বিশাখাপত্তনম ভ্রমণের কিছু স্বনির্বাচিত ছবি - পর্ব ২
বিশাখাপত্তনম ভ্রমণের কিছু স্বনির্বাচিত ছবি
💮পর্ব ২💮
📷ফটোগ্রাফি পোস্ট📷
সকলকে আমার ব্লগে স্বাগত জানাই। প্রথমেই প্রার্থনা করি সমস্ত অন্ধকার কেটে যাক। আলোময় হয়ে উঠুক সমগ্র পৃথিবী৷ একজন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিসাবে সর্বদা সব জায়গায় শান্তি কামনা করি।
এবার আসি আমার আজকের ব্লগের কনটেন্টে। কিছুদিন আগেই শেয়ার করেছিলাম বিশাখাপত্তনম বা ভাইজাকের কিছু নৈসর্গিক ছবি। আমি পেশাদার ফটোগ্রাফার নই৷ তবু ভালোবাসি ছবি তুলতে। মনের মত দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রেখে দিই আজীবন৷ আজ আমি নিয়ে এলাম বিশাখাপত্তনমের অ্যালবাম দ্বিতীয় পর্ব। এই অ্যালবামে যে কটি ছবি শেয়ার করেছি তা সম্পূর্ণভাবে আমার ক্যামেরায় তোলা এবং অপ্রকাশিত। বিশাখাপত্তনম এমন একটি ভ্রমণ গন্তব্য, যেখানে ফেনিল সাগরের সাথে যেন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করে সুউচ্চ পাহাড় ও উপত্যকা। সেই মনমুগ্ধকর দৃশ্যপটে অবাক নয়নে চেয়ে থাকতে হয় একরাশ ভালোলাগা নিয়ে। যেদিন সমুদ্রের ধার ঘেঁষে গাড়ি করে আঁকাবাঁকা পথে উঠেছিলাম পাহাড়ের সর্বোচ্চ সীমায়, সেদিন উপর থেকে মনে হচ্ছিল কে বলে স্বর্গরাজ্য বেশি দূর? আর ভাবছিলাম-
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
সেই সৌন্দর্য উপভোগ্য। আর নিজের সত্তাটুকু দিয়ে কবিতা ও ছবির মাধ্যমে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম মুহূর্তগুলো।
আসুন এবার ছবিতে যাওয়া যাক।
প্রবেশ পথে আটকে গেল চোখ। তার নিচে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার এক সুন্দর অভিজ্ঞতা ধরে রাখতে হবে ক্যামেরার ফ্রেমে। দুপাশে নির্ভরতার জঙ্গল আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। এমন নৈসর্গিক দৃশ্যপটে কার না চোখ আটকে যায়। ইট কাঠ জঙ্গলে থাকা একটি মানুষ এভাবেই তো হারাতে চাই বারে বারে। আজ আমার অ্যালবামে সকলের জন্য রইল সেই আশ্চর্য নৈসর্গিক পরিবেশের একটি ছবি।
একদিকে সমুদ্র। আর একদিকে পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি। এই নিয়েই সুন্দরী অন্ধ্র। পূর্বঘাট পর্বতমালার সৌন্দর্য যেন একাকার হয়ে মিশে যায় বঙ্গোপসাগরের জলে। আর পাহাড়ে উঠে হারিয়ে যেতে হয় অচিনপুরের ঠিকানায়। এ এক আশ্চর্য জায়গা। পাহাড় ভেঙে বিভিন্ন সুড়ঙ্গ পথে গাড়ি এমনকি ট্রেনও এগিয়ে চলে নিজস্ব গন্তব্যে। আর দুপাশে তখন মেঘেদের লুকোচুরি। ভাইজাক থেকে আরাকু ভ্যালি যাওয়ার পথটি নৈসর্গিক সুন্দর। এই পথে যে না গিয়েছে, তার অবশ্যই একটিবার ঘুরে আসা উচিত। দার্জিলিং আর দীঘা যদি এক হয়ে যায় তবে কোন বাঙালির না ভালো লাগে।
পাহাড় থেকে তোলা নীল সাগরের সেই অবাক করা দৃশ্য। এত উপর থেকে সমুদ্র দেখার অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি। উপভোগ্য সেই মুহূর্তের কিছুটা তুলে রাখতে চেয়েছিলাম ক্যামেরায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সামনে তখন দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি। যেন এক হাতে কিনে নেওয়া যায় সম্পূর্ণ পৃথিবীটাই। আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমিই তো পৃথিবীর রাজা।
ওই দেখা যায় এঁকেবেঁকে পথ বেয়ে যায় দূরে কোন ঠিকানার দিকে। দেখুন তো, পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের পাশ দিয়ে কেমন চলে গেছে রাস্তা। আর সেখান থেকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে ছোট ছোট খেলনার মত গাড়ি। ছবির মাধ্যমে হয়তো সম্পূর্ণ অনুভূতিটা দেখানো সম্ভব নয়, কিন্তু তবু একবার তাকিয়ে দেখুন, এমন দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে কার না ঘোর জন্মায়।
তখন চলেছি আরাকু ভ্যালির উদ্দেশ্যে। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের বুকে পূর্বঘাট পর্বতমালায় এক নৈসর্গিক সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। সেখানে মানুষ বাঁচতে জানে, খেলতে জানে, আর পাহাড়ের সঙ্গে কথা বলতে জানে। ওঠার মুহূর্তে পাহাড়ের উপর থেকে উপত্যকার এই দৃশ্য আমায় মাতাল করেছিল সেই সময়। এই ছোট ছোট ঘরবাড়িতে না জানি কত স্বপ্ন লালিত হয় রোজ। আমি উঠে চলেছি উপরে, কিন্তু পৃথিবী সাক্ষী দিচ্ছে এই অতি সাধারণ ঘরবাড়ি গুলির মধ্যেই। মাঝখানে যেন অপার পূর্ণতা।
ধন্যবাদ সকলকে। ছবিগুলি ভালো লাগলে অবশ্যই মন্তব্য করে সঙ্গে থাকবেন।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অপূর্ব সব ছবিগুলো শেয়ার করেছ। সব থেকে ভালো লেগেছে ওই মেঘের ছবিটা। সত্যিই আকাশ নীল থাকলে এবং সেখানে সাদা মেঘ থাকলে তার কারুকার্য গুলো দেখতে এত ভালো লাগে। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার না হলেও তোমার ফটো তোলার হাত কিন্তু বেশ ভালই। খুব এনজয় করলাম বিশাখাপত্তনম ছবির পার্ট টু।
বিশাখাপত্তনম সত্যিই আমার দেখা এক অন্যতম সেরা জায়গা। এমন পাহাড় ও সমুদ্রের মিশেল খুব কম দেখা যায়। বিশেষ করে পাহাড় থেকে সমুদ্র দেখার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। পোস্ট পড়ে এত সুন্দর কমেন্ট করলি বলে অনেক ভালোবাসা।