মৃত্যু। || by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ১লা বৈশাখ | ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রবিবার | গ্রীষ্ম-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
মৃত্যু এক চিরন্তন সত্য। যার জন্ম আছে তার মৃত্যু অনিবার্য। তবে কিছু মৃত্যু মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। চিন্তা করুন তো ঈদের দিন আপনার কোন আত্মীয় যদি মৃত্যুর স্বাদ নেয় তাহলে সেটা কেমন হবে?? স্বাভাবিকভাবেই ঈদের দিন সকাল থেকে মনটা খুবই ভালো ছিল। সকাল সকাল গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই একসাথে নামাজে গেলাম। আমাদের পাশের বাড়ির দাদুও ঠিক আমাদের সামনের কাতারে বসেই নামাজ আদায় করল। নামাজ শেষ করে তিনি একটু অসুস্থ বোধ করছিলেন তখন আব্বু বলল জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়ে সেখানে কিছু সময় বসিয়ে রাখতে। যখন মানুষের ভিড় কমবে তখন আস্তে ধীরে বাসায় আসবে। দাদু আর সুমন ভাই ঈদগাহ ময়দানে নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে রেস্ট নিচ্ছিল। বয়স্ক মানুষ একটু অসুস্থ হতেই পারে কেউ বিষয়টা সিরিয়াসলি নেয়নি। আর বয়স্ক মানুষ মাঝেমধ্যে একটু অসুস্থ হওয়ার স্বাভাবিক কিন্তু এই অসুস্থ হওয়া যে তার পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার একটি লক্ষণ সেটা আর আমরা বুঝতে পারিনি। সেখান থেকে দাদুকে রেখে আমরা সবাই যে যার মত চলে আসলাম আর যখন ভিড় কমে যাবে তখন গাড়িতে করে দাদুকে নিয়ে আসা হবে এই বলে আমরা চলে আসলাম। ঈদের আগের দিন অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলাম তাই ঈদের নামাজ শেষ করে বাসায় এসে কিছু খাওয়া দাওয়া করে সোজা ঘুম। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলাম তখনো বিষয়টা গুরুত্ব দিইনি।
কিছুক্ষণ পরে রুমের মধ্যে আব্বু বলছিল দাদু নাকি মারা গিয়েছে কথা টা আমি দ্রুত উঠে পড়লাম আর বাইরে গিয়ে জানতে পারলাম আসলেই দাদু মারা গিয়েছে। কথাটা শোনার পরে মোটেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিলাম কখন অ্যাম্বুলেন্স আবার আসবে সেটা দেখার জন্য। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিলাম প্রতিদিন সকাল হলেই দাদুর সাথে দেখা হয় সন্ধ্যাবেলায় দাদুর সাথে দেখা হয় আমাদের দিকে তাকিয়ে হেসে কথা বলে সেই মুখটা চোখের সামনে ভাসছিল। চিন্তা করছিলাম ঈদের একটা দিন একসাথে নামাজ পড়ে আসলাম আমরা পৃথিবীতে আছি আর সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে। দাদু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাছাড়া তিনি হজ করেছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন রোজা রেখেছেন। ৩০ টা রোজা রেখেছেন আর রমজান মাসের ৩০ দিনই ২০ রাকাত করে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ রোজা শেষে ঈদের নামাজও আদায় করেছেন তারপরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। কি আজব মৃত্যু, হয়তো এই ভালো কাজ গুলোতে অংশ নেওয়ার জন্যই সৃষ্টিকর্তা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
আধা ঘন্টা পরে অ্যাম্বুলেন্স চলে আসলো জানতে পারলাম অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা গিয়েছেন। আব্বু বলছিলেন মাঝে মাঝেই তো অসুস্থ হয়ে যায় তবে আজকে যেরকম সিরিয়াস ছিল এরকম এর আগে কখনো দেখিনি। যখন এম্বুলেন্স থেকে নামানো হলো মনে হচ্ছিল দাদু যেন ঘুমিয়ে আছে। তার মুখটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই মনের মধ্যে এক পাহাড় সমান কষ্ট চেপে বসলো। তার দিকে তাকিয়ে শুধু এই কথাই মনে পড়ছিল একই সাথে ঈদের নামাজ পড়লাম একই সাথে ঈদগাহ ময়দানে গেলাম আর এই সামান্য সময়ের ব্যবধানে সে আর পৃথিবীতে নেই। সব আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করল। মৃত্যুর শেষ সাজে সাজানোর তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গেল। তিনি যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাই জেলা পর্যায়ে থেকে তাকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য পুলিশ ফোর্স আসছিল। তাকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য ইউএনও সাহেবের গাড়ি চলে আসলো। তার খাটিয়ার উপরে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হল। পুলিশ বাহিনী এসে তাকে সম্মাননা জানালেন। সবাই বলছিল লোকটা কত ভাগ্যবান, এক মাস রোজা করে ঈদের নামাজ আদায় শেষে মৃত্যুবরণ করেছেন তাছাড়া সৃষ্টিকর্তা তাকে যেমন সুন্দর একটি দিনে মৃত্যু দিয়েছে তেমনি মানুষও তাকে সম্মান করছেন।
সম্মাননা জানানো শেষে তার বড় ছেলের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল। সেই চাচা ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করে এই ঈদে ছুটি পায়নি যার কারণে বাড়িতে আসতে পারেনি। দাদুর চার ছেলে মেয়ে, দুই ছেলে তাকে ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে গিয়েছে তাকে জীবিত দেখেছে একসাথে নামাজ আদায় করেছে কিন্তু বড় ছেলে আর সেটা দেখতে পারেনি। সন্ধ্যার সময় আমাদের জানিপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে নামলেন তত সময়ে আমি বাইক নিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাঙ্গা মন নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা না বলে সোজা বাইকের পেছনে উঠে বসলো। বাইক নিয়ে যখনই বাড়ির সামনে এসে থামলাম তখনই বড় চাচা তার বাবার খাটিয়ার পাশে গিয়ে মুখে দুই হাত দিয়ে কান্না শুরু করে দিল। চেয়ারে বসে বাবার লাশের দিকে তাকিয়ে বড় চাচা শুধু কান্না করছিল কাউকে কোন কথাই বলছিল না। যেহেতু এশার নামাজ বাদ দাদুর জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তাই আর দেরি না করে সবাই মিলে তাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে নেওয়া হলো।
যখন ঈদগাহ ময়দানের দিকে যাচ্ছিলাম তখন বারবার একটা কথাই মনের মধ্যে স্মরণ হচ্ছিল সকালবেলা দাদুর সাথে গিয়েছিলাম ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে আর এখন দাদুর সাথে যাচ্ছি তবে এখন যাচ্ছি তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করার জন্য। সকালে ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে এসেছে আর রাত্রে নিয়ে যাচ্ছি তাকে ঈদগাহে তার জানাজার নামাজের জন্য। ঈদগাহে পৌঁছানোর পর যখন তার খাটিয়া নামানো হলো তখন মনে হচ্ছিল এখানে সকালে একসাথে নামাজ আদায় করেছি আর এখন তার জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করছি। কখনো চিন্তা করিনি আজকে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে আবার কারো জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করব। জানাজার নামাজ শেষে দাফনের কাজ সম্পন্ন করে যখন বাসায় ফিরব ঠিক তখনই সেই জায়গাটার দিকে গিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। যেখানে সকালবেলা আমরা সবাই একসাথে ঈদের নামাজ পড়েছি। এখানেই ঈদের নামাজ শেষে দাদু জায়নামাজের উপরে একটু অসুস্থ বোধ করায় বসেছিল। আমি বলছিলাম দাদুর সাথে সকালে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। আসলে মানুষের জীবন কতটা সংক্ষিপ্ত কতটা মূল্যহীন সকালে মানুষের জীবনের মূল্য আছে বিকেলেই সে জীবনের মূল্য নেই। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা দাদুকে যেন জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন আমিন।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
![Banner.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmV44ipDFZ9PNUMtyufYoaoMvPW4QZqAZUvWi9TkCh9NWx/Banner.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
পৃথিবীতে মৃত্যুই একমাত্র চিরন্তন সত্য যা কেউ কখনো অস্বীকার করতে পারবে না।
কখন যে কার পরপারে চলে যাওয়ার ডাক চলে আসে সেটা কেউ বলতে পারবেনা।
আসলেই ঈদের দিনে এরকম প্রিয়জন বিয়োগের ব্যথা ভুলে থাকা খুবই কষ্টকর।
দোয়া রইল আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।
আমিন।
আপনার লেখা পোস্টটি পড়ে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। আপনার দাদুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান সৃষ্টিকর্তা যেনো তার কবরটি জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেয়। আসলে ভাই মানুষের নিঃশ্বাসের কোন বিশ্বাস নেই। যেকোনো সময়, যেকোন মানুষের যে কোন অবস্থায় মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার কোন উপায় আমাদের নেই। আর এটাই চিরন্তন সত্য কথা।
হ্যাঁ ভাই সবাইকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ভাই। ঈদের দিনে এইভাবে মৃত্যু একটা বেদনা। তার পরিবারের উপরেও একটা দুঃখের কালো ছায়া নেমে এসেছে। যে মানুষ টাকে ঈদগাহ ময়দানে দেখে আসলেন কিছুক্ষণের ব্যবধানে সে আর নেই। ব্যাপার টা খুবই খারাপ লাগল শুনে। কিন্তু এগুলো তে তো আমার আপনার হাত নেই। সৃষ্টিকর্তা তাকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন।
আসলে এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্ট। কিন্তু কোন কিছুই তো আর আমাদের হাতে নয় সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।
মৃত্যু কার কখন কিভাবে হবে কেউই জানি না।আর আপনার দাদু এভাবে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মারা গেল তা আসলে মেনে নেয়া কষ্টকর। তবুও মেনে নিতে তো হবেই। যে মানুষটার সাথে সকালে ঈদের নামাজ পড়লেন সেই মানুষটা রাত্রিবেলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলো।
আসলে সবাইকে এরকম হঠাৎ করেই তো সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে।