ছোটবেলার মজার গল্প। || by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ২৩শে বৈশাখ | ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সোমবার | গ্রীষ্ম-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
সবার জীবনেই ছোটবেলার অতীতগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। আমি আজকে আমার ছোটবেলার একটি মজার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন বেশিরভাগ সময়টা আমার নানার বাড়িতে কেটেছে। বিশেষ করে ২০০৬ সাল এবং ২০০৭ সালের সময়টা নানা বাড়িতে কাটিয়েছি আর সেই সময়ে স্মরণীয় অনেক ঘটনা আছে যেগুলো এখনো মনে পড়লে ইচ্ছে করে আবার সেই ছোটবেলায় ফিরে যাই। যখনই স্কুল ছুটি দিত তখনই আমার নানা বাড়িতে সবাই চলে আসতো। আমার অনেকগুলো খালাতো বোন ছিল সেই সাথে মামাতো ভাই বোনেরা মিলে সারাদিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতাম। লেখাপড়ার কোন টেনশন ছিল না কাজের কোন টেনশন ছিল না শুধু খাওয়া দাওয়া আর খেলাধুলা করা, জীবনটা তখন আসলেই অনেক সুন্দর ছিল। আমরা নানা বাড়িতে ঈদুল আযহার ঈদ করার জন্য বেশ কিছুদিন আগেই সেখানে গিয়েছিলাম। মূলত ঈদুল আযহার ছুটিতে যখন স্কুল বন্ধ দিল তার পরেই আমি নানা বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম আর আমার সমবয়সী দুইটা মামাতো ভাই ছিল আমরা সবাই সব সময় একসাথে ঘুরাফেরা করতাম। সোজা গিয়ে আমার মামার ঘরে থাকতাম। মামিও আমাকে খুব ভালোবাসত যার কারণে আর বাড়ি যাওয়ার কথা চিন্তা করতাম না। ঈদ ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে তাই কোরবানির জন্য নানা বাড়িতে বেশ বড় একটি মহিষ কিনে আনা হয়।
বিকেল বেলায় মামা বাড়িতে এসে বললো কোরবানির জন্য মহিষ কেনা হয়েছে তো আমরা তিনজন সেই মহিষ দেখার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু গাড়িতে মহিষ আসতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আমরা একে অপরকে ডেকে সোজা কোরবানির মহিষ দেখার জন্য চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম বাগানের মধ্যে ছোট লিচু গাছের সাথে একটি মহিষ বাধা রয়েছে। সাধারণত গরুর তুলনায় মহিষ একটু শান্ত টাইপের প্রাণী তাই কাছে গিয়ে মহিষের গা ছুয়ে নাড়তে থাকলাম। মহিষ তো বেশ চুপচাপ, আমরা সবাই হাসাহাসি করছি আর মহিষের গা নাড়ছি। কিছুক্ষণ পরে মামা এসে আমাদেরকে বলল দ্রুত যেন হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিই। আগে থেকেই ছোট মামা আমাদের সবাইকে অনেক ভালবাসত কিন্তু চেয়ারম্যান মামাকে দেখে আমরা সবাই খুব ভয় পেতাম। ঢাকা থেকে যেদিন তিনি বাড়িতে আসতেন আমরা তো ভয়ে তার সামনে যেতাম না। খাওয়ার সময় জানতে পারলাম আজকে নাকি চেয়ারম্যান মামা বাড়িতে আসবে তাই আমরা আগে থেকেই দুষ্টামি করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
আমরা তিনজন একসাথে খাওয়া দাওয়া করে রুমের মধ্যেই বসে আছি। মনে ভয় ছিল চেয়ারম্যান মামা আসলে বাইরে যদি দুষ্টামি করতে দেখে তাহলে হয়তো রাগ করবে তাই অনেক সকাল পর্যন্ত রুমের মধ্যেই ছিলাম। দুপুর বেলায় আবারো মহিষ দেখতে বাইরে বের হলাম গিয়ে দেখলাম নানা বাড়ির যে বড় পুকুর ছিল সেই পুকুর পাড়ে মহিষ বেঁধে রাখা হয়েছে আর সেখানেই মহিষ ঘাস খাচ্ছে। পুকুর পাড়ে অবশ্য বেশ কয়েকটি ছোট বড় গাছ ছিল। ছোট পরিসরে একটা বাগান বলা চলে। বাগানের মধ্যে অনেকগুলো গাছ ছিল যেগুলো কিছুটা হেলে পরা টাইপের। হেলে পড়া গাছের উপরের অংশে গেলে গাছ কিছুটা নিচে নেমে যেত অনেকটা গাছের উপরের অংশে গিয়ে ঘোড়া চালানোর মতো মজা নিয়ে খেলা করতাম আমরা সবাই। মহিষ দেখতে গিয়ে আমরা সবাই বাগানে গিয়ে খেলা করছি। আমরা যখন মহিষের কাছে গিয়েছিলাম তখন ছোট মামা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু আমরা খেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরে কখন যে ছোট মামা সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে সেটা আর খেয়াল করিনি। অলৌকিকভাবে হঠাৎ করেই মহিষের দড়ি থেকে মহিষ ছুটে যায় আর ধীরে ধীরে আমাদের কাছে চলে আসে কিন্তু আমরা বিষয়টা তখন বুঝতে পারিনি। হঠাৎ করে আমার মামাতো ভাই আহাদ গাছের উপর থেকে বলছে দেখ মহিষ কিন্তু ছুটে গিয়েছে আমাদের দিকে আসছে। আহাদ তখন গাছের উপরের অংশে আর আমি এবং আশিক ভাই মাটিতেই রয়েছি। মহিষ দেখে আমি বাঁকা একটি গাছের উপরে চড়ে বসলাম কিন্তু আশিক ভাই তখনও নিচে। আশিক ভাই ভয়ে ভয়ে ছোট্ট একটি চিকন গাছের ডালে উঠে বসলো।
আমি যে গাছের উপরে বসে আছি তার পাশেই ছোট্ট একটি চিকন গাছের ডালে আশিক ভাই উঠে বসেছে আর ঠিক আমাদের দিকেই ধীরে ধীরে চলে আসছে। আমাদের ঠিক বিপরীত পাশে বড় একটি গাছের উপরের অংশের আহাদ বসে রয়েছে সেখানে মহিষ ইচ্ছা করলেও নাগাল পাবে না। আহাদ গাছের উপর থেকে বলছে এই মহিষ এদিকে আয়, এই মহিষ এদিকে আয়, অন্যদিকে আমি আর আশিক ভাই চুপচাপ বসে আছি। মহিষ দেখে ভয়ে আর কোন কথা বলছি না। ধীরে ধীরে চিকন একটি গাছের সাথে গিয়ে গা ঘষা দিচ্ছিল। আসলে মহিষের গা চুলকাচ্ছিল বলে মহিষ সেই গাছের সাথে গা ঘষা দিচ্ছিল কিন্তু আমরা ভাবছিলাম হয়তো মহিষ আমাদেরকে মারতে এসেছে। আমি আরো গাছের উপরের অংশে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আশিক ভাই চিকন একটি গাছে উঠেছিল বলে আর উপরের অংশে উঠতে পারছিল না। মহিষ হঠাৎ আশিক ভাই যে গাছে উঠেছিল সেই গাছের নিচে গিয়েই গা ঘষতে শুরু করল। আশিক ভাই তো ভয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। এদিকে আশিক ভাইয়ের কান্না শুনে আমিও কান্না শুরু করে দিলাম। আশিক ভাই যদি কোনমতে গাছ থেকে পড়ে যায় তবে সোজা গিয়ে মহিষের শিং এর উপরে গিয়ে পড়বে।
আশিক ভাইয়ের চিৎকার শুনে মামা বাড়ি থেকে সোজা বাগানে এসে দেখল মহিষ গাছের সাথে শিং দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে আর আশিক ভাই গাছের উপর অংশ থেকে কান্না করছে। মামা মহিষের দড়ি ধরে মহিষকে দূরে নিয়ে গেল তারপর আমরা তিনজন গাছ থেকে নেমে পড়লাম। এখনো সেই কথা মনে পড়লে আমাদের ভয় লাগে সেদিন যদি মামা দ্রুত বাড়ি থেকে এসে মহিষকে গাছের নিচে থেকে সরিয়ে না নিত তাহলে হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আশিক ভাই সোজা মহিষের শিং এর উপর গিয়ে পড়তো আর কি একটা দুর্ঘটনা ঘটতো। তবে এখনো সেই হেলে পড়া গাছের উপরে বসে দোল খাওয়ার মজাটা মিস করি। গাছ হঠাৎ হেলে মাটির কাছে চলে আসতো আবার যখন উপরের দিকে যেত তখন কি মজাই না লাগতো।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.