আমেনার জীবন (পর্ব-০১)|| by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ৬ই জ্যৈষ্ঠ | ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সোমবার | গ্রীষ্ম-কাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



1000070038.png

Canva দিয়ে তৈরি



কয়েক সপ্তাহ ধরে কোন গল্প শেয়ার করা হয় না তাই আজকে একটি ছোট গল্প নিয়ে হাজির হলাম। গল্পের সাথে কিছুটা বাস্তব কাহিনীর মিল রয়েছে আবার কিছুটা কাকতালীয়ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি যেন পাঠকদের গল্প পড়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে আমেনা নামের একটি মেয়ে যাইহোক গল্পের মূল অংশটি শুরু করা যাক।

গ্রামের ছোট একটি দরিদ্র পরিবারে আমেনা নামের একটি মেয়ের জন্ম হয়। তার বড় বোনের নাম ছিল রেশমা আর আমেনা ছিল পরিবারের ছোট মেয়ে। আমেনার বাবা পেশায় একজন শ্রমজীবী। সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে অর্থ পেতো সেটা দিয়েই কোনমতে তাদের সংসার চলে যেত। নিজের সংসারের খরচ যোগাতে আমেনার মা মাঝে মাঝে অন্য বাড়িতে কাজ করতো যখন নিজের বাড়ির কাজ থাকতো না তখন মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাবার যোগাড় করতো এবং দুই মেয়ে রেশমা আর ছোট মেয়ে আমেনাকে খাওয়াতো। তাদের বাড়ি ছিল একদম পদ্মা নদীর পাড়ে। পদ্মা নদীর পাড়ে বড় একটি বটগাছের নিচে তাদের ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর ছিল। বৈশাখ মাসে যখন ঝড় আসতো তখন তারা অনেক আতঙ্কে থাকতো কখন যেন তাদের ঘর উড়ে যায় এমন অবস্থা। তার বাবার সাধ্য ছিল না শক্ত পোক্ত আকারে একটা ঘর তোলা। কারণ এতটাই দরিদ্র ছিল যে ঘর তোলার জন্য যে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ লাগবে সেগুলো বাজার থেকে কেনার মত কোন টাকা ছিল না। প্রতিদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পেতে সেটা মেয়ে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে শেষ হয়ে যেত। আবার তাদের মাঠে কোন জমি ছিল না যার কারণে চাষ করে কিছু টাকা জমিয়ে রাখবে তেমন ও সুযোগ ছিল নেই।



1000070041.jpg

Source



আমেনার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাঝে মাঝে কিছু ধান নিয়ে আসতো আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে গম নিয়ে আসতো আবার কখনো মানুষের কাজে সাহায্য করে কিছু মসুর সহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য নিয়ে আসতো। তবে কাজ করে যতটুকু খাদ্যশস্য পেত সেটা দিয়ে কোন মত নিজেদের খাওয়ার কাজ চলে যেত। সময়ের সাথে সাথে আমেনা আর বড় বোন রেশমা বড় হতে থাকলো। রেশমা বুঝতে শুরু করল আসলে তাদের সংসারে এতটাই অভাব রয়েছে তার জন্য তাকে কিছুটা পরিশ্রম করে সংসারের খরচ বহন করা দরকার। তার বাবা সকাল হলেই অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যেত আবার তার মা আশপাশের যে বাড়ি থেকে কাজের জন্য ডাকতো সেখানে ছুটে চলে যেত কারণ কাজ করলেই কিছু খাদ্যশস্য বা খাওয়ার জন্য কিছু দিবে। রেশমা চিন্তা করলো আমি বাড়িতে বসে না থেকে মাঠে গিয়ে যদি খাদ্যশস্য কুড়াতে থাকি তাহলে সেটা জমিয়ে আপাতত খাওয়ার কাজ চলবে। ছোট বোন আমেনাকে নিয়ে রেশমা মাঠের মধ্যে শস্য কুড়াতে গেল। সেই সময়ে মাঠ থেকে কৃষকেরা গম কেটে বাড়িতে নিচ্ছে। গম কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে দু-একটা গমের গাছ জমিতে রয়ে যায় রেশমা সেগুলোই কুড়িয়ে কুড়িয়ে সংগ্রহ করছিল। দীর্ঘ সময় পরে দেখল বেশ কিছু গম সংগ্রহ করতে পেরেছে। অন্যদিকে তার ছোট বোন আমেনা শুধু সেটা লক্ষ্য করছিল আর জমিতে ফটকা গাছ নামক এক ধরনের ফল জন্মায় সেই ফল বসে বসে খাচ্ছিল।



1000070040.jpg

Source



মূলত আমেনা প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিল তার মা সকালে তাদেরকে যা খাবার দিয়েছিল সেটাতে তাদের দুজনের কারোর পেট ভরেনি। রেশমা অভাব বুঝতে পারে কিন্তু আমেনা বয়সে তুলনামূলক অনেক ছোট এজন্য তাদের সংসারের অভাব বুঝতে পারে না। ক্ষুধা মেটানোর জন্য সে ভালো একটা খাবারের সন্ধান পেয়েছিল। তার বড় বোনের শস্য সংগ্রহ করা শেষ হলে ছোট বোন আমেনাকে নিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। বাড়িতে যাওয়ার পরে দেখল তার মা পাশের এলাকায় যেখানে কাজ করতে গিয়েছে সেখান থেকে তখনো বাড়িতে আসেনি। এদিকে রেশমা এত পরিমানে ক্ষুধার্ত যে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্না করছে। রেশমার কান্না দেখে ছোট বোন আমেনা কান্না শুরু করল তখন রেশমা বুঝতে পারল আমি বড় হয়ে যদি এভাবে ভেঙেপড়ি তাহলে আমার ছোট বোন তো আরো ভেঙে পড়বে। রেশমা তাদের মাচার নিচে থেকে মাটির কলসিতে রাখা ঠান্ডা পানি একটি গ্লাসে নিয়ে পান করতে লাগলো আবার আরেক গ্লাস ভর্তি পানি তার ছোট বোন আমেনা কে দিতে লাগলো।

রেশমা আমেনাকে বোঝাচ্ছিল কিছু সময়ের মধ্যেই মা পাশের এলাকা থেকে খাবার নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে চিন্তা করিস না এখন পানি খা একটু পরে খাবার আসলে তখন খাবার খাবি। সময় গড়িয়ে যায় বিকেল হয়ে পড়েছে তবুও আমেনার মা বাড়িতে ফেরেনা এদিকে আমেনা এবং রেশমা দুজনই প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। মাটির কলসিতে কয়েক গ্লাস পানি ছিল সেটা অলরেডি তারা শেষ করে ফেলেছে। মাচার নিচে রাখা কলসিতে খাবার খুঁজছে কিন্তু সব কলসি গুলোই খালি। রেশমা তাদের পাশের বাড়িতে গিয়ে ছোট বোন আমেনার জন্য কিছু খাবার চাইল কিন্তু পাশের বাড়ির বয়স্ক মহিলাটি বলল এত বড় মেয়ে আমাদের বাড়িতে এসে সারাদিন কাজ করলে শেষ বেলায় একমুঠো ভাত দিব তাই বলে আসলেই খাবার পেয়ে যাবে খাবার এতো সস্তা না,দূর হ এখনই। রেশমা এমন কথা শুনে মনে কষ্ট পেল বাড়িতে এসে ছোট বোন আমেনাকে জড়িয়ে ধরে বোঝাতে লাগলো মা আসছে আর একটু অপেক্ষা কর। অন্যদিকে আমেনা ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে। সারাদিন না খেয়ে থেকে আমেনার শরীর দুর্বল হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রেশমা আমেনা কে বারবার ডাকছে কিন্তু আমেনা কোন সাড়া দিচ্ছে না। আমেনাকে বারবার ডাকছে কিন্তু তার কোন সাড়া নেই, তখন রেশমা ভাবল তার ছোটবোনের কিছু একটা হয়েছে।

#(..........চলবে)





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

ক্ষুধার যন্ত্রণা আসলেই সহ্য করা যায় না। আমেনা তো ছোট মানুষ, তাই ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। রেশমা তো পুরোপুরি ঝামেলায় পরেছে আমেনাকে নিয়ে। কারণ তাদের বাবা-মা তো বাসায় নেই। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74