খেজুরের রস চুরির মজার গল্প (পর্ব-২)|| by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ২৫শে ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শনিবার | বসন্ত-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
আর দুইদিন পেরোলেই রমজান মাস তাই অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছি কেননা রমজানের তো পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। তাছাড়া যেহেতু আব্বু ব্যবসা করে আর নিজেও কম বেশি আব্বুকে সাহায্য করি তাই বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হচ্ছে। আজকে সকাল থেকেই অনেক ব্যস্ত ছিলাম। অন্যান্য দিনের চেয়ে বলতে গেলে আজকের দিনটা দ্বিগুণ ব্যস্ততার মাধ্যমে কেটেছে। সকালে কুষ্টিয়া গিয়েছিলাম যে কাজগুলো ছিল সেগুলোও কমপ্লিট করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত আটটা বেজে গিয়েছে। বাসায় ফিরে গোসল খাওয়া-দাওয়া করে খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই কিছু সময় রেস্ট নিয়েছিলাম। যদিও এর মাঝে ডিসকোড এ কিছু সময় সবার সাথে আড্ডা দিয়েছি তবে এখন আপনাদের সাথে পোস্ট শেয়ার করার জন্য হাজির হলাম। যাই হোক গত পর্বে খেজুরের রস চুরির মজার গল্পের কিছুটা শেয়ার করেছিলাম আর আজকের পর্বে পুরোপুরি শেয়ার করব।
রস খাওয়ার সময় যেহেতু রাজীব ভাই বলছিল সামনের সপ্তাহে আবারো আমাদেরকে রস খাওয়াবে তাই বলতে গেলে আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা সেই অপেক্ষায় ছিলাম। এরই মধ্যে দেখতে দেখতে সপ্তাহ পার হয়ে গেল আর আবারও সেই একইভাবে বিকেল বেলায় গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছে। এই দৃশ্য দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তাদেরকে জানিয়ে দিলাম যে খেজুর গাছে আবার হাড়ি ঝোলানো হয়েছে। আমরা তাদের কাছে এই সংবাদটা পৌঁছে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আমাদের দেখে হাসতে লাগলো আর রাজীব ভাই আমার পিঠের উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ঠিক আছে যা। কিন্তু তখন তার কথা শুনে মনে হল হয়তো আর খেজুরের রস চুরি করবে না। তখন আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা একে অপর কে প্রশ্ন করছিলাম আসলে তারা ভোররাত্রে গাছ থেকে রস চুরি করবে কিনা ?? তখন আমাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো, আচ্ছা যেটা করে করবে আমরা রস খেতে পারলেই হয়। তখন আমি আবার বললাম যদি রস চুরি নাই করে তাহলে আমরা রস খাবো কিভাবে। তখন আমরা ছোটরা নিজে নিজেই প্ল্যান করছিলাম যে সকালবেলা আমরাই রস চুরি করব। কিন্তু ভোররাত্রে আমাদের ঘুম থেকে ওঠার মত সাহস ছিল না। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে দেখলাম তারা আমাদের জন্য রস রেখে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে কলসি নিয়ে গিয়ে গাছ থেকে রস চুরি করে গাছের গোড়ায় হাড়িটা নামিয়ে রেখে চলে আসছে।
এভাবে পরপর দুই সপ্তাহ রস হারিয়ে যাওয়ার পর লোকটি বুঝতে পারল আসলে কারা এই কাজ করেছে। লোকটি তখন আমাদের এক চাচার কাছে নালিশ করল কিন্তু রাজিব ভাই প্রথমেই অস্বীকার করল। পরবর্তীতে সপ্তাহ ঘুরতেই আবারও গাছি বিকেল বেলায় গাছে হাড়ি বাঁধিয়ে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করল। তবে এই সপ্তাহে আর আমরা কাউকে কোন খোঁজ দেইনি কিন্তু পরের দিনে সকালে রাজীব ভাইয়েরা আবারো সেই গাছ থেকে রস চুরি করেছে তবে সেদিন আর রস খেতে পারেনি। দেখলাম হাড়ি ভর্তি রস আর রসের মধ্যে চুন দেওয়া রয়েছে তাই তারা আর সেই রস খেতে পারেনি। যদিও উপর থেকে রস সংগ্রহ করে সেই রস আগুনের তাপে জ্বালিয়ে আমরা গুড় তৈরি করে খেয়েছিলাম হা হা হা। ঠিক একইভাবে তার পরের সপ্তাহেও আবারও গাছ থেকে খেজুরের রসের হাড়ি নামিয়ে নেওয়া হলো আর সেই খেজুর রসের হাড়ির মধ্যে এক ধরনের কচুর গাছ কেটে রাখা হয়েছিল যেটা খেলে পারে গলা চুলকায়। আমাদের এলাকায় যেটা সুলা কচু নামে পরিচিত। গাছি ভেবেছিল যারা রস চুরি করে তারা যদি এই রস খায়, তাহলে তাদের গলা চুলকাবে আর পরবর্তীতে রস চুরি করবে না কিন্তু রাজীব ভাইয়ের বুদ্ধিমত আমরা সেই রস আগুনে ফুটিয়ে তারপরে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে দিনের বেলায় খেতাম। তবে সকালবেলায় কুয়াশা ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে খেজুরের রস খাওয়ার যে মজাটা সেটা পেতাম না। কিন্তু আগুনে খেজুরের রস ফোটানোর পরে ভিন্ন একটা স্বাদ পাওয়া যেত।
এভাবে দীর্ঘদিন রস হারিয়ে যাওয়ার পরে লোকটি আমাদের বাড়িতে আসে আর মামার কাছে এসে নালিশ দেয়। লোকটি নালিশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামা রাজিব ভাইকে ডেকে সবকিছু জিজ্ঞাসা করে। রাজিব ভাই সব সত্যি কথা বলে দেয় তখন মামা রাজীব ভাইকে অনেক রাগ করে। সেই সাথে রাজীব ভাই ও বিস্তারিত সবকিছু বলতে থাকে আর লোকটির কাছে টাকা দিয়ে খেজুরের রস কিনতে চেয়েছিলাম সে দিতে না করে সে কোথাও বলে। তখন মামা লোকটিকে বলে ছোট মানুষ ওরা তোমার কাছে খেজুরের রস খেতে চেয়েছে আর তারা তো তোমার কাছে এমনি চাইনি টাকার বিনিময় তো খেতে চেয়েছে তুমি দাওনি কেন?? লোকটি তখন আর কোন কথার উত্তর দিল না। লোকটির কাছে মামা জিজ্ঞেস করলেন তোমার কয় হাড়ি রস চুরি হয়েছে?? লোকটি তখন বললেন তার চার হাড়ি রস চুরি হয়েছে। মামা লোকটির কাছে ১০০ টাকা দিলেন আর বললেন যাও এ বিষয় নিয়ে আর কারো কাছে কিছু বলার দরকার নেই। লোকটি তখন বলছিলেন আসলে ভাই আমারই দোষ আমি যদি ছেলেদের রস খেতে দিতাম তাহলে আর এত কিছুই হত না।
তারপর থেকে আর লোকটির খেজুরের রস চুরি করা হয়নি আর আমাদের যে কাউকে যদি দেখত তাহলেই ডেকে নিয়ে খেজুরের রস খেতে দিত। তবে আমরা শীতের মৌসুম আসলে সেই কথাগুলো মনে করে এখনো হাসাহাসি করি বিশেষ করে খেজুরের রসের হাড়ির মধ্যে লোকটি চুন দিয়ে রাখত আবার সুলা কচু কেটে রাখতো সেই বিষয় নিয়ে হা হা হা।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
হা হা 😄
রস চুরির এ গল্পটি পড়ে ভীষণ আনন্দ পেলাম।
কত চেষ্টাই না করল সেই গাছি লোকটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার রস সে রক্ষা করতেই পারল না।
আপনারা কোন না কোন ভাবে তার রস খেয়েই ছাড়লেন। পরবর্তী সময়ে সে বিভিন্নভাবে আপনাদের রস খাওয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তবুও সে আপনাদের রস খাওয়া আটকাতে পারেনি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সে বিচার দিয়েও এর কোন কূল কিনারা করতে পারল না এবং সবশেষে সে নিজের ভুলটাই বুঝতে পারল। এখানে আসল শিক্ষনীয় একটা বিষয় রয়েছে। যাই হোক চমৎকার একটি বিষয় আমাদের সাথে বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
মূলত লোকটিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যেই রস চুরি করতাম। লোকটি জানতো আমরাই রস চুরি করেছি কিন্তু বলতে পারতো না।
খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার অনেক গল্প আমাদের আছে। আসলে শীতের রাতে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার অনুভূতিটা অন্যরকম। আমি আগে জানতাম না তুমিও খেজুরের রস চুরি করে খেয়েছ। আজ জানতে পারলাম তুমিও আমাদের দলে। খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার অনুভূতিটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
হা হা হা, এখনো না জানা অনেক ঘটনা আছে।
খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করছেন আপনি৷ এই গল্পের প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম। আজকে এর দ্বিতীয় পর্ব দেখে খুব ভালো লাগলো৷ আসলে যদি আমাদের জিদ ঠিক থাকে তাহলে কেউই কিছু করতে পারেনা৷ যখন এই ব্যক্তিটি আপনাদেরকে রস খাওয়া থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু আপনারা কোন মতে এটা মানতে রাজি ছিলেন না। আপনারা যেভাবেই হোক না কেন সেই রস খেয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি কিছুই করতে পারল না৷ পরে সে নিজের ভুল বুঝতে পারল৷ অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি গল্প শেয়ার করার জন্য৷
লোকটি অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা কোন কাজে আসে নি।
এরকম মানুষ থাকলে ওই ব্যাক্তির কোনো কাজই হবে না৷
লোকটার বুদ্ধির কথা শুনে তো আমি হাসতে হাসতে একেবারে শেষ। লোকটা দেখছি চুল এবং কচু দিয়ে রাখত রসের মধ্যে। তবুও আপনারা হাল ছাড়েননি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে সেগুলো খেতেন শুনে ভালো লাগলো। লোকটা যদি বিক্রি করত তাহলে হয়তো আর লোকটার রস চুরি হত না। যেহেতু লোকটা বিক্রি করেনি তাই আপনারা চুরি করেই খেয়েছিলেন। আর রাকিব ভাইয়ের বুদ্ধির প্রশংসা করাই লাগতেছে। রসে যত কিছুই দেওয়া হোক না কেন, তিনি বিভিন্ন উপায়ে সেগুলোকে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিত।
আসলে ভাই লোকটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া উচিৎ ছিল তাই আমরা বার বার তার রস চুরি করতাম।
ভাগ্য ভালো আমি এই কমিউনিটিতে জয়েন করেছি। আর এ থেকে কিন্তু অনেক কিছু জানতেও পারছি। আজকে আপনার এই পোষ্টের মধ্য থেকে খেজুরের রস চুরি সম্পর্কে জানতে পারলাম। সুন্দর স্মৃতি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আরো এমন অনেক ঘটনা কয়দিন পড়েছি। বেশ ভালো লাগলো।
আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ছোটবেলায় দেখছি বড় ভাইয়াদের সাথে মজা করে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়া হতো আপনাদের। যদিও সবকিছু উনারাই করত। যেহেতু উনারা ছিল বড়, তাই উনারা চুরি করে আনার পর আপনারা খেতেন। যদিও আপনারা কিনে আনতে চেয়েছিলেন কিন্তু লোকটা না দেওয়াতে চুরি করেছেন। পরবর্তীতে লোকটা আবার আপনার মামার কাছে বিচার দিয়েছিল। কিন্তু আপনার মামা পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল দেখে ভালো লাগলো। পরবর্তীতে তিনি তাহলে নিজেই আপনাদেরকে ডেকে রস দিতেন। নিশ্চয়ই অনেক মজা করে খাওয়া হয়তো রস।
হ্যাঁ সব শেষে মামার ভূমিকা টা সুন্দর ছিল। লোকটিকে টাকাও দিয়েছিল তাই তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল।
লোকটা নিরুপায় হয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেই, খেজুরের রসের হাঁড়ির মধ্যে চুন এবং কচু দিয়ে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু তবুও যেহেতু কোনো কাজ হচ্ছিলো না, তারপর অবশেষে বিচার দিলো আপনার মামার কাছে। যাইহোক সবকিছু স্বীকার করায় খুব ভালো হয়েছিল। সবকিছু মিটমাট হয়ে গিয়েছিল। লোকটাও পরবর্তীতে ডেকে ডেকে খেজুরের রস খাওয়াতো আপনাদেরকে। গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাই চিন্তা করুন খেজুরের রসের হাঁড়ির মধ্যে চুন আবার কচু দিয়ে তার রস রক্ষা করতে চেয়েছিল। তাহলে লোকটা আমাদের প্রতি কী পরিমাণ রেগেছিল।