তাজপুরের মনোরম সমুদ্র সৈকতে একটি দিন। ভ্রমণ সংক্রান্ত পোস্ট।

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

একদিনের ভ্রমণ গন্তব্য তাজপুর

🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


☘️চলুন ঘুরে আসি☘️


Onulipi_08_20_02_25_14.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

সম্প্রতি কয়েকজন অফিস কলিগের সাথে ঘুরে এলাম তাজপুর। যে রিসর্টে ছিলাম, সেই কৃষ্টি রিসর্ট নিয়ে আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আপনারা হয়তো অনেকেই তা পড়েছেন। আজ সেই ভ্রমণেরই আরেকটি পর্ব নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের সামনে। হঠাৎ ঠিক করা একদিনের একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে তাজপুর পছন্দ করেছিলাম আমরা। উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত দৈনন্দিন কাজের জটিলতা ও চাপ সরিয়ে একদিন একটু মুক্ত বাতাস সেবন। তার জন্য আমরা পাঁচ জন শিক্ষক একসাথে গাড়ি চড়ে কলকাতা থেকে সকাল সকাল যাত্রা শুরু করেছিলাম তাজপুরের উদ্দেশ্যে। এর আগেও আমি তাজপুর গেছি। সুন্দর সুন্দর রিসর্ট এবং মনোরম বীচের ধারে অবস্থিত এই জায়গা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অতি প্রিয়। এখানকার যেটি প্রধান বৈশিষ্ট্য তা হল, সমুদ্রের একদম ধারে সমুদ্র সৈকতের উপর সারি সারি স্থানীয় মানুষদের তৈরি করা সুসজ্জিত অস্থায়ী খাবারের দোকান। প্রতিটি দোকান আলো দিয়ে সাজানো৷ দোলনা টাঙানো এবং সেখানে সমুদ্রের কাঁকড়া থেকে শুরু করে চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি মাছের ঘরোয়া লোভনীয় রান্না করে পরিবেশন করা হয়। তাই তাজপুর এলে অবশ্যই সমুদ্রের ধারের এইসব হোটেলের দু একটি পদ চেখে দেখতে ভুলবেন না।

IMG_20240810_145014_862.jpgIMG_20240810_145019_391.jpg

তাজপুর সমুদ্র সৈকত

তাজপুরের সমুদ্র সৈকত স্নানের যোগ্য নয়। এখানে সৈকতে কাদামাটির ভাগ অনেক বেশি। তাই পাড়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের শোভা উপভোগ করার আনন্দটুকু চেটেপুটে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু এই অঞ্চলে বর্তমানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বিলাসবহুল রিসর্ট এবং হোটেল। সুইমিং পুল থেকে মাল্টিকুইসিন রেস্টুরেন্ট, কি নেই সেখানে। সন্ধ্যে হলেই ঝলমলে আলোয় সেজে উঠে তাজপুরের তখন অন্য সৌন্দর্য। আর ৮ থেকে ৮০ সকলেই গানের তালে পা মিলাচ্ছে রঙিন রিসর্টের সাজানো বাগানে।

IMG_20240810_150307_895.jpgIMG_20240810_150209_081.jpg

তাজপুর সমুদ্র সৈকত


পেট পুজোর পসরা

তাজপুর সমুদ্রসৈকতে এবার আমরা খাবার জন্য পছন্দ করেছিলাম কাঁকড়া, বড় মাপের চিংড়ি এবং ভাত ডাল তরকারি। সে খাবারের স্বাদ বলবার নয়। আমরা পাঁচজন চেটেপুটে খেয়েও যেন কম পড়ে গেল সেই স্বাদ আস্বাদন করা। সেখান থেকে চলে আসার পরেও আমরা বারবার স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম চিংড়ি ও কাঁকড়ার সেই অসাধারণ স্বাদের। ঝালের পরিমাণ একটু বেশি হলেও স্বাদে গন্ধে সবকটি পদ ছিল অসাধারণ। সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে বীচে বসে মাছ বা মাংস খাওয়ার অনুভূতিই আলাদা। কলকাতা থেকে এতটা কাছে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ কেন্দ্র অনেক পর্যটকের গন্তব্য থেকেই বাদ পড়ে আছে এখনো। কিন্তু আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে তাজপুরও দীঘার মত এক বিখ্যাত গন্তব্যে পরিণত হবে।

IMG_20240810_155731_827.jpg

এবার সেখানে গিয়ে এক অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। দেখলাম সমুদ্রসৈকতে প্রায় সবকটি দোকান ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে। অবাক বিস্ময়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলাম বিষয়টি সম্বন্ধে। তাদের থেকেই জানতে পারলাম কিছুদিন আগে এক মারণ ভরা কোটাল এসে হাজির হয়েছিল তাজপুর সৈকতে। আর তাতেই সমস্ত অস্থায়ী খাবারের দোকান প্রায় মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। সেখানকার স্থানীয় মানুষজন এখনো লড়াই করে চলেছে সমুদ্রের এই ভয়ংকর রোষের আগুনের সাথে৷ তখন মনে হল সত্যিই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে মানুষ কত অসহায়। যতই আস্ফালন করে অন্য মানুষের সামনে কেউ ভয়ংকর আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে খড় কুটোর মত ভেঙে পড়তে দেখেছি বারবার। এবার তাজপুরে গিয়ে সবকিছু ভেঙে পড়ার দৃশ্য এক তীব্র অস্বস্তি তৈরি করেছিল মনে। উপকূলবর্তী গ্রামবাসীরা আবার কষ্ট করে নির্মাণ খাড়া করছে সমুদ্রের ধারে। তাদের চেষ্টার অন্ত নেই।

IMG_20240810_085539_700.jpgIMG_20240810_085520_303.jpg

IMG_20240810_085504_256.jpg

তাজপুর সমুদ্র সৈকতে


পৌঁছনোর উপায়

তাজপুর পৌঁছানোর রাস্তা ভীষণ সহজ। দীঘা গামী যে কোন বাসে চাউলখোলার পরের স্টপেজে নেমে টোটো বা অটোকে তাজপুর বীচ বললেই আপনাকে পৌঁছে দেবে। খরচ সাধ্যের মধ্যেই। আর গাড়ি করে এলে তো কথাই নেই। সকাল সকাল বেরিয়ে কোলাঘাটে ব্রেকফাস্ট সেরে তাজপুর পৌঁছে যেতে সর্বসাকুল্যে ঘন্টাচারেক লাগে। আর এই যাত্রাপথ আপনার বহুদিন মনেও থাকবে। রাস্তা এখন আগের থেকে অনেক সুন্দর। রিসর্ট আগে থেকে বুক করে যাওয়াই ভালো। কারণ হাতেগোনা কয়েকটি ভালো রিসর্ট রয়েছে এখানে। তার মধ্যে লা ম্যাকাও রিসর্ট এবং কৃষ্টি রিসর্ট অন্যতম। থাকা-খাওয়া এবং বিলাসবহুল ছুটি কাটানোর গন্তব্য হিসেবে এইসব রিসর্টের কোন তুলনা নেই। ঘরে বসে পমফ্রেট মাছ বা তন্দুরি চিকেনের স্বাদ আপনার ভ্রমণকে আরো রঙিন করে দেবে। ঘর ভাড়া কমবেশি তিন হাজারের আশেপাশে।

IMG_20240810_062230_445.jpg

কলকাতা দীঘা সড়ক

শেষের কথা

মাত্র একদিনের হলেও এই তাজপুর ভ্রমণ আমার কাছে বেশ উপভোগ্য বলে মনে হয়েছে। সকলে একসাথে সেখানে কয়েক ঘন্টা বেশ অন্যরকম ভাবে উপভোগ করার অবকাশটুকু পেয়ে গেলাম হঠাৎ করেই। আপনারাও ঘুরে আসতে পারেন একদিনের ট্যুর প্যাকেজে তাজপুর সমুদ্র সৈকত। হাতে সময় থাকলে গাড়ি নিয়ে দীঘা বা মন্দারমনিও ঘুরে নিতে পারেন। তাই সবদিক থেকে বলতে গেলে তাজপুর সমুদ্র সৈকত যে কয়েকদিনের মধ্যেই বাঙালির এক প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হতে চলেছে সে বিষয়ে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
তাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
ছবি এডিটিং সৌজন্য
ক্যানভা ও অণুলিপি অ্যাপ

(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 days ago 

সমুদ্র সৈকত মানেই অন্য রকমের ভালো লাগার জায়গা। মনে হয় যেন অন্যরকমের প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। আপনি এই দারুন একটি জায়গায় ভ্রমণ করেছেন ও ভ্রমণের মুহূর্তগুলো শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 5 hours ago 

আপনি আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়ে সুন্দর করে মন্তব্য করলেন। অনেক খুশি হলাম

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 61179.86
ETH 2631.51
USDT 1.00
SBD 2.46