খেজুরের রস চুরির মজার গল্প (পর্ব-১)|| by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ১৮ই ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শনিবার | বসন্ত-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
আজকে আমি দশ বছর পুরনো একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব। মূলত এটা শীতের মৌসুমের কথা, আমি তখন সবে নবম শ্রেণীর ছাত্র। বয়সে অনেক ছোট বড় ভাইয়েরা যে কাজগুলো করতো শুধু তাদের সাথে থেকে সেগুলো দেখতাম আর তারা যে অর্ডার করত সেই কথাগুলো শুনতাম। তখন আমার এক মামাতো ভাই পুরো টিম পরিচালনা করতো। সে তখন ভার্সিটিতে লেখাপড়া করত আর ঢাকায় থাকতো। অনেকদিন পরে বাড়িতে আসলে সবাই তার কথামতো সব কাজ করত। সকালবেলা একদিন আমরা সবাই হাঁটতে বের হয়েছি তখন হালকা ছিল আর সম্ভবত সেদিন শুক্রবার ছিল। রাজিব ভাই আমাদেরকে বলল অনেকদিন তো খেজুরের রস খাওয়া হয় না এই শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়া যাক সবাই মিলে। আমাদের নানা বাড়ির পাশেই অনেকগুলো সিরিয়ালে খেজুর গাছ ছিল আর সেই খেজুর গাছগুলো থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হতো।
পাশের গ্রামের দুজন লোক সেই খেজুর গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অরিজিনাল খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করত। যেহেতু সেই গাছগুলোকে সপ্তাহে দুইবার ছাটাই করে রস সংগ্রহ করা হতো তাই হুট করে একদিন শুক্রবারে এরকম আমাদের ডেট পড়ে গেল তো আমরা সবাই সেখানে গিয়ে খেজুরের রস খেতে চাইলাম। কিন্তু যে লোক খেজুরের রস গাছ থেকে সংগ্রহ করে অর্থাৎ আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় তাকে গাছি বলা হয় তিনি আমাদেরকে রস দিতে রাজি হলেন না। রাজিব ভাই বলছিলেন আপনি এক হাড়ি রস প্রয়োজনে আমাদের কাছে বিক্রি করে যান কিন্তু তারপরেও লোকটা রাজি হতে চাইছিল না কিন্তু পরবর্তীতে রাজি হলেও ভাইয়া তখন বলল আপনার রস নিব না। টাকা দিয়ে যেহেতু রস দিতে রাজি হননি তাহলে আপনার রস কিভাবে খেতে হয় আমরা সেটা দেখে নিব। এর মধ্য থেকে আমার এক খালাতো ভাই বলে উঠলো রাস্তার পাশে যে ছোট গাছ আছে না ওই গাছটা থেকে আর এক কলসী রসও আপনি বাড়িতে নিতে পারবেন না। যদি সে সময় রাজীব ভাই তাকে বলল তুই চুপ কর আমি তো কথা বলছি তখন সে চুপ করে গেল।
পরের সপ্তাহে লোকটি আবার খেজুর গাছগুলোতে হাড়ি বাঁধিয়ে রস সংগ্রহ করার জন্য গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে দিল। আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা এই সংবাদটা রাজীব ভাইয়ের কানে পৌঁছে দিলাম। তখনই ভাইয়া বলছিল ভোরবেলায় সবাই উঠে রেডি হয়ে থাকিস তোদেরকে আজকে খেজুরের রস খাওয়াবো। আমরা তো অনেক খুশি ভোরবেলা উঠে ঠান্ডা খেজুরের রস খেতে পারবো। কিন্তু চুপি চুপি নিজেরা আইডিয়া করে নিয়েছিলাম হয়তো তারা খেজুরের রস চুরি করবে আর এই জন্যই আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছে। তবে যেহেতু তারা সিনিয়র ছিল তাই তাদেরকে বলতে পারতেছিলাম না যে রস চুরি করার সময় আমাদের সাথে নিয়ে যেও। রাতে এই চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম হঠাৎ করেই ভোর রাতে দেখলাম ভাইয়ার রুমে লাইট জ্বলেছে আর আমিও কাউকে জানতে না দিয়ে ঘুম থেকে উঠে শীতের কাপড় পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। তারা ফোনে যোগাযোগ করে সবাই একসাথে হল সেই সাথে আমরা ছোট্ট কয়েকজন তাদেরকে অনুসরণ করছিলাম। তারা সোজা রাস্তার পাশে যে ছোট্ট খেজুর গাছ রয়েছে সেখানে গিয়ে গাছের দিকে টর্চ লাইট দিয়ে দেখছিল হাড়ি ঝুলানো আছে কিনা। যখনই দেখতে পেল গাছে হাড়ি ঝুলানো আছে তখনই খোকন ভাই অর্থাৎ আমার খালাতো ভাই সেই গাছে ওঠা শুরু করে দিল।
রাস্তার পাশের খেজুরের গাছটা ছিল একদমই ছোট আর খোকন ভাই যখন খেজুর গাছের উপরে উঠে গেল তখন হাঁড়ি নামানোর সময় বলছিল রসে তো হাঁড়ি ভরে গিয়েছে। আমরা কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না, আমরা শুধু বিষয়গুলো দেখছিলাম। কলসি নামিয়ে আমাদেরকে আবার বাড়িতে পাঠানো হলো আর বাড়ি থেকে আমরা আরেকটি কলসি নিয়ে সেখানে গেলাম পরবর্তীতে বাড়ি থেকে যে কলসি নিয়ে গেলাম সেখানে রসটা ঢেলে দেওয়া হল। আর মাটির ছোট কলসি টা গাছের নিচে নামিয়ে রাখা হলো। পরবর্তীতে বাসায় নিয়ে গিয়ে ছাকনি দিয়ে রস ছেঁকে সবাইকে পর্যায়ক্রমে গ্লাস ভরে রস খাওয়ানো হলো। রস খাওয়ার সময় রাজীব ভাই আমাদেরকে বলছিল আমরা যে রস নিয়ে এসেছি এই কথা কেউ যেন না জানে। যেহেতু রাজিব ভাই কে দেখে আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা সবাই বেশ ভয় পেতাম তাই ভুল করেও এই কথাটা কেউ কখনো মুখ ফসকে বের করিনি। রস খাওয়া শেষে রাজিব ভাই বলছিল আবার সামনের সপ্তাহ তোদেরকে খেজুরের রস খাওয়াবো তোরা খুশি তো?? আমরা তো সবাই হাসতে লাগলাম আর তারা আমাদের হাসি দেখেই হাসতে শুরু করল। ছোট বড় সব মিলিয়ে তখন আমাদের গ্রুপে ৯ জন ছিল যার মধ্যে আমি আর আমার আরেক মামাতো ভাই ছিলাম ছোট তাছাড়া সবাই ছিল বয়সে অনেক বড়। কেউ কলেজে পড়তো আবার কেউ ভার্সিটিতে পড়তো।
যাই হোক আজকে এই পর্যন্তই,খেজুরের রস চুরির পরবর্তী ঘটনাটা আবার দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইনশাল্লাহ।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ছোট বেলার কিছু কিছু স্মৃতি আসলেই সারাজীবন মনে থাকে আমাদের। সেই দিনগুলো রঙিন ছিলো বলেই, বারবার সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আমাদের। যাইহোক সবাই মিলে এভাবে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। লোকটা যেহেতু প্রথমে আপনাদের কাছে খেজুরের রস বিক্রি করতে চায়নি,তাই চুরি করে খাওয়ার বুদ্ধিটা দারুণ ছিলো। বেশ ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে। এতো মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
দারুন একটি গল্প শেয়ার করেছেন ভাইজান। বেশ ভালো লাগলো আপনার সুন্দর এই গল্প পড়ে। আসলে আমাদের জীবনে অনেক রকমের ঘটনা থেকে থাকে অনেক কাহিনী থেকে থাকে। আর সেগুলা যদি এভাবে শেয়ার করা যায়, একে অপরের সম্পর্কে জানা যায়।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ছোট্ট বেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে সত্যিই এখনো হাসি পায়। যাইহোক দারুন একটা ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। সত্যি বলতে এধরনের চুরি করে খাওয়ার স্মৃতি আমার নেই তাই বেশ মজা পাচ্ছিলাম পড়ে 😄
গাছি বেচারার কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে খেতে চাইলেও সে অসম্মতি জানায়, তার বিপরীতে আপনাদের অভিযান সত্যিই দারুন ছিল। যাইহোক গাছি বেচারা কি করলো, জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমাদের কি করণীয় ছিল ভাই বলুন ? আমরা তো টাকা দিয়ে কিনেই খেতে চেয়েছিলাম কিন্তু গাছি বেচারা তো দিল না।
ছোটবেলায় দেখছি খেজুরের রস চুরি করে বেশ মজা করেই খেয়েছিলেন বড় ভাইদের সাথে। যদিও অন্যরা ছিল অনেক বেশি বড়, আর আপনারা দুজন ছিলেন ছোট। তাই বড়দেরকে অনেক বেশি ভয় পেতেন পুরো পোস্ট পড়েই বুঝতেছি। আর ভোর বেলায় উঠে খেজুরের রস অনেক মজা করেই আপনাদেরকে আপনাদের বড় ভাইয়েরা খাইয়েছিল। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের একটা স্মৃতিময়ী ঘটনা আপনি আজকে সবার মাঝে শেয়ার করেছেন, যেটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনাদের স্মৃতিময় পোষ্টটা সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে বড় ভাইয়েরাও একদম বন্ধুর মতই মিশতো এজন্যই তো মজার ছলে রস চুরি করে খাওয়া হতো তাদের সাথে।
শৈশবের এই স্মৃতি গুলো মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগে ৷ আসলে ছোট বেলায় আমরাও এভাবে অনেক কিছু চুরি করেছি ৷ বেশ মজার ছিলো এই দিন গুলো ৷ তবে আপনার শৈশবের খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো ৷ সবাই মিলে দল বেধে রাস্তার পাশে খেজুর গাছে রস চুরি করে বেশ মজা করে খেয়েছেন ৷ যাই হোক ভীষণ ভালো লাগলো , আপনার শৈশবের এমন রঙিন মুহূর্ত গুলো জেনে ৷ ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ৷
প্রথমত গাছটা রাস্তার পাশে ছিল আর দ্বিতীয়ত গাছটা অনেক ছোট ছিল তাই রস চুরি করে খেতেও সুবিধা হয়েছিল।
গাছি কে তো চ্যালেঞ্জ দিয়েই রস চুরি করলো। তাহলে আর লোকজন জানলেই কি। গাছি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল এই কাজ আপনাদের। রস নেয়া শেষে কলসিটা নীচে নামিয়ে না রেখে গাছে ঝুলিয়ে রাখলে তো গাছি কিছু রস পেত। এরকম চুরির খাবার খেতে ছোটবেলায় অনেক ভালো লাগে। আপনার গল্পটি পড়ে ছোটবেলার গল্প মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
আসলে আমরা যখন রস চুরি করেছিলাম তার কিছু সময় পরই গাছি গাছ থেকে রস নামানো শুরু করছিল তাই আর কলসি টা গাছে বাঁধানো হয়নি।
ছোটবেলায় অনেক রস চুরি করে খেয়েছি ভাই। তবে এরকম জেদ ধরে খেজুরের রস চুরি করতে দেখে নি কাউকে। অবশ্য ওই লোকটা যদি আপনাদের প্রথমদিকে রস খেতে দিত কিংবা বিক্রি করতো আপনাদের কাছে, তাহলে হয়তো আপনারা এটা করতেন না। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে চুরি সাকসেসফুলি করতে পেরেছেন, এটাই অনেক বড় ব্যাপার। হা হা হা....😂😂 তবে আমি চিন্তা করছি, ওই লোক টা পরবর্তীতে খালি কলসি দেখে ঝামেলা না করে। এখন দেখা যাক, দ্বিতীয় পর্বে আর কি কি জানা যায় এই রস চুরি নিয়ে ।
তবে ভাই এটা শিওর তখন যদি গাছি আমাদের কাছে টাকার বিনিময়ে রস বিক্রি করতো তাহলে এতটা মজা পেতাম না।
হাহাহা..🤣🤣 এটা অবশ্য ঠিক কথা বলেছেন ভাই। কিনে খাওয়ার থেকে চুরি করে খাওয়ার মজা বেশি।
ছোটবেলায় আমরা অনেকে মিলে এরকম রস চুরি করে খেতাম৷ তবে এখনকার সময়ে সেই রকম মুহূর্তগুলো আর দেখা হয় না। তবে আজকে যেভাবে আপনি রস চুরি করার খাওয়ার এই প্রথম পর্বটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন তা দেখে খুব ভালো লাগলো। আপনাদেরকে যদি ঐ ব্যক্তিটি প্রথমে খেতে দিতে অথবা আপনাদের কাছে বিক্রি করতো তাহলে আপনারা কখনো এরকম কাজ করতেন না৷ সে ব্যক্তির এই খারাপ ব্যবহারের কারণে আপনারা সকলে মিলে এমন ভাবে রসগুলো খেয়ে নিলেন যে, ওই ব্যক্তির কলসিটাই একেবারে খালি করে দিলেন৷ পরবর্তী পর্বে কি হয় তা দেখার আগ্রহ রইলাম৷
আসলেই লোকটি যদি আমাদের সাথে তখন খারাপ ব্যবহার না করতো তাহলে আমরা কোন মতেই এই কাজটা করতাম না।