এই কেনাকাটা প্রশান্তির। || by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ -২৫শে চৈত্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | সোমবার | বসন্তকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



1000059309.png

Canva দিয়ে তৈরি



রমজান মাস মানেই রহমতের মাস। এই মাসে সবাই ভালো কাজের সাথে নিজেকে শামিল রাখার চেষ্টা করে। সবাই অনেক বেশি দান-সদকা করে থাকে। তাছাড়া ইসলামিক শরীয়াত অনুযায়ী এই মাসে অধিক দান করার কথা বলা হয়েছে। যাদের যাকাত ফরজ তাদেরকে যাকাত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতি বছরই আব্বু একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট রমজান মাসের শেষের দিকে এসে সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়। আমাদের মোট যে পরিমাণ নগদ অর্থ আছে তার উপর ভিত্তি করে সেই এমাউন্ট নির্ধারণ করা হয়। এ বছরে যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেই টাকা তিন ভাগে দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সেই টাকার এক অংশ দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু জামা কাপড় কেনা হয়েছে। একাংশ এতিমখানা এবং আবাসিক মহিলা মাদ্রাসা সহ আবাসিক মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে। আর বাকি এক অংশ দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর ২৫ রোজায় আমাদের বাড়ি থেকে কিছু দরিদ্র মানুষের জামা কাপড় বিতরণ করা হয়। এ বছরেও ঠিক একই দিনে অর্থাৎ ২৫ রমজানে দরিদ্র মানুষদের মাঝে কাপড় লুঙ্গি সহ কিছু জামাকাপড় দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।



20240401_085753.jpg

20240401_085756.jpg

20240401_111749.jpg

20240401_085829.jpg

20240401_085830.jpg

20240401_091233.jpg

20240401_091237.jpg

20240401_091931.jpg

20240401_095005.jpg

20240401_095032.jpg

20240401_095041.jpg



আমাদের বাড়ির আশপাশে যত দরিদ্র মানুষ ছিল তাদের একটা লিস্ট করা হলো। যতজন মানুষ হয়েছিল ততজনের জামা কাপড় কেনার জন্য আমি আর আব্বু পোড়াদহ গিয়েছিলাম। সাধারণত পোড়াদহ গেলে জামাকাপড় অনেক কম দামে পাওয়া যায় বিশেষ করে সেখানে শুধু পাইকারি দামে কাপড় লুঙ্গি সহ সব ধরনের জামা কাপড় বিক্রি হয়। যেহেতু কয়েক দিন ধরে প্রচন্ড রোদ আর গরম পড়ছিল তাই আমরা ভোরবেলা বাসা থেকে বের হলাম। আমাদের বাসা থেকে পোড়াদহ এর দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। বাইকের মিটার লক্ষ্য করে বুঝতে পারলাম একদম বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে পোড়াদহ বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা ৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি। পোড়াদহ বাজারে পৌঁছানোর পর প্রথমেই বাইক পার্কিংয়ে রাখলাম আর সেখানে সবচেয়ে বড় যে কাপড়ের দোকান আছে সেখানে গেলাম। যদি উপরের ছবিগুলো দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন দোকানে কি পরিমানে কাপড় রয়েছে। দোকানটির নাম হল মুক্তা শাড়ি ভবন, দোকানের মধ্যে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ভেতরের অংশে চলে গেলাম কারণ ভেতরের অংশেই পর্যাপ্ত কাপড় রাখা হয়েছে আর সামনের অংশে শুধু থ্রি পিস কালেকশন। আমরা কাপড় দেখা শুরু করার পরে লোকটি জিজ্ঞেস করলেন এত কাপড় কি দান করার জন্য নিব নাকি?? আব্বু যখন বললো হ্যাঁ আমরা কাপড় গুলো দান করবো তখন লোকটি কিছু কম দামের কাপড় আমাদেরকে দেখালেন কিন্তু আব্বু তখন বললে আমার ভালো কাপড় লাগবে। আব্বুর মতামত এমন আমি মানুষকে ১৫০ পিস কাপড় দেওয়ার পরিবর্তে ১০০ পিস কাপড় দিব একটু ভালো দামি কাপড় দিব যাতে একজন মানুষ সেই কাপড়টা এক বছর ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে। গত বছর যে কাপড় দেয়া হয়েছিল অনেকেই সেই কাপড় পড়ে এসে বলেছিল আপনাদের এখান থেকে বেশ দামী কাপড় পেয়েছি। এক বছর পড়ছি তাও এখনো নষ্ট হয়নি। আসলে একজনকে দিতে গেলে একটু ভালো কিছুই দিতে হয় যেন সে সেটা ব্যবহার করে শান্তি পায়। আমাদের বাজেটে ১০০ পিস কাপড় নেওয়ার কথা ছিল আর সেই বাজেট অনুযায়ী পুরোপুরি ১০০ পিস কাপড়টি নিলাম। কাপড় গুলো নেওয়ার পরে লোকটি বলছিলেন দিনে আমার একজন লোক পাই যারা মানুষকে দেয়ার জন্য এমন ভালো কাপড় নেয়। যাইহোক কাপড় কেনা শেষ হওয়ার পরে আবার পরবর্তী দোকানে কিছু গজ কাপড় কেনার জন্য গেলাম।



20240401_094534.jpg

20240401_094853.jpg

20240401_101946.jpg

20240401_102350.jpg

20240401_102353.jpg

20240401_102358.jpg

20240401_103613.jpg

20240401_103620.jpg

20240401_104510.jpg

20240401_110555.jpg

20240401_111807.jpg

20240401_111733.jpg



সেখানকার গজ কাপড়ের সবচেয়ে বড় দোকানের নাম আজমেরী বস্ত্র বিতান। সেখানে গিয়ে আমরা দাম দাড় করে কিছু গজ কাপড় নিলাম। গজ কাপড় নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদেরকে পরামর্শ দিলেন আপনি যদি খুব ভালোর মধ্যে গজ কাপড় নিতে চান তাহলে পাকিজা গজ কাপড় গুলো নিতে পারেন। যদিও প্রথমে তিনি আমাদেরকে কিছু কম দামের গজ কাপড় দেখিয়েছিলেন তবে সেগুলোর কালার খুব বেশিদিন থাকবে না আবার কাপড়ের কোয়ালিটিও কম তাই আব্বু বলছিল আমাকে কিছু ভালো গজ কাপড় দিন। কয়েকটি রুল থেকে গজ কাপড় নেওয়া হলো। গজ কাপড় নেয়ার পরে কিছু লুঙ্গি ও নেওয়া হলো। লুঙ্গি গুলো নেয়ার সময় আমি আবার আব্বুকে বললাম দোকানের যে তিনজন লেবার আছে তাদের জন্য আলাদা একটা করে লুঙ্গি নিতে। ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় যেতে তারা নতুন লুঙ্গি পড়ে নামাজে যেতে পারে। গজ কাপড় গুলো সুন্দর করে একটি পলিথিনের মত মুড়িয়ে দেওয়া হল যেন নিয়ে যাওয়ার সময় কোন ময়লা বা দাগ না জড়ায়। আজমেরী বস্ত্র বিতান থেকে যা কিছু কেনা হলো সবগুলো ছোট্ট একটি পলিথিনের বস্তার মধ্যে দিয়ে টেপ লাগিয়ে সুন্দর করে পার্সেল করে দিল। সেখানকার কাজ শেষ করে পার্সেলটা একটি রিক্সায় নিয়ে নিলাম, তার ঠিক পাশের দোকান থেকেই পার্সেল করা কাপড়ের বস্তাটাও নিয়ে সোজা পোড়াদহ রেল স্টেশনের দিকে রওনা হলাম।



20240401_111813.jpg

20240401_111801.jpg

20240401_111554.jpg

20240401_111551.jpg

20240401_111444.jpg

20240401_111335.jpg

20240401_111332.jpg

20240401_111327.jpg



যেহেতু অনেকগুলো জামা কাপড় কেনা হয়েছে তাই এতগুলো জামা কাপড় নিয়ে বাইকে যাওয়া সম্ভব না। তাই আব্বু বলছিলেন একটু পরেই ট্রেন যাবে আব্বু এই জামা কাপড় গুলো নিয়ে ট্রেনে চলে যাবে আর আমি বাইক নিয়ে আস্তে ধীরে চলে যাব। রিকশায় উঠে জামা কাপড় গুলো নিয়ে সোজা পোড়াদহ রেলওয়ে স্টেশনে পৌছালাম। রিক্সাওয়ালার সাথে বস্তা দুইটা ধরে স্টেশন মাস্টারের রুমের সামনে রেখে দিলাম আর আব্বুও সেখানে বসে থাকলো। জানতে পারলাম আধা ঘন্টা পরে সেখানে ট্রেন ঢুকবে। আব্বুকে বিদায় জানিয়ে আমি আবার যেখানে বাইক পার্কিং করেছিলাম সেই জায়গার দিকে এগোতে থাকলাম। পোড়াদহ রেলওয়ে স্টেশনের কয়েকটি ছবি ও তুলেছিলাম সেটা অবশ্যই উপরে শেয়ার করেছি। পোড়াদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে সোজা বাইক পার্কিংয়ের স্থানে এসে সেখানে ২০ টাকা জমা দিয়ে বাইক নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভর দুপুরে প্রচন্ড রোদে বাসায় আসতে একদম ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম রোজা রেখে এমন কড়া রোদে বাইক চালানোর সময় মনে হচ্ছিল গা পুড়ে যাচ্ছে। তবে মনের কাছে একটা স্বস্তি কাজ করছিল দিনশেষে ভালো কাজের পেছনে সময় দিতে পেরেছি।



⬇️📥⬇️📥
ডিভাইসSamsung galaxy A52
ফটোগ্রাফার@kazi-raihan
লোকেশন
সময়এপ্রিল,২০২৪



🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


20231103_120530-01.jpeg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। আমাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের বেশী বেশী গরীব দুঃখীদের পাশে দাড়ানো উচিত। ইসলামিক শরিয়তে রমজান মাসে বেশি বেশি দান সাদকা করার কথা বলা হয়েছে। আপনারা প্রতিবছর রমজান মাসের শেষের দিকে এত ভালো উদ্যোগ নিয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ান দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last month 

আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

 2 months ago 

আপনারা খুব ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনাদের এই উদ্যোগটা দেখে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। এই রমজান মাসে অনেকেই গরীব-দুঃখীদের খাবার দিয়ে থাকে, আবার অনেকে জামা কাপড়। এই বিষয়টা আমার অনেক বেশি পছন্দের। আমাদের সবারই উচিত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরীব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের এক রকম কর্তব্য বললেও চলে। যারা খেতে পারেনা, জামা কাপড় কিনতে পারেনা, তাদেরকে যদি আমরা সাহায্য করি তাহলে নিজেদের কাছেই অন্যরকম ভালো লাগে। আপনারা ভালো মানের কাপড় নিয়েছেন। নিশ্চয়ই সবাইকে দেওয়ার পর অনেক খুশি হয়েছিল প্রত্যেকটা মানুষ।

 last month 

মানুষগুলো কাপড় পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিল সেই সাথে কোয়ালিটি টা ভালো ছিল বলে তারা বেশ প্রশংসা করেছে।

Posted using SteemPro Mobile

 2 months ago 

আপনাদের পরিবারের নেওয়া এই উদ্যোগটা দেখে ভালো লাগলো। প্রতিবছরই আপনারা একটা নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেন। এবছর ৩ ভাগে অসহায়দের সাহায্য করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আসলে আমাদের সবারই উচিত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া।

 last month 

সবাই যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই হয়তো তাদের এই অভাব অনটন আর থাকবে না।

Posted using SteemPro Mobile

 2 months ago 

আপনার পরিবার এত সুন্দর একটা উদ্যোগ নিয়েছে, যেটা দেখে সত্যি খুব ভালো লেগেছে। এই উদ্যোগটা প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে নেওয়া উচিত যাদের সামর্থ্য রয়েছে। আমরা যদি নিজেদের চেষ্টায় কিছুইনা কিছু গরিব মানুষদেরকে দিতে পারি, তাহলে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। এমন অনেকেই রয়েছে যারা চাইলেও পারেনা কোন কিছু কিনতে। কারণ তাদের সামর্থর মধ্যে ঈদের শপিং করাটাও থাকে না। ঈদের এই সময়টাতে যদি আমরা পারি এরকম কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাহলে আমাদের কাছে আরো বেশি ভালো লাগবে। কারো জন্য কোন কিছু করতে পারলে, নিজের কাছেই আনন্দ লাগে অনেক বেশি।

 last month 

হ্যাঁ এরকম মানবিক কাজগুলো যদি সবাই আমরা করতাম তাহলে হয়তো আমাদের সমাজের চিত্রটা আজ পাল্টে যেত।

Posted using SteemPro Mobile

 2 months ago 

আসলেই আপনার মন থেকে শান্তি কাজ করার কথাই আপনারা অনেক ভালো একটি কাজ করেছেন। আসলেই বহু মানুষ হয়তো যারা নতুন বস্ত্র কিনতে পারবে না ঈদের দিনে, তারা অনেক উপকৃত হবে আপনাদের কাছ থেকে এই ধরনের বস্ত্রগুলো পেয়ে। আপনার আব্বুর মত আমারও একই মত ১৫০ টার বদলে ১০০টা জিনিস কিনব,তবে সেটা ভালো দেখে কিনব। অনেক ভালো একটি কাজ করেছেন আপনারা। ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

উৎসাহ মুলক মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 68706.20
ETH 3751.71
USDT 1.00
SBD 3.76