স্বরচিত কবিতার নাম - শ্লোগান। একটি আত্মোপলব্ধির কবিতা।
একটি আত্মোপলব্ধির কবিতা। কিছু দৃঢ় অক্ষরবন্ধ
এসো৷ হাতে হাত রাখি।
বিশ্বের এক মহান মন্ত্র মানবতা। এই মানবতার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় অনায়াসে। আর তার আগে যে সাময়িক নিরাময়ের পথে মানুষ হাতড়ে বেড়ায় আজীবন, তাকে বলে এক মরীচিকা। সব রকম ভেদাভেদ ভুলে আজ হাতে হাত রাখার দিন। স্বপ্নের মত মনে হলেও আজ সময় এসেছে পৃথিবীর সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির মিলনের। এই মহেন্দ্রক্ষণ বড় কাছে। হয়তো লড়াই কঠিন। কিন্তু কাঠিন্যকে জয় করে বিজয়ের পথে অগ্রসর হওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই লিখে রাখা কবিতার মত জীবনের মৌলিক কর্তব্যগুলি সাজিয়ে রাখাও বড় প্রয়োজন। শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত পৌঁছতে যে দীর্ঘ পথ হেঁটে গেছি, সেখানে শুধু পাঠ নিয়েছি মানবতার। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি বারবার। আর মনে হয়েছে ধর্মের আরেক নাম হয়তো বিলাসিতা। এই অনুভূতির সর্বশেষ বিন্দু কোথায় জানিনা। কিন্তু যে মানব ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি, তার উদ্দেশ্য চিনতে ভুল হয় না কখনো। নিজের দাবি দাওয়া আর চাহিদার উপরে উঠে আরেকটি হাতে হাত রাখতে পারে কজন? অন্ধকার কেটে যাবেই। এগিয়ে আসবে মানবতার হাত। এই বিশ্বাস নিয়েই বেড়ে উঠেছি আগাগোড়া।
আজ সবদিক বিচার করে ইচ্ছে হলো সেই মানবতার পাঠ তুলে রাখি আমার কবিতায়। কবিতাই তো একমাত্র অস্ত্র আর কলম তার ঝনঝনানি। আর সেই দায়টুকু বুকে নিয়ে আজ রইল একটি স্বরচিত কর্তব্যের কবিতা।
শ্লোগান
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
এই মানবতার অধিকার ছিনিয়ে নিও না
সব অন্ধকারের শেষে জমে থাকে আলো
সঙ্গে উজাড় করা রাতের অসুখ টুকু
সারিয়ে নাও তুমি-
দেশের কেন্দ্রবিন্দু ছুঁয়ে
খেলা কর চেতনার নিত্যনতুন রঙে-
ভেদ করো নীহারিকার গতি
যদি প্রতিরোধের সময় ছুটে আসে ঘনীভূত স্লোগান
আবার নতুন করে হাত দাও জমানো অস্ত্রে...
ডেকে নাও নিরপেক্ষ সৈনিক
বেছে নাও আলো দেওয়া সংখ্যাতাত্ত্বিক কিছু-
এখনো নতুন রঙে রাঙাওনি নিজের আঙুল
পরিবর্তে ছুটে গেছো রক্তের স্বাদ খুঁজে নিতে...
তুমি কি দেখোনি কিছু?
প্রতিটি দিনের শেষে কিভাবে ভিড় করে অযান্ত্রিক মেঘ-
তবুও দেশের কথা লেখনি পুরনো ডাইরিতে?
স্বাধীনতার শেষ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছো কবে?
কবে তুমি নিজের বুকের কাছে এনেছো বিজয়চিহ্ন?
ভিন্নতর উল্লাসে
নাম রাখো নতুন সে দেশ-
যদিও স্বাধীন বলে কেউ এসে বেঁধে নিচ্ছে রাজপথ
তবুও খুঁজেছ তুমি?
কতটা নিজের কাছে মিলিয়েছো পতাকার বেশ?
তখনই গর্ব করো
যখন দেশের কাছে জমা দেবে সকল হিসাব...
অস্ত্রের দরাদরি ফেলে জেনে নেবে শহীদের কথা-
যদিবা মিছিলে হাঁটো
সকল প্রতিশোধ হলে হাতে নাও মোমবাতির দেনা...
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
তোমার কবিতার একটা বিশেষ গুণই হল, নানান ধরনের বিষয়ে কবিতা লিখতে পারা। গদ্য কবিতা মানে এই যে আমরা যেভাবে কথা বলছি সেভাবে কবিতা দাঁড়িয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। গদ্য কবিতারও একটা ছন্দ আছে সেটা তুমি খুব ভালোই জানো। কবিতার মধ্যে আড়াল থাকবে মিষ্টতা থাকবে আবার বর্তমান সভ্যতা দাবি করে তীব্র মেধা ও থাকবে৷ এই সবকটিই পেলাম তোমার লেখায়। ভীষণ রকম ভালোলাগা জানালাম।