সমাজে সর্বস্তরে লক্ষ্যনীয় কিছু পরিবর্তন। জেনারেল রাইটিং।

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

সমাজে সর্বস্তরে লক্ষ্যনীয় কিছু পরিবর্তন

🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


☘️জেনারেল রাইটিং☘️


teacher-8774399_1280.webp
সোর্স

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আজ একটি ভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করব আপনাদের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছি শিক্ষকতা পেশার সাথে। তাই বিভিন্ন ধরনের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আমার যেন নাড়ীর টান বহুদিন। আর সেই টান উপেক্ষা করতে পারিনি একটি দিনও। বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জমিতেও নেমেছি বহুবার। কিন্তু একটি জিনিস লক্ষ্য করছি বহুদিন ধরেই। প্রায় বিগত ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে একটি যুগের পরিবর্তন ও তার সাথে সাথে ছাত্র-ছাত্রী এবং তার অভিভাবকদের আচরণ ও মানসিকতায় অদ্ভুত পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়ভাবে খেয়াল করছি। আজকাল যুগটা শুধু AI এর নয়। মানুষও যেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর এক রুক্ষ ফলাফল। যান্ত্রিক মানসিকতা মানুষকে এবং বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাচ্ছে, তা ভাবলেই যেন অবাক হতে হয় কিছুটা।

আমাদের যুগে সবকিছু ছিল আলাদা। তখন যন্ত্র নির্ভর জীবন মানুষকে যন্ত্র পরাধীনতা এনে দেয়নি। ছাত্র-ছাত্রীরা তখন গুগল দেখে বা চ্যাট জিপিটি খুঁজে প্রজেক্ট এর উত্তর লিখে নিত না। আজ বাড়িতে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে পাঠালে, পরের দিন খোঁজখবর করে জানতে পারি যে সেই উত্তরপত্রের কৃতিত্ব একমাত্র চ্যাট জিপিটির। আর এখন তো আরো সুবিধা। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপেই যুক্ত হয়ে গেছে AI অপশান। সেখানে খুব সহজে অনেক কিছু তৈরি করে ফেলা যায়। একজন ছাত্র তার সহ বান্ধবীর মুখের ছবি কেটে মিম বানিয়ে ফেলছে মুহূর্তের মধ্যে। এখন যুগটা যেন ডিজিটাল যুগ। অথচ যতটা ডিজিটাল নির্ভর হয়েছি তার থেকে অনেক বেশি হয়েছি পরনির্ভরশীল। মানুষ আজ আর যন্ত্রের বাইরে কোন কিছুতেই রাজি নয়। সেক্ষেত্রে সবাই যেন মন ও মানসিকতার দিক দিয়েও তৈরি হয়ে গেছে যন্ত্রের মত। ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন পিতা-মাতা বা গুরুজনদের মান দেওয়া এবং অক্ষরে অক্ষরে তাদের কথাকে পালন করাকে জীবনের প্রধান একটি কর্তব্য বলে মনে করে না, ঠিক তেমনভাবেই অভিভাবকরাও কত আত্মকেন্দ্রিক। নিজের সন্তানের প্রয়োজনেও তারা আকস্মিক ছুটে এসে পাশে দাঁড়াবার আগে দুবার পরিস্থিতির কথা ভাবেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে একটি ঘটনা বলি৷ সেদিন আমার এক ছাত্রের স্কুলে আসার পর খুব জ্বর এসেছিল। সে বারবার বলছিল বাড়ি যাবে। কিন্তু যখন তার মাকে ফোন করলাম, তিনি স্পষ্ট জবাব দিলেন - তিনি এমন হঠাৎ আসতে পারবেন না। পরিবর্তে আমরা যেন সেই ছাত্রটিকে একা বিদ্যালয় থেকে ছেড়ে দিই। কিন্তু জানেন আমরা তা করিনি। যথা সময়ে স্কুলের গাড়িতে আমরা তাকে বাড়ির পথে রওনা করি। কিন্তু মাঝখানে স্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে যায় কয়েকটি প্রশ্ন। তবে কি নিজের সন্তানের শারীরিক অসুস্থতার কাছেও পরিস্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আজকের অভিভাবকদের? এই ঘটনা তো একটি উপমা মাত্র। এমন ঘটনার শেষ নেই। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের তোয়াক্কা না করে বর্তমান অভিভাবকদের একটি দল প্রতিদান ফিরে পেতে চান সন্তানদের থেকে। কিন্তু তা কি হয়? তবে আর শৈশব, কৈশর, বয়ঃসন্ধি এসব শব্দবন্ধের ন্যূনতম গুরুত্ব থাকতো না।

এক অসুস্থ ইঁদুর দৌড়ে মেতে আছে বর্তমান শিক্ষার্থী সমাজ। সকলের মধ্যে কিছু না কিছু ভুল ধারণা ঢুকে আছে স্থায়ীভাবে। যেমন একটি প্রচলিত ধারণা হলো বিজ্ঞান পড়া ছাড়া জীবনে কোন গতি নেই। দশম শ্রেণীতে কার্যত অনুত্তীর্ণ ছাত্রও যদি বিজ্ঞান বিভাগে এসে দ্বাদশ শ্রেণীতে আবার অনুত্তীর্ণ হয়, তবে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায় তা কবে ছাত্রসমাজ বুঝবে? এই কারণে বিদ্যালয়ে প্রতিবছর যেখানে বিজ্ঞান বিভাগের আসন ছাপিয়ে যায় লক্ষ্যমাত্রাকে, সেখানে বাণিজ্য এবং কলা বিভাগে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয় আমাদের। একি সুস্থ প্রতিযোগিতা? নাকি অসুস্থ ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখানো একদল অনিচ্ছুক প্রতিযোগীর ক্লান্ত বিচরণ? এই পরিস্থিতি বড় উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতের জন্য এ কখনোই সুস্থ এবং স্বাভাবিক সমাজের বার্তা বহন করে নিয়ে যায় না। সব সম্পর্কের মধ্যে এই যান্ত্রিক পট পরিবর্তন সমাজকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু জীব বৈচিত্রের যে যৌক্তিকতা, তা কি আমরা এত সহজেই ভুলে যেতে পারি? এই বিগত ১৫ টা বছরে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের যে পরিবর্তন নিজের চোখে দেখেছি, তাও যেন অবাক করে ভীষণ। তবে সবকিছুর পরেও আমার সব সময় মনে হয় শৃঙ্খলা অবশ্যই এক অনস্বীকার্য দিক। ছাত্র জীবনে এই শৃঙ্খলাপরায়ণতার গুরুত্ব অনেক। শৃঙ্খলা ছাত্র জীবনকে সুন্দর করে। আমার সব সময় মনে হয়, প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব এবং ছাত্র জীবনে উপযুক্ত শৃঙ্খলতা চরিত্র গঠন করা একান্ত উচিৎ। কিন্তু এখন যেন সবাই পেশাদারী। ছাত্র থেকে অভিভাবক, অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সকলেই মেতে রয়েছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। আর হাত-পা বাঁধা অপরাধীর মতো আমাদের সকলের কাজ যেন এই সব প্রতিযোগিতাগুলোকে পরোক্ষে সমর্থন যুগিয়ে যাওয়া।
আসুন না। সবদিক থেকে আমরা একটু মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাই। হোক না যন্ত্রের যুগ, তবু কোথাও গিয়ে আমরা তো সেই রক্ত মাংসের মানুষ। আমাদের মধ্যে নেই কোন সফটওয়্যার ইনস্টলড, আর নেই ব্যাটারির পাওয়ার। আমাদের আছে বিশেষ জ্ঞান এবং মনুষ্যত্ব। এই জোড়া ফলাকে কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত দিকে সমাজের গতিপ্রকৃতিকে ঠেলে দেওয়াই আমাদের কাজ। সকলে নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকমত সম্পাদন করতে পারলেও সমাজ এক নতুন সূর্য দেখবেই, যেখানে নেই কোন সূর্যাস্ত। প্রতিদিনের ভোরের মতো প্রত্যেকটি নাগরিকের মাথায় জাঁকিয়ে বসবে ভোরের রোদ্দুর।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

নাম
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ

(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.032
BTC 60972.25
ETH 2632.93
USDT 1.00
SBD 2.57