ধুমধাম করে পালিত হলো জন্মাষ্টমী উৎসব। শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করার দিন।

in আমার বাংলা ব্লগlast month

দিকে দিকে জন্মাষ্টমী পালন

🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


Onulipi_08_28_12_54_58.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

জন্মাষ্টমী। এই উৎসবের গুরুত্ব সারা পৃথিবী জুড়ে। শুধু হিন্দু সমাজ নয়। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ ভক্তিভরে স্মরণ করে এই দিনটিকে। আসলে শ্রীকৃষ্ণ ভারত আত্মা। তাঁর কর্মকাণ্ড এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিকগুলি বিচার করলে আজও অবাক হতে হয়। সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে শুধু তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতার দিকটি বিশ্লেষণ করলেই অবাক হতে হয় বারবার। অস্ত্র না ধরেও তিনি ছিলেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রধান চালক। তাঁর দূরদর্শিতা বহুল চর্চিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আজকের পণ্ডিতপ্রবর লেখক ও গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি পর্যন্ত অনেক লেখকই তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। তাঁর চরিত্র বর্ণনায় সবাই তুলে এনেছেন নতুন নতুন চারিত্রিক গুণাবলী।

IMG_20240826_194722_465.jpg

আলোকসজ্জা

গতকাল ছিল তাঁর জন্মতিথি৷ যা জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয় সারা পৃথিবী জুড়ে। পুরাণ অনুযায়ী, ভাদ্রমাসে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি, বুধবার, মধ্যরাতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন মথুরায় মামা কংসের কারাগারে। আর তারপর কংসের হাত থেকে তাঁকে বাঁচানোর জন্য পিতা বসুদেব রেখে আসেন বন্ধু নন্দরাজের ঘরে। এই হল তাঁর জন্মবৃত্তান্ত। এখানেই যেন শুরু হয় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা তাঁর শিক্ষা। একেবারে প্রতিকূল পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে পিতা, মাতা, দাদু ও জন্মভূমিকে অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তিদানে তাঁর ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতায় তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্ত আজও দুনিয়ার কাছে এক দৃষ্টান্ত। তাঁর শিক্ষা সাম্যবাদের শিক্ষা। সব ধরনের জাতিকে এক করার যে ধর্ম তিনি শিখিয়ে গেছেন, তা আজও সামাজিক ভাবে সমান প্রাসঙ্গিক। তাই ধর্মের ব্যাখ্যা বা অলৌকিক তত্ত্ব বাদ দিলেও যেটা পড়ে থাকে, তাতেও তিনি পৃথিবীর কাছে এক মহান শিক্ষক৷

IMG_20240826_194556_789.jpgIMG_20240826_194507_030.jpg

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান

সারা ভারত জুড়ে গতকাল ধুমধাম করে পালিত হল মহা জন্মাষ্টমী উৎসব। কৃষ্ণ জন্মস্থান মথুরা ও লীলাভূমি বৃন্দাবনে এই উৎসবের চেহারাই আলাদা। এক্ষেত্রে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হিসাবে যে দুটি মন্দিরের কথা বলতেই হয়, তা হল মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান মন্দির ও বৃন্দাবনে বাঁকেবিহারী মন্দির। এই দুই মন্দিরে মহাধুমধামে পালিত হল জন্মাষ্টমী উৎসব। আজও ব্রজভূমির প্রতিটি মানুষ হৈ হৈ করে মেতে ওঠেন এই দিনটিতে। সাথে দিকে দিকে চলে পূজা অর্চনা। এছাড়াও এই বাংলার বিভিন্ন ঘরেও প্রতিটি মানুষ পালন করে কৃষ্ণজন্মতিথি। ঘরে ঘরে শিশু গোপালের পুজোয় মেতে ওঠে বাঙালি। আর তার সাথে যে পদগুলির কথা না বললেই নয়, তা হল মাখন, মিছিরি, ক্ষীর, তালের বড়া আর পায়েস। আমরা সবাই জানি বালগোপাল ভালোবাসতেন মাখন খেতে। ব্রজের প্রতিটি ঘর থেকে মাখন চুরি করে খেয়ে তার দিন কাটতো বাল্যকালে। তারপর মা যশোদাকে শুনতে হত নালিশ। কিন্তু গোপালকে শাস্তি দিতে গেলেই বারবার বিভিন্ন অলৌকিক বাধার সামনে পড়তে হত মা কে। এভাবেই নন্দগ্রামের মাটিতে কেটেছে তাঁর লীলাময় বাল্যকাল। তাই জন্মাষ্টমীর রাতে সেই বালগোপালকে স্মরণ করার দিন। দিকে দিকে মানুষ ভক্তিচিত্তে স্মরণ করেন তাঁকে। তাঁর কর্মকাণ্ডকে।

IMG_20240722_165635_111.jpg

রাধা মদনমোহন

গতকাল একটু কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। পথে যেতে যেতে দেখলাম বিশাল এক প্যান্ডেলে আয়োজিত হয়েছে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে মেতে উঠেছেন নাচে গানে। শুধু তাই নয়, রাস্তার আশেপাশে টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রঙিন আলো। আমিও থেমে গেলাম কিছুক্ষণ। একটু দাঁড়িয়ে দেখলাম নাচের বিভিন্ন ভঙ্গিমা। গান শুনলাম। পথে যেতে যেতে তাকিয়ে দেখলাম কত রকম বাহারি আলোয় সেজে উঠেছে সবকিছু। জমজমাট আয়োজন। উৎসবের আবহাওয়া চারপাশে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করে তারপরে ধীরে ধীরে পা বাড়ালাম বাড়ির পথে। বাড়িতে পুজোর আয়োজন হয় এই তিথি উপলক্ষ্যে। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেই হত। সঙ্গে করে কিনে আনলাম ছানা, দই, মাখন এবং মিষ্টি। এই সবকিছু দিয়েই গোপালের পুজো হলো। আর সঙ্গে তালের বড়া তো ছিলই। গোপালের জন্মের পরের দিন নন্দগাঁও জুড়ে পালিত হয়েছিল নন্দোৎসব। আর সেই উৎসবে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল তালের বড়া। তাই আজও ঘরে ঘরে নন্দোৎসব পালিত হয় তালের বড়া দিয়ে। আমার ঘরেও তৈরি হলো তালের বড়া। আর সঙ্গে বিভিন্ন রকম মিষ্টি তো ছিলই। সবকিছু মিলিয়ে জন্মাষ্টমী বেশ ভালই গেল। আজ তাই সবটা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। কথাতেই বলে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই উৎসবের চিত্রটুকু তুলে ধরলাম ব্লগের মাধ্যমে।

IMG_20240616_084714_445.jpgIMG_20240616_084709_371.jpg

রেমুনায় ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png


Sort:  

আপনার স্বাগত হোক 🙏

উদ্দেশ্যমাফিক, জীবনটির উল্লেখযোগ্য অংশ না হওয়া সত্ত্বেও এমন চারিত্রিক গুণ আছে, যা লোকের প্রশংসায় ভিজে যায়।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 60270.89
ETH 2383.52
USDT 1.00
SBD 2.57