আমার প্রথম বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা
আমার প্রথম বিমানে চড়বার অভিজ্ঞতা
তারপর একে একে নিরাপত্তাজনিত সমস্ত নিয়মকানুন সেরে বসে রইলাম বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। বসে বসে গল্প করছিলাম কলকাতার আর এক দাদার সঙ্গে। এরপর আমাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো বিমানে উঠবার জন্য। এরপর ফাইনাল সিকিউরিটি চেক। প্রথমবার বিমানে চড়বো বলে একটা রোমাঞ্চ তো ছিলই। কিন্তু ওই যে বললাম, টেনশন কোনদিন আমার মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতম কোষকেও আক্রান্ত করতে পারিনি কস্মিনকালে। তাই বেশ উৎসাহ নিয়েই উঠে পড়লাম বিমান বাংলাদেশ সংস্থার একটি ছোট বিমানে। উঠবার আগে টিপ টিপ বৃষ্টি আমার যাত্রাপথকে বেশ মনোরম পরিবেশে বদলে দিল।
যদিও আকাশ মেঘলা ছিল, কিন্তু মেঘের ভেতর দিয়ে উড়ে যাওয়ার স্বপ্নকে আমি লাগাম দিতে পারলাম না। তাই স্বভাবতই এক প্রবল উৎসাহ আমার মধ্যে দানা বাঁধলো। বিমান বাংলাদেশের বিমানে ওঠার পর আমার সিট ছিল জানলার ধারে। বসে পড়লাম নিজের জায়গায়। বিমান সেবিকার শুভেচ্ছা বার্তা ও বিমান চালকের বিভিন্ন রকম সাবধান বার্তা দিয়ে শুরু হলো আমার প্রথম বিমান যাত্রা। ছেলেবেলা থেকেই আকাশে বিমান দেখতে ভালোবাসি। কলকাতা বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে যেতে গেলেই থমকে দাঁড়িয়ে যাই ওই ডানাওয়ালা বিশাল পাখিটিকে কাছ থেকে দেখব বলে। কিন্তু আজ আমি নিজে উড়বো। তাই আমার আনন্দ যেভাবে মস্তিষ্কের দখল নিয়েছিল তা অনেকদিন নিজের সঙ্গে বহন করে নিয়ে যাব। এরপর এলো সেই ক্ষণ৷ শুরু হলো আমার বিমান যাত্রা। ধীরে ধীরে মাটি ছেড়ে ছুঁয়ে ফেললাম মেঘ। আকাশ ও মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে স্বর্গরাজ্যের মধ্যে দিয়ে উড়তে শুরু করলাম নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে পরিণত করে। সে এক স্বপ্নের উড়াল। নিচ দিয়ে পেরিয়ে গেল যমুনা নদী, বঙ্গবন্ধু সেতু এবং বিভিন্ন ছোট বড় জনপদ। তারপর সর্বোপরি ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা। আমি প্রবেশ করলাম আমার দেশে। হয়তো আমার মত অনেকে আজ নিচ থেকে চেয়ে দেখছে আমায়। আর আমি প্রথম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে উড়ে যাচ্ছি মেঘেদের রাজ্য দিয়ে। এরপর প্রায় এক ঘন্টা পরে বিমান চালক জানালেন আমরা ছোঁবো কলকাতায় নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি। এ আমার শহর। আমার ভালোবাসা। ছেলেবেলা থেকেই শহরটার গায়ে আমার ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। তাই কিছুদিন বাইরে থাকলেই যখন কলকাতাকে ছুঁয়ে দেখি তখন যেন নিজে দাঁড়াই আয়নার সামনে। মায়াময় শহর এই তিলোত্তমা কলকাতা। আর এই শহরে সবকিছু যেন আমার ভীষন চেনা।
বিমানবন্দরে নামার পর বেরিয়ে এলাম বাইরে। নিজের ব্যাগ সংগ্রহ করে একটি ট্যাক্সি ধরে চলে গেলাম কর্মস্থলে। সঙ্গে রয়ে গেল জীবনে প্রথম বিমান যাত্রার স্মৃতি। আর অবাক বিস্ময় ভাবতে থাকলাম, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে উড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
আমার এই অনন্য অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নিজের কথা কাউকে বলতে পারলে যে পরম তৃপ্তি ভর করে তা বলে বোঝাবার নয়। হয়তো বিমানে চড়বো আরও অনেকবার। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা সব সময় স্পেশাল। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে যায় আজীবন। সকলে ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে পরের পোস্টে।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ঘটনা পড়ে হাসিও আসলো আবার হতাশও হলাম।
হাঁসি আর হতাশার কারনও একটা। একটু ব্যাখ্যা করি। উত্তরা বিমানবন্দরের কাছে। আপনার ভাগ্য ভালো যে বিমানবন্দর বলায় আপনাকে বিমানবন্দরের পিছনের এলাকা বাউনিয়ায় নামায় নাই। ভোররাতের বদলে সন্ধ্যা রাত হলে এমন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
সাধারণত, আমরা বিমানবন্দরে গেলে বলি, এয়ারপোর্ট যাবো। যখনই কেউ বলে বিমানবন্দর যাবো, রিকশাওয়ালারা ভাবে বিমানবন্দর রেলস্টেশনেই যাবেন। আরও বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে রিকশায় করে আসলেই এয়ারপোর্টে যাবে কেউ মানতে চাইবেনা। এই হল আমাদের অবস্থা!
দ্বিতীয় কারন হলো, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ঠিক উলটো পাশেই এয়ারপোর্ট। অবশ্য লাউঞ্জে যেতে হলে সিএনজি নেয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। হেঁটে যাওয়া কষ্টকর হত৷ জানিনা কত ভাড়া নিয়েছে, ১০০ উপরে নিলেই সেটাকে আমি জুলুম বলবো। দূরত্ব আর সময় হিসাবে ১০০টাকাও জুলুম অবশ্য।
আপনি যে ভিনদেশী তা হয়ত তারা টের পেয়েছে জন্য একটু হয়রানি করল। এজন্য মজাও পেলুম, আফসোসও হলো।
হা হা হা। ২০০ টাকা নিয়ে নিয়েছিল ভাই ওইটুকু যেতে। নেহাত প্লেনটার তাড়া ছিল তাই৷ সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা ছিল বটে৷ সাথে বিরাট ব্যাগ ছিল বলে সি এন জি ছাড়া উপায়ও ছিল না৷ এয়ারপোর্টে নেমে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম এই বলে যে - ৬০০০ টাকার প্লেন টিকিট কেটেছি, আর ২০০ টাকা নিয়ে আফসোস করব? হা হা হা হা
সেটাই ভাই৷ দেশটাতে যখন কেউ অসহায় হয়,সবাই সুযোগ নিতে চলে আসে।
অনেক তথ্য বহন করেছেন আপনার আজকের এই পোষ্টের মধ্যে। বেশ অনেক কিছু জানার সুযোগ মিললো আপনার এই প্রথম অভিজ্ঞতা জানতে গিয়ে। যাইহোক মোটামুটি কিন্তু ভালো লাগার ছিল আপনার এই পোস্ট, নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম।
আমার পোস্ট আপনার ভালো লাগায় আমি আপ্লুত। নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম৷ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বড় ভালো লাগে। ভালো থাকবেন।