18
SBD 0.85